ডিজিটাল মার্কেটিং-১

ব্র্যান্ডেড স্টোরিটেলিং : ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ভবিষ্যৎ



তৌহিদ শরীফ, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
ডিজিটাল মার্কেটিং এখন সবচেয়ে প্রয়োজনীয় এবং ইফেক্টিভ মার্কেটিং প্লাটফর্ম

ডিজিটাল মার্কেটিং এখন সবচেয়ে প্রয়োজনীয় এবং ইফেক্টিভ মার্কেটিং প্লাটফর্ম

  • Font increase
  • Font Decrease

“Future of Future Advertising”
প্রথমে খুব সংক্ষেপে বলে নেব কেন ডিজিটাল মার্কেটিং এখন আর কোনো অপশন বা ফিউচার নয় বরং বর্তমানের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় এবং ইফেক্টিভ মার্কেটিং প্লাটফর্ম। তারপর আসব মূল টপিক্স, “ব্র্যান্ডেড স্টোরিটেলিং—ফিউচার অব অ্যাডভার্টাইজিং”-এ।

বিশ্বজুড়ে চলছে ইন্টারনেটের জোয়ার। দেশে শুধুমাত্র গেল এক বছরে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে ১ কোটি। তাহলে ভাবুন দেশের মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা কত?


জ্বি, প্রায় ১০ কোটির কাছাকাছি। কিভাবে হলো এই বিস্ফোরণ? সহজ চোখে দেখলে— 


আর আরেকটু ঘেঁটে দেখলে হয়তো দেখতে পাবেন এই ইন্টারনেট জোয়ার আর অনুকূল স্রোতের হাওয়া আসছে কোন দিক থেকে।

১। বাংলাদেশকে ডিজিটালি ক্ষমতায়িত সমাজ ও অর্থনীতিতে রূপান্তর করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে “ডিজিটাল বাংলাদেশ” হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দেয়।
২। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, সাবমেরিন কেবল, হাই টেক পার্ক ইত্যাদি অবকাঠামো দুনিয়াটাকে আক্ষরিক অর্থে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসছে। ছোট শহর ও প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছে গেছে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা। ভিডিওটি দেখলে অবাক হবেন মাস্ট—

৩। সরকার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে নতুন স্টার্টআপ-আইডিয়া, উদ্ভাবক ও উদ্যোক্তাদের ওপর। এরাই তৈরি হচ্ছে ফিউচার বিগ জায়ান্ট কোম্পানি হিসেবে। সেখানে দেখা দিচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের প্রয়োজনীয়তা। তারা এমন লোকদের সন্ধান করছেন যারা তাদের প্রয়োজন অনুসারে ডজিটিাল মার্কেটিং কৌশল তৈরি করতে এবং প্রয়োগ করতে পারেন।

৪। ইন্টারনেট অব থিংস—ব্যক্তিগত ব্যবহারযোগ্য ডিভাইস যেমন স্মার্ট গাড়ি, স্মার্ট গৃহস্থালি সরঞ্জামাদি, স্মার্ট হোম ইত্যাদি বাংলাদেশের জন্য তুলনামূলকভাবে নতুন হলেও খুব শীঘ্রই তা প্রচলিত হবে। এ জাতীয় ডিভাইসগুলোর উত্থান ডিজিটাল মার্কেটিংকে আরো আকর্ষণীয় ও চ্যালেঞ্জিং করবে সাথে তৈরি করবে নতুন অনেক সম্ভাবনাময় পথ।

সব মিলিয়ে যদি এক কথায় বলতে চাই— “Digital Bangladesh—Smart Ecosystem for Smart Marketplace”

মানে যেখানে সরকার নিজেই তার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সেই সুযোগ কেন হাতছাড়া করব?

