ভবিষ্যতের যে আবিষ্কারগুলো বদলে দেবে পৃথিবীর ভাগ্য



আহমেদ দীন রুমি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
কিছু আবিষ্কার বদলে দেবে আগামীর পৃথিবীকে

কিছু আবিষ্কার বদলে দেবে আগামীর পৃথিবীকে

  • Font increase
  • Font Decrease

মানুষের অতীত অভিজ্ঞতা শুভ নয়। মাইগ্রেশন, যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অন্যান্য কারণে তাকে শিখতে হয়েছে পদে পদে। মানুষকে আবিষ্কার করে নিতে হয়েছে তার নিজের চাহিদা। একসময় মানুষ নিতান্ত অসচেতনতায় আগুনের রহস্য উন্মোচন করেছিল। শিল্পবিপ্লবের পরে পরিচিত হলো স্টিম ইঞ্জিনের মতো নতুন অনেক প্রযুক্তির সাথে। বিশ শতকে সামনে আসলো ইন্টারনেট, কম্পিউটার, মোবাইলের মতো যুগ বদলানো আবিষ্কার। কিন্তু এ-ই কি মানবজাতির ভাগ্যে সমাপ্তির গল্প?

অবশ্যই না। ভবিষ্যত বরাবরই কৌতূহল আর দূরদৃষ্টির সাথে সম্পর্কিত। বর্তমান দিনগুলোতে আমরা এমন সব জীবন ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে চলছি, যা আগে কল্পনাও করা যায়নি। বর্তমানের প্রতিটি বছর প্রাচীন কয়েক হাজার বছরের থেকেও বেশি পরিবর্তন একত্রে নিয়ে আসছে। ভবিষ্যতের বিপ্লাবাত্মক আবিষ্কারগুলো নিয়ে হয়তো তেমন কথা হয় না। আমাদের আজকের আয়োজন তাদের নিয়ে। অবশ্যই সম্ভাবনার ওপর ভরসা রেখে।

ব্যক্তিগত রোবট সহকারী

অনেক দিন ধরেই রোবট ব্যবহারের কথা চলছে বিজ্ঞানী মহলে। অনেক ক্ষেত্রে হয়েছেও। চিন্তায় বুঁদ মানুষ জন্ম দিয়েছে সায়েন্স ফিকশন উপন্যাস ও সিনেমা। আইজ্যাক আসিমভ বা আর্থার সি ক্লার্কের মতো পণ্ডিতেরাও আছেন সেই তালিকায়। সে যাই হোক, গত এক দশক ধরে রোবট বিস্ময়কর দক্ষতার সাথে ব্যবহৃত হচ্ছে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে। সোফিয়ার কথা সর্বজন বিদিত। হাল আমলে কয়েকেটি দেশ তো নিরাপত্তা বিভাগে পর্যন্ত রোবটের নিয়োগ দিয়েছে। যদিও ব্যক্তিগত রোবট নির্মাণ চেষ্টায় হালে পানি পাওয়া যাচ্ছিল না।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/25/1566741730059.jpg
রোবটবিপ্লব সভ্যতাকে দেখাতে পারে নতুন গতিমুখ


অ্যামাজোনের Alexa কিংবা অ্যাপলের Siri এই ক্ষেত্রে কয়েক ধাপ সামনে। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে তাৎর্যপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত এগিয়ে নিয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI- কে। সার্বিকভাবেই সরে যাচ্ছে মেঘ। অদূর ভবিষ্যতে দেখা যাবে ব্যক্তিগত রোবটের ব্যবহার। আর এই রোবটবিপ্লব মানব সভ্যতাকে নতুন করে বাধ্য করবে নিজের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে।

ইমারসিভ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি

ভবিষ্যতের যতগুলো সম্ভাবনা আছে, তার মধ্যে অগ্রগণ্য পুরোপুরি ইমারসিভ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি। পারিপার্শ্বিক বাস্তবতাকে ভার্চুয়াল জগতে ফুটিয়ে তুলবে পুরোদমে। সত্যি বলতে বাস্তব এবং অবাস্তবের ধারণায় ফারাক থাকবে না মোটেও। সাংস্কৃতিক ও দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির অসহযোগিতার জন্য হয়তো এখনো অতটা এগিয়ে যাওয়া যায়নি। তবে ভিন্ন মাত্রা নিয়ে ক্রমে সমৃদ্ধ ও পরিণত হওয়া ভার্চুয়াল জীবন নতুন আশ্রয় হিসাবে উপস্থাপিত হচ্ছে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/25/1566741783104.jpg
ইমারসিভ ভার্চুয়াল রিয়ালিটি সরিয়ে দেবে বাস্তব আর অবাস্তবের ব্যবধান


