অতি আত্মবিশ্বাসী আ'লীগ, ভোটারদের ভিন্নমত
আসন আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে দেশের অন্যসব নির্বাচনী এলাকার মতো টাঙ্গাইল-৮ আসনেও চলছে নির্বাচনী ব্যস্ততা। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন উপলক্ষে প্রচার প্রচারণা চালোনোর জন্য ইসির ঘোষিত তারিখের জন্য অপেক্ষা করছেন। তবে প্রচারণার তারিখের জন্য অপেক্ষা করলেও নিজ নিজ দলীয় সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সেরে ফেলেছে দলগুলো।
টাঙ্গাইল-৮ বাসাইল এবং সখীপুর নিয়ে গঠিত। আসনটিতে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে লড়াই করবে আওয়ামী লীগ বনাম ঐক্যফ্রন্ট। টাঙ্গাইলের আসনটিতে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রধান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ঐক্যফ্রন্টের হয়ে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়বেন।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আসনটিতে সম্ভাব্য প্রার্থী অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের।
সবকিছু ঠিক থাকলে এ দুই প্রার্থীই আসনটিতে নির্বাচনে প্রধান দুই জোটের প্রতিনিধিত্ব করবেন। সেক্ষেত্রে আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী এলাকাটিতে টানটান উত্তেজনা পূর্ণ একটি পরিবেশের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
তবে নির্বাচনে জয়ের বিষয়ে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী টাঙ্গাইল-৮ আসনের আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী। আসন্ন নির্বাচনে সামনে শক্ত কোনো প্রতিপক্ষই দেখছে না তিনি। ফলে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দকীর মতো ঝানু প্রার্থীকেও গোনায় ধরছে না টাঙ্গাইল-৮ আসনের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
টাঙ্গাইল-৮ আসনের আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটিতে জয়ের বিষয়ে অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী। এজন্য তারা বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ কাদের সিদ্দিকীর বিপক্ষে কোনো ধরণের রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণের প্রয়োজন মনে করছে না।
টাঙ্গাইল-৮ আসনের আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১০ বছরে বাসাইল এবং সখীপুর এলাকায় আওয়ামী লীগ রেকর্ড পরিমাণ উন্নয়ন করছে। তাই এ আসনে আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। সেক্ষেত্রে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগকে কোনো হেভিওয়েট প্রার্থীও চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না বলে জানায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ।
ফলে আসনেটিতে আওয়ামী লীগের জয় শতভাগ নিশ্চিত বলে মনে করছেন তারা। আর এই কারণে কাদের সিদ্দিকীকে নিয়ে কোনো ধরনের বিশেষ পরিকল্পনার কথা ভাবা হচ্ছে না স্থানীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা যুবলীগের শিক্ষা গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আল-মাস আজাদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, বিদ্যুৎ, শিক্ষা থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট পর্যন্ত কোনো সেক্টর বাদ যায়নি উন্নয়নের জোয়ার থেকে। আর জনগণের সম্পূর্ণ আস্থা আওয়ামী লীগের ওপর রয়েছে। তাই এখানে কোনো হেভিওয়েট প্রার্থীও যদি চাই আওয়ামী লীগকে হারানো সম্ভব নয়।
এদিকে নির্বাচনে শতভাগ জয়ের বিষয়ে নিশ্চিত জানিয়ে সখীপুর যুবলীগের সভাপতি মো.খলিল বার্তা২৪.কমকে বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রধান প্রতিপক্ষ কাদের সিদ্দিকী। তিনি (কাদের সিদ্দিকী) জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে প্রভাবশালী থাকলেও আসনটিতে আওয়ামী লীগ থেকে শক্তিশালী নয়। আর তিনি এ আসনে বাসিন্দাদের জন্য এমন কিছু করেননি যে তাকে মানুষ ভোট দিবে। সেক্ষেত্রে বলা চলে টাঙ্গাইল-৮ আসনে আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জ করবে এমন প্রার্থী নেই।
তবে এ বিষয়ে টাঙ্গাইল-৮ আসনের ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামীলীগ নেতাদের এমন আত্মবিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেনি মাঠ পর্যায়ে। ভোটাররা দল নয় ব্যাক্তি কাদের সিদ্দিকীকেই সব থেকে বেশি এগিয়ে রাখছেন আগামী নির্বাচনে। তাছাড়া গত ১০ বছরের আওয়ামী লীগের এমপির কাজ কর্মে তেমন একটা খুশি নয় ভোটাররা।
তাই খুব সহজেই বলা চলে পূর্ব পরিকল্পনা না করলে ব্যক্তি কাদের সিদ্দিকীর জনপ্রিয়তার কাছে আওয়ামী লীগের আত্মবিশ্বাসী মনোভাব যেকোনো সময় হেরে যেতে পারে। এছাড়া কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে বিএনপির সমর্থকদের বিশাল একটি ভোট ব্যাংকের সমর্থনতো পাচ্ছেন।
এ বিষয়ে সখীপুর উপজেলা রোডের বাসিন্দা রিপন কাজী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ভোটে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। কে জিতবে এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে কোনো পক্ষই জয়ে ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত হতে পারবে না। কিন্তু ব্যক্তি কাদের সিদ্দিকীর একটি শক্ত ভোট ব্যাংক ও জনপ্রিয়তা রয়েছে।
উল্লেখ্য, এ আসনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৬৪৫ জন। বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী বলে পরিচিত দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান আসনটিতে আগে থেকে নির্বাচন করে আসছেন। কিন্তু ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী কাদের সিদ্দিকী থাকায় তিনি এবার নির্বাচন করছেন না।
অন্যদিকে আসনটিতে ১০ম জাতীয় সংসদে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের অনুপম শাহজাহান জয়। তার পরিবর্তে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের।