বসনিয়া গণহত্যার ২৪ বছর



ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
জাতিসংঘের রিফিউজি ক্যাম্পে বসনিয় মুসলিম

জাতিসংঘের রিফিউজি ক্যাম্পে বসনিয় মুসলিম

  • Font increase
  • Font Decrease

সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের পর পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েত সমাজতন্ত্রপন্থী দেশগুলোতেও পালাবদল দেখা দেয়। শুরু হয় নতুন রাষ্ট্রগঠন ও জাতিগত অধিকারের আন্দোলন। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় যুগোস্লাভিয়া। সে দেশের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মতো বসনিয়ান মুসলমানরাও স্বাধীকারের দাবি তোলেন।

কিন্তু সংখ্যাগুরু সার্বিয়ানরা সে দাবি না মেনে সংখ্যালঘু বসনিয়ান মুসলমানদের ব্যাপকভাবে হত্যা ও নির্যাতন করে। গত ১১ জুলাই নৃশংস গণহত্যার চব্বিশ বছর পূর্ণ হলো।

ইতিহাসের নৃশসংতম এ হত্যাকাণ্ড জাতিসংঘের নীরব সর্মথনে পরিচালিত হয়েছিল বলে অভিযোগ আছে। উগ্র খ্রিস্টান সার্বিয়ান কর্তৃক পরিচালিত গণহত্যায় নির্মম নির্যাতন, গণহারে ধর্ষণ আর দেশ থেকে বিতাড়নের ভয়াবহতম অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল বসনিয়ার মুসলমানদের।

পরিসংখ্যান মতে, ৪০ হাজার মুসলিম আদিবাসীকে উৎখাত করা হয় বসনিয়ার স্রেব্রেনিচা থেকে। জবাই করা হয় আট হাজার মুসলমানকে। হত্যার পর তড়িঘড়ি করে মৃতদের গণকবর দেওয়া হয়। হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহতা গোপন করতে পরে গণকবর থেকে মৃতদেহগুলো তুলে আলাদা ৭০টি স্থানে পুঁতে ফেলে সার্ব সেনারা। বসনিয়ার গণহত্যা পৃথিবীর ইতিহাসে নিষ্ঠুরতম জাতিগত নিধন ও চরম নৃশংসতার ঘৃণিত দৃষ্টান্ত হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আছে।

ঘটনার প্রাথমিক সূত্রপাত ১৯৯০ এর দশকে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর। চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটে যুগোস্লোভিয়ার রাষ্ট্রনায়ক মার্শাল টিটোর মৃত্যুর পর। তখন দেশটি বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে পড়ে, যেগুলো হলো, সার্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া, মেসিডোনিয়া, বসনিয়া প্রভৃতি। কিন্তু ভিন্ন ধর্মীয় ও জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধ দিলে আঞ্চলিক নেতারা সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হন। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি নৃশংস গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। সেটি ছিল ১৯৯১ সালের ঘটনা। গৃহযুদ্ধে সবচেয়ে বেশি নৃশংসতা আর নিপীড়নের শিকার হয় মুসলিম জনগোষ্ঠী।