ইদানীং গেইমের মতো বিষয়গুলোও প্রায় চলে গেছে এর নিয়ন্ত্রণে। মাঝরাতে ঘুরে ফিরে বিনোদন অর্জনের কি দরকার, যদি একই কাজ ঘরে বসে করা যায়?

ক্রাইয়োনিক্স

বয়স যেন সচেতন শত্রুর মতো বেড়ে যায় প্রতিনিয়ত। আর একসময় গ্রাস করে নেয় মৃত্যু। মানব সভ্যতার গোড়া থেকেই মানুষ অমরত্ব খুঁজেছে। গড়ে উঠেছে অজস্র আখ্যান ও অভিযান। ব্যাবিলনীয়ান মহাকাব্য গিলগামেশ থেকেই তার নজির পাওয়া যায়। সেদিন গিলগামেশ অমর হতে ব্যর্থ হয়েছিল। আজকের বিজ্ঞান কিন্তু হতাশ করছে না।
মৃত্যুকে পরাজিত করার অদ্ভুত এক পদ্ধতির কথা বলছেন কেউ কেউ। আমাদের শরীরকে সত্যি সত্যি বরফে জমিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে। ঠিক এইখানেই ক্রাইয়োনিক্স—নিজেকে বিজ্ঞান বলে দাবি করে। এমন বিজ্ঞান যেখানে মানুষের লাশকে বরফে রেখে অবিকৃত অবস্থায় রাখা হয়, যেন কোনোদিন তাকে পুনরায় জাগিয়ে তোলা যায়।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/25/1566741836490.jpg
সামনের পৃথিবীতে ক্রাইয়োনিক্স গেইমচেঞ্জারের ভূমিকা পালন করতে পারে


অনেক বিজ্ঞানীই একে হাতুড়ে মতবাদ বলে অবজ্ঞা করতে চান। কিন্তু তাতে দমে যাবার পাত্র নয় একটা শ্রেণী। বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ ক্রাইয়োনিক্স অর্গানাইজেশনের প্রেসিডেন্ট ডেনিস কোয়ালস্কি। তিনি শুধু বলেছিলেন, আমরা গ্যারান্টি দিতে পারি না যে, কাউকে ফিরিয়ে আনতে পারব। তবে এইটা সত্য, যদি আপনাকে পুতে ফেলা হয় কিংবা পুড়িয়ে ফেলা হয়; তবে আর পাওয়া যাবে না।

নেহাৎ অবজ্ঞার হলেও এই হাতুড়ে গবেষকদের চিন্তাই গেইমচেঞ্জার হিসাবে আবির্ভুত হতে পারে। হাজার হাজার দেহ এখন অব্দি বরফে সংরক্ষণ করা হয়েছে। ইয়েল ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা সাম্প্রতিক সময়ে মৃত শূকরের ব্রেইন নিয়ে গবেষণা করে তাকে কাজ করাতে সক্ষম হয়েছেন। আর সেই ফলাফল টনক নড়িয়ে দিয়েছে মানবজাতিকে আরো একধাপ এগিয়ে যাবার জন্য।

এক্সোস্কেলিটন

এক্সোস্কেলিটন কোনোভাবেই নতুন প্রযুক্তি না। সামরিক উদ্দেশ্যে বিস্তর গবেষণা ও অগ্রগতিতে এই প্রযুক্তি চালু আছে ১৯৬০ সালের দিক থেকে। সংজ্ঞাগতভাবে, এক্সোস্কেলিটন বাইরে থেকে নিযুক্ত কৃত্রিম অস্থি বা কঙ্কাল, যা শরীরকে সাহায্য বা সুরক্ষা দিতে ব্যবহৃত হয়।
এক্সোস্কেলিটন কোটি মানুষের জীবনই বদলে দিতে পারে অদূর ভবিষ্যতে। গবেষকেরা মনে করেন, শিল্পকারখানায় এর দৈনন্দিন ব্যবহার বাড়বে আসছে দিনগুলোতে। বিশেষ করে যেখানে কর্মচারীদের অধিক শক্তির প্রয়োজন হয় এবং কাজটা রোবটের দ্বারা করা সম্ভব না। তারচেয়ে বড় কথা, এক্সোস্কেলিটনেরই একটা বিশেষ প্রকার দেশের বয়স্ক ও অসুস্থদের চলাচলে দেবে নতুন মাত্রা।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/25/1566741939614.jpg
এক্সোস্কেলিটনের ব্যবহার অনেক অসম্ভবকে পরিণত করবে সম্ভবে


