রিটার্ন, রিফান্ড আর লেট ডেলিভারির হয়রানিতে দারাজের গ্রাহকরা
এমডি জে ( দারাজ ইউজার আইডি ) একটি মাইক্রোফোন অর্ডার করেছিলেন অনলাইনে। কিন্তু ভুয়া পণ্য পেয়ে প্রতারিত হয়ে রিভিউ দিয়েছেন দারাজেরই পেজে। সেখানে লিখেছেন,
‘কি এমন Products Sent করলেন যেটা Damage... আপনাদের কি উচিত ছিল না একবার Products Check করে Sent করা। Daraz এ Return করা তারপর Refund পাওয়া তা কতটুকু হয়রানি জানেন। আপনারা হয়ত খুশি আছেন Damage Products দিয়ে কিন্তু আমি ত খুশি নয় Damage Products পেয়ে।আপনাদের Products এর Review & Rating দেখে Microphone টি Order দেই। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সব Paid Review & Rating... আপনারা আর এরকম nxt time damage products sent করবেন না কাউকে Plz...আর হে যারা Boya BY M1 Microphone টি কিনতে চাচ্ছেন তাদের Highly Recommend করব এই Seller এর কাছ থেকে না নেওয়া,,,কারণ হয়ত আপনাকে ও আমার মত এরকম ভোগান্তিতে পরতে পারেন। আর হে যদি Refund না পাই তাহলে কিন্তু ভোক্তা অধিকার এ মামলা দিব আপনাদের বিরুদ্ধে আমার পরিচিত ভাই আছে’
এমনই হাজারো অভিযোগ দিয়ে পণ্যের পাশাপাশি সাজানো দারাজের প্ল্যাটফর্ম। অনলাইন কেনাকাটা যখন সময় বাঁচানোর একটি মাধ্যম হয়ে উঠছিলো তখন এমন সময়ের জালচক্রে পড়ে ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা।
চিনা জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান আলিবাবার সাথে চুক্তিবদ্ধ হবার পর অনেকেই আশায় বুক বেধেছিলেন। ভেবেছিলেন ভালো হবে দারাজের সার্ভিস। কিন্তু সে আশায় যেন গ্রাহকদের গুড়েবালি। অন্যান্য ছোট ই-কমার্স সাইটগুলো যতটা জবাবদিহিতা ও প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছে গ্রাহকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করার জন্য সেখানে দারাজ যেন এক প্রকার স্বেচ্ছাচারিতা চালাচ্ছে।
দারাজের মিডিয়া কমিউনিকেশন প্রধান ত্বিষা সায়ন্তনী জানালেন, কোন গ্রাহক প্রতারিত হলে সেলারের বিরুদ্ধে রেটিং দেয়ার সুবিধা রাখা হয়েছে সেলার এর রেটিং কমলে তার পণ্য উপরের দিকে দেখাবেনা। কিন্তু যারা ইতিমধ্যে প্রতারিত হয়েছে তারা চাইলে রিফান্ড করতে পারবেন। কিন্তু গ্রাহকরা বলছেন এসব ভুয়া পণ্যের পসরা সাজিয়ে দারাজ শুধু নিজেদের ওয়েবসাইট ভারী করছে অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রাহকরা।
ভুয়া পণ্যের ব্যাপারে তিনি জানান, একজন পণ্য বিক্রেতার ১ লাখ পণ্য থাকলে আর দারাজে ২০ হাজার বিক্রেতা থাকলে সব কিছুর নিরীক্ষা করা সম্ভব হয়না। তবে তারা বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত কিনা তা দেখা হয়।
এছাড়াও চলতি বছর দারাজ সহ দেশের ১০ টি ইকমার্স প্ল্যাটফর্মকে মানি লন্ডারিং আইন ভঙ্গ করায় তলব করে সিআইডি । নিয়ম ভেঙে ফেসবুকে বিজ্ঞাপন বাবদ বিভিন্ন অনলাইন প্রতিষ্ঠান বড় অংকের অর্থ ব্যয় করায় এ তলব করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সংস্থাটি জানায় , কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি না নিয়ে ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেয়ায় ১০টি প্রতিষ্ঠানকে তলব করে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের মানি লন্ডারিং টিম।
অন্যদিকে ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ৫০০ টাকার পণ্যে ‘ডিসকাউন্ট’ দিয়ে ৮৫০ টাকায় বিক্রি করার দায়ে দারাজ ডটকম ডটবিডিকে (daraz.com.bd) ১ লাখ টাকা জরিমানা করেছিলো ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। বেসরকারি টেলিভিশনের প্রতিবেদকের দারাজের বিরুদ্ধে করা প্রতারণার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ই-রিটেইল প্রতিষ্ঠান দারাজকে ভোক্তা অধিকার আইন-২০০৯ সালের ৪৫ ধারায় এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
অনলাইনে প্রতারিত হয়ে ভোক্তা অধিকার এ অভিযোগ করার বিষয় সম্পর্কে বলতে গিয়ে ঢাকা জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুর জব্বার বলেন, মূলত অনলাইন সাইটগুলো থেকে কেউ পণ্য কিনে প্রতারিত হবার পর অভিযোগ জানালে আমরা সেই অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি, যেহেতু তাদের কোন ফিজিক্যাল শপ নেই তাই স্পেসিফিক পণ্য ছাড়া তাদের ব্যাপারে আমাদের কিছু করা থাকেনা। তবে আমরা সম্প্রতি বেশ কয়েকটি মামলা নিষ্পত্তি করেছি এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান গুলোকে বার বার সতর্ক করেছি। এক্ষেত্রে আমি গ্রাহকদেরও সতর্ক থেকে কেনাকাটা করতে অনুরোধ করবো।
অফিসগুলো ক্রেতা স্বার্থ সংরক্ষণ করছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মূলত ই-কমার্স সাইটগুলো অফলাইন বাজার থেকে পণ্য কেনাবেচার মাধ্যম হিসাবে কাজ করে, তাই বাজারে যখন অভিযান চলে তখন ঐ বিক্রেতারা এমনিতেই আমাদের অভিযানে আওতায় চলে আসে। কিন্তু যেহেতু ই-কমার্সকে মানুষ বিশ্বাস করে এবং ভোক্তার প্রতি দায়বদ্ধতা আছে সেদিক থেকে আমরা তাদেরকে অবশ্যই সতর্ক করছি। ভবিষ্যতে এই বিষয়গুলি ছাড় দেয়া হবেনা।
বাজটে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ই-কমার্স সাইট গুলো উপর ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ নিয়েও নীরব থেকে দারাজ। এ বিষয়ে কোন ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হয়নি প্রতিষ্ঠানটি ।