হারকিউলিস জীবন মানেই অভিযাত্রা



আহমেদ দীন রুমি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
হারকিউলিস

হারকিউলিস

  • Font increase
  • Font Decrease

আল্কমিনার দুই ছেলে। বরাবরের মতো পাশের ঘরে দোলনায় ঘুম পাড়িয়ে রেখে গেল। কিন্তু এইবার ঘটতে চলছিল অন্যকিছু। মাঝরাতে ছেলেদের ঘরে প্রবেশ করল দুইটা সাপ। আবছা আলোয় জেগে উঠল দুজনেই। একজন তো সাপের ফণা দেখেই চোখ বুজে চিৎকার। আর অন্যজন? সে শুধু উঠেই বসল না, দুই হাতে টিপে ধরে রইল দুটো সাপের গলা। মা ঘরে এসে বিস্ময়ে থ। জড়ো হলো পাড়ার লোক। ততক্ষণে মরে গেছে বেচারা সাপ। সেদিন থেকেই মানুষের বিশ্বাস হতে থাকে, এই শিশু সাধারণ আট দশটা শিশুর মতো না। হবে মানবজাতির শ্রেষ্ঠ বীর।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/17/1563352692243.jpg
শৈশবেই সাপের গলা চেপে ধরে ভবিষ্যৎ জানিয়ে দেয় হারকিউলিস ◢

 

শিশুটির নাম হারকিউলিস। গ্রিক বীরদের মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয়। দেবতা জিউস এবং মানবী আল্কমিনার পুত্র। জিউসের নারীপ্রীতি সুপরিচিত। আল্কমিনার কাছে সে আসে তার স্বামী এমফিত্রিয়নের ছদ্মবেশে। সে যাই হোক, হারকিউলিসের জন্ম থিবিসে। বস্তুত তার জন্মগত নাম আলসিয়াস। হারকিউলিস ছিল উপাধি। যার অর্থ “দেবী হেরার মহত্ত্ব”। যেহেতু হেরার দেওয়া পরীক্ষাগুলোর ভেতর দিয়ে যাবার কারণেই তার জগৎজোড়া খ্যাতি আসে। ছেলেবেলা থেকেই গরম ছিল মাথা। একদিন তো ক্রোধের বশে আঘাতই করে বসলেন গানের শিক্ষককে। পরিণামে পটল তুললেন মাস্টার মশাই। যদিও হারকিউলিস ব্যথিত হয়েছিল, কিন্তু অভ্যাসের বদল আনতে পারেনি। বধ করল থেসপিয় সিংহ। যুদ্ধ করে পরাজিত করল মিনিয়দের।

জিউসের অবৈধ সন্তান বলে জিউসপত্নী দেবী হেরা শুরু থেকেই তার ওপর নাখোশ ছিলেন। নানা ঘটনায় পুঞ্জিভূত হচ্ছিল ক্ষোভ। এজন্য বেশ ভুগতে হয় দিনশেষে। হেরা উন্মাদে পরিণত করেন হারকিউলিসকে। এতটাই উন্মাদ যে, স্ত্রী আর তিন সন্তানকে হত্যা করে ফেলল নিজের হাতে। 

জ্ঞান ফেরার পর হারকিউলিস চেয়েছিল আত্মহত্যা করতে। হত্যা পাপের প্রায়শ্চিত্য হিসেবে। কিন্তু বন্ধু থিসিউস তাকে থামাল। সাথে করে নিয়ে গেল এথেন্স। কিন্তু দেশ বদলালেই কি আর অপরাধবোধ মুছে যায়? তাই পাপমুক্ত হবার জন্য হারকিউলিস গেল ডেলফির মন্দিরে। মহিলা পুরোহিত বাতলে দিলেন মুক্তির পথ। মাইসেনীয় রাজা ইউরেস্থিউসের ইচ্ছে পূরণ করতে হবে। হারকিউলিস রাজি হলো এবং একে একে করল বারোটি অসাধ্য কাজ। যা “টুয়েলভ্ লেবার অব হারকিউলিস” হিসেবে পরিচিত। 