The Verge এর প্রতিবেদক সম্প্রতি মোটরনির্মিত এক্সোস্কেলিটনের কথা বলেছেন, যা আবিষ্কার করেছে SuitX। এই এক্সোস্কেলিটন গায়ে জড়ালে একজন প্যারালাইজড ব্যক্তি হাঁটার সক্ষমতা পাবে।

উড়ন্ত গাড়ি

বিজ্ঞানীরা অনেক আগে থেকেই উড়তে সক্ষম গাড়ির কথা শুনিয়ে এলেও তা এখনো লোকদৃষ্টির অগোচরেই রয়েছে। তবে এবার বেশ কিছু ঘোষণায় ধারণা করা হচ্ছে তার খুব দেরি নেই। সম্প্রতি বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান Uber দাবি করেছে, শীঘ্রই তাদের এয়ার ট্যাক্সি বহর চালু করার চিন্তা আছে। সেই সাথে নিযুক্ত আছে নানা গবেষণা সংস্থা।

যদি সত্যিই সফল হওয়া যায়, মানব সভ্যতা এক নতুন যুগে প্রবেশ করবে। ছোট আকারের কোয়াডকপ্টার ড্রোনের মতো হলেও খুব শীঘ্রই পাবে স্বাভাবিক আকৃতি ও গতি। সম্প্রতি সময়ে বিভিন্ন মেগাসিটিতে জ্যাম কিংবা নাগরিক ভোগান্তি থেকে কেবল মুক্তি নয়। এই আবিষ্কার গঠন করবে যোগাযোগের নতুন সংজ্ঞা। বিখ্যাত সিনেমা ব্লেড রানারের কথা স্মরণ করা যেতে পারে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/25/1566742012256.jpg
উড়ন্ত গাড়ির স্বপ্ন হয়তো খুব বেশিদিন স্বপ্ন হয়ে থাকবে না


অটোমোবাইলের আবিষ্কার অনেকটাই বদলে দিয়েছিল আমাদের জীবনযাত্রার মান। গাড়িঘটিত সমস্যাদি থেকে মুক্তির জন্যও আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে সভ্যতা।

হলোগ্রাফি

অন্যান্য প্রযুক্তি ও গবেষণায় বোধ হয় অনেকটা চাপা পড়ে গেছে ত্রিমাত্রিক হলোগ্রামের কথা। একসময় এর ব্যবহার ছিল ব্যাপক। তবে বেশ কিছু দেশ একে নিয়ে কাজ করে চলছে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/25/1566742045529.jpg
অগোচরেই হলোগ্রাফ নিয়ে আসতে পারে নতুন বিপ্লব


ভবিষ্যতে হলোগ্রাফে বিশেষ ধরনের চশমার প্রয়োজন পড়বে না। সেই সাথে স্তরবিহীন থ্রি-ডি হলোগ্রাম হাজার মাইল দূরের কারোসাথে বিরামহীন যোগাযোগে সক্ষম করে দেবে। মনে হবে যেন তারা বসে আছে পাশেই।

কৃত্রিম মধ্যাকর্ষণ

বর্তমান বিজ্ঞানের অন্যতম প্রধান সমস্যা—মহাকাশে আমরা মধ্যাকর্ষণ শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। ফলে সম্ভব হয় না অনুকূল পরিবেশ তৈরি। কৃত্রিম মধ্যাকর্ষণ সৃষ্টির সক্ষমতা মহাকাশীয় অনেক ফাঁদ থেকেই বের হয়ে আসার পথ উন্মোচন করে দেবে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/25/1566742101356.jpg
কৃত্রিম মধ্যাকর্ষণ মহাকাশে দেবে নতুন পরিচয়