এবার বলি ডিজিটাল মার্কেটিং কেন সবচেয়ে বেশি ইফেক্টিভ ও প্রফিটেবল :
১। প্রেস অ্যাড অথবা টেলিভিশনে মার্কেটিংয়ে খরচের তুলনায় ডিজিটাল মার্কেটিং আরো কম ব্যয়বহুল ও সর্বোচ্চ রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট এবং কনভার্সন রেট।
২। এখানে সবকিছুর ওপর নজরদারি করা যায়। যেসব চ্যানেল বা কৌশল অকার্যকর বা কম কার্যকর দেখা দেবে সেখানে বিনিয়োগ কমিয়ে দিয়ে ফলপ্রসূ স্ট্রাটেজিতে বেশি বিনিয়োগ করা সম্ভব একমাত্র ডিজিটালেই।
৩। বিভিন্ন ওয়েবসাইট এনালাইসিস ও নানান ধরনের টেকনোলজির সুবাদে গ্রাহকের কেনাকাটার অভ্যাসগত ধরন অনুযায়ী তাকে তার কাঙ্ক্ষিত পণ্যটি ক্রয়ের ব্যাপারে মানসিকভাবে খুব সহজে ঠেলে দেওয়া যায়।
৪। গ্রাহকের ধরন অনুযায়ী মাল্টি লেয়ার স্ট্রাটেজি করে এবং ভৌগোলিক অবস্থান ধরে মার্কেটিং সম্ভব।

সহজ কথায় আরেকবার বলি। ডিজিটাল মার্কেটিং খুব কম খরচেই করা সম্ভব ব্যাপারটা এরকম না। বরং যে কোনো বাজেট দিয়ে, আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী যে কোনো অংকের টাকা দিয়ে আপনি মার্কেটিং করতে পারবেন। মার্কেটিং শুধু বড় বড় দৈত্যদের জন্য নয়, সবার জন্য উন্মুক্ত।

জ্বি, সবকিছু যদি নতুন করে ভাববার প্রয়োজন হয় তবে তাই করেন কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশের এই জোয়ারে ব্যবসার অস্তিত্বকে হারিয়ে না ফেলতে চাইলে ট্রেডিশনাল মার্কেটিংয়ের পাশাপাশি ডিজিটাল মার্কেটিংকে সিরিয়াসলি নিন।

এবার আসি মূল টপিক্স “ব্র্যান্ডেড স্টোরিটেলিং—ফিউচার অব অ্যাডভার্টাইজিং”-এ।

এখানে মার্কেটে দুটি ঘটনা পাশাপাশি ঘটেছে। একদিকে রেডিও, প্রিন্ট ও টেলিভিশন মিডিয়ার অভিজ্ঞতা, এর সংস্কৃতি, বিনোদন ধরন ও ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং এই সবকিছুর ওপর অবিশ্বাস, অভক্তি ও বিরক্তিকর মনোভাব তৈরি হয়েছে আর এই সুযোগেরই হাত ধরে অপরদিকে ওয়েবসিরিজ, স্ট্রিমিং চ্যানেল, ভিডিও অন ডিমান্ড, ইউটিউব চ্যানেল ও ব্র্যান্ডেড কনটেন্টের মতো নতুন বিনোদন মাধ্যম মার্কেটে জায়গা করে নিয়েছে।

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে ৮৪% মিলেনিয়াল স্বীকার করেছে তারা ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং পছন্দও করেন না বিশ্বাসও করেন না। এমনকি তারা আর এসব দেখেনও না শোনেনও না। বদলে তারা লাইভ স্ট্রিমিং, নেটফ্লিক্স, অ্যানিমে, ইউটিউব এসবে সময় কাটায়। এমনকি ৮৫% মিলেনিয়াল স্বীকার করেছেন যে তারা নিয়মিত ইউটিউব দেখেন। মিলেনিয়াল বলতে বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ জনসংখ্যার কথা বলছি যারা মূলত জেনারেশন এক্স ও জেনারেশন ওয়াই হিসেবেও পরিচিত। এক কথায় ইয়াং জেনারেশন। [সোর্স: জনপ্রিয় পত্রিকা ফোর্বস এর তথ্য অনুযায়ী।]

