শুকনো পাতার মর্মর শব্দে মনে দোলা লাগে
"ও ঝরা পাতা ও ঝরা পাতাগো/ তোমার সাথে আমার রাত পোহানো কথাগো/ তোমার সাথে আমার দিন কাটানো কথা।"
কবি আবুল হাসানের এই কবিতা ও জলের গান যেন বাস্তবে কথা বলেছে। ঝিরঝিরে বাতাসে ঝরা পাতার কাব্য মনে দোলা দেয়। পায়ে পায়ে মাড়িয়ে গেলে মর্মর ধ্বনি ওঠে। গাছ থেকে পাতা ঝরে পড়ার দৃশ্য বিষন্ন করলেও এক ধরনের মায়ায় ডুবিয়ে দেয়। নিয়ে যায় অন্য এক ভুবনে। শুকনো পাতার র্মমর শব্দ মনে দোলা লাগে। বসন্তের আগমনে হঠাৎ করেই চোখে পড়লো, কঙ্কালসার গাছে সবুজের কুঁড়ি। দেখতে দেখতে স্বগর্বে বেরিয়ে আসতে শুরু করবে কয়েকটা দিন পর। গাছগুলো ভরে উঠতে শুরু করবে সবুজ পাতায়।
প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্যে ভরপুর দেশের চা বাগান অধ্যুষিত এলাকা মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল। শুধু চায়ের জন্য বিখ্যাত শ্রীমঙ্গল- তা নয় পর্যটন খাতেও বেশ সুনাম রয়েছে। প্রকৃতিতে শীতকালের বিদায়ের প্রস্তুতি চলছে, আসছে বসন্তকাল। প্রতি বছরই এই সময় রাবার গাছের পাতা ঝড়ে মাটিতে নকশার মতো পরে থাকে। আর গাছে থাকে শুধু ডালপালা। গাছগুলো মরা গাছের মতোই দাড়িঁয়ে থাকে। সে এক অপরূপ দৃশ্য। ফলে পর্যটকরা রাবার বাগানে ভিড় জমান, ছবি তুলতে মেতে উঠেন।
রাবার বাগানে তাকালে মনে হয় যেনো আগুনে পুড়ে গেছে পুরো বাগান। তবে বাগানে প্রবেশ করেলেই শোনা যায় শুকনো ঝড়া পাতার মর্মর শব্দ, যাতে মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে।
শনিবার বিকালে শ্রীমঙ্গলের বেশ কয়েকটি রাবার বাগানে ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার পাশে গাড়ি দাড়ঁ করিয়ে রাবার বাগানে ছবি তুলছেন দর্শণার্থীরা। কারণ রাবার বাগানগুলোর দৃশ্য সত্যিই যেনো যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের কোনো একটি দেশের। সারি সারি গাছ একেক দিকে একেক রকম লাগে। দু’চোখ জুড়ানোর মতো দৃশ্য।
পর্যটক মো. ইউসুফ আলীর বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে এসে অনেক জায়গা ঘুরেছি কিন্তু রাবার বাগানে এরকম অপরুপ দৃশ্য দেখে সত্যিই বিমোহিত। মনে হচ্ছে বাইরের কোনো দেশে এসেছি।’
বিটিআরআই চা বাগান সংলগ্ন রাবার বাগানের পাশে রাস্তার পাশে কয়েকটি গাড়ি দাঁড়ানো। গিয়ে দেখা গেলো, অনেক দর্শণার্থীরা ছবি তুলছেন। কেউ কেউ সেলফি নিচ্ছেন, আর হৈহুল্লোর করছেন। শিশুরাও এসব দৃশ্য দেশে বেশ উচ্ছসিত।
মোনালিসা নামের এক দর্শণার্থী বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘সত্যিই এক অপরূপ দৃশ্য। সারি সারি গাছের নিচে শুকনো পাতা ঝড়ে পড়েছে। আর গাছগুলো সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পাতার মর্মর শব্দগুলো সত্যি মন কেড়েছে। পরিবার নিয়ে এখানে ঘুঁরতে এসেছি। হঠাৎ চোখে পড়ল এরকম এক দৃশ্য। তাই গাড়ি থেকে নেমে ছবি তুলছি। স্মৃতি করে রাখবো। ছবি দেখলে মনে হবে যে শ্রীমঙ্গল বেড়াতে গিয়ে রাবার বাগানে ছবি তুলেছিলাম।’
স্থানীয় বাসিন্দা বিক্রমজিৎ বর্ধন বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘প্রতি বছরই ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকেই এই এলাকার প্রত্যেকটি রাবার বাগানের চিত্র বদলে যায়। গাছের পাতা ঝড়ে পরে মাটিতে। আর গাছগুলো মৃতের মতো দাড়িঁয়ে থাকে। প্রতিদিন পর্যটকরা রাবার বাগানের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে আসেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘রাবার বাগানের সবচেয়ে মনোমুগ্ধগর দৃশ্য দেখতে হলে বিকেলে আসাই ভালো। বিকেল শেষে যখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে তখনই সূর্য অস্তের দৃশ্যটা খুবই সুন্দর।’