তাত্ত্বিকভাবে বলকে কেন্দ্রীভূত করার মাধ্যমে কৃত্রিম মধ্যাকর্ষণ সৃষ্টি করা সম্ভব। এজন্য দরকার বেশ ভারি পরিমাণে মহাশূন্য দ্রব্যাদি। যেমনটা আর্থার সি ক্লার্কের 2001: A Space Odyssey কিংবা অন্যান্য অনেক সায়েন্স ফিকশনেই দেখা গেছে।

মহাকাশে বসবাস

১৯৭০ সালের দিকে নাসা মহাশূন্যে বসতি নির্মাণের খসড়া ইশতেহার প্রণয়ন করে। প্রক্রিয়ায় বাজেট রাখা হয়েছিল কমবেশি ৩৫ বিলিয়ন ডলার। এই চিন্তাটা পৃথিবীকে কল্পনার অন্যতম উচ্চতায় নিয়ে গেছে। মানুষ নিজেকে ভাবতে শুরু করেছে মহাবিশ্বের একচ্ছত্র নায়ক হিসাবে। এই ক্ষেত্রে অন্তত তিনটা নাম না আনা অপরাধ হবে—বার্নাল স্ফিয়ার, স্ট্যানফোর্ড টোরাস এবং ও’নেইল সিলিন্ডার।
কলোনিগুলো অবস্থিত হবে ল্যাগ্রানজিয়ান পয়েন্টে, যাকে বলা হয় L5। জায়াগাটা চাঁদ, সূর্য এবং পৃথিবী থেকে ভারসম্যপূর্ণ দূরত্বে থাকার কারণে বেশ নিরাপদ। প্রতিটি কলোনিই হবে স্বনির্ভর এবং পর্যাপ্ত কৃষি এলাকা নিয়ে গঠিত।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/25/1566742152579.jpg
মহাশূন্যে বসবাস হবে সৌর জগতের বাইরে বসবাসের সিঁড়ি


ও’নেইল সিলিন্ডারের ক্ষেত্রে এটি হবে ৫ মাইল প্রশস্ত এবং ২০ মাইল লম্বা। তিন টুকরো ভূমি পরস্পর যুক্ত থাকবে। কলোনিগুলো সক্ষম থাকবে নিজের মধ্যাকর্ষণকে নিয়ন্ত্রণ করতে। এই ধরনের মহাকাশীয় ব্যবস্থা আমাদের অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবীর বাইরেই কেবল নয়; সৌর জগতের বাইরে বসবাস করার স্বপ্ন দেখায়।

ফিউশন শক্তি

জীবাশ্ম জ্বালানী যে হারে আমরা ব্যবহার করছি, তাতে বেশিদিন টিকবে বলে মনে হয় না। প্রায় একই কথা প্রযোজ্য অন্যান্য শক্তির উৎসের জন্য। সেক্ষেত্রে ফিউশন বিক্রিয়ায় উৎপন্ন শক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। শক্তি ব্যবহারের নির্ভরশীলতায় এমন নাটকীয় পরিবর্তন ভবিষ্যৎ মানব সভ্যতার গতিমুখ নির্ধারণেও সাহায্য করবে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/25/1566742204496.jpg
ফিউশন শক্তির সফলতা প্রতিস্থাপিত করবে অন্যান্য শক্তির উপর নির্ভরশীলতা


১৯৫০-এর দশক থেকে ফিউশনের অগ্রগতির জন্য গবেষণা চলছে। যদি তৈরি করা হতো, আমরা এতদিনে প্রভূত শক্তির অধিকারী হতাম। বিজ্ঞানীরা দেখিয়ে দিয়েছেন, মাত্র এক কিলোগ্রাম ডিউটেরিয়াম থেকে যে পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয়; তা দিয়ে দশ লাখ বাড়িকে বিদ্যুতের আওতায় আনা সম্ভব। অথচ ওই ডিউটেরিয়াম আসবে পানি থেকে। বিষয়টা কঠিন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের আবিষ্কার এবং সফলতাগুলো ভবিষ্যতের জন্য আশা জাগায়।

   

