ডেনভার এয়ারপোর্ট রহস্য ও ষড়যন্ত্র তত্ত্বের আখড়া



তানিম কায়সার, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
ডেনভার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

ডেনভার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

  • Font increase
  • Font Decrease

পৃথিবীতে কিছু বিষয় আছে যেগুলোকে যুক্তি তর্ক দিয়ে ব্যাখ্যা করা মুশকিল। আমেরিকার ডেনভার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তেমনি একটি জায়গা। বিশ্বের সেরা বিমানবন্দরের তালিকায় ২৯ নাম্বারে এর অবস্থান। আমেরিকার পঞ্চম ব্যস্ততম বিমানবন্দর এটি আর নানা রকম ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ চালু থাকার কারণে থাকে আলোচনার একদম কেন্দ্রবিন্দুতে। ডেনভার বিমানবন্দরের রানওয়ে, প্রবেশদ্বার থেকে টানেল পর্যন্ত প্রতিটি অংশ নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। অনেকে মনে করেন বিমানবন্দরটি কোনো ভৌতিক কর্মকাণ্ডের অংশ। কারো কারো ধারণা এটি বানিয়েছে নাৎসি বাহিনী, অনেকে আবার ভাবেন এটি এলিয়েনদের আবাসস্থল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য যুক্তি ও তথ্য-প্রমাণ দিয়ে কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করতে পারেনি কোনো পক্ষ।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/28/1564305786549.jpg
◤ ডেনভার বিমানবন্দরের অদ্ভুতুড়ে স্ট্রাকচার ◢

 

বিমানবন্দরের অস্বাভাবিক কাণ্ডকারখানাকে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বা কন্সপিরেসি থিওরি দিয়ে ব্যাখ্যা করা হয়। ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বা কন্সপিরেসি থিওরি মূলত কোনো ঘটনার এমন ব্যাখ্যাকে বোঝায়, যা সুস্পষ্ট প্রমাণ ছাড়া কোনো গভীর ষড়যন্ত্রের দিকে ইঙ্গিত করে। যার পেছনে সরকার (রাষ্ট্র) বা ক্ষমতাশীল কোনো সংগঠনকে দায়ী করা হয় এই যুক্তিতে যে, তারা অসৎ উপায়ে এবং ক্ষতিকর পন্থায় নিজেদের লাভ নিশ্চিত করতে চায়। এরকম তত্ত্বগুলোর একটি বৈশিষ্ট্য হলো এগুলো এমন পরিবেশ বা অবস্থা সৃষ্টি করে যা ইতিহাস এবং ক্ষেত্রবিশেষে সাধারণ বোধের (সরল সত্যতার) সাথে সাংঘর্ষিক। সাধারণত কোনো দ্বৈব ঘটনাকে ব্যাখ্যা করার জন্য এই থিওরির প্রয়োগ করা হয়। যেহেতু এই বিমানবন্দরের বেশ কিছু ব্যাপারকে দ্বৈব ঘটনার সাথে জড়িত ধরা হয়, এখানেও ডালপালা মেলেছে কন্সপিরেসি থিওরি।

জেনে অবাক হবেন, এই বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠার কোনো যৌক্তিক কারণ ছিল না। কেননা এর ঠিক কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেই একটি উন্নতমানের বিমানবন্দর ছিল। তবু প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করে বিমানবন্দরটি তৈরি করার পেছনের যুক্তি অনেকেই খুঁজে পান না। সাধারণ ধারণা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত আছে সেই বিমানবন্দরটি পুরাতন হয়ে যাওয়ায় এবং রানওয়ে অপ্রতুল থাকায় নতুন বিমানবন্দর নির্মাণের প্রয়োজন পড়ে। ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাসীদের প্রশ্ন হলো, পুরাতন হয়ে গেলেই যে বিমানবন্দর বাতিল হয়ে যাবে? এমন হলে তো বাকি বিমানবন্দরগুলোও বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা। আর চাইলে তো রানওয়ে সংযোজন করা যেত। এরজন্য এত কাছাকাছি নতুন বিমানবন্দর বানানোর কোনো দরকার ছিল না। যে টাকা দিয়ে বিমানবন্দর বানানো হয়ছে, দশ ভাগের এক ভাগ দিয়েই হয়ে যেত অনেকগুলো রানওয়ে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/28/1564305876228.jpg
◤ বিমানবন্দর নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের নাম ফলক ◢

 

যেই প্রতিষ্ঠান এই বিমানবন্দর বানিয়েছে তাদের নাম The New World Airport Commission. কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো পরবর্তীকালে খোঁজ নিয়ে এমন কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি। সন্দেহের দানা তখন আরো বড় হয়ে বাঁধতে থাকে। কেননা ‘New World Order’ হলো কথিত গুপ্ত সংগঠন ইলুমিনাতির একটি স্লোগান। এই স্লোগানের মাধ্যমে ইলুমিনাতি বুঝিয়ে থাকে শুধুমাত্র তাদের সিদ্ধান্তেই পৃথিবী চলবে। আর এই New World Order বাস্তবায়নে ইলুমিনাতি ইতোমধ্যেই কাজ করছে বলে অনেকে বিশ্বাস করে থাকেন। ঘিয়ে আগুন ঢালার মতো আরেকটি ব্যাপার হলো, ইলুমিনাতির মতোই আরেকটি গুপ্ত সংগঠন ফ্রিমেসনিজমদের মধ্যে র‍্যাংকিং সিস্টেম রয়েছে। যেখানে সর্বোচ্চ র‍্যাংক হলো ৩৩। এবার একটু খেয়াল করুন এটি তৈরি করা হয় ১৯৯৪ এর ১৯ মার্চ। এবার সংখ্যাগুলোকে যোগ করুন, ১+৯+১+৯+৯+৪= ৩৩। কী বলবেন? কাকতালীয়? ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাসীরা তা মনে করে না।

এই বিমানবন্দরের স্ট্রাকচারও এমন যে সহজে কেউ এর উদ্দেশ্য বুঝতে পারে না। মোট ৫৩ বর্গমাইলের এই বিমানবন্দরে রয়েছে বিশাল রেস্ট্রিক্টেড এরিয়া। যেটা অন্য কোনো বিমানবন্দরে দেখা যায় না। এত বিশাল জায়গাকে রেস্ট্রিক্টেড রেখে সেখানে কী কারসাজি হয় তা জানা যায় না বলেই হয়তো সন্দেহরা আরো বৃহৎ হয়ে ওঠে।

বিমানবন্দরটির বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে অদ্ভুত সব স্ট্রাকচার। প্রথমেই বলতে হয় ঘোড়ার কথা। বিমানবন্দরে ঢোকার মুখেই রয়েছে ৩২ ফুট উঁচু একটি রক্তচোখা ঘোড়ার মূর্তি। যেটি এয়ারপোর্ট তৈরির আগে থেকেই কারা যে তৈরি করে রেখেছে, তারও কোনো হদিস মেলে না। স্থানীয়রা ঘোড়মূর্তিটিকে ব্লুসিফার নামে ডাকে। তারা মনে করে প্রবেশ মুখে দাঁড়িয়ে ঘোড়াটি রক্তচোখে সবাইকে দেখে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/28/1564306380457.jpg
◤ ব্লুসিফার ◢

 

স্বস্তিকা (卐 বা 卍) চিহ্নকে পশ্চিমা বিশ্বে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত শান্তির প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু হিটলার যখন থেকে চিহ্নটি ব্যবহার করতে শুরু করলেন তখন থেকে অনেকেই এটাকে নাৎসিদের চিহ্ন হিসেবে জানেন। একই সাথে চিহ্নটিকে বিভিন্ন শয়তানের মন্ত্র হিসেবেও ধরে নেওয়া হয়। জেনে অবাক হবেন এই বন্দরের রানওয়ে উপর থেকে দেখতে একেবারে স্বস্তিকা চিহ্নের মতো। অদ্ভুত সব দেয়াল চিত্র, মূর্তি এসবকে এলিয়েনদের সাংকেতিক ভাষা হিসেবে অভিযোগ করা হয়ে থাকে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/28/1564306459112.jpg
◤ স্বস্তিকা চিহ্নের আদলে রানওয়ে ◢

 