প্রথম কাজ ছিল নিমিয়ার সিংহকে বধ করা। কোনো অস্ত্রে আহত না হওয়া জন্তুকে হারকিউলিস হত্যা করল শ্বাসরোধ করে। দ্বিতীয় কাজ লার্নার জলভূমিতে গিয়ে নয় মাথাওয়ালা দানব হাইড্রাকে দমন করা। কাজটা বিপজ্জনক। একটা মাথা কেটে ফেললে দুটি মাথা গজাত। শেষমেশ উপায় পাওয়া গেল। হারকিউলিস মাথা কেটে প্রতিবার ঘাড়ে জ্বলন্ত লোহা দিয়ে ঝলসে দিল, যেন আর না গজাতে পারে। সবশেষে বাকি থাকা অমর অংশটি চাপা দিয়ে রাখল বিরাট এক পাথরের নিচে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/17/1563353035176.jpg
হারকিউলিসের নিমিয়ার সিংহ বধ ◢

 

তৃতীয় কাজ আর্তেমিসের পবিত্র হরিণ ধরে আনা। এক বছর সময় নিয়ে সেরেনিয়াসের বন থেকে সফল হিসেবে ফিরল হারকিউলিস। চতুর্থ কাজ এরিমেন্থাস পর্বতের গুহা থেকে বন্য শুকর বধ করা। পিছু তাড়া করে তুষারের দিকে নেওয়া হলো এবং তারপর করা হলো আটক। পঞ্চম কাজ অজিয়াসের আস্তাবল পরিষ্কার করা। দুইটা নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে দিল হারকিউলিস। নদীর পানি বানের মতো এসে সাফ করে গেল অতিকায় আস্তাবল। 

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/17/1563353114390.jpg
হারকিউলিসের হাইড্রা দমন ◢

 

ষষ্ঠ কাজ মহামারি নিয়ে আসা স্টিমফ্যালিয়ন পাখিগুলোকে তাড়ানো। এক্ষেত্রে দেবী এথেনা তাকে সাহায্য করেন। এথেনা পাখিগুলোকে খেদিয়ে দেন বিভিন্ন ঝোঁপঝাড় থেকে। আর উড়ে যেতে থাকা পাখিকে তীরবিদ্ধ করে মাটিতে ফেলে হারকিউলিস।

সমুদ্রদেব পসাইডন একটা ষাঁড় উপহার দেন ক্রিটের রাজা মিনসকে। হারকিউলিসের সপ্তম কাজ ছিল তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা। ষাঁড়টি পানির ওপর দিয়ে হাঁটতে পারত। মিনস তাকে আর রাখাতে ইচ্ছুক ছিল না। বস্তুত মিনসের স্ত্রী রাণী পাসিফেই ষাঁড়টির প্রেমে পড়ে যায় এমনকি গর্ভবতী হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে রাণী মিনোটর নামে অর্ধেক মানুষ অর্ধেক ষাঁড়ের জন্মদান করেন। রাগে ক্ষোভে রাজা একটি গোলকধাঁধা ল্যাবিরিন্থ তৈরি করালেন। এই ল্যাবিরিন্থেই রচিত ডিউডেলাস এবং তার পুত্র ইকারাসের সেই পরিচিত আকাশে ওড়ার আখ্যান। যাহোক, শেষপর্যন্ত হারকিউলিস ষাঁড়টা নিয়েই ফিরে আসেন ইউরেস্থিউসের কাছে। আবার অরাজকতা তৈরি হলে থিসিয়াস ষাঁড়টা বধ করে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/17/1563353260297.jpg
হারকিউলিস এবং ক্রিটের ষাঁড় ◢

 

অষ্টম দায়িত্ব ছিল আরো কঠিন। থ্রেসের রাজা ডায়ামিডিসের ঘোড়া নিয়ে আসা। যেনতেন না, মানুষখেকো ঘোড়া। হারকিউলিস প্রথমে ডায়োমিডিসকে হত্যা করল। তারপর নিয়ে এলো ঘোড়া।