তাই বলে অ্যাডভারটাইজিংয়ের স্কোপ কমে যাচ্ছে না বরং প্রয়োজন শুধুমাত্র এই পরিবর্তনশীল অভ্যাসের জন্য বিজ্ঞাপনের কৌশলগত পরিবর্তন।

৮৭% ইয়াং জেনারেশনই মনে করে প্রোডাক্ট প্লেসমেন্ট এমন এক স্ট্রাটেজি যেটায় তাদের কোনো আপত্তি নেই।

প্রোডাক্ট প্লেসমেন্টের কিছু উদাহরণ দিই—

এগুলো কিছু স্বনামধন্য ব্র্যান্ডের অনলাইন ওয়েবসিরিজ থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট। পুরো সিরিজের লিংক দেওয়া আছে যা আপনি ইউটিউবে বিনামূল্যেই দেখতে পারবেন।

দেখুন আরো সহজ করে বলি, প্রি-রোল অ্যাড, স্কিপ অ্যাড বা অন্যান্য হাজারও কৌশল যেখানে বন্ধ করে দেওয়া যায়, স্কিপ করা যায় বা শব্দ বন্ধ করে দেওয়া যায় সেখানে একমাত্র প্রোডাক্ট প্লেসমেন্ট হচ্ছে বেস্ট সমাধান। যেখানে ব্র্যান্ড গল্পের অংশ হয়ে উপস্থাপিত হয় এবং দর্শকের মনে জায়গা করে নেয়।

একটা সুন্দর স্টোরিলাইন যেখানে গল্প বলার ছলে খুবই আলতোভাবে ও তুলনামূলক অনেক কম আক্রমণাত্মকভাবে প্রচারণা করা হয়, এবং ব্র্যান্ডের নৈতিক মূল্যবোধ গল্পে সংযুক্ত করা হয়, এরকম স্টোরিলাইন বা গল্প গ্রাহকের সাথে ব্র্যান্ডের একধরনের সূক্ষ্ম সম্পর্ক তৈরি করে। ওই ব্র্যান্ডের প্রতি নিজের অজান্তেই গ্রাহকের ভালোলাগা তৈরি হতে থাকে। যেটা ধীরে ধীরে সেলস্-এ রূপ নেয়।

একটা ভালো ওয়েব সিরিজ আপনার পণ্যের নতুন ও পুরাতন গ্রাহকের সাথে সম্পর্ক ভালো করবে। একবার গ্রাহক আপনার ওয়েব সিরিজের মজা পেয়ে গেলে, তারা আঠার মতো আপনার ব্র্যান্ডের সাথে লেগে থাকবে পরবর্তীতে কী হবে তা দেখার জন্য। ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল, বিহাইন্ড দ্য সিন ইত্যাদি ঘাটিয়ে ওই ব্র্যান্ডেড কনটেন্টের পার্ট হবে। সেই সুবাদে গ্রাহকের ব্র্যান্ডটিকে আরো কাছে থেকে দেখার সুযোগ হবে এবং ধীরে ধীরে তৈরি হতে পারে ভালোলাগা যা আল্টিমেটলি নিয়ে যাবে ক্রমবর্ধমান সেলস্-এর দিকেই।

এভাবেই স্টোরিটেলিং আরো ইন্টারেক্টিভ হবে, দর্শক ব্র্যান্ডের সাথে নিজেকে আরো কাছ থেকে সম্পৃক্ত করতে পারবে। ব্র্যান্ডের প্রতি তৈরি হবে বিশ্বাস, ভালোবাসা ও আস্থা। ভালো মানের গল্প ও বিনোদনের মাধ্যমে জায়গা করে নেবে গ্রাহকের হৃদয়ে।

মাঝে মাঝে কোনো ওয়েব সিরিজ এতটা জনপ্রিয় ও সফল হয় যে এটা ব্র্যান্ডের ফিউচার এসেট হয়ে যায়। এবং চাহিদা তৈরি হয় আরো নতুন সিজনের।