৫০ বছর আগে মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি আজও শ্রেষ্ঠ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সালটা ১৯৬৮। বিশ্বব্যাপী মানুষ মেতে উঠেছিল বড়দিনের আনন্দে। তখনো জানতো না, বড়দিন উপলক্ষে তারা একটি বিশেষ উপহার পেতে চলেছে। পৃথিবী থেকে আমরা হরহামেশাই চাঁদ দেখি। অমাবস্যা-পূর্ণিমা, এমনকি পক্ষের মাঝামাঝি সময়ের বদৌলতে নানা দৃষ্টিকোণে নানা আকারের চাঁদ দেখতে পাই। তবে চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন? এরকমটা হয়তো অনেকেই ভাবেন।

নাসার মহাকাশচারীরা অ্যাপোলো ৪ এ করে তখন চাঁদের চারপাশে টহল দিচ্ছে। সেখান থেকে তারা চাঁদের বাসকারীদের দৃষ্টিতে পৃথিবী কেমন হবে তার এক নমুনা জোগাড় করেন। ক্রিসমাসের কিছুদিন আগে ক্রুরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় ব্যারেন লুনার হরিজোন থেকে একটি ছবি তোলে। সেখানে সুদূর মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একটি সুন্দর দৃশ্য ধারণ করা হয়। চমৎকার সেই রঙিন ছবিটি সবকিছু পরিবর্তন করতে চলেছিল।

ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন নভোচারী বিল অ্যান্ডার্স এবং জিম লাভেল। ছবিটি ধারণ করার পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে যাওয়ার পরও এটিকে প্রকৃতির সবচেয়ে আইকনিক ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটিই মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম রঙিন এবং উচ্চ রেজুলেশনের ছবি।

১৯৭০ সালে পরিবেশ সচেতনতা এবং এই ব্যাপারে সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পৃথিবী দিবস প্রচারিত হওয়ার কারণে ছবিটিকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাইকেল প্রিচার্ড ছবিটিকে নিখুঁত দাবি করেন। তিনি বলেন, এই ছবিটি পৃথিবীর এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল, যা আগে কোনো ছবি করতে পারেনি। প্রকাণ্ড মহাবিশ্বে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা ক্ষুদ্র গ্রহ, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ছবিটি।

১৯৬০ সালের পরই পৃথিবী নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে। ষাটের দশকের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মানুষ অনুধাবন করে পৃথিবীকে আজীবন একইভাবে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রহের প্রতি আমাদের আরও অনুরাগী হতে হবে। সেই উদ্দেশে ১৯৬৯, ‘৭০ ও ‘৭১ সালে ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ এবং ‘গ্রিনপিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ছবিটি প্রকাশের ১৮ মাস পর ২০ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক পৃথিবী রক্ষার আন্দোলনে রাস্তায় নামে।

পৃথিবী রক্ষা করার জন্য মানুষদের উৎসাহিত করার বেলায় ছবিটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এখনো অবদি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর পাঠানো ছবিগুলোর মধ্যে ১৯৬৮ সালে বড়দিনের আগে তোলা সেই ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়।

;

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

;

অস্ট্রেলিয়ায় নিখোঁজ কুকুর ফিরলো যুক্তরাজ্যের মালিকের কাছে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয় যুক্তরাজ্যের এক দম্পতির পালিত কুকুর। যুক্তরাজ্যে আসার ১৭ দিন পর মিলো নামের কুকুরটিকে ফিরে পেয়েছেন জেসন হোয়াটনাল নিক রোল্যান্ডস দম্পতি।

হোয়াটনাল এবং তার সঙ্গী নিক সম্প্রতি তাদের কুকুর মিলোকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পরিদর্শনে যান। তারা যখন সোয়ানসিতে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তখন মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তার হ্যান্ডলার থেকে কুকুরটি পালিয়ে যায়।

সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটিকে অবশেষে মেলবোর্নের শহরতলিতে ১৭ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।


হোয়াটনাল স্কাই নিউজকে বলেন, ‘মিলোকে ফিরে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক ছিল আমার জন্য। যখন আমি আমার প্রিয় মিলোর (কুকুর) সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কান্না দেখে অন্যরাও কেঁদেছিল। এটি সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্য প্রান্তে থেকে মিলোর কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম না মিলো কোথায় আছে। এটি বেশ হতাশাজনক ছিল আমাদের জন্য, কিছুটা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাকে ফিরে পাবো ভাবিনি।

মিলোকে পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, তখন স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সাহায্য আসে, তারা মিলোর সন্ধান দেয়। মিলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

;

আমার হাতের পাখা যেন তাদের আরাম দিচ্ছে!



