সেভেন সিস্টার্স কী



নিশীথ দাস, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
মানচিত্রে সেভেন সিস্টার

মানচিত্রে সেভেন সিস্টার

  • Font increase
  • Font Decrease

ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের সাতটি রাজ্য—নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয় ও অরুণাচল প্রদেশকে সেভেন সিস্টার বলা হয়। এদের মোট আয়তন ২,৫৫,৫১১ বর্গকিলোমিটার। এই সাতটি রাজ্যে জাতিগত এবং ধর্মীয় বৈচিত্র্য বিদ্যমান থাকলেও রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তাদের মিল রয়েছে। ভূরাজনৈতিকভাবে এদের অবস্থান, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং বৈচিত্র্যময় সামাজিক কাঠামোর কারণে সারা বিশ্বে অতুলনীয়। এ রাজ্যগুলো ঐতিহাসিকভাবে আজকের ভারতের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। আর্যরা সমস্ত ভারত দখল করে। কিন্তু ব্রহ্মপুত্রের পূর্বপাশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে আসতে পারেনি।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/29/1567088297927.jpg
◤ ‘সেভেন সিস্টার্স’ টার্মটি প্রথম ব্যবহার করেন ত্রিপুরার সাংবাদিক জ্যোতি প্রসাদ সাইকিয়া


এসব অঞ্চলে গারো, খাসিয়া, বোরো, মিজোদের মতো অনার্য আদিবাসী রাজাদের শাসন ছিল। মিজোরাম এবং মণিপুর রাজ্য আসামের বরাক উপত্যকার মাধ্যমে ভারতের বাকি অংশের সাথে যুক্ত। এই আন্তঃনির্ভরতার কারণে ১৯৭২ সালে এই সাতটি রাজ্যকে সেভেন সিস্টার্স বা সাত বোনের মর্যাদা দেওয়া হয়। ত্রিপুরার সাংবাদিক জ্যোতি প্রসাদ সাইকিয়া এই সাতটি রাজ্যকে একসূত্রে বলার জন্য এই টার্মটি প্রথম ব্যবহার করেন। এসব রাজ্যের রয়েছে চমৎকার ভূখণ্ড, উদ্ভিদ এবং প্রাণীজগত আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বাহার। পর্যটকদের আকৃষ্ট করে সহজেই।

আসাম

আসামের রাজধানী দিসপুর। একে ঘিরে রয়েছে ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মেঘালয়, মিজোরাম, মণিপুর ও অরুণাচল প্রদেশ। এর আয়তন ৭৮,৪৩৮ বর্গকিলোমিটার। রাজ্যটি বিলুপ্তপ্রায় ভারতীয় একশৃঙ্গ গণ্ডার সংরক্ষণের চেষ্টা করছে। মধ্যযুগে আসাম দুটি রাজবংশ—কোচ এবং অহম দ্বারা শাসিত হতো। কোচদের উৎস ছিল তিব্বতী-বার্মা অঞ্চল এবং অহমদেরও ছিল তাই যারা উত্তর আসাম শাসন করত। এই সময় ভারতবর্ষ অনেক আক্রমণের সম্মুখীন হয়েছে কিন্তু ব্রিটিশ ছাড়া আসাম কোনো বিদেশি শক্তির শাসনে আসেনি। এমনকি মোঘলরা ১৭ বার আসাম আক্রমণ করেও ব্যর্থ হয়।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/29/1567088458046.jpg
আসামের রাজধানী দিসপুর


১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ইঙ্গ-বর্মী যুদ্ধের পর পশ্চিম আসাম ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক গৃহীত হয়। এরপর ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে এখানকার রাজা পুরন্দর সিংহ উচ্চ আসাম দখল করলেও পাঁচ বছর পরে এই এলাকা ব্রিটিশ শাসনাধীনে চলে যায়। ব্রহ্মপুত্র নদ আসামের পূর্বগামী নদ। এই নদটি অরুণাচল প্রদেশ হয়ে এ রাজ্যে প্রবেশ করেছে। দেশের উত্তর-পূর্ব দিকের প্রবেশদ্বার আসাম ঘন সবুজ বন, উর্বর সমভূমি, বিশালাকায় ব্রহ্মপুত্র নদ, সুন্দর পাহাড়, নীলাভ পর্বত, বিস্ময়কর চা চাষের উপত্যকা এবং প্রসিদ্ধ উদ্ভিদ ও প্রাণীকূল দ্বারা সমৃদ্ধ।

