বসন্তের আগমনী বার্তায় রঙিন খুলনা
প্রকৃতিতে লেগেছে বসন্তের ছোঁয়া। মাঘের শেষে শীতের জীর্ণতা কাটিয়ে স্নিগ্ধ সবুজ প্রকৃতিতে নতুন কচি কচি পাতায় ঝলমলে হয়ে উঠেছে চারপাশ। প্রকৃতিতে বসন্তের সাজ সাজ রব। খুলনা নগরের প্রায় প্রতিটি এলাকাতে নজর কাড়ছে কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, নাগলিঙ্গম, গাঁদাসহ হরেক রকম ফুল। আম্র মুকুলের ঘ্রাণ প্রকৃতিতে বসন্তের অগ্রীম বার্তার জানান দিচ্ছে।
শনিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) নগরী ঘুরে দেখা যায়, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, নার্সারি, আবাসিক এলাকা ও সড়কের পাশে লাল, নীল, বেগুনি, হলুদ, গোলাপি, সাদা, খয়েরি, হরেক রঙের ফুলের সমাহার। ফুলের মিষ্টি সুবাসে চারিদিক যেন মৌ মৌ করছে।
খুলনার শহীদ হাদিস পার্কের নার্সারি, বয়রা বেতারের সামনের নার্সারি, গোয়ালখালী নার্সারিসহ শতাধিক নার্সারিতে শোভা পাচ্ছে কয়েক’শ প্রজাতির ফুল ও গাছ। কয়েকটি এলাকায় পলাশ শিমুল ফুলও ফুটতে শুরু করেছে। রাতের পড়া হালকা কুয়াশা কাটিয়ে প্রতিদিন ভোরে সূর্যকিরণ যখনই ফুলের উপর পড়ে, তখন মনে হয় ফুল থেকে যেন হীরকদ্যুতি ছড়াচ্ছে।
এছাড়া, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, কুয়েট, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, খুলনা বেতার, খুলনা মেডিকেল কলেজ, বিএল কলেজ, শিববাড়ী মোড়সহ আরো অনেক স্থানে হলুদ গাঁদা, ডালিয়া, জিনিয়া, লাল গাদা বিভিন্ন প্রজাতির পাতা বাহার, গোলাপি বর্ণের ফুল, সাদা স্নোবল, সালভিয়া, দোপাটি, ক্যালেন্ডোলা, দায়েনথাঁচ, ফ্লোগর্স, ইন্টালিয়াম, পেনজি, কারিয়াফছি, ভারবিনা, পিটুনিয়া, স্টার গোল্ড, মৌচন্ডা, পানচাটিয়া, অ্যালমন্ডা, তালপাম্প, চন্দ্রমল্লিকা, একঝাড়া, রঙ, বারবিনা, স্টার, ফলিয়ক্স, নয়নতারা, কালেনগোলা, সানবিয়া, ন্যাশটোসিয়াম, পিটুলিয়া, ইসকাস্লোবাল, পানচাটিয়া, ইনকা গাদা, চায়নিজ গাদা, জাম্বুস গাদা, মোরগ ঝুঁটি, কসমস, জুঁই, চামেলি, টগর, বেলি, সাইকাস, ক্রিসমাস, জবা, রঙ্গনসহ আরও নানা রকমের ফুল ফুটেছে। ফুলের গাছগুলোতে নেচে নেচে বেড়াচ্ছে নানা রঙের প্রজাপতি।
খুলনার বেশ কিছু এলাকায় এ সময়টায় জনপ্রিয়তা পেয়েছে ছাদ বাগান। বসন্তের আগমনে ছাদবাগানগুলিও সেজেছে নবরূপে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তোলা এসব ছাদবাগানে ফলজ, বনজ, ঔষধি গাছের সাথে শোভা পাচ্ছে ফুলগাছ। খুলনা যেন এখন ফুলের শহর।
খুলনার হাদিস পার্কে ঘুরতে আসা কলেজ শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা এশা বার্তা২৪.কমকে বলেন, এ বছর শীতের প্রকোপ তেমন পড়েনি। মাঘের শুরু থেকেই খুলনায় আমের মুকুল বেড়িয়ে গেছে। প্রায় সব এলাকাতেই গাছে গাছে নতুন পাতা দেখা যাচ্ছে। এখন কেমন যেন চারপাশটাকে নতুন লাগছে। সেজন্য প্রতিদিন ঘুরতে বের হই।
নার্সারি মালিক নয়ন সরকার বলেন, এ সময়টাতে শীত আর বসন্তের ফুল একসাথে ফোটে। যে কারণে বছরের অন্যন্য সময়ের তুলনায় এখন সবখানে ফুল বেশি দেখা যাচ্ছে। গাছও পুরাতন পাতা ঝড়িয়ে নতুন পত্রপল্লব দিচ্ছে। আমরা নার্সারিতে ফুলের গাছের বেশি যত্ন নেই, কারণ এটি যেমন দৃষ্টিনন্দন-তেমনি ক্রেতারাও ফুল দেখেই গাছ কেনেন।
ছাদবাগানের উদ্যোক্তা জাকির হোসেন বলেন, ছোট পরিসরে প্রকৃতিবান্ধন ছাদবাগান শুরু করেছি। বাগানে বিভিন্ন গাছের সাথে ফুলের গাছও আছে। এখন ফুল গাছে ফুল ফুটছে। ছাদে যেন বসন্ত লেগেছে।
নগরীর ইকবালনগর বর্ণমালা শিশু শিক্ষালয়ের সামনে ‘রূপালী নার্সারী’র মালিক মনিরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, খুলনায় প্রায় ১০ হাজার নার্সারি রয়েছে। প্রতিটি নার্সারিতে হরেক রকম ফুল ফুটছে। এই সময় ফুল ও ফুলের চারা বিক্রি হয় বেশি।
খুলনা নার্সারি মালিক সমিতির নেতা বদরুল আলম রয়েল বলেন, জেলার প্রতিটি নার্সারিতে নানা রকমের ফুল হয়। ফুল প্রেমীরা নার্সারিতে ঘোরেন, গাছ কেনেন। অনেকে শখ করে টবসহ চারা কিনছেন। নার্সারি মালিকরা সব সময় আতংকে থাকেন, কখন যে জমির মালিকরা বলবে চলে যেতে। আমরা পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকি। সরকারি খাস জমি বরাদ্দ পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করি।