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

  • Font increase
  • Font Decrease

আবু বক্কর (৬২)। বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে তিনি এখন পাকা বিক্রেতা। প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষ যখন ঠান্ডা বাতাসের প্রশান্তি খুঁজছে, তখন তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন।

আবু বক্কর বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্ত্রীসহ ছয় মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। তবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু বয়সের ভারে ঠিকই আমরা একা থেকে গেলাম। শেষ বয়সে গ্রামে গ্রামে তালপাতা পাখা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। শুধু সংসার না, এই টাকায় আমার পায়ের শিরার ব্যথার ওষুধও কিনতে হয়। একবেলা ওষুধ না খেলে চলতে পারি না।

এদিকে, পুরনো ব্যবসার ঋণের বোঝা আর অন্যদিকে অসুস্থ হয়ে ওষুধসহ সংসারের খরচ। শেষ বয়সে তালপাতার পাখাই আমার একমাত্র জীবনসঙ্গী বলেন আবু বক্কর।

তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন আবু বক্কর, ছবি- বার্তা২৪.কম

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের কবিগানের অনুষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, একপাশে তালপাতার পাখা বিক্রি করতে ব্যস্ত ছোট্ট পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ। এই গরমে যখন তার ঘরে থাকার কথা, তখন সে নানা-নানীর সঙ্গে এসে তালপাতার পাখা বিক্রি করছে। কবিগানে বসে থাকা সব শ্রোতার কাছে গিয়ে বলছে, পাখা লাগবে, পাখা! কথা বলতে চাইলেও এ পাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, ক্রেতার কাছে।

এক ফাঁকে তাকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, এই বয়সে পাখা বিক্রি করছো কেন! এ প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে মাহমুদুল্লাহ বলে, প্রচণ্ড গরমে স্কুল ছুটি। তাই, নানা-নানীর সঙ্গে চলে এসেছি মেলায় পাখা বিক্রি করতে। মানুষজন আমার কাছ থেকে যেন বেশি পাখা কেনে (ক্রয়), তাই আমি মেলায় তাদের সঙ্গে এসেছি।

অনেক উৎসাহের সঙ্গে সে বলে, গরমে আমার হাতের পাখায় যেন তাদের আরাম দিচ্ছে! মেলা হলে আমি সেখানে চলে যাই পাখা বিক্রি করতে। ঘোরাঘুরিও হয় আর টাকা ইনকামও হয়। টাকার জন্য বের হয়ে পড়েছি। আমরা পাখা বিক্রি করে পেট চালাই। নানা-নানী বুড়ো হয়ে গেছে। তাই, আমি সঙ্গে এসে তাদের কষ্টটাকে একটু ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।

যেখানে প্রচণ্ড তাপে মানুষজন নাজেহাল, সেখানে ছোট্ট মাহমুদুল্লাহ ছুটে চলেছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাখা বিক্রি করতে। ছোট্ট শিশু হলেও গরম যেন তার কাছে কিছু না, পেটের তাগিদে!

আরেক পাখা বিক্রেতা তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা ভদ্রকান্ত সরকার (৭০)। ১২-১৪ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি।

চলছে তালপাতার পাখার বিকিকিনি, ছবি- বার্তা২৪.কম

শেষ বয়সে পাখা কেন বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে ভদ্রকান্ত বলেন, চাল কিনে খেতে হয়। খুব কষ্টের সংসার! ছেলে-মেয়ে আছে। তারা তাদের মতো কাজ করে খায়। মা বাবার বয়স হয়ে গেলে ছেলে আর আমাদের থাকে না। আমরা বৃদ্ধ বয়সে কেমন আছি, সেটা জানার সুযোগ তাদের থাকে না। শেষজীবনটা এভাবে পাখা বিক্রি করে কাটিয়ে দেবো। কী আর করবো! কপালে যা আছে, শেষপর্যন্ত তাই হবে। কপালে ছিল, এমন বৃদ্ধ বয়সে গ্রামে গ্রামে পাখা বিক্রি করতে হবে!

;