উল্লেখ্য, সাবেক যুগোস্লাভ প্রজাতন্ত্রে কয়েকটি জাতির বাস ছিল। এদের মধ্যে সার্ব (গোঁড়া খ্রিস্টান) ৩৬.৫%, ক্রোট (রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টান) ১৯.৭% এবং মুসলমান ৮.৯%। বাকিরা অন্যান্য জাতি। জনসংখ্যার দিক থেকে সার্ব ও ক্রোটদের সংখ্যাই বেশি। এই দুটি জাতির প্রধান আবাসস্থল সার্বিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার মধ্যবর্তী এলাকায় অবস্থিত মুসলমানদের অঞ্চল বসনিয়া।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, পূর্ব ইউরোপের বলকান অঞ্চলের বসনিয়া জায়গাটি তুরস্কের উসমানিয়া খেলাফতের অধীনে শত শত বছর শাসনাধীন থেকে শক্তিশালী মুসলিম জনপদে পরিণত হয়। ১৯৭০ এর দশক পর্যন্ত বসনিয়ায় মুসলমানরা একক বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করত। পরবর্তী দুই দশকে, অসংখ্য সার্ব আর ক্রোয়াট বসনিয়ায় অভিবাসিত হন। এর ফলে ১৯৯১ এর এক আদমশুমারিতে দেখা যায়, বসনিয়ার ৪০ লাখ বাসিন্দার ৪৪ শতাংশ বসনিয়ান, ৩১ শতাংশ সার্ব, আর ১৭ শতাংশ ক্রোয়াট। তথাপি বসনিয়ার মুসলিম প্রাধান্য অব্যাহত থাকে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/13/1563003616371.jpg

গণহত্যা ও গৃহযুদ্ধ শুরু হলে পূর্ব বসনিয়ার তিনটি শহর–স্রেব্রেনিচা, জেপা, ও গোরাজদেকে ১৯৯৩-এ জাতিসংঘ ‘মুক্তাঞ্চল’ ঘোষণা করেছিল, যা নিরস্ত্রীকৃত ও রক্ষিত হওয়ার কথা ছিল আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনীদের দ্বারা। জাতিসংঘ কর্তৃক এলাকাগুলো মুক্তাঞ্চল ঘোষণার পর অন্যান্য এলাকার মুসলমানরাও নিরাপত্তার জন্য এ এলাকাগুলোতে এসে আশ্রয় নিয়েছিল সার্বদের নৃশংসতার কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য।

কিন্তু এখানকার আশ্রয় গ্রহণকারীরা সার্ব উগ্র খ্রিস্টানদের হামলা থেকে নিজেদের নিরাপদ মনে করতে পারছিলেন না। যে কোনো সময় সার্বরা আক্রমণ করে বসতে পারে, এমন আশঙ্কায় ছিলেন। কিন্তু জাতিসংঘের নিরাপত্তারক্ষীদের ওপরও ভরসা করা যাচ্ছিল না। যদিও মুক্তাঞ্চল ঘোষণার পর কোনো ধরনের সশস্ত্র তৎপরতা চালাতে নিষেধ করা হয়েছিল আন্তর্জাতিকভাবে এবং মুসলমানদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্যেও আত্মরক্ষামূলক প্রস্তুতি নিতে দেওয়া হয়নি। মুসলমানদের আত্মরক্ষার আবেদন জাতিসংঘ বারবার খারিজ করে দেয়।

ফলে মারাত্মক সংঘাত কবলিত অঞ্চলের মুসলমানদের আত্মরক্ষার কোনো প্রস্তুতি ছিল না। অথচ সার্ব ও ক্রোয়াটরা ছিল মারণাস্ত্র সজ্জিত। এমতাবস্থায় জাতিসংঘের মোতায়েনকৃত নিরাপত্তারক্ষীদের উপস্থিতিতেই ১৯৯৫-এর ১১ জুলাই সার্ব সেনারা রণসাজে স্রেব্রেনিচা এলাকায় আসে। আক্রমণকারীদের এলাকায় নিয়োজিত জাতিসংঘের নিরাপত্তারক্ষীরা সামান্যতমও বাধা দেয়নি। তাদের চোখের সামনেই হিংস্র খ্রিস্টান সার্ব সেনারা প্রথমে মুসলিম নারী ও শিশুদের আলাদা করে নেয়। তারপর পুরুষদেরকে গণহারে হত্যা করতে থাকে। শিশুরাও নিস্তার পায়নি এ নৃশংসতা থেকে। তবে নারীদেরকে বন্দী করে নিয়ে যায়। সার্বিয়ান বিশেষ শিবিরে নিয়ে চলানো হয় গণহারে ধর্ষণ।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/13/1563003891927.jpg