তাছাড়া সবচেয়ে যেটা মজার বিষয় সেটা হচ্ছে মিডিয়া বায়িং বাজেট। ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিংয়ে যেখানে বিজ্ঞাপন প্রচারে লক্ষ কোটি টাকা ঢালা লাগে সেখানে বিনা খরচে সম্প্রচার করছেন আপনার প্রোগ্রাম আর সেটা অনলাইনে থেকে যাবে আজীবন। যুগের পর যুগ, দিন দিন নতুন নতুন গ্রাহক সাক্ষী হবে এই কনটেন্টের। জীবিত থাকবে গল্প সবসময়।

ফিউচার মার্কেটিংয়ের দিকে তাকালে একটা জিনিসই দেখা যায়, সেটা হচ্ছে পরিবর্তন। নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে ডিজিটাল এই পরিবর্তনের সাথে অবশ্যই মানিয়ে নেওয়ার সামর্থ্য নিয়ে চলতে হবে।

টেলিভিশন যেখানে ট্র্যাডিশনের কথা বলে ওয়েব সিরিজ সেখানে পরিবর্তনের কথা বলে। সবাই আজকাল অনলাইনে। সবাই টেলিভিশনের চেয়ে অনলাইনে বেশি সময় কাটায়। টেলিভিশন থেকে দিন দিন চোখ সরে চলে যাচ্ছে অনলাইনে। বিজ্ঞাপন প্রণেতারা প্রতিটি মানুষকে একজোড়া আইবল হিসেবে গণনা করে। এবং আইবল ধরে রাখার জন্য প্রয়াজন নিত্য নতুন কৌশল।

মিলেনিয়ালদের ধরে রাখার জন্য ব্র্যান্ডিং খুবই জরুরি। যদিও বেশি দাম কিছুটা তারতম্য তৈরি করে তবে ব্র্যান্ডের প্রতি আস্থা ও বিশ্বস্ততা থাকলে অতিরিক্ত দাম খুব বেশি ব্যবধান তৈরি করতে পারে না।

সর্বশেষ কথা টাইটেল স্পনসরশিপের মাধ্যমে আপনি হয়তো প্রত্যক্ষভাবে ওয়েব সিরিজের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারেন কিন্তু আসল সম্পৃক্ততা তৈরি হয় যখন গল্পে বা স্ক্রিপ্টে সরাসরি ব্র্যান্ডকে সম্পৃক্ত করা যায়। অন্যথা সব জোরপূর্বক প্রোডাক্ট প্লেসমেন্টের মতোই দেখাবে। আরেকটি জিনিস, আপনার গল্পের ধরন যেই ধরণারই হোক না কেন, দর্শক বা মিলেনিয়ালদের জীবনে সেটার ইতিবাচক ভূমিকা থাকতে হবে। এমন গল্প, মতাদর্শ বা ট্রিটমেন্ট থাকতে হবে যা সচরাচর টেলিভিশনে দেখা যায় না।

অনেক লেখা হয়েছে কিন্তু মূল আকর্ষণ এখনো রয়ে গেছে। কথা বলব ব্র্যান্ডেড স্টোরিটেলিং-এর আপাদমস্তক নিয়ে। এর সফলতার মূলমন্ত্র, কেইস স্টাডি, এক্সপার্টদের মতামত ইত্যাদি নিয়ে। বলব আরেকদিন আরেকটি পর্বে। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন, বার্তা২৪-এর সাথেই থাকুন।

   

৫০ বছর আগে মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি আজও শ্রেষ্ঠ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সালটা ১৯৬৮। বিশ্বব্যাপী মানুষ মেতে উঠেছিল বড়দিনের আনন্দে। তখনো জানতো না, বড়দিন উপলক্ষে তারা একটি বিশেষ উপহার পেতে চলেছে। পৃথিবী থেকে আমরা হরহামেশাই চাঁদ দেখি। অমাবস্যা-পূর্ণিমা, এমনকি পক্ষের মাঝামাঝি সময়ের বদৌলতে নানা দৃষ্টিকোণে নানা আকারের চাঁদ দেখতে পাই। তবে চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন? এরকমটা হয়তো অনেকেই ভাবেন।