এই বিমানবন্দর নিয়ে এমনসব কথা চালু হওয়ার পেছনে আরেকটি পালক জুড়ে দিয়েছে দেয়ালে থাকা চিত্রকর্মগুলো। যেগুলোর একটিতে একটি বাভারিয়ান শিশুকে দেখা যায় চাকু সংগ্রহ করতে। পাশাপাশি রয়েছে প্রাচীন মিশরের মৃত্যুর দেবতা আনুবিসের মূর্তি, সুটকেস থেকে বেরিয়ে আসা শয়তানের চিত্র ইত্যাদি যে কোনো মানুষের মনেই প্রশ্ন তুলতে পারে, এমনি এমনি কি একটা জায়গায় এসব চিত্রকর্ম থাকবে? পাশাপাশি গ্যাস মাস্ক পরা একজন নাৎসি অফিসারের ছবিও দেখা যায়। যদিও পরবর্তীসময়ে এমন বিতর্কিত অনেক কিছুই সরিয়ে ফেলা হয়েছে। কিন্তু সরিয়ে ফেললেই কি বিতর্ক বন্ধ হয়ে যায়?

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/28/1564306531484.jpg
◤ রহস্যময় দেয়ালচিত্র ◢

 

ডেনভার বিমানবন্দরের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় এর গোপন বাঙ্কারগুলো। সত্যিকার অর্থেই সেখানে প্রয়োজনের চেয়ে বিশাল বড় বাঙ্কার রয়েছে যার আয়তন প্রায় ৪৭০,০০০ বর্গফুট। ফলে এই বন্দরকে বলা হচ্ছে এলিয়েনদের আবাসভূমি। ধারণা করা হয় এখানে এলিয়েনরা থাকে। পাশাপাশি ইলুমিনাতি এবং ফ্রিমেসনিজমদের জন্যেও এটা একটা আশ্রয় স্থল। আরকটি মিথ চালু আছে, বিশ্বের সব বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা পারমাণবিক আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য এখানে এসে আশ্রয় নেবেন।

এসব ঘটনা নিয়ে আলোড়ন দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে চলছে। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয় ২০১২ সালে ট্রু টিভিতে Conspiracy Theory with Jesse Ventura নামে একটি অনুষ্ঠান প্রচারের পরে। যেখানে বিভিন্ন ব্যক্তির কথাবার্তার মাধ্যমে উঠে আসে এই বিমানবন্দরের সাথে ফ্রিমেসনিজমের সম্পৃক্ততা, এলিয়েন ও অদৃশ্য শক্তির আনাগোনার কথা। বলা হয় সেই বাঙ্কারে প্রায় ৫ মিলিয়ন মানুষের জায়গা হবে। যেটি আগত বৈশ্বিক বিপর্যয় মোকাবেলা করে বাঁচিয়ে রাখবে কেবল এলিট সমাজের লোকদের।

ডেনভার বিমানবন্দরের রয়েছে দীর্ঘ টানেল। এই টানেল নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। প্রতিষ্ঠার পরে এর ব্যাগেজ চেকিং সিস্টেম কাজ করত না। পরে বেশ কিছু টাকা ব্যয় করে মেরামত করার পরেও একই সমস্যা রয়ে যায়। ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাসীরা মনে করেন এই দীর্ঘ টানেলে এলিয়েনের বসবাস রয়েছে। যদিও মেইনস্ট্রিম পৃথিবীর কাজই এসবকে গুজব বলে উড়িয়ে দেওয়া।

   

বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?



কবির য়াহমদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, বার্তা২৪.কম
বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?

বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?

  • Font increase
  • Font Decrease

‘পথের কেনারে পাতা দোলাইয়া করে সদা সঙ্কেত/ সবুজে হদুদে সোহাগ ঢুলায়ে আমার ধানের ক্ষেত/ ছড়ায় ছড়ায় জড়াজড়ি করি বাতাসে ঢলিয়া পড়ে/ ঝাঁকে আর ঝাঁকে টিয়ে পাখিগুলে শুয়েছে মাঠের পরে/ কৃষাণ কনের বিয়ে হবে, তার হলদি কোটার শাড়ী/ হলুদে ছোপায় হেমন্ত রোজ কটি রোদ রেখা নাড়ি/ কলমী লতার গহনা তাহার গড়ার প্রতীক্ষায়/ ভিনদেশী বর আসা যাওয়া করে প্রভাত সাঁঝের নায়।’ পল্লীকবি জসীম উদদীনের ‘ধান ক্ষেত’ কবিতার অপূর্ব চিত্রায়ন কৃষকের শ্রম-ঘাম আর প্রকৃতির তরফে। কাব্যে-পঙক্তির বিমূর্ত চিত্র মূর্ত হয়েছে বিস্তীর্ণ মাঠে। কিষান-কিষানির বুক ভরা আশার সার্থক রূপায়ন হতে চলেছে এ-মৌসুমে।

