পৃথিবীর সব বরফ যদি গলে যায়?



তানিম কায়সার, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
অ্যান্টার্কটিকার একটি বরফ অঞ্চলের চিত্র

অ্যান্টার্কটিকার একটি বরফ অঞ্চলের চিত্র

  • Font increase
  • Font Decrease

আমাদের পৃথিবীর প্রায় ৫.৮ মিলিয়ন বর্গমাইল এলাকা বরফে ঢাকা। একবার কি ভেবেছেন এই বিপুল পরিমাণ বরফ যদি গলতে শুরু করে তখন কী হবে? আমাদের দেশের আয়তন প্রায় ৫৬ হাজার বর্গমাইল। পৃথিবীর বরফে ঢাকা অঞ্চলের পরিমাণ এরকম কয়েকশো দেশের চেয়েও বেশি। কী হবে যদি একদিন রাতে পৃথিবীর সব বরফ গলে যায়? সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেন আপনি ভেসে আছেন জলের ওপর? কী হবে যদি আপনার দেশের অধিকাংশ ভূখণ্ড পানিতে তলিয়ে যায়? ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে যাত্রার যন্ত্রণা আপনি কিভাবে ভোগ করবেন?

সত্যি বলতে, বরফ গলে গেলেই যে পানি খুব বেড়ে যাবে এমন নয়। তবে পৃথিবীতে এমন কিছু উপাদান আছে যেগুলো বরফকে পানিতে রূপান্তরে সাহায্য করে খুব সহজে। কখনো কি একটি পানিভর্তি গ্লাসের মধ্যে একটি বরফের টুকরোকে গলে যেতে দেখেছেন? গলে যাওয়ার পর কি গ্লাসের পানির লেভেলে কোনো পরিবর্তন আসে? সত্যি বলতে কোনো পরিবর্তন হয় না। পানি যা আছে তাই থাকে। এবার একটু লবণ মিশিয়ে দেখবেন? যদি তাতে এক ঘন ইঞ্চি বরফ মেশানো হয় তবে পানির পরিমাণ বেড়ে যাবে ০.০৩ ঘন ইঞ্চি। আর এটা হবে লবণাক্ত পানির কারণে। যদিও এই পানির বৃদ্ধির পরিমাণ মাত্র ৩ % এর কম, কিন্তু চিন্তা করুন এটাই যদি কোনো বড় বরফের চাকা হয় এবং সেই বরফ গলে পড়ে সমুদ্রের লবণাক্ত পানিতে?

কী হবে ব্যাপারটা? ভয় পাচ্ছেন? শুধু এখানেই শেষ নয়। এ তো কেবল শুরু। একটি গবেষণার ফলাফল এ ব্যাপারে আপনাকে বেশ চমকে দিতে পারে। গবেষণাটি বলে, যদি এসব বরফ গলে যায় তাহলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাবে প্রায় ২৩০ ফুট। যার ফলে প্রায় সাতটি মহাদেশেরই বিরাট অংশ চলে যাবে পানির নিচে। বলার অপেক্ষা রাখে না বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া কিংবা ইউরোপ আমেরিকার মতো স্বপ্নের দেশগুলোর অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া যাবে না। সমুদ্রতীরবর্তী দেশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়া পর্যটক এবং ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশের আশিভাগ বাসিন্দাই তলিয়ে যাবে পানির নিচে।

গলতে শুরু করেছে দক্ষিণ মেরুর বরফ


দক্ষিণ মেরুতে অবস্থিত অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের গড়ে ৯৮ ভাগই প্রায় দুই কিলোমিটার পুরু বরফাবৃত। পেঙ্গুইন, সিল, নোমাটোড, টার্ডিগ্রেডের মতো প্রবল শৈত্যের সঙ্গে লড়াই করতে সক্ষম প্রাণী এবং উদ্ভিদরাই কেবল এখানে টিকে থাকতে পারে। এক কোটি ৪০ হাজার বর্গ কিলোমিটার জুড়ে থাকা এই বরফাবৃত অঞ্চলকে পৃথিবীর শুষ্কতম মরুভূমি হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়। সেখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাত্র ২০০ মিলিমিটার। তবে মাঝেমধ্যেই বিজ্ঞানীরা অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলে যাওয়া সম্পর্কে সাবধান করছেন পৃথিবীর মানুষকে। বরফ গললে কী হতে পারে সে সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