আমাজনদের রাণী হিপ্পোলাইটির কোমরবন্ধনী আনা ছিল নবম দায়িত্ব। হারকিউলিস চেয়েছিল সদয়ভাবেই কাজটা শেষ করবে। কিন্তু জট পাকাল হেরার হস্তক্ষেপ। আমাজনরা ভেবে বসল হারকিউলিস তাদের রাণীকে অপহরণ করতে এসেছে। সুতরাং সংঘর্ষ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠল। হারকিউলিসের হাতে নিহত হলো হিপ্পোলাইটি। কোমরবন্ধনী হাতে এলো অনেক পানি ঘোলা হলে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/17/1563353381444.jpg
তারপরেও হিপ্পোলাইটার কোমরবন্ধনী নিয়ে ফেরেন হারকিউলিস ◢

 

দশম কাজ তিনদেহ বিশিষ্ট দানব গেরাইয়নের গরুগুলো নিয়ে আসা। এই যাত্রাতেই হারকিউলিস ভূমধ্যসাগরের শেষভাগে দুটি স্তম্ভ নির্মাণ করে, যা “হারকিউলিসের স্তম্ভ” নামে পরিচিত। মনে করা হয় স্তম্ভ দুটির একটি ইউরোপ অংশে আধুনিক জিব্রাল্টার এবং অন্যটি আফ্রিকা অংশে সিওটা। যাহোক, হারকিউলিসের জন্য গরু খুঁজে পেতে অসুবিধা হলো না। ফিরল বিজয়ী হিসেবেই।

এবার দায়িত্ব আসলো হেসপেবাইডিসদের সোনার আপেল আনার। একাদশতম কাজ। কিছুটা চিন্তা করে আর কিছুটা প্রমিথিউসের বুদ্ধিতে হারকিউলিস অ্যাটলাসের কাছে গেল। কারণ অ্যাটলাস ছিল হেসপেবাইডিসদের পিতা। যেহেতু অ্যাটলাস পৃথিবীর ভর বহন করছিল, হারকিউলিস প্রস্তাব করল অন্য রকমভাবে। যতক্ষণ অ্যাটলাস আপেলের জন্য বাইরে থাকবে, ততক্ষণ সে নিজে পৃথিবীর ভার বহন করবে হারকিউলিস। প্রস্তাব মনে ধরল অ্যাটলাসের।

ঘটনা পেঁচিয়ে গেল এর পরেই। অ্যাটলাস আপেল আনল ঠিকই, কিন্তু তা হারকিউলিসের হাতে দিতে অস্বীকার করল। চিরদিনের জন্য পৃথিবীর ভারবহন থেকে মুক্ত হবার লোভ আসাটা স্বাভাবিক। অ্যাটলাস গোঁ ধরেছিল, ইউরেস্থিউসের কাছে সোনার আপেল সে পৌঁছে দেবে। খুব সম্ভবত প্রথমবারের মতো হারকিউলিস শরীরের বদলে মাথাকে ব্যবহার করল এবার। অ্যাটলাসকে অল্প সময়ের জন্য ধরতে বলল কাঁধ বদলের অজুহাতে। বেচারা অ্যাটলাস যেই আবার কাঁধে নিল, হারকিউলিস সাথে সাথে আপেল নিয়ে উধাও। 

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/17/1563353497744.jpg
হারকিউলিস এবং অ্যাটলাস ◢

 

দ্বাদশ বা শেষ কাজ পাতাল থেকে সারবেরাসকে মর্ত্যে নিয়ে আসা। সারবেরাস তিন মাথাওয়ালা পাতালের প্রহরী কুকুরের নাম। কাজটা অসম্ভব। তারপরেও হারকিউলিস যাত্রা করল। যেতে যেতে থিসিয়াসকে মুক্ত করল ‘বিস্মৃতির আসন’ থেকে। দেখা হলো বীর মিলেগারের সাথে। পাতাল দেবতা হেডেসের সাথে কথা বলে সারবেরাসকে ধরে নিয়েই ফিরল হারকিউলিস। 