এখন ভরা বৈশাখ। এ-সময়টা বোরো ধানের। বোরো ধান দেশের খাদ্যচাহিদার অন্তত ৫৫ শতাংশ মিটিয়ে থাকে। দেশের হাওরভুক্ত ৭টি জেলা সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওরে এই বোরোর চাষ বেশি হয়ে থাকে। এই ধান অতিবৃষ্টি, বন্যা ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে দেশের খাদ্যচাহিদায় ঘাটতি পড়ে না। তাই এই ধান চাষ থেকে শুরু করে ঘরে ফসল তোলা পর্যন্ত অনুকূল আবহাওয়া, বিশেষ করে রোদের উপস্থিতি অতি জরুরি। বর্তমানে সে পরিস্থিতি চলছে।

সিলেট অঞ্চলের মানুষ বলে এই অঞ্চলের মানুষের চাওয়া-পাওয়া, হতাশা-উচ্চাশার সঙ্গে আমি পরিচিত। তাদেরকে উদাহরণ হিসেবে টানছি। তাদের সঙ্গে থেকে জেনেছি, বোরো মৌসুমে নির্বিঘ্নে ঘরে ফসল তোলা কতটা জরুরি। গবাদি পশুর খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে জরুরি খড় সংরক্ষণও। তীব্র রোদ এখানে সমস্যার নয়, এটা বরং আনন্দের। কারণ এই রোদ গা পোড়ালেও বুক ভরা আশার সার্থক বাস্তবায়নের পথ দেখায়। দেশের যে খাদ্যচাহিদা, যে খাদ্যনিরাপত্তা সেটা এই বোরো ধানের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাই চাষ থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্যায়ে দরকার হয় প্রকৃতির সহায়তা। এবার এখন পর্যন্ত সে সহায়তা আছে, যদিও এ মাসের শুরুর দিকে একবার ঝড়বৃষ্টিসহ শঙ্কার কালমেঘ হাতছানি দিয়েছিল। সেটা আপাতত দূরে সরেছে।

কিষান-কিষানির দরকার এখন তীব্র রোদ। তারা এটা পাচ্ছে। দেশে তীব্র তাপদাহ। এখানেও এর ব্যতিক্রম নয়। তবু তারা এই রোদের প্রার্থনায় রয়েছে। বৃষ্টি এখন তাদের কাছে দুর্যোগ-সম। কারণ এই বৃষ্টি এবং অতি-বৃষ্টিসৃষ্ট বন্যা তাদের স্বপ্নসাধ গুঁড়িয়ে ভাসিয়ে নিতে পারে সব। ২০১৭ সালের দুঃসহ স্মৃতি এখনও বিস্মৃত হয়নি সুনামগঞ্জের কৃষকেরা। সে বছর সুনামগঞ্জের ছোট-বড় ১৩৭ হাওরের ফসল বন্যায় এবার ভেসে গিয়েছিল। গতবার কৃষক নির্বিঘ্নে ফসল ঘরে তুলেছেন। এরআগের বছর অন্তত ২০টি হাওরের ফসলহানি হয়েছিল বন্যায়।

