হবিগঞ্জ-১: নেতাকর্মীদের অভিমানে বেকায়দায় রেজা কিবরিয়া
অসন্ন সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে সরকার দলীয় প্রার্থী প্রচারণায় সরগরম থাকলেও মাঠে নেই বিএনপি। ধানের শীষের প্রার্থী অবস্থান করছেন ঢাকায়। ফলে এ আসনে বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী থাকলে ভরাডুবির শঙ্কা করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা।
আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন প্রয়াত মন্ত্রী দেওয়ান ফরিদ গাজীর ছেলে শাহ নেওয়াজ মিলাদ গাজী ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী প্রয়াত অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে গণফোরাম নেতা ড. রেজা কিবরিয়া।
জানা গেছে, সমগ্র নির্বাচনী এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই গণসংযোগ, মাইকিং, পথসভা ও মিছিল-মিটিং হচ্ছে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে। নৌকার পোস্টার ও হ্যান্ডবিলে ছেয়ে গেছে বিভিন্ন হাট-বাজার। প্রার্থী শাহ নেওয়াজ মিলাদ গাজী নিজেও প্রতিদিন ঘুরে বেড়াচ্ছেন গ্রাম থেকে গ্রাম।
পক্ষান্তরে প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ড. রেজার দেখাই মিলছে না নির্বাচনী এলাকায়। তফসিল ঘোষাণার পর এলাকায় চারদিন এসেছেন তিনি। এর মধ্যে মাত্র একদিন তিনি গণসংযোগ ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। বাকি তিনদিন শুধুমাত্র কিছু নেতাকর্মীর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করেই ফিরে যান ঢাকায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ড. রেজাকে এখনও মেনে নিতে পারছে না স্থানীয় বিএনপির একাংশ নেতাকর্মী। এ আসনে প্রথম দিকে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল সাবেক এমপি শেখ সুজাত মিয়াকে। কিন্তু পরবর্তীতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া হয় গণফোরামের প্রার্থী ড. রেজা কিবরিয়াকে। বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি স্থানীয় বিএনপি পরিবার। ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে ড. রেজার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় ছাত্রদল-যুবদলসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের একাশং নেতাকর্মী।
তাদের দাবী, ‘শেখ সুজাত মিয়া দুই বারের এমপি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে তিলে তিলে এ এলাকায় বিএনপিকে সংগঠিত করেছেন। সাধারণ ভোটারদের কাছেও তিনি জনপ্রিয়। রেজাকে প্রার্থী করে সুজাতের প্রতি অবিচার করা হয়েছে’। যদিও এ বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলছেন না সিনিয়র নেতারা।
অপরদিকে বার বার অনুরোধ করার পরও ধানের শীষের পক্ষে নির্বাচনের মাঠে নামছেন না শেখ সুজাত। প্রতীক বরাদ্দের পর শেখ সুজাতের বাসায় গিয়েও তার দেখা পাননি ড. রেজা। সর্বশেষ মঙ্গলবার (১৮ ডিসেম্বর) বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগে দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত) ড. সাখাওয়াত হাসান জীবনকে নিয়ে শেখ সুজাতের বাসায় যান রেজা কিবরিয়া। এ সময় দীর্ঘ আলোচনার পরও কোনো সুরহা হয়নি। ২৪ ডিসেম্বরের পর নির্বাচনের মাঠে নামবেন বলে তাদেরকে আশ্বস্ত করেন শেখ সুজাত। ফলে এ সিদ্ধান্ত নিয়েই একরকম ব্যর্থ হয়ে ঢাকায় ফিরেন রেজা কিবরিয়া।
শেখ সুজাতকে খুশি করতে না পারায় অনেকটা বেকায়দায় পড়েছেন ড. রেজা। এমনকি শেখ সুজাতের অনুসারীদের ভোট তিনি পাবেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে।
এ বিষয়ে নাম না প্রকাশ করার শর্তে স্থানীয় বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘মূলত বিএনপি পরিবারের স্বতস্ফূর্ত সাড়া না পাওয়ার কারণেই নির্বাচনী প্রচারণায় নামতে পারছেন না ড. রেজা। বার বার চেষ্টার পর ব্যর্থ হয়ে অবশেষে তিনি এলাকা ছাড়েন।’
তবে ড. রেজা কিবরিয়া স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছেন ভিন্ন কথা। তার অভিযোগ, ‘প্রশাসনের দমন-পীড়নের কারণেই মাঠে নামতে পারছে না নেতাকর্মীরা। ব্যক্তিগতভাবে তিনি নিজেও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন’।
ড. রেজা কিবরিয়াকে নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের বিষয়টি স্বীকার করে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী ফারছু বলেন, ‘সাবেক জনপ্রিয় এমপি শেখ সুজাত মনোনয়ন না পাওয়ায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে আমরা তা শিগগরই তা কাটিয়ে উঠব।’
জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট এনামুল হক সেলিম বলেন, ‘পুলিশি ধরপাকড়ের কারণে হয়তোবা ব্যাপক হারে নেতাকর্মীরা মাঠে নেই। কিন্তু ধানের শীষের বিজয়ে আমরা সকলেই ঐক্যবদ্ধ আছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ড. রেজা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম সমন্বয়কারী। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশ নিতে তাকে অনেক সময় ঢাকায় ব্যস্ত থাকতে হয়। সময় মতো তিনি অবশ্যই মাঠে থাকবেন।’
নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান সেফু বলেন, ‘নেতাকর্মীরা কাজ করছে না এটা সত্যি নয়। দুই এক দিনের মধ্যেই আমরা ব্যাপক হারে গণসংযোগে মাঠে নামব।’
ড. রেজা কিবরিয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যাহ জানান, তিনি (রেজা কিবরিয়া) যদি নিরাপত্তাহীনতাবোধ করেই থাকেন, তাহলে বিষয়টি পুলিশকে জানাতে পারতেন। তবে তার জানামতে ওই এলাকায় কোনো ঝুঁকির কারণ নেই।’
উল্লেখ্য, নবীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলায় ২০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে হবিগঞ্জ-১ আসন গঠিত। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ড. রেজা কিবরিয়া গ্রেনেড হামলায় নিহত সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে। ড. রেজা গত ১৮ নভেম্বর গণফোরামে যোগ দেন।