মেঘালয়

মেঘালয়ের রাজধানী শিলং। এটি ভারতের ২১তম রাজ্য। এর আয়তন ২২,৪২৯ বর্গকিলোমিটার। গারো পাহাড়, খাসি পাহাড়, জয়ন্তিয়া পাহাড়ের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে এই রাজ্যটি। ১৯৭০ সালে আসামের দুটি জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মেঘালয়ের জন্ম হয়েছিল। ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর বাংলা ভাগ হওয়াকালীন মেঘালয় পূর্ব বাংলা ও আসামের এক নতুন প্রাদেশিক অংশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/29/1567088530335.jpg
মেঘালয়ের রাজধানী শিলং


১৯১২ সালে পুনর্বার বিভাজনকালে মেঘালয়, আসামের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে। মেঘালয় ছবির মতো সুন্দর একটি রাজ্য। সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে এই মেঘালয়কে বলা হয় ‘প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড’।

নাগাল্যান্ড

নাগাল্যান্ডের রাজধানী কোহিমা। এটি ভারতের ক্ষুদ্রতম রাজ্যগুলোর একটি। এর আয়তন ১৬,৫৭৯ বর্গকিলোমিটার। ভারতের স্বাধীনতার ঠিক আগের দিন ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট নাগারা নিজেদের স্বাধীনতা ঘোষণা করেও সুফল পায়নি। ১৯৫১ সালের মে মাসে নাগাল্যান্ডে একটি স্বতঃস্ফূর্ত গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। এতে নাগাদের স্বাধীনতার পক্ষে পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ পায়। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার তাদের পক্ষ সমর্থন করেনি। অবশ্য ১৯৬৩ সালে আসাম থেকে আলাদা করে ভারতের ১৬তম রাজ্য হিসেবে গঠন করা হয় নাগাল্যান্ড। উল্লেখ্য, ১৮৭৪ সালে আসাম আলাদা হলেও ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গে তাকে আবার বাংলায় যুক্ত করা হয়।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/29/1567088605265.jpg
নাগাল্যান্ডের রাজধানী কোহিমা


১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদের পর তা আবার নর্থ-ইস্ট ফ্রন্টিয়ারের অংশ হয়। ভারতের স্বাধীনতার পর এখান থেকে নাগাল্যান্ড আলাদা হয়। নাগাল্যান্ডে পর্যটকদের আকর্ষণের মধ্যে রয়েছে বাঁশের আসবাবপত্র সংক্রান্ত পণ্য যেমন: টেবিল, ছবির ফ্রেম, পর্দা, উইন্ডো শেড এবং পর্দা, চেয়ার, ওয়াল হ্যাঙ্গিং, কম্বল প্রভৃতি। এছাড়া বেতের আসবাবপত্রও রয়েছে। রাজ্যটির রাষ্ট্রীয় মিউজিয়াম কোহিমায় অবস্থিত, নাগাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার এটি সেরা জায়গা। নাগাল্যান্ডে বন্য পশুপাখি ও প্রাণীদের জন্য রয়েছে ফকিম, ইন্টাকি ও পুলি ব্যাজ অভয়ারণ্য।

মিজোরাম

মিজোরামের রাজধানী আইজল। এটি উত্তর ও দক্ষিণ লুসাই পার্বত্য জেলাগুলোর সমন্বয়ে গঠিত। এর আয়তন ২১,০৮৭ বর্গকিলোমিটার। এটি দেশের ২৩তম রাজ্য। এই রাজ্যের বিশাল পাইনের গুচ্ছ, নান্দনিক প্রাকৃতিক দৃশ্য, বাঁশের ওপর নির্মিত ঘরের গ্রাম দেয় অপূর্ব সৌন্দর্য। এখানকার গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলো—সোনাই, টুইভাওয়াল, তালেং, কোলোডাইন এবং কামাফুলি। খ্রিস্টীয় ১৭৫০ থেকে ১৮৫০ সালের মধ্যে মিজো উপজাতিরা নিকটস্থ চীন পর্বত থেকে এসে এখানকার স্থানীয় আদিবাসীদের পরাজিত করার মাধ্যমে তারা বসতি স্থাপন শুরু করে। তারা নিজস্ব একটি সমাজব্যবস্থার সূচনা করে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/29/1567088728502.jpg
মিজোরামের রাজধানী আইজল


পরে মিজোরা সেখানে একটি স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের উত্থাপন ঘটায়। ১৮২৬ সালে আসাম ব্রিটিশ শাসনের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আগে পর্যন্ত মিজোরাম উপজাতিদের ওপর বিদেশি রাজনৈতিক শক্তির কোনো হস্তক্ষেপ ছিল না। ১৮৯০ সালের দিকে মিজোরাম ব্রিটিশদের দখলে আনুষ্ঠানিকভাকে যুক্ত না হলেও এর ওপর নিয়ন্ত্রণ দুই যুগ আগেই আসে।