নাসার মহাকাশচারীরা অ্যাপোলো ৪ এ করে তখন চাঁদের চারপাশে টহল দিচ্ছে। সেখান থেকে তারা চাঁদের বাসকারীদের দৃষ্টিতে পৃথিবী কেমন হবে তার এক নমুনা জোগাড় করেন। ক্রিসমাসের কিছুদিন আগে ক্রুরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় ব্যারেন লুনার হরিজোন থেকে একটি ছবি তোলে। সেখানে সুদূর মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একটি সুন্দর দৃশ্য ধারণ করা হয়। চমৎকার সেই রঙিন ছবিটি সবকিছু পরিবর্তন করতে চলেছিল।

ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন নভোচারী বিল অ্যান্ডার্স এবং জিম লাভেল। ছবিটি ধারণ করার পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে যাওয়ার পরও এটিকে প্রকৃতির সবচেয়ে আইকনিক ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটিই মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম রঙিন এবং উচ্চ রেজুলেশনের ছবি।

১৯৭০ সালে পরিবেশ সচেতনতা এবং এই ব্যাপারে সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পৃথিবী দিবস প্রচারিত হওয়ার কারণে ছবিটিকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাইকেল প্রিচার্ড ছবিটিকে নিখুঁত দাবি করেন। তিনি বলেন, এই ছবিটি পৃথিবীর এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল, যা আগে কোনো ছবি করতে পারেনি। প্রকাণ্ড মহাবিশ্বে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা ক্ষুদ্র গ্রহ, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ছবিটি।

১৯৬০ সালের পরই পৃথিবী নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে। ষাটের দশকের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মানুষ অনুধাবন করে পৃথিবীকে আজীবন একইভাবে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রহের প্রতি আমাদের আরও অনুরাগী হতে হবে। সেই উদ্দেশে ১৯৬৯, ‘৭০ ও ‘৭১ সালে ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ এবং ‘গ্রিনপিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ছবিটি প্রকাশের ১৮ মাস পর ২০ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক পৃথিবী রক্ষার আন্দোলনে রাস্তায় নামে।

পৃথিবী রক্ষা করার জন্য মানুষদের উৎসাহিত করার বেলায় ছবিটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এখনো অবদি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর পাঠানো ছবিগুলোর মধ্যে ১৯৬৮ সালে বড়দিনের আগে তোলা সেই ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়।

;

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

;

অস্ট্রেলিয়ায় নিখোঁজ কুকুর ফিরলো যুক্তরাজ্যের মালিকের কাছে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয় যুক্তরাজ্যের এক দম্পতির পালিত কুকুর। যুক্তরাজ্যে আসার ১৭ দিন পর মিলো নামের কুকুরটিকে ফিরে পেয়েছেন জেসন হোয়াটনাল নিক রোল্যান্ডস দম্পতি।

হোয়াটনাল এবং তার সঙ্গী নিক সম্প্রতি তাদের কুকুর মিলোকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পরিদর্শনে যান। তারা যখন সোয়ানসিতে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তখন মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তার হ্যান্ডলার থেকে কুকুরটি পালিয়ে যায়।

সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটিকে অবশেষে মেলবোর্নের শহরতলিতে ১৭ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।


হোয়াটনাল স্কাই নিউজকে বলেন, ‘মিলোকে ফিরে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক ছিল আমার জন্য। যখন আমি আমার প্রিয় মিলোর (কুকুর) সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কান্না দেখে অন্যরাও কেঁদেছিল। এটি সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্য প্রান্তে থেকে মিলোর কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম না মিলো কোথায় আছে। এটি বেশ হতাশাজনক ছিল আমাদের জন্য, কিছুটা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাকে ফিরে পাবো ভাবিনি।

মিলোকে পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, তখন স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সাহায্য আসে, তারা মিলোর সন্ধান দেয়। মিলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

;

আমার হাতের পাখা যেন তাদের আরাম দিচ্ছে!



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

  • Font increase
  • Font Decrease

আবু বক্কর (৬২)। বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে তিনি এখন পাকা বিক্রেতা। প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষ যখন ঠান্ডা বাতাসের প্রশান্তি খুঁজছে, তখন তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন।

আবু বক্কর বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্ত্রীসহ ছয় মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। তবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু বয়সের ভারে ঠিকই আমরা একা থেকে গেলাম। শেষ বয়সে গ্রামে গ্রামে তালপাতা পাখা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। শুধু সংসার না, এই টাকায় আমার পায়ের শিরার ব্যথার ওষুধও কিনতে হয়। একবেলা ওষুধ না খেলে চলতে পারি না।

এদিকে, পুরনো ব্যবসার ঋণের বোঝা আর অন্যদিকে অসুস্থ হয়ে ওষুধসহ সংসারের খরচ। শেষ বয়সে তালপাতার পাখাই আমার একমাত্র জীবনসঙ্গী বলেন আবু বক্কর।

তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন আবু বক্কর, ছবি- বার্তা২৪.কম

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের কবিগানের অনুষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, একপাশে তালপাতার পাখা বিক্রি করতে ব্যস্ত ছোট্ট পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ। এই গরমে যখন তার ঘরে থাকার কথা, তখন সে নানা-নানীর সঙ্গে এসে তালপাতার পাখা বিক্রি করছে। কবিগানে বসে থাকা সব শ্রোতার কাছে গিয়ে বলছে, পাখা লাগবে, পাখা! কথা বলতে চাইলেও এ পাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, ক্রেতার কাছে।

এক ফাঁকে তাকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, এই বয়সে পাখা বিক্রি করছো কেন! এ প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে মাহমুদুল্লাহ বলে, প্রচণ্ড গরমে স্কুল ছুটি। তাই, নানা-নানীর সঙ্গে চলে এসেছি মেলায় পাখা বিক্রি করতে। মানুষজন আমার কাছ থেকে যেন বেশি পাখা কেনে (ক্রয়), তাই আমি মেলায় তাদের সঙ্গে এসেছি।

অনেক উৎসাহের সঙ্গে সে বলে, গরমে আমার হাতের পাখায় যেন তাদের আরাম দিচ্ছে! মেলা হলে আমি সেখানে চলে যাই পাখা বিক্রি করতে। ঘোরাঘুরিও হয় আর টাকা ইনকামও হয়। টাকার জন্য বের হয়ে পড়েছি। আমরা পাখা বিক্রি করে পেট চালাই। নানা-নানী বুড়ো হয়ে গেছে। তাই, আমি সঙ্গে এসে তাদের কষ্টটাকে একটু ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।

যেখানে প্রচণ্ড তাপে মানুষজন নাজেহাল, সেখানে ছোট্ট মাহমুদুল্লাহ ছুটে চলেছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাখা বিক্রি করতে। ছোট্ট শিশু হলেও গরম যেন তার কাছে কিছু না, পেটের তাগিদে!

আরেক পাখা বিক্রেতা তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা ভদ্রকান্ত সরকার (৭০)। ১২-১৪ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি।

চলছে তালপাতার পাখার বিকিকিনি, ছবি- বার্তা২৪.কম

শেষ বয়সে পাখা কেন বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে ভদ্রকান্ত বলেন, চাল কিনে খেতে হয়। খুব কষ্টের সংসার! ছেলে-মেয়ে আছে। তারা তাদের মতো কাজ করে খায়। মা বাবার বয়স হয়ে গেলে ছেলে আর আমাদের থাকে না। আমরা বৃদ্ধ বয়সে কেমন আছি, সেটা জানার সুযোগ তাদের থাকে না। শেষজীবনটা এভাবে পাখা বিক্রি করে কাটিয়ে দেবো। কী আর করবো! কপালে যা আছে, শেষপর্যন্ত তাই হবে। কপালে ছিল, এমন বৃদ্ধ বয়সে গ্রামে গ্রামে পাখা বিক্রি করতে হবে!

;