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/17/1563353601324.jpg
সারবেরাসকে জীবিত ধরে আনেন হারকিউলিস ◢

 

বারোটা অভিযানে আটকে দেওয়া হলেও প্রকৃতপক্ষে হারকিউলিসের অভিযান কখনো শেষ হয়নি। এরপরেও দানব অ্যান্টিউসের সাথে যুদ্ধ করে পরাজিত করা, ষাঁড়রূপী অ্যাকিলাসকে হত্যা করা এবং প্রমিথিউসকে উদ্ধার করা তাঁর কীর্তি। এই সেই প্রমিথিউস, স্বর্গ থেকে মানুষকে আগুন চুরি করে এনে দেবার জন্য যাকে জিউসের রোষানলে পড়তে হয়েছে। হারকিউলিস আসার আগে পর্যন্ত।

কিছু খারাপ কাজও করেছিল হারকিউলিস। খাওয়ার আগে হাতে পানি ঢেলে দেবার কারণে এক বালককে ঘুষি দিল। আর তাতে মারা গেল ছেলেটি। এরচেয়ে বাজে ছিল ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে হত্যা। এইবার জিউস গেলেন রেগে। হারকিউলিসকে শাস্তি স্বরূপ লিডিয়ায় পাঠানো হলো রাণী ওমফেলের ক্রীতদাস হিসেবে। রাণী মজা করতেন তাকে নিয়ে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছিল যে, রাণী তাকে নারীপোশাকে সজ্জিত করে নারীসুলভ কাজ করিয়ে নিতেন। অপমানিত হারকিউলিস মুখ বুজে পালন করত। আর ইউরিটাসকে শাস্তি দেবার শপথ নিত। বলা বাহুল্য, ইউরিটাস তার সেই খুন হওয়া বন্ধুর বাবা।

মুক্তি পাবার পর প্রতীজ্ঞা অনুযায়ী হারকিউলিস সৈন্য সংগ্রহ করতে লাগলেন। তারপর দখল করলেন ইউরিটাসের নগরী। প্রাথমিকভাবে জয়ী হলেও এর পরিণাম ভালো হয়নি। বস্তুত এর মাঝেই লুক্কায়িত ছিল তার পতনের ‍গল্প। নগর পুরোপুরি ধ্বংস করার আগে হারকিউলিস প্রিয়তমা স্ত্রী ডিয়ানাইয়াকে উপহার হিসেবে পাঠাল একদল কুমারী। তাদের মধ্যে অপরূপ ‍সুন্দরী রাজকন্যা আয়োলিও ছিল। স্বামীর জন্য অপেক্ষমান ডিয়ানাইয়ার কাছে উপঢৌকন পৌঁছাল খুব দ্রুতই। কিন্তু নিয়তি চাচ্ছিল অন্যকিছু্। হয়তো এজন্যই সাথে আসা দূত ডিয়ানাইয়ার কাছে বলে গেল একটা কথা। অনেক কিছু ঘটে গেছে। হারকিউলিস রাজকন্যা আয়োলির প্রেমে বুঁদ।

ডিয়ানাইয়া কথাটা অবিশ্বাস করতে পারেনি। সাত পাঁচ ভেবে আর আয়োলির রূপ দেখে বিশ্বাস পরিণত হলো সন্দেহ। তাছাড়া সে নিজেও নারী। জানে রূপ কতটা ভয়ানক অস্ত্র হতে পারে পুরুষকে কাবু করার জন্য। রাগে ক্ষোভে জ্বলে উঠল তাই। প্রতিশোধের নেশায় দূতকে দিয়ে হারকিউলিসের জন্য পাঠাল চকচকে জামা। জামায় মাখিয়ে দিল বহুদিন থেকে জমিয়ে রাখা জাদুময় সেন্টরের রক্ত।

