রবি-গ্রামীণফোন ও বিটিআরসি’র দ্বন্দ্বে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির আশঙ্কা

  • তাসকিন আল আনাস, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের শীর্ষ দুই মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর রবি ও গ্রামীণফোনের কাছে বিপুল পরিমাণ পাওনা দাবি করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। সংস্থাটির দাবি অনুযায়ী, গ্রামীণফোনের কাছে ১২ হাজার ৫৮০ কোটি এবং রবি’র কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা আছে।

সংশ্লিষ্টদের দাবি, পাওনা আদায়ে কোম্পানি দুটির ওপর বিভিন্নভাবে চাপ দিচ্ছে বিটিআরসি। তবে অপারেটররা সালিশ বা নিয়মতান্ত্রিক সুরাহা চান। ফলে অপারেটর ও বিটিআরসি’র মধ্যে এখন ঠাণ্ডা লড়াই চলছে। যাতে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন গ্রাহক, অপারেটর ও টাওয়ার ব্যবসায়ীরা।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি বিটিআরসি এই দুই অপারেটরের ব্যান্ডউইথ কমানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসলেও যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে নতুন নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে। ফলে আগে অনুমোদন নেওয়া থাকলেও এখন কোনও যন্ত্রপাতি আমদানি করতে পারবে না অপারেটর দুটি। এছাড়াও কোনও যন্ত্রপাতি যদি বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় থাকে তাহলে বিটিআরসির কাছ থেকে নতুন করে অনাপত্তিপত্র নিতে হবে। পাশাপাশি কোম্পানি দুটির ট্যারিফ বা সার্ভিস প্যাকেজের অনুমোদনও বন্ধ রেখেছে বিটিআরসি।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/24/1563975164074.jpg
রবি আজিয়াটা লিমিটেডর চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম

 

বিজ্ঞাপন

অপারেটরদের বক্তব্য:

এ বিষয়ে রবি আজিয়াটা লিমিটেডর চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার  সাহেদ আলম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'অনাপত্তিপত্র (এনওসি) বন্ধের সিদ্ধান্তে গ্রাহক ভোগান্তিই বাড়বে। কারণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও সেবার মান উন্নয়নের নতুন বিনিয়োগ হবে না। ফলে পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হবে। পাশাপাশি নেটওয়ার্ক পার্টনার, টাওয়ার কোম্পানি, এনটিটিএনসহ আইটি সামগ্রী ও সফটওয়্যার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবসাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সব মিলিয়ে গ্রাহকের ওপর বহুমাত্রিক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমরা বিশ্বাস করি, চাপ প্রয়োগ করে বিতর্কিত দাবির টাকা আদায়ের চেষ্টা না করে নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিরোধ নিষ্পত্তি করলেই দেশ ও জনগণের স্বার্থ রক্ষিত হবে।'

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/24/1563975776421.jpg
গ্রামীণফোনের ডাইরেক্টর ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান হোসেন সাদাত

 

এ বিষয়ে গ্রামীণফোনের ডাইরেক্টর ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান হোসেন সাদাত বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘বিটিআরসির এমন সিদ্ধান্তে মানসম্মত মোবাইল সেবা প্রদান কার্যক্রমকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। বিতর্কিত অডিট পাওনা জোরপূর্বক আদায়ে এনওসি স্থগিতের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত ক্ষতিকর ও গ্রাহক স্বার্থের পরিপন্থী। তবে আলোচনা ও সালিশ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মতপার্থক্য সমাধানে আমরা এখনও বিশ্বাসী।’

বিটিআরসি’র বক্তব্য:

সংস্থাটির দাবি, এমন সিদ্ধান্তের পরও যদি অপারেটররা পাওনা পরিশোধ না করে তাহলে তারা দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির মুখে পড়বে।

এ বিষয়ে বিটিআরসি’র সিনিয়র সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন খান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'গ্রাহকরা যে সেবা পাচ্ছেন সেভাবেই পেতে থাকবেন। তাদের সেবায় কোনও বাধা দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু অপারেটররা যদি নতুন প্যাকেজ দিয়ে ব্যবসা করতে চান তাহলে পাওনা পরিশোধের কোনও বিকল্প নেই।'

তিনি আরও বলেন, 'কোনও গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হলে ১০০ নাম্বারে কল করে অভিযোগ জানাবেন। আমরা অবশ্যই গ্রাহকদের স্বার্থ নিশ্চিত করবো। পাশাপাশি অপারেটররা সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা- সেটাও দেখবো।' 

অপারেটরদের আপত্তি

অপারেটরদের অভিযোগ, প্রতি বছর অডিট করার নিয়ম থাকলেও সেটি করে না বিটিআরসি। ২০১১ সালে গ্রামীণফোন অডিট করে তিন হাজার ৩৪ কোটি টাকা পাওনা দাবি করা হয়। কিন্তু গ্রামীণফোন ওই দাবি অস্বীকার করলে নতুন করে অডিটের নির্দেশনা দেওয়া হয়। ২০১৭ সালে নতুন অডিটে গ্রামীণফোনের কাছে ১২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা পাওনা দাবি করা হয়। এরমধ্যে মূল পাওনা ছয় হাজার ১৯৪ কোটি টাকা, সুদ দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকা এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পাওনা চার হাজার ৮৬ কোটি টাকা।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পাওনা আদায়ে গ্রামীণফোনের ৩০ শতাংশ এবং রবির ১৫ শতাংশ ব্যবহৃত ব্যান্ডউইথের ওপর ক্যাপিং আরোপ করে কমিশন। কিন্তু গত ৪ জুলাই গ্রাহকের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় সিদ্ধান্ত বাতিল করে কোম্পানি দুটির এনওসি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় বিটিআরসি।