ত্রিপুরা

ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা। এটি ভারতের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম রাজ্য। এর আয়তন ১০,৪৮৬ বর্গকিলোমিটার। দীর্ঘ সময়ব্যাপী রাজ্যটি ত্রিপুরি সাম্রাজ্যের শাসনাধীন ছিল। ব্রিটিশরাও শাসন করে। ত্রিপুরা ১৯৪৯ সাল থেকে স্বাধীন ভারতের একটি অংশ হয়। ১৯৫৬ সালে রাজ্যটি কেন্দ্রশাসিত একটি অঞ্চলে রূপ নেয়।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/29/1567088788233.jpg
ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা


বাঙালি, ত্রিপুরি, মণিপুরী, রিয়াং, জামাতিয়া, কোলোই, নোয়াতিয়া, চাকমা, মুরাসিং, গারো, হালাম, মিজো, কুকি, মুন্ডা, মোগ, সাঁওতাল, উচোই ও ওঁরাও—এসব বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর অবস্থানের ফলে এখানকার সংস্কৃতিতেও রয়েছে বৈচিত্র্য। এখানে বাঙালি জাতিগোষ্ঠীর সংখ্যাও অনেক। প্রধান কথ্য ভাষাগুলো হলো ককবরক ও বাংলা।

অরুণাচল

অরুণাচলের রাজধানী ইটানগর। এ প্রদেশের বেশিরভাগ অঞ্চল পর্বতবেষ্টিত। এর আয়তন ৮৩,৭৪৩ বর্গকিলোমিটার। এ প্রদেশের উঁচুনিচু, এলোমেলোভাবে বিস্তৃত ঢালযুক্ত ভূখণ্ড প্রদেশটিকে দিয়েছে আলাদা মাত্রা। তাছাড়াও এর রয়েছে বিশাল হিমালয়ের উচ্চশৃঙ্গ। এখানকার প্রধান নদী ব্রহ্মপুত্র। এটি এ প্রদেশে সিয়াং নামে পরিচিত।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/29/1567088845712.jpg
অরুণাচলের রাজধানী ইটানগর ◢


১৮২৬ সালে আসাম ব্রিটিশ ভারতের অংশ হলে অরুণাচল প্রদেশকেও ব্রিটিশের অধীনে আনার সবরকম প্রচেষ্টা চালানো হয়। এরপরও ১৮৮০ সাল পর্যন্ত এখানে ব্রিটিশরা আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি। এ প্রদেশের জনসংখ্যার বেশিরভাগ গোড়া এশিয়াভিত্তিক। তবে তিব্বত এবং মায়ানমারের মানুষের সাথে এদের শারীরিকভাবে অনেক মিল রয়েছে। এ প্রদেশের বিখ্যাত স্থানগুলো হলো তাওয়াং, বোমডিলা, ভীষ্মকানগর এবং আকাশিগঙ্গা। চারটি জাতীয় উদ্যান এবং সাতটি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র পর্যটকদের মূল আকর্ষণ। পর্যটকদের কাছে আরো আকর্ষণের একটি স্থান হচ্ছে বৌদ্ধ বিহার। মলিনীথান এবং ভীষ্মকানগর এই প্রদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। এখানকার পরশুরাম কুণ্ড একটি বিশিষ্ট তীর্থস্থান।

মণিপুর

মণিপুরের রাজধানী হলো ইম্ফল। এর আয়তন প্রায় ২২,৩২৭ বর্গকিলোমিটার। ১৯৯৭ সালে রাজধানীটি পূর্ব ইম্ফল ও পশ্চিম ইম্ফল নামে দুই ভাগে বিভক্ত হয়। ভারতের স্বাধীনতার পর মণিপুর সংবিধান আইন প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৭২ সালের ২১ জানুয়ারি মণিপুর পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা অর্জন করে। এ রাজ্যের চারটি প্রধান নদী অববাহিকা হচ্ছে মণিপুর নদী অববাহিকা, বরাক নদী অববাহিকা, ইয়ু নদী অববাহিকা এবং লানইয়ে নদী অববাহিকা। উল্লেখ্য, প্রথম আ্যংলো-মণিপুরী যুদ্ধের পরে ১৮৯১ সালে মণিপুর রাজ্যটি ব্রিটিশের শাসনে চলে আসে। ব্রিটিশরা ইম্ফল দখল করার পর যুবরাজ টেকেন্দ্রাজিৎ এবং জেনেরাল থাঙ্গালকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/29/1567088936711.jpg
মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল


এ রাজ্যে বসবাসকারী বিভিন্ন মানুষের সংস্কৃতি বিভিন্ন। এটি সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জাঁকজমকে ভরপুর। একটি বিরল প্রজাতির হরিণ ‘সাংগাই’-এর বসবাসস্থলও এখানে। জওহরলাল নেহেরু মণিপুরকে ‘ভারতের রত্ন’ হিসেবে বর্ণনা করেন।

   

৫০ বছর আগে মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি আজও শ্রেষ্ঠ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সালটা ১৯৬৮। বিশ্বব্যাপী মানুষ মেতে উঠেছিল বড়দিনের আনন্দে। তখনো জানতো না, বড়দিন উপলক্ষে তারা একটি বিশেষ উপহার পেতে চলেছে। পৃথিবী থেকে আমরা হরহামেশাই চাঁদ দেখি। অমাবস্যা-পূর্ণিমা, এমনকি পক্ষের মাঝামাঝি সময়ের বদৌলতে নানা দৃষ্টিকোণে নানা আকারের চাঁদ দেখতে পাই। তবে চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন? এরকমটা হয়তো অনেকেই ভাবেন।

নাসার মহাকাশচারীরা অ্যাপোলো ৪ এ করে তখন চাঁদের চারপাশে টহল দিচ্ছে। সেখান থেকে তারা চাঁদের বাসকারীদের দৃষ্টিতে পৃথিবী কেমন হবে তার এক নমুনা জোগাড় করেন। ক্রিসমাসের কিছুদিন আগে ক্রুরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় ব্যারেন লুনার হরিজোন থেকে একটি ছবি তোলে। সেখানে সুদূর মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একটি সুন্দর দৃশ্য ধারণ করা হয়। চমৎকার সেই রঙিন ছবিটি সবকিছু পরিবর্তন করতে চলেছিল।

ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন নভোচারী বিল অ্যান্ডার্স এবং জিম লাভেল। ছবিটি ধারণ করার পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে যাওয়ার পরও এটিকে প্রকৃতির সবচেয়ে আইকনিক ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটিই মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম রঙিন এবং উচ্চ রেজুলেশনের ছবি।

১৯৭০ সালে পরিবেশ সচেতনতা এবং এই ব্যাপারে সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পৃথিবী দিবস প্রচারিত হওয়ার কারণে ছবিটিকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাইকেল প্রিচার্ড ছবিটিকে নিখুঁত দাবি করেন। তিনি বলেন, এই ছবিটি পৃথিবীর এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল, যা আগে কোনো ছবি করতে পারেনি। প্রকাণ্ড মহাবিশ্বে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা ক্ষুদ্র গ্রহ, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ছবিটি।

১৯৬০ সালের পরই পৃথিবী নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে। ষাটের দশকের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মানুষ অনুধাবন করে পৃথিবীকে আজীবন একইভাবে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রহের প্রতি আমাদের আরও অনুরাগী হতে হবে। সেই উদ্দেশে ১৯৬৯, ‘৭০ ও ‘৭১ সালে ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ এবং ‘গ্রিনপিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ছবিটি প্রকাশের ১৮ মাস পর ২০ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক পৃথিবী রক্ষার আন্দোলনে রাস্তায় নামে।

পৃথিবী রক্ষা করার জন্য মানুষদের উৎসাহিত করার বেলায় ছবিটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এখনো অবদি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর পাঠানো ছবিগুলোর মধ্যে ১৯৬৮ সালে বড়দিনের আগে তোলা সেই ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়।

;

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

;

অস্ট্রেলিয়ায় নিখোঁজ কুকুর ফিরলো যুক্তরাজ্যের মালিকের কাছে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয় যুক্তরাজ্যের এক দম্পতির পালিত কুকুর। যুক্তরাজ্যে আসার ১৭ দিন পর মিলো নামের কুকুরটিকে ফিরে পেয়েছেন জেসন হোয়াটনাল নিক রোল্যান্ডস দম্পতি।

হোয়াটনাল এবং তার সঙ্গী নিক সম্প্রতি তাদের কুকুর মিলোকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পরিদর্শনে যান। তারা যখন সোয়ানসিতে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তখন মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তার হ্যান্ডলার থেকে কুকুরটি পালিয়ে যায়।

সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটিকে অবশেষে মেলবোর্নের শহরতলিতে ১৭ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।


হোয়াটনাল স্কাই নিউজকে বলেন, ‘মিলোকে ফিরে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক ছিল আমার জন্য। যখন আমি আমার প্রিয় মিলোর (কুকুর) সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কান্না দেখে অন্যরাও কেঁদেছিল। এটি সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্য প্রান্তে থেকে মিলোর কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম না মিলো কোথায় আছে। এটি বেশ হতাশাজনক ছিল আমাদের জন্য, কিছুটা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাকে ফিরে পাবো ভাবিনি।

মিলোকে পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, তখন স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সাহায্য আসে, তারা মিলোর সন্ধান দেয়। মিলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

;

আমার হাতের পাখা যেন তাদের আরাম দিচ্ছে!