স্ত্রীর উপহার গায়ে জড়ানোর সাথে সাথে হারকিউলিস ককিয়ে উঠল অসহ্য ভয়ানক ব্যথায়। দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে দূতকে ছুঁড়ে মারল ‍সমুদ্রে। আরো কতজনকে যে মারা পড়তে হতো তার ইয়ত্তা নাই। ‍সাধারণ মানুষ হলে অনেক আগেই মৃত্যু হতো। এদিকে সত্য চাপা থাকল না। প্রিয়তম স্বামীর যন্ত্রণাকাতর অবস্থার কথা শুনে কেঁপে উঠল ডিয়ানাইয়া। আত্মহত্যা করল আর কিছু না ভেবে। যদিও একই রাস্তা বেছে নিল হারকিউলিস।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/17/1563353749509.jpg
স্বেচ্ছায় মৃত্যুর কোলে ঠাঁই নেয় হারকিউলিস ◢

 

হারকিউলিস জানত, মৃত্যু তার কাছে আসবে না। সুতরাং নিজেই ঝাঁপিয়ে পড়ল মৃত্যুর কোলে। বিশাল চিতা নির্মাণ করাল অনুসারীদের দ্বারা। তারপর আস্তে করে এগিয়ে এসে শুয়ে পড়ল চিতার ওপর। তরুণ শিষ্য ফিলোকটেটিসকে বলল আগুন লাগাতে। বিব্রত শিষ্য বিষাদমুখে গুরুর আদেশ পালন করল। আর একটু পরেই দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল আগুন। এই ঘটনার পর আর হারকিউলিসকে মর্ত্যে দেখা যায়নি। তাকে ‍স্বর্গে তুলে নেওয়া হয়। দেবী হেরা এবার তাকে শুধু গ্রহণই করলেন না, নিজ কন্যা হেবের সাথে মিলিয়ে দিলেন। 

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/17/1563353865093.jpg
হারকিউলিসের মন্দির ◢

 

হারকিউলিসের আখ্যান জীবনকে অভিযাত্রার সমন্বয় হিসেবে উপস্থাপন করে। প্রত্যেক মানুষকেই প্রায় অসম্ভব ক্ষমতাধর দানবের মুখোমুখি হতে হয় জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে। হারকিউলিস যেন হার না মানা নাছোড়বান্দা মানুষকেই ধারণ করে। যেমনটা হেমিংওয়ে বলেছেন—

“A man may be destroyed, but not defeated.”

এজন্য হারকিউলিস প্রিয় হয়ে উঠেছে মানুষের মনে। প্রবেশ করেছে ‍সকল সংস্কৃতিতে। প্রবীণ সাহিত্যিক থেকে শুরু করে নবীন প্রেমিক পর্যন্ত। হারকিউলিস বেঁচে থাকবে ততদিন, যতদিন মানুষের মাঝে থাকবে টিকে থাকার সংগ্রাম। বাঁধাকে জয় করার নিরন্তর প্রচেষ্টা।

 

উৎসসমূহ
১. এডিথ হ্যামিলটন- মিথোলজি
২. এইচ এ গুয়েরবার- দ্যা মিথস্ অব গ্রিস এন্ড রোম

   

৫০ বছর আগে মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি আজও শ্রেষ্ঠ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সালটা ১৯৬৮। বিশ্বব্যাপী মানুষ মেতে উঠেছিল বড়দিনের আনন্দে। তখনো জানতো না, বড়দিন উপলক্ষে তারা একটি বিশেষ উপহার পেতে চলেছে। পৃথিবী থেকে আমরা হরহামেশাই চাঁদ দেখি। অমাবস্যা-পূর্ণিমা, এমনকি পক্ষের মাঝামাঝি সময়ের বদৌলতে নানা দৃষ্টিকোণে নানা আকারের চাঁদ দেখতে পাই। তবে চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন? এরকমটা হয়তো অনেকেই ভাবেন।