২৪ বছর আগের সেই কলঙ্কিত জাতিগত নিধন ও গণহত্যায় স্রেব্রেনিচায় সেদিন আট হাজারেরও অধিক মুসলমানকে হত্যা করে সার্ব বাহিনী। জাতিসংঘ এ অঞ্চলকে নিরাপদ বলে ঘোষণা করেছিল, সেখানেই মারা হয় মুসলমানদের। পাশেই দাঁড়ানো ছিল জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী। শান্তিরক্ষী সৈন্যরা ছিল হল্যান্ডের অধিবাসী। তারা যখন বসনিয়ায় শান্তি মিশনে এলো, তখন জঙ্গি সার্বরা ১৪ জন সেনাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। শান্তিরক্ষীরা স্বদেশি ওই ১৪ শান্তিরক্ষীকে মুক্ত করার জন্য বসনিয়ায় তাদের ঘাঁটিতে আশ্রয় নেওয়া এবং প্রায় ৫ হাজার বসনিয় মুসলমানকে জঙ্গি সার্বদের হাতে তুলে দেয়। সার্ব সেনারা শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা বিধানের প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে তাদের ওপর হামলা না করার ও তাদের নিরাপদে সার্বিয়া প্রত্যাবর্তনের সুযোগও লাভ করে।

ফলে নিষ্ক্রিয় শান্তিরক্ষী বাহিনীর চোখের সামনে আস্ত একটি শহরকে ধূলিস্মাৎ করে সার্বরা সে শহরের প্রায়-সকল স্থাপনা ধ্বংস ও নাগরিকদের বিনা বাধায় হত্যা করে। স্রেব্রেনিচার গণহত্যায় নিহত ব্যক্তিদের আত্মীয়-স্বজন ওই গণহত্যা প্রতিরোধে নিস্ক্রিয়তা ও গণহত্যায় সহায়তার জন্য দায়ী শান্তিরক্ষীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার উদ্যোগ নিলেও হেগের আন্তর্জাতিক আদালত ওই মামলা গ্রহণ করেনি। বসনিয়ার গণহত্যা শেষে সেখানকার জাতিগত শুদ্ধি অভিযান সম্পর্কে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টে স্রেব্রেনিচায় গণহত্যা ঠেকানোর ব্যাপারে হল্যান্ড সরকার ও জাতিসংঘের অবহেলার কথা স্বীকার করা হয়েছে। কিন্তু ওই মারাত্মক দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য এ পর্যন্ত হল্যান্ড এবং জাতিসংঘের তৎকালীন কোনো কর্মকর্তাকে কখনো বিচারের সম্মুখীন করা হয়নি।

বসনিয়ার গণহত্যা ও জাতিগত নিধনের নৃশংস ঘটনা ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়। হত্যাকারী সার্ব বাহিনীর পাশাপাশি নিষ্ক্রিয়তার মাধ্যমে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও অভিযুক্ত হয়ে আছে।

   

৫০ বছর আগে মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি আজও শ্রেষ্ঠ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সালটা ১৯৬৮। বিশ্বব্যাপী মানুষ মেতে উঠেছিল বড়দিনের আনন্দে। তখনো জানতো না, বড়দিন উপলক্ষে তারা একটি বিশেষ উপহার পেতে চলেছে। পৃথিবী থেকে আমরা হরহামেশাই চাঁদ দেখি। অমাবস্যা-পূর্ণিমা, এমনকি পক্ষের মাঝামাঝি সময়ের বদৌলতে নানা দৃষ্টিকোণে নানা আকারের চাঁদ দেখতে পাই। তবে চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন? এরকমটা হয়তো অনেকেই ভাবেন।

