পাখিটির আঙুল তার পায়ের চেয়েও লম্বা!

  • খুররম জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

একটি পাখির আঙুল তার পায়ের চেয়েও লম্বা। নয় কোটি নয় লাখ বছর আগে চড়ুই পাখির চেয়ে ছোট এই পাখিটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বনে উড়ে বেড়াত।

এমনই প্রাচীন ছোট্ট একটি পাখির জীবাশ্ম আবিষ্কার হয়েছে মিয়ানমারের হকাউং উপত্যকায়। এই উপত্যকার পাশেই ভারতের দু’টি রাজ্য নাগাল্যান্ড ও আসাম অবস্থিত; পাশেই বাংলাদেশ। তাই ধারণা করা যেতে পারে- এ পাখির বিস্তার এই এলাকায় অবারিত ছিল।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি চীন থেকে জীববিজ্ঞান গবেষণা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে প্রাচীন এই পাখির বর্ণনা উঠে আসে।

বেইজিংয়ে চায়না ইউনিভার্সিটি অব জিওসাইন্সের গবেষক লিদা জিং বলেন, আমরা আগে পাখিদের নিয়ে যে ধারণা করতাম প্রাচীন পাখিরা সেই ধারণার চেয়েও অনেক বৈচিত্র্যময় ছিল। তারা তাদের পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার জন্য অনেকগুলো ভিন্ন বৈশিষ্ট্য গড়ে তুলেছিল।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, পাখিটি একটি চড়ুই পাখির থেকে ছোট ছিল। আর সে বেশিরভাগ সময় গাছেই কাটিয়ে দিত।

চাইনিজ একাডেমি অব সায়েন্সের সহকারী গবেষক জিংমাই ও'কনোর বলেন, ‘সাধারণত যে প্রাণিগুলো সারাজীবন গাছেই অতিবাহিত করে, তাদের আঙুলগুলো লম্বা হয়ে থাকে। কিন্তু বিশেষ একটি আঙুল পাখিটির পায়ের চেয়ে বড় হতে পারে, তা আগে কখনও দেখা যায়নি।

Bird

‘সাধারণত আপনি যে প্রাণিদের জঙ্গলে দেখতে পান, তারা গাছের শাখাগুলো ধরতে এবং চারপাশে তাদের পায়ের আঙুল মোড়াতে সক্ষম। কিন্তু পায়ের দৈর্ঘ্যের সঙ্গে একটি বিশেষ নখের এই চরম পার্থক্য, যতদূর আমরা জানি, আগে কখনও দেখা যায়নি।’

নমুনা বিশ্লেষণ করে ধারণা পাওয়া যায়- প্রাচীন মধ্যযুগে (মেসোজয়িক যুগ) হকাউং উপত্যকা গাছপালায় পূর্ণ ছিল। আর গাছগুলোর কাণ্ড থেকে থকথকে আঠা বের হতো। সে আঠায় অনেক পোকামাকড়, এমনকি পাখিও আটকে যেত। কালের পরিক্রমায় এই আটকে যাওয়া প্রাণিগুলো ফসিলে পরিণত হয়েছে।

বিজ্ঞানীরা এর আগেও এ অঞ্চলে তখনকার অনেক জীবিত প্রাণি ছাড়াও বিলুপ্ত প্রাচীন অনেক মৌমাছি এবং উড়ন্ত ডাইনোসরের জীবাশ্ম পেয়েছেন।

স্থানীয় এমবার ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এই পাখিটির এমবার উদ্ধার করে বিজ্ঞানীরা মাইক্রো-সিটি দিয়ে জীবাশ্ম স্ক্যান করেন। পাখিটির পায়ের থ্রি-ডি ছবি তৈরি করতে সক্ষম হন তারা। স্থানীয় এমবার ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ফসিল অলংকার হিসেবে বিক্রি করে থাকেন।

তারা পাখির তৃতীয় আঙুলটি মেপে দেখে ০.৮ মিলিমিটার লম্বা, যা দ্বিতীয় আঙুলের চেয়ে ৪১ শতাংশ লম্বা। তার পাখিটির পায়ের হাড়ের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি।

গবেষকরা একই যুগের বিলুপ্ত আরো ২২টি পাখির এবং ৬২ জীবিত পাখির সঙ্গে তুলনা করে দেখেন- এই পাখিটিরই এই লম্বা আঙুল ছিল, যা দিয়ে সে গাছের কোটরে লুকিয়ে থাকা লার্ভা, পোকামাকড় বের করে আনার কাজটি করত।