প্রচারণায় এগিয়ে আ'লীগ, পিছিয়ে বিএনপি
রাজশাহী মহানগরী থেকে শুরু করে প্রতিটি গ্রামে শুরু হয়েছে নির্বাচনী প্রচার। প্রার্থীরা ভোটারের মন জয় করতে নিজের মত করে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনের মাঠে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে আছে। কেবল মাঠের প্রচার নয়, ডিজিটাল প্রচারেও এগিয়ে নৌকার প্রার্থীরা। মাঠ দখলে থাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। দলের মাঝে ছোটখাটো দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ভোটের মাঠে একাট্টা হয়ে বিজয় ছিনিয়ে নিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তারা।
তবে প্রচারণার দিক দিয়ে পিছিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা। শঙ্কা ও সংশয় কাটিয়ে এখনো ভোটের মাঠে সেভাবে সরব হতে পারেননি বিএনপির নেতাকর্মীরা। তবে প্রার্থীরা সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রচার চালিয়ে যেতে। কাকডাকা ভোরে বিএনপির প্রার্থীরা নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নেমে পড়ছেন প্রচারে। ছোটখাটো ঘটনা ছাড়া এখন পর্যন্ত রাজশাহীতে ভোটের মাঠ শান্তিপূর্ণ বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয় দলের প্রার্থীরা।
রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী এলাকার মনোনয়ন প্রত্যাশী সাত নেতা বা সেভেন স্টার খ্যাত নেতাদের শেষ পর্যন্ত ভোট প্রচারণায় নামাতে পেরেছেন। কয়েক দিন একা একা প্রচার চালালেও বৃহস্পতিবার (১৩ ডিসেম্বর) ঐক্যবদ্ধভাবে গোদাগাড়ীর ডাইংপাড়া মোড়ে বিশাল সমাবেশ করেছেন ফারুক। এ সমাবেশে দীর্ঘদিন ফারুকের বিপক্ষে অবস্থান নেয়া সাত নেতা যোগ দেন। একই সঙ্গে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বৃহস্পতিবার তানোরের ইলামদহীসহ বিভিন্ন এলাকায় দিনভর নৌকার পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেন।
রাজশাহী-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী ব্যারিস্টার আমিনুল হক দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ভোটের মাঠে নিবিড় প্রচারে অংশ নিচ্ছেন। দীর্ঘদিন এলাকায় অনুপস্থিত থাকায় এখনো দলের মধ্যে ছোটখাটো দ্বন্দ্ব ও দূরত্ব মেটাতে ব্যস্ত তিনি। আমিনুল হক জানান, এখন পর্যন্ত মোটামুটি ঠিক আছে। তবে পুলিশি হয়রানির ভয়ে অনেক নেতাকর্মী মাঠে নামতে পারছে না বলে তিনি অভিযোগ করেন।
রাজশাহী-২ (সদর) আসনে নিজ দলের লোকবল সীমিত হলেও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাই মূলত মহাজোট প্রার্থী তথা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার পক্ষে মাঠ দখলে রেখেছেন। এ আসনেও প্রচারে মাঠে আধিপত্য বজায় রেখেছে নৌকা।
অন্যদিকে, একেবারে কাকডাকা ভোরে ভোটের মাঠে নেমে পড়ছেন বিএনপির প্রার্থী মিজানুর রহমান মিনু। তার পক্ষেও নেতাকর্মীরা একাট্টা হয়ে মাঠে নেমেছেন। এ দুই প্রার্থীর প্রচারে মুখর হয়ে উঠেছে মহানগর।
এদিকে, রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে প্রচারে প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থীর চেয়ে এগিয়ে থাকছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক। মাঠের প্রচার ছাড়াও ডিজিটাল প্রচারেও এগিয়ে আছেন এ প্রার্থী।
সম্প্রতি বিভেদ মিটিয়ে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে ভোটের মাঠে নামানোর ফলে ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের প্রচারে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। অন্যদিকে, এ আসনে বিএনপির প্রার্থী আছেন আবু হেনা। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর তালে তালে প্রচারণা চালাইতে দিনরাত মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আয়েন উদ্দীন স্থানীয় প্রার্থী হওয়ায় প্রচারে বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন। সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের নিয়ে দিনরাত মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তিনি। ডিজিটাল প্রচারে সব মাধ্যম তিনি ব্যবহার করছেন। নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলনকে শহর থেকে গিয়ে প্রচারে নামতে হচ্ছে। এছাড়া স্থানীয় না হওয়ায় তাকে ভোটারদের সঙ্গে নতুন করে পরিচিত হতে হচ্ছে। ফলে তিনি প্রচারের মাঝপথে রয়েছেন। মিলনের অভিযোগ, তার নেতাকর্মীদের প্রচার চালাতে বাধা দেয়া হচ্ছে।
রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে নৌকার নতুন প্রার্থী ডা. মনসুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় রয়েছেন। টানা ৩০ বছর ধরে বিনা পয়সায় তিনি এলাকার গরিব মানুষদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ফলে দ্রুতই তিনি ভোটারদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে ভোটের মাঠে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন ডা. মনসুর।
অন্যদিকে, ১২ বছর পর মাঠে নেমে শোডাউন করে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করছেন বিএনপির প্রার্থী নাদিম মোস্তফা। তবে দুর্গাপুরে নেতাকর্মীদের তিনি ঐক্যবদ্ধ করতে পারলেও পুঠিয়াতে প্রকাশ্যে প্রচারে নামতে পারেননি। তার মতে, পুঠিয়াতে প্রশাসনের বৈরী ও পক্ষপাতমূলক আচরণের শিকার হচ্ছেন তিনি।
রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের দখলে ভোটের মাঠ। ক্লিন ইমেজের এ প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বী এলাকায় নেই। তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও তার সঙ্গে রয়েছেন। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী আবু সাইদ চাঁদ ২ সেপ্টেম্বর থেকে কারাবন্দী। ফলে ফাঁকা মাঠে এক রকম প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন শাহরিয়ার। তবে চাঁদের হয়েও তার ছেলেসহ নেতাকর্মীরা মাঠে রয়েছেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও রাজশাহী অঞ্চলের ১৪ দলের সমন্বয়কারী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, 'এক দশকে আওয়ামী লীগ দেশে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। আরও ব্যাপক উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি ক্ষমতায় এলে উন্নয়ন থেমে যাবে। ছড়িয়ে পড়বে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ। এখনই দেশের মানুষকে বিষয়টি উপলব্ধি করতে হবে।'
অন্যদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমন্বয়কারী মিজানুর রহমান মিনু জানান, 'স্বৈরাচারী সরকার এক দশকে মানুষের সব নাগরিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। উন্নয়নের নামে লুটপাট চালিয়েছে। এ নির্বাচন মানুষের ভোটের অধিকার ফেরানোর নির্বাচন। বিএনপি, ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্ট মানুষের সব গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে চায়।'