নাসার মহাকাশচারীরা অ্যাপোলো ৪ এ করে তখন চাঁদের চারপাশে টহল দিচ্ছে। সেখান থেকে তারা চাঁদের বাসকারীদের দৃষ্টিতে পৃথিবী কেমন হবে তার এক নমুনা জোগাড় করেন। ক্রিসমাসের কিছুদিন আগে ক্রুরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় ব্যারেন লুনার হরিজোন থেকে একটি ছবি তোলে। সেখানে সুদূর মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একটি সুন্দর দৃশ্য ধারণ করা হয়। চমৎকার সেই রঙিন ছবিটি সবকিছু পরিবর্তন করতে চলেছিল।

ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন নভোচারী বিল অ্যান্ডার্স এবং জিম লাভেল। ছবিটি ধারণ করার পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে যাওয়ার পরও এটিকে প্রকৃতির সবচেয়ে আইকনিক ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটিই মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম রঙিন এবং উচ্চ রেজুলেশনের ছবি।

১৯৭০ সালে পরিবেশ সচেতনতা এবং এই ব্যাপারে সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পৃথিবী দিবস প্রচারিত হওয়ার কারণে ছবিটিকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাইকেল প্রিচার্ড ছবিটিকে নিখুঁত দাবি করেন। তিনি বলেন, এই ছবিটি পৃথিবীর এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল, যা আগে কোনো ছবি করতে পারেনি। প্রকাণ্ড মহাবিশ্বে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা ক্ষুদ্র গ্রহ, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ছবিটি।

১৯৬০ সালের পরই পৃথিবী নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে। ষাটের দশকের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মানুষ অনুধাবন করে পৃথিবীকে আজীবন একইভাবে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রহের প্রতি আমাদের আরও অনুরাগী হতে হবে। সেই উদ্দেশে ১৯৬৯, ‘৭০ ও ‘৭১ সালে ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ এবং ‘গ্রিনপিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ছবিটি প্রকাশের ১৮ মাস পর ২০ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক পৃথিবী রক্ষার আন্দোলনে রাস্তায় নামে।

পৃথিবী রক্ষা করার জন্য মানুষদের উৎসাহিত করার বেলায় ছবিটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এখনো অবদি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর পাঠানো ছবিগুলোর মধ্যে ১৯৬৮ সালে বড়দিনের আগে তোলা সেই ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়।

;

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

;

অস্ট্রেলিয়ায় নিখোঁজ কুকুর ফিরলো যুক্তরাজ্যের মালিকের কাছে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয় যুক্তরাজ্যের এক দম্পতির পালিত কুকুর। যুক্তরাজ্যে আসার ১৭ দিন পর মিলো নামের কুকুরটিকে ফিরে পেয়েছেন জেসন হোয়াটনাল নিক রোল্যান্ডস দম্পতি।

হোয়াটনাল এবং তার সঙ্গী নিক সম্প্রতি তাদের কুকুর মিলোকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পরিদর্শনে যান। তারা যখন সোয়ানসিতে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তখন মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তার হ্যান্ডলার থেকে কুকুরটি পালিয়ে যায়।

সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটিকে অবশেষে মেলবোর্নের শহরতলিতে ১৭ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।


হোয়াটনাল স্কাই নিউজকে বলেন, ‘মিলোকে ফিরে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক ছিল আমার জন্য। যখন আমি আমার প্রিয় মিলোর (কুকুর) সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কান্না দেখে অন্যরাও কেঁদেছিল। এটি সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্য প্রান্তে থেকে মিলোর কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম না মিলো কোথায় আছে। এটি বেশ হতাশাজনক ছিল আমাদের জন্য, কিছুটা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাকে ফিরে পাবো ভাবিনি।

মিলোকে পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, তখন স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সাহায্য আসে, তারা মিলোর সন্ধান দেয়। মিলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

;

আমার হাতের পাখা যেন তাদের আরাম দিচ্ছে!



