ওগেরই প্যাট ভরে না, আমাদের দেবে কী?
‘আমরা সাপুড়ে। সাপ ধরা, সাপের খেলা, বানরের খেলা দেখানো ও গাছ-গাছড়ার ওষুধ বিক্রি করাই আমাদের কাজ। আমরা গরিব তাই সরকার আমাদের জন্যি মেলা কিছুই দেয়। কিন্তু মাতবর-পিতবানরা (জনপ্রতিনিধি) সব নিয়ে নেয়। ওগেরই প্যাট ভরে না, তা আমাদের দেবে কী?’
আসন্ন নির্বাচনে কাকে ভোট দেবেন এমন প্রশ্নের জবাবে এভাবেই অভিযোগের সুরে কথাগুলো বলছিলেন বেদে সরদার মনির খান (৫৫)।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা শহরের উপকণ্ঠে আখ সেন্টারে অস্থায়ী তাঁবু গেড়ে বসবাস করছে ৬টি বেদে পরিবার। পেশায় ওরা সাপুড়ে। সাপ ধরা, সাপের খেলা, বানরের খেলা দেখানো ও গাছ-গাছড়ার ওষুধ বিক্রি করেই চলে ওদের সংসার।
মনির খানের বিশ্বাস- সরকার তাদের জন্য অনেক কিছুই করে। কিন্তু তাদের কাছ পর্যন্ত কিছুই আসে না।
মনির খান বলেন, ‘ঝিনাইদহের কালিগঞ্জের কাশিপুরে আমাদের কুঁড়েঘর রয়েছে। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে ছোটবেলা থেকেই এ পেশায় আছি। বছরে ছয় মাস বাইরে বাইরে থাকি। ছয় মাসের আয় দিয়ে সারা বছর চলতে হয়। জীবনের শেষ সময়ে চলে এসেছি। এখন আর এই কাজ করতে মন চায় না। সরকার যদি আমাদের কোনো সহযোগিতা দেয় তাহলে অন্য ব্যবসা করার ইচ্ছে আছে।’
তিনি বলেন, ‘এবারের নির্বাচনের পর নতুন সরকার আমাদের জন্য কিছু একটা করবে এমন আশায় ভোট দিতে বাড়ি যাব। যদি কিছু না পাই তাহলে জীবনে আর কোনো দিন ভোট দেব না।’
মনির খানের স্ত্রী জাহানারা ছবি তুলতে দেখে ডাকলেন এই প্রতিবেদককে। বললেন, ‘আমাদের কিছু টাকা দিয়ে গেলেন না।’ টাকা কেন চাইলেন- এমন প্রশ্ন করতেই উত্তরে তিনি বলেন, ‘অনেকেই ছবি তুলে টাকা দিয়ে যায়। মানুষের দয়ায় আমাদের সংসার চলে। এ জীবন আমরা আর চাই না। কিন্তু কোনো উপায় নেই বাবা।’
মনির খান ৬টি বেদে পরিবারের সরদার। তার দুই মেয়ে-জামাই, এক বোন ও দুই ছেলের পরিবার মিলে একই সঙ্গে থাকেন তারা। আলাদা আলাদা অস্থায়ী তাঁবুতে তারা সপরিবারে বসবাস করছেন। সকাল হলেই নারী পুরুষ আলাদাভাবে বেরিয়ে পড়েন রোজগারে। পুরুষরা সাপ ধরে খেলা দেখান আর নারীরা বিভিন্ন বাড়ি বাড়ি গিয়ে গাছ-গাছড়ার ওষুধ (কবিরাজি) বিক্রি করেন।
মনির খানের মেয়ে আরবী খাতুন জানান, এখন আর আগের মতো কেউ ওষুধ কেনে না। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুরেও ২শ টাকা আয় হচ্ছে না।
জানা গেছে, এই বেদে পরিবারে কয়েকজন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে মনির খান নামে এক ব্যক্তির নয় বছর বয়সী একটি শিশু রয়েছে। তার নাম মেহেদি হাসান। সে কখনো বিদ্যালয়ে যায়নি। টাকার অভাবে লেখাপাড়া করানো হয়নি বলে জানান মনির খান।
এ প্রসঙ্গে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষ্ণুপদ পাল বলেন, ‘যেহেতু তারা অন্য জেলার স্থায়ী বাসিন্দা, তাই আমি তেমন কিছু করতে পারছি না। তবে তাদের পরিবারগুলোতে শীতের কম্বল দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’