আ’লীগের খসড়া মনোনয়ন তালিকা নিয়ে ধোঁয়াশা
কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি? কে বাদ পড়ছেন? উনি কেন বাদ পড়লেন? তাকে কেন মনোনয়ন দেওয়া হল? এমন সব প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে।
ধানমণ্ডি ৩/এ থেকে গুলিস্তান পার্টি অফিস, সংসদ ভবন থেকে গণভবন, তারকা হটেলে থেকে চায়ের দোকানের আড্ডা, অফিস থেকে আদালত পাড়া সব খানেই নৌকার মনোননয় নিয়ে তুমুল আলোচনা, জল্পনা-কল্পনা।
নৌকার মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার খবর বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় সেই আলোচনাকে আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে বাজারে ছড়িয়ে পড়া এসব তালিকা মনগড়া ও ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেতে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র নিয়েছিলেন চার হাজার ২৩ জন। মনোনয়ন সংগ্রহ শেষ প্রার্থীরা শেষ মুহুর্তের লবিং-তদবিরে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের বাড়িতে, অফিসে ফুল, মিষ্টি নিয়ে তাদের ধরনা দিতে দেখা যায়।
এমনকি নজর কাড়তে অনেক প্রার্থী নিজেদের নাম পরিচয় দিয়ে বোর্ড সদস্যদের অনবরত কল/এসএমএস দেওয়ার কথাও শোনা যায়। কিন্তু সময় যত গড়াতে থাকে ততই মনোনয়ন নিয়ে নেতাকর্মী ও প্রার্থীদের মধ্যে উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগ বাড়তে শুরু করে।
এদিকে ১২ নভেম্বর থেকে মনোনয়ন প্রার্থীদের আমলনামা নিয়ে অনানুষ্ঠানিক ও আনুষ্ঠানিক বৈঠক শুরু করেন মনোনয়ন বোর্ড। লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সেসব বৈঠকে প্রার্থীদের নিয়ে পরিচালিত জরিপ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
জানা গেছে, মুখ দেখে নয় বরং জরিপ দেখে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে আওয়ামী লীগে। দলীয় সভাপতির দুটি জরিপ, আওয়ামী লীগের জরিপ ও গোয়েন্দা সংস্থা পরিচালিত তিনটি জরিপ নিয়ে প্রার্থীদের যাচাই-বাছাই শুরু হয়। এরই মধ্যে প্রার্থীর সমর্থকরা কারো মনোনয়ন নিশ্চিতের খবর ছড়িয়ে মিষ্টি বিতরণও শুরু করে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে মনোনয়ন বোর্ড ২৩০ আসনে প্রার্থীর খসড়া তৈরি করেছে। বাকী আসনগুলোতে জোটগতভাবে নৌকার প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করে প্রকাশ করা হবে।
কিন্তু এর আগেই খসড়া তালিকা থেকে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থীরা বাদ পড়েছেন বলে বিভিন্ন মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়ে। দলের দুই প্রভাবশালী সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক ও বাহাউদ্দিন নাছিম খসড়া তালিকায় বাদ পড়েছেন। তাদের পরিবর্তে যথাক্রমে শরীয়তপুর-১ আসন থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইকবাল হোসেন অপু ও মাদারিপুর-৩ আসন থেকে দফতর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ মনোনয়ন পেতে চলেছেন।
বর্তমান সাংসদদের মধ্যে বাদ পড়েছেন মাগুরা-১ আসনের এটিএম আব্দুল ওয়াহাব, রাজশাহী-৫ আসনের আব্দুল ওয়াদুদ দারা, যশোর-২ আসনের মনিরুল ইসলাম, ময়মনসিংহ-১১ আসনের মোহাম্মদ আমানুল্লাহ, টাঙ্গাইল-২ আসনের খন্দকার আসাউজ্জামান, টাঙ্গাইল-৩ আসনের আমানুর রহমান খান রানা, কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সোহরাব উদ্দিন, মুন্সিগঞ্জ-১ আসনের সুকুমার রঞ্জন ঘোষ, নেত্রকোনা-৩ আসনের ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু, শরীয়তপুর-২ আসনের কর্নেল (অব.) শাখাওয়াত আলী ও কক্সবাজার-৪ আসনের আব্দুর রহমান বদি।
ঢাকা-১৩ আসনে জাহাঙ্গীর কবির নানক ও ফরিদপুর-১ আসনে আব্দুর রহমানের মনোনয়ন ভাগ্য ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তারা দুজনেই দলের প্রভাবশালী যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক।
রোববার ও সোমবার দিনভর আলোচনার কেন্দ্রে ছিল খসড়া তালিকায় এসব হেভিওয়েটদের বাদ পড়া নিয়ে। আওয়ামী লীগের ৩/এ তে সোমবার বাদ পড়াদের সমর্থকের উৎসাহে যেমন ভাটা নেমে এসেছে তেমনি প্রতিপক্ষ শিবিরে স্বস্তি দেখা গেছে।
বাহাউদ্দিন নাছিমের সমর্থকরা বলছেন, নাছিমের ত্যাগকে নেত্রী কখনো ভুলে যেতে পারেন না। তার মত কর্মীবান্ধব ও সংগঠন অন্ত:প্রাণ মানুষের মূল্যায়ন অবশ্যই নেত্রী করবেন।
কথা হয় ইকবাল হোসেন অপুর কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে। তারা জানান, অপু দীর্ঘদিন ধরে নিরলসভাবে দলের জন্য কাজ করে গেছেন। তাকে নেত্রী কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বানিয়ে মূল্যায়ন করেছেন। এবার তাকে নৌকার মনোনয়ন দিয়ে শরীয়তপুর-১ আসনের উন্নয়ন করার সুযোগ দেবেন।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মনোননয় নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সর্বময় ক্ষমতা আওয়ামী লীগ সভাপতির হাতে। প্রার্থীদের নিয়ে মনোনয়ন বোর্ড একটি খসড়া প্রস্তুত করেছে, তবে সেটা চূড়ান্ত নয়। শেষমুহূর্তে তাতে সংযোজন বা বিয়োজন হতে পারে।
বিষয়টি নিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যসচিব ওবায়দুল কাদের বলছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কারও মনোনয়নই চূড়ান্ত করেনি। দলের মনোনয়ন নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত তালিকা মনগড়া, এগুলোর বাস্তবসম্মত ভিত্তি নেই।