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

  • Font increase
  • Font Decrease

আবু বক্কর (৬২)। বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে তিনি এখন পাকা বিক্রেতা। প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষ যখন ঠান্ডা বাতাসের প্রশান্তি খুঁজছে, তখন তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন।

আবু বক্কর বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্ত্রীসহ ছয় মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। তবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু বয়সের ভারে ঠিকই আমরা একা থেকে গেলাম। শেষ বয়সে গ্রামে গ্রামে তালপাতা পাখা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। শুধু সংসার না, এই টাকায় আমার পায়ের শিরার ব্যথার ওষুধও কিনতে হয়। একবেলা ওষুধ না খেলে চলতে পারি না।

এদিকে, পুরনো ব্যবসার ঋণের বোঝা আর অন্যদিকে অসুস্থ হয়ে ওষুধসহ সংসারের খরচ। শেষ বয়সে তালপাতার পাখাই আমার একমাত্র জীবনসঙ্গী বলেন আবু বক্কর।

তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন আবু বক্কর, ছবি- বার্তা২৪.কম

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের কবিগানের অনুষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, একপাশে তালপাতার পাখা বিক্রি করতে ব্যস্ত ছোট্ট পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ। এই গরমে যখন তার ঘরে থাকার কথা, তখন সে নানা-নানীর সঙ্গে এসে তালপাতার পাখা বিক্রি করছে। কবিগানে বসে থাকা সব শ্রোতার কাছে গিয়ে বলছে, পাখা লাগবে, পাখা! কথা বলতে চাইলেও এ পাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, ক্রেতার কাছে।

এক ফাঁকে তাকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, এই বয়সে পাখা বিক্রি করছো কেন! এ প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে মাহমুদুল্লাহ বলে, প্রচণ্ড গরমে স্কুল ছুটি। তাই, নানা-নানীর সঙ্গে চলে এসেছি মেলায় পাখা বিক্রি করতে। মানুষজন আমার কাছ থেকে যেন বেশি পাখা কেনে (ক্রয়), তাই আমি মেলায় তাদের সঙ্গে এসেছি।

অনেক উৎসাহের সঙ্গে সে বলে, গরমে আমার হাতের পাখায় যেন তাদের আরাম দিচ্ছে! মেলা হলে আমি সেখানে চলে যাই পাখা বিক্রি করতে। ঘোরাঘুরিও হয় আর টাকা ইনকামও হয়। টাকার জন্য বের হয়ে পড়েছি। আমরা পাখা বিক্রি করে পেট চালাই। নানা-নানী বুড়ো হয়ে গেছে। তাই, আমি সঙ্গে এসে তাদের কষ্টটাকে একটু ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।

যেখানে প্রচণ্ড তাপে মানুষজন নাজেহাল, সেখানে ছোট্ট মাহমুদুল্লাহ ছুটে চলেছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাখা বিক্রি করতে। ছোট্ট শিশু হলেও গরম যেন তার কাছে কিছু না, পেটের তাগিদে!

আরেক পাখা বিক্রেতা তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা ভদ্রকান্ত সরকার (৭০)। ১২-১৪ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি।

চলছে তালপাতার পাখার বিকিকিনি, ছবি- বার্তা২৪.কম

শেষ বয়সে পাখা কেন বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে ভদ্রকান্ত বলেন, চাল কিনে খেতে হয়। খুব কষ্টের সংসার! ছেলে-মেয়ে আছে। তারা তাদের মতো কাজ করে খায়। মা বাবার বয়স হয়ে গেলে ছেলে আর আমাদের থাকে না। আমরা বৃদ্ধ বয়সে কেমন আছি, সেটা জানার সুযোগ তাদের থাকে না। শেষজীবনটা এভাবে পাখা বিক্রি করে কাটিয়ে দেবো। কী আর করবো! কপালে যা আছে, শেষপর্যন্ত তাই হবে। কপালে ছিল, এমন বৃদ্ধ বয়সে গ্রামে গ্রামে পাখা বিক্রি করতে হবে!

;