প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল ক্ষেতের ফসল, দেশের খাদ্যনিরাপত্তা। এখানে প্রচণ্ড তাপদাহ তাই প্রভাব ফেলে সামান্যই। রোদে পুড়ে, প্রয়োজনে ছাতা মাথায় দিয়ে কিষান-কিষানিরা স্বপ্ন তোলেন ঘরে। তারা বৃষ্টির জন্যে প্রার্থনা না করে বরং রোদ আরও কিছুদিন অব্যাহত রাখার প্রার্থনায় বসেন। কৃষকেরা পরিমিত বৃষ্টি চায় চৈত্র মাসে, বৈশাখে চায় খাঁ খাঁ রোদ্দুর, কারণ এই রোদে সোনালী ধান ঘরে ওঠে। লোককথার প্রচলিত, ধান তোলার মৌসুমে ঝড়বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য হাওরবাসীরা তন্ত্রসাধক বা ‘হিরাল’ ও ‘হিরালি’-দের আমন্ত্রণ জানাতেন। তারা এসে মন্ত্রপাঠ করে ঝড়বৃষ্টি থামানোর জন্য চেষ্টা করতেন। লোকায়ত বিশ্বাস থেকে আগেকার মানুষজন এমন আচার পালন করতেন। এসবে সত্যি কাজ হতো কিনা সেটা বিতর্ক এবং ব্যক্তি-বিশ্বাসসাপেক্ষ, তবে এই হিরাল-হিরালিদের আমন্ত্রণ বলে বৈশাখে একদম বৃষ্টি চায় না হাওরের কৃষক।

হাওরপারের মানুষেরা যখন রোদ অব্যাহত থাকার প্রার্থনায়, তখন দেশজুড়ে তীব্র তাপদাহে পুড়তে থাকা মানুষেরা আছেন বৃষ্টিপ্রার্থনায়। দেশের জায়গায়-জায়গায় বৃষ্টি প্রার্থনায় ইস্তিস্কার নামাজ পড়া হচ্ছে, গণমাধ্যমে সচিত্র সংবাদ আসছে এর। কোথাও প্রবল বিশ্বাসে কেউ কেউ ‘ব্যাঙের বিয়ে’ দিচ্ছেন, এটাও বৃষ্টি প্রার্থনায়। সামাজিক মাধ্যমে গরমের তীব্রতার আঁচ মিলছে, বৃষ্টি নাকি ধান—কোনটা জরুরি এই প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ। কেবল তাই নয়, বাংলাদেশের প্রচণ্ড তাপদাহ নিয়ে বিশ্বমিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে দেশের মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে প্রতিবেদন করেছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি, এএফপি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া। গণমাধ্যমগুলো বলছে, প্রচণ্ড গরমের কারণে টানা দ্বিতীয় বছর বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের ঘোষণাও এসেছে। বৃষ্টি-প্রার্থনায় নামাজের আয়োজনের কথাও এসেছে বিশ্বমিডিয়ায়।

একদিকে প্রচণ্ড তাপদাহ, অন্যদিকে খাদ্যনিরাপত্তার প্রধান উপকরণ ধান ঘরে তোলার অনিশ্চয়তা—তবু অনেকের কাছে সাময়িক স্বস্তিই যেন মুখ্য। অথচ আর দিন দশেক বেরো আবাদ-এলাকায় বৃষ্টি না নামলে ধানগুলো ঘরে ওঠত কৃষকের। নিশ্চিত হতো খাদ্যনিরাপত্তার।

প্রকৃতির ওপর আমাদের হাত নেই, নিয়ন্ত্রণ নেই; তবু মনে করি আমাদের আকাঙ্ক্ষার প্রকাশে কৃষকদের গুরুত্ব থাকা উচিত। আমাদের চাওয়ায় হয়তো প্রকৃতির রীতি বদলাবে না, তুমুল রোদ্দুরের দেশে হঠাৎ বৃষ্টি নামবে না, তবে ধান ঘরে তোলার আগ পর্যন্ত রোদ্দুর কামনায় কৃষক স্বস্তি পাবে; ভাবতে পারবে এই দেশ আছে তাদের সঙ্গে।

কৃষকের জয় হোক। অন্তত বোরো-এলাকায় প্রকৃতি কৃষকের সঙ্গে থাকুক।

;

৫০ বছর আগে মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি আজও শ্রেষ্ঠ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সালটা ১৯৬৮। বিশ্বব্যাপী মানুষ মেতে উঠেছিল বড়দিনের আনন্দে। তখনো জানতো না, বড়দিন উপলক্ষে তারা একটি বিশেষ উপহার পেতে চলেছে। পৃথিবী থেকে আমরা হরহামেশাই চাঁদ দেখি। অমাবস্যা-পূর্ণিমা, এমনকি পক্ষের মাঝামাঝি সময়ের বদৌলতে নানা দৃষ্টিকোণে নানা আকারের চাঁদ দেখতে পাই। তবে চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন? এরকমটা হয়তো অনেকেই ভাবেন।