নাসার মহাকাশচারীরা অ্যাপোলো ৪ এ করে তখন চাঁদের চারপাশে টহল দিচ্ছে। সেখান থেকে তারা চাঁদের বাসকারীদের দৃষ্টিতে পৃথিবী কেমন হবে তার এক নমুনা জোগাড় করেন। ক্রিসমাসের কিছুদিন আগে ক্রুরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় ব্যারেন লুনার হরিজোন থেকে একটি ছবি তোলে। সেখানে সুদূর মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একটি সুন্দর দৃশ্য ধারণ করা হয়। চমৎকার সেই রঙিন ছবিটি সবকিছু পরিবর্তন করতে চলেছিল।

ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন নভোচারী বিল অ্যান্ডার্স এবং জিম লাভেল। ছবিটি ধারণ করার পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে যাওয়ার পরও এটিকে প্রকৃতির সবচেয়ে আইকনিক ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটিই মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম রঙিন এবং উচ্চ রেজুলেশনের ছবি।

১৯৭০ সালে পরিবেশ সচেতনতা এবং এই ব্যাপারে সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পৃথিবী দিবস প্রচারিত হওয়ার কারণে ছবিটিকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাইকেল প্রিচার্ড ছবিটিকে নিখুঁত দাবি করেন। তিনি বলেন, এই ছবিটি পৃথিবীর এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল, যা আগে কোনো ছবি করতে পারেনি। প্রকাণ্ড মহাবিশ্বে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা ক্ষুদ্র গ্রহ, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ছবিটি।

১৯৬০ সালের পরই পৃথিবী নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে। ষাটের দশকের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মানুষ অনুধাবন করে পৃথিবীকে আজীবন একইভাবে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রহের প্রতি আমাদের আরও অনুরাগী হতে হবে। সেই উদ্দেশে ১৯৬৯, ‘৭০ ও ‘৭১ সালে ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ এবং ‘গ্রিনপিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ছবিটি প্রকাশের ১৮ মাস পর ২০ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক পৃথিবী রক্ষার আন্দোলনে রাস্তায় নামে।

পৃথিবী রক্ষা করার জন্য মানুষদের উৎসাহিত করার বেলায় ছবিটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এখনো অবদি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর পাঠানো ছবিগুলোর মধ্যে ১৯৬৮ সালে বড়দিনের আগে তোলা সেই ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়।

;

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

;

অস্ট্রেলিয়ায় নিখোঁজ কুকুর ফিরলো যুক্তরাজ্যের মালিকের কাছে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয় যুক্তরাজ্যের এক দম্পতির পালিত কুকুর। যুক্তরাজ্যে আসার ১৭ দিন পর মিলো নামের কুকুরটিকে ফিরে পেয়েছেন জেসন হোয়াটনাল নিক রোল্যান্ডস দম্পতি।

হোয়াটনাল এবং তার সঙ্গী নিক সম্প্রতি তাদের কুকুর মিলোকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পরিদর্শনে যান। তারা যখন সোয়ানসিতে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তখন মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তার হ্যান্ডলার থেকে কুকুরটি পালিয়ে যায়।

সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটিকে অবশেষে মেলবোর্নের শহরতলিতে ১৭ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।


হোয়াটনাল স্কাই নিউজকে বলেন, ‘মিলোকে ফিরে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক ছিল আমার জন্য। যখন আমি আমার প্রিয় মিলোর (কুকুর) সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কান্না দেখে অন্যরাও কেঁদেছিল। এটি সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্য প্রান্তে থেকে মিলোর কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম না মিলো কোথায় আছে। এটি বেশ হতাশাজনক ছিল আমাদের জন্য, কিছুটা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাকে ফিরে পাবো ভাবিনি।

মিলোকে পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, তখন স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সাহায্য আসে, তারা মিলোর সন্ধান দেয়। মিলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

;

আমার হাতের পাখা যেন তাদের আরাম দিচ্ছে!