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

  • Font increase
  • Font Decrease

আবু বক্কর (৬২)। বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে তিনি এখন পাকা বিক্রেতা। প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষ যখন ঠান্ডা বাতাসের প্রশান্তি খুঁজছে, তখন তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন।

আবু বক্কর বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্ত্রীসহ ছয় মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। তবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু বয়সের ভারে ঠিকই আমরা একা থেকে গেলাম। শেষ বয়সে গ্রামে গ্রামে তালপাতা পাখা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। শুধু সংসার না, এই টাকায় আমার পায়ের শিরার ব্যথার ওষুধও কিনতে হয়। একবেলা ওষুধ না খেলে চলতে পারি না।

এদিকে, পুরনো ব্যবসার ঋণের বোঝা আর অন্যদিকে অসুস্থ হয়ে ওষুধসহ সংসারের খরচ। শেষ বয়সে তালপাতার পাখাই আমার একমাত্র জীবনসঙ্গী বলেন আবু বক্কর।

তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন আবু বক্কর, ছবি- বার্তা২৪.কম

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের কবিগানের অনুষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, একপাশে তালপাতার পাখা বিক্রি করতে ব্যস্ত ছোট্ট পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ। এই গরমে যখন তার ঘরে থাকার কথা, তখন সে নানা-নানীর সঙ্গে এসে তালপাতার পাখা বিক্রি করছে। কবিগানে বসে থাকা সব শ্রোতার কাছে গিয়ে বলছে, পাখা লাগবে, পাখা! কথা বলতে চাইলেও এ পাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, ক্রেতার কাছে।

এক ফাঁকে তাকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, এই বয়সে পাখা বিক্রি করছো কেন! এ প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে মাহমুদুল্লাহ বলে, প্রচণ্ড গরমে স্কুল ছুটি। তাই, নানা-নানীর সঙ্গে চলে এসেছি মেলায় পাখা বিক্রি করতে। মানুষজন আমার কাছ থেকে যেন বেশি পাখা কেনে (ক্রয়), তাই আমি মেলায় তাদের সঙ্গে এসেছি।

অনেক উৎসাহের সঙ্গে সে বলে, গরমে আমার হাতের পাখায় যেন তাদের আরাম দিচ্ছে! মেলা হলে আমি সেখানে চলে যাই পাখা বিক্রি করতে। ঘোরাঘুরিও হয় আর টাকা ইনকামও হয়। টাকার জন্য বের হয়ে পড়েছি। আমরা পাখা বিক্রি করে পেট চালাই। নানা-নানী বুড়ো হয়ে গেছে। তাই, আমি সঙ্গে এসে তাদের কষ্টটাকে একটু ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।

যেখানে প্রচণ্ড তাপে মানুষজন নাজেহাল, সেখানে ছোট্ট মাহমুদুল্লাহ ছুটে চলেছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাখা বিক্রি করতে। ছোট্ট শিশু হলেও গরম যেন তার কাছে কিছু না, পেটের তাগিদে!

আরেক পাখা বিক্রেতা তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা ভদ্রকান্ত সরকার (৭০)। ১২-১৪ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি।

চলছে তালপাতার পাখার বিকিকিনি, ছবি- বার্তা২৪.কম

শেষ বয়সে পাখা কেন বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে ভদ্রকান্ত বলেন, চাল কিনে খেতে হয়। খুব কষ্টের সংসার! ছেলে-মেয়ে আছে। তারা তাদের মতো কাজ করে খায়। মা বাবার বয়স হয়ে গেলে ছেলে আর আমাদের থাকে না। আমরা বৃদ্ধ বয়সে কেমন আছি, সেটা জানার সুযোগ তাদের থাকে না। শেষজীবনটা এভাবে পাখা বিক্রি করে কাটিয়ে দেবো। কী আর করবো! কপালে যা আছে, শেষপর্যন্ত তাই হবে। কপালে ছিল, এমন বৃদ্ধ বয়সে গ্রামে গ্রামে পাখা বিক্রি করতে হবে!

;