ফিরে দেখা প্রথম এভারেস্ট বিজয়: পর্ব-২
ইভেন-বরিলিয়ান আউট, হিলারি-তেনজিং ইন
১৯৫৩ সালের মে মাসে দক্ষিণ দিক দিয়ে এভারেস্টে আরোহণের ‘সাউথ কল’-এর ২৫ হাজার ৯০০ ফুট ওপরে তৈরি হয় সামিট ক্যাম্প। এতদিন আবহাওয়া মোটামুটি খারাপ হলেও সহনীয় ছিল।
কিন্তু সামিট ক্যাম্প তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবহাওয়া গেল বিগড়ে। শুরু হল প্রচণ্ড তুষার ঝড়। প্রাকৃতিক বিরূপতা পাগলা মোষের মতো চারপাশ থেকে ঘিরে ধরলো অভিযাত্রী দলকে।
তবুও দমেনি এই দলটি। গতি কমিয়ে, থেমে থেমে এগিয়ে যেতে থাকে হিমালয়ের আরও গভীরে। পৌঁছে যায় সর্বোচ্চ শৃঙ্গের পাদদেশে। দিনটি ছিল মে ২৬। ডেপুটি লিডার ইভেন, তার সঙ্গী বরিলিয়ানকে নিয়ে অন্তিম আরোহণের জন্য চূড়ার দিকে যাত্রা শুরু করলেন। তখন আবহাওয়া ভাল-মন্দ মিশিয়ে। আরও কিছুটা কষ্ট করে সামনে এগিয়ে যেতে পারলেই এবার জয় প্রায় নিশ্চিত। এভারেস্ট হাতের মুঠোয় আসবেই। আশাবাদী হলেন দলের সবাই। ইভেন আর বরিলিয়ানকে জানালেন শুভেচ্ছা ও সমর্থন।
কিন্তু কে জানতো, শেষ মুহূর্তে দৃশ্যপট থেকে সম্ভাব্য শৃঙ্গজয়ী ইভেন-বরিলিয়ান জুটি ব্যর্থ হয়ে আউট হবেন আর হিলারি-তেনজিং জুটি ইন করবেন বিজয়ীর গৌরবে।
প্রথম এভারেস্ট জয়ের নেপথ্যে হিমালয়ের চরম বিরূপ আবহাওয়ার মধ্যে লেখা হয়ে যাবে অন্য রকম ইতিহাস, তা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি।
তখনই ভাগ্য নামক বিষয়টি সবার অলক্ষ্যে হেসেছিল, যা সবার দেখার কথা নয়। ইভেন-বরিলিয়ান জুটিও তা দেখেন নি। বরং তারা জয়ের উচ্ছ্বাস ও রোমাঞ্চে টগবগ করছিলেন।
ঠিক তখনই ঘটলো মহাবিপত্তি। অক্সিজেন সিলিন্ডার শুরু করলো ভীষণ গোলমাল। চূড়ার মাত্র তিনশো ফুট থেকে একান্ত বাধ্য হয়ে ব্যর্থ মনোরথে ফিরে এলেন ইভানরা। এছাড়া কোনও উপায়ও ছিল না। অক্সিজেন ছাড়া এতো উঁচুতে বেঁচে থাকা যায় না। শৃঙ্গ জয়ের চেয়ে জীবন রক্ষার পথই বেছে নিয়ে শৃঙ্গ জয়ের দ্বারপ্রান্ত থেকে পিছিয়ে এলেন ইভেন-বরিলিয়ান জুটি।
দলনেতা জন হান্ট বুদ্ধিমান। শক্ত ধাতুতে তৈরি ইংরেজ তিনি। ব্যর্থতায় আবেগতাড়িত হয়ে বসে থাকার লোক নন মোটেও। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে কালক্ষেপণ না করে তেনজিং-হিলারিকে পাঠিয়ে দিলেন শৃঙ্গ জয়ের জন্য এগিয়ে যেতে।
দলনেতার সিদ্ধান্ত পেয়ে দ্রুতই দ্বিতীয় গ্রুপ হিসেবে সামিট ক্যাম্প দখলে নিলেন তেনজিং-হিলারি জুটি। কিন্তু আবহাওয়া খারাপ হওয়ার জন্য এই গ্রুপটিও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারলেন না।
দু’তিনদিন ক্যাম্পে বন্দী রইলেন দলবলসহ। ততক্ষণে সবার অলক্ষ্যে ইতিহাসের অংশ হওয়ার মুখোমুখি তারা।
তেনজিংয়ের মনে তখন আবার ভয়। খুব ভেঙে পড়লেন তিনি। বয়সও বেড়ে যাচ্ছে। তখনই তিনি আটত্রিশ। এরপর শরীর যে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। এবারও কি হিমালয় খালি হাতে ফিরিয়ে দিবে তাকে?
হান্ট এবার আস্তিনের শেষ তাসটি ফেললেন। ২৮ মে তিনজনের একটি সহযোগী দল পাঠালেন। তারা সামিট ক্যাম্প থেকে এগিয়ে ২৭ হাজার ৯০০ ফুটে একটি তাঁবু গেড়ে নিচে বেস ক্যাম্পে ফিরে এলেন।
আরও পড়ুন: ১৬ বার ব্যর্থ হয়েছিলেন তেনজিং!