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

  • Font increase
  • Font Decrease

আবু বক্কর (৬২)। বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে তিনি এখন পাকা বিক্রেতা। প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষ যখন ঠান্ডা বাতাসের প্রশান্তি খুঁজছে, তখন তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন।

আবু বক্কর বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্ত্রীসহ ছয় মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। তবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু বয়সের ভারে ঠিকই আমরা একা থেকে গেলাম। শেষ বয়সে গ্রামে গ্রামে তালপাতা পাখা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। শুধু সংসার না, এই টাকায় আমার পায়ের শিরার ব্যথার ওষুধও কিনতে হয়। একবেলা ওষুধ না খেলে চলতে পারি না।

এদিকে, পুরনো ব্যবসার ঋণের বোঝা আর অন্যদিকে অসুস্থ হয়ে ওষুধসহ সংসারের খরচ। শেষ বয়সে তালপাতার পাখাই আমার একমাত্র জীবনসঙ্গী বলেন আবু বক্কর।

তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন আবু বক্কর, ছবি- বার্তা২৪.কম

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের কবিগানের অনুষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, একপাশে তালপাতার পাখা বিক্রি করতে ব্যস্ত ছোট্ট পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ। এই গরমে যখন তার ঘরে থাকার কথা, তখন সে নানা-নানীর সঙ্গে এসে তালপাতার পাখা বিক্রি করছে। কবিগানে বসে থাকা সব শ্রোতার কাছে গিয়ে বলছে, পাখা লাগবে, পাখা! কথা বলতে চাইলেও এ পাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, ক্রেতার কাছে।

এক ফাঁকে তাকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, এই বয়সে পাখা বিক্রি করছো কেন! এ প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে মাহমুদুল্লাহ বলে, প্রচণ্ড গরমে স্কুল ছুটি। তাই, নানা-নানীর সঙ্গে চলে এসেছি মেলায় পাখা বিক্রি করতে। মানুষজন আমার কাছ থেকে যেন বেশি পাখা কেনে (ক্রয়), তাই আমি মেলায় তাদের সঙ্গে এসেছি।

অনেক উৎসাহের সঙ্গে সে বলে, গরমে আমার হাতের পাখায় যেন তাদের আরাম দিচ্ছে! মেলা হলে আমি সেখানে চলে যাই পাখা বিক্রি করতে। ঘোরাঘুরিও হয় আর টাকা ইনকামও হয়। টাকার জন্য বের হয়ে পড়েছি। আমরা পাখা বিক্রি করে পেট চালাই। নানা-নানী বুড়ো হয়ে গেছে। তাই, আমি সঙ্গে এসে তাদের কষ্টটাকে একটু ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।

যেখানে প্রচণ্ড তাপে মানুষজন নাজেহাল, সেখানে ছোট্ট মাহমুদুল্লাহ ছুটে চলেছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাখা বিক্রি করতে। ছোট্ট শিশু হলেও গরম যেন তার কাছে কিছু না, পেটের তাগিদে!

আরেক পাখা বিক্রেতা তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা ভদ্রকান্ত সরকার (৭০)। ১২-১৪ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি।

চলছে তালপাতার পাখার বিকিকিনি, ছবি- বার্তা২৪.কম

শেষ বয়সে পাখা কেন বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে ভদ্রকান্ত বলেন, চাল কিনে খেতে হয়। খুব কষ্টের সংসার! ছেলে-মেয়ে আছে। তারা তাদের মতো কাজ করে খায়। মা বাবার বয়স হয়ে গেলে ছেলে আর আমাদের থাকে না। আমরা বৃদ্ধ বয়সে কেমন আছি, সেটা জানার সুযোগ তাদের থাকে না। শেষজীবনটা এভাবে পাখা বিক্রি করে কাটিয়ে দেবো। কী আর করবো! কপালে যা আছে, শেষপর্যন্ত তাই হবে। কপালে ছিল, এমন বৃদ্ধ বয়সে গ্রামে গ্রামে পাখা বিক্রি করতে হবে!

;