নাসার মহাকাশচারীরা অ্যাপোলো ৪ এ করে তখন চাঁদের চারপাশে টহল দিচ্ছে। সেখান থেকে তারা চাঁদের বাসকারীদের দৃষ্টিতে পৃথিবী কেমন হবে তার এক নমুনা জোগাড় করেন। ক্রিসমাসের কিছুদিন আগে ক্রুরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় ব্যারেন লুনার হরিজোন থেকে একটি ছবি তোলে। সেখানে সুদূর মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একটি সুন্দর দৃশ্য ধারণ করা হয়। চমৎকার সেই রঙিন ছবিটি সবকিছু পরিবর্তন করতে চলেছিল।

ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন নভোচারী বিল অ্যান্ডার্স এবং জিম লাভেল। ছবিটি ধারণ করার পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে যাওয়ার পরও এটিকে প্রকৃতির সবচেয়ে আইকনিক ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটিই মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম রঙিন এবং উচ্চ রেজুলেশনের ছবি।

১৯৭০ সালে পরিবেশ সচেতনতা এবং এই ব্যাপারে সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পৃথিবী দিবস প্রচারিত হওয়ার কারণে ছবিটিকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাইকেল প্রিচার্ড ছবিটিকে নিখুঁত দাবি করেন। তিনি বলেন, এই ছবিটি পৃথিবীর এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল, যা আগে কোনো ছবি করতে পারেনি। প্রকাণ্ড মহাবিশ্বে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা ক্ষুদ্র গ্রহ, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ছবিটি।

১৯৬০ সালের পরই পৃথিবী নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে। ষাটের দশকের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মানুষ অনুধাবন করে পৃথিবীকে আজীবন একইভাবে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রহের প্রতি আমাদের আরও অনুরাগী হতে হবে। সেই উদ্দেশে ১৯৬৯, ‘৭০ ও ‘৭১ সালে ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ এবং ‘গ্রিনপিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ছবিটি প্রকাশের ১৮ মাস পর ২০ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক পৃথিবী রক্ষার আন্দোলনে রাস্তায় নামে।

পৃথিবী রক্ষা করার জন্য মানুষদের উৎসাহিত করার বেলায় ছবিটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এখনো অবদি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর পাঠানো ছবিগুলোর মধ্যে ১৯৬৮ সালে বড়দিনের আগে তোলা সেই ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়।

;

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

;

অস্ট্রেলিয়ায় নিখোঁজ কুকুর ফিরলো যুক্তরাজ্যের মালিকের কাছে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয় যুক্তরাজ্যের এক দম্পতির পালিত কুকুর। যুক্তরাজ্যে আসার ১৭ দিন পর মিলো নামের কুকুরটিকে ফিরে পেয়েছেন জেসন হোয়াটনাল নিক রোল্যান্ডস দম্পতি।

হোয়াটনাল এবং তার সঙ্গী নিক সম্প্রতি তাদের কুকুর মিলোকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পরিদর্শনে যান। তারা যখন সোয়ানসিতে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তখন মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তার হ্যান্ডলার থেকে কুকুরটি পালিয়ে যায়।

সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটিকে অবশেষে মেলবোর্নের শহরতলিতে ১৭ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।


হোয়াটনাল স্কাই নিউজকে বলেন, ‘মিলোকে ফিরে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক ছিল আমার জন্য। যখন আমি আমার প্রিয় মিলোর (কুকুর) সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কান্না দেখে অন্যরাও কেঁদেছিল। এটি সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্য প্রান্তে থেকে মিলোর কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম না মিলো কোথায় আছে। এটি বেশ হতাশাজনক ছিল আমাদের জন্য, কিছুটা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাকে ফিরে পাবো ভাবিনি।

মিলোকে পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, তখন স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সাহায্য আসে, তারা মিলোর সন্ধান দেয়। মিলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

;