যদি সত্যি এমনটি ঘটে তবে বর্তমানে স্থলভাগের যে মানচিত্র রয়েছে তা বদলে যাবে। ধীরে ধীরে বাড়ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা। কয়দিন আগেও রেকর্ড তাপমাত্রা ধারণ করা হয়েছে কুয়েতে। গত ৮ জুন দেশটিতে ছায়ায় ৫২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও রোদে ৬৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই এই দৌড়ে। এ বছরের ২৫ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় খুলনায়। ব্যাপারটা সকলের জন্যই উদ্বেগজনক।

বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ৫৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট থেকে ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইট হলে পৃথিবীতে থাকা পাঁচ মিলিয়ন কিউবিক মাইল বরফ গলে যাবে। আর সেই সাথে পুরো আটলান্টিক সমুদ্রতীর, এমনকি ফ্লোরিডা এবং উপসাগরীয় উপকূল তলিয়ে যাবে। নেমে আসবে এক মহাদুর্যোগ।

ভৌগোলিকভাবে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য একটু উঁচু জায়গায় থাকায় তারা হয়তো এই মহাপ্রলয় থেকে সাময়িকভাবে বেঁচে যাবে। কিন্তু তারাও বেশিদিন বাঁচতে পারবে না এই মহাদুর্যোগ থেকে। কারণ পুরো পৃথিবীই বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠবে। যারাই বেঁচে যাবে তাদেরকে অনেক ভয়ানক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। কেননা এই গলে যাওয়া বরফ বাতাসে কার্বনডাই অক্সাইড ছড়াতে থাকবে। বিপরীতে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়বে না। মানুষ শ্বাস প্রশ্বাস নিতে সমস্যার সম্মুখীন হবে এবং ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকেই এগিয়ে যাবে।

তাহলে মানুষ কি এই পরিস্থিতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে না? পারবে। কিন্তু এতে কিছুটা সময় লাগবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই সময়, প্রকৃতি আপনাকে আর দেবে না। সমুদ্র তাদের গতিপথ বদলানো শুরু করবে। সমুদ্র এবং বরফ অঞ্চলের প্রাণীরা প্রবল ধ্বংসের মুখে পড়বে। যারাই বেঁচে থাকবে তাদের নিজের বাসস্থান ছেড়ে অন্যত্র জায়গা খুঁজতে হবে। প্রবল খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হবে মানুষ। সমদ্রের এই গতি পরিবর্তনের কারণে প্রকৃতিও শুরু করবে বিরূপ আচরণ। মরুভূমিগুলোতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে, কিন্তু যেসবখানে আগে বেশি বৃষ্টি হতো সেসব এলাকা শুকিয়ে যাবে। কৃষি ক্ষেত্রে নেমে আসবে বিপর্যয়।

বাতাসের ধরন বদলে যাবে। আকাশে প্রচুর মেঘ জমবে এবং তা ক্রমে বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়বে পাহাড়ের গায়ে। তৈরি হবে বন্যা। সামান্য ভূমিকম্পের কারণে নেমে আসবে ভয়াবহ সুনামি। মৃত্যু ছাড়া কোনো বিকল্প থাকবে না মানুষের।

এসব প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যেই ব্রিটিশ গবেষণা কেন্দ্র ‘হ্যালি সিক্স’কে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা শুরু হয়েছে। কেননা, কেন্দ্রটি যে বরফের ওপর তা ভেঙে যেতে পারে। ট্রাক্টর আর বুলডোজার দিয়ে কয়েক টন ওজনের মডিউলটিকে ডাঙ্গার দিকে ২৩ কিলোমিটার টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দক্ষিণ মেরুর (কুমেরু) মাঝখান থেকেও বরফের ঢাল চলেছে উপকূলের দিকে৷ কত তাড়াতাড়ি এই বরফ সাগরে পৌঁছাবে, তা নির্ভর করবে উপকূলের শেল্ফ আইসের পাতগুলির ঘনত্ব ও অবস্থার ওপর, কেননা, এই শেল্ফ আইস হিমবাহগুলির ব্রেক হিসেবে কাজ করে।

ব্রিটিশ গবেষণা কেন্দ্র হ্যালি সিক্সকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে


হেল্মহলৎস সেন্টার ফর পোলার অ্যান্ড মেরিন রিসার্চের আলফ্রেড ভেগেনার ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ব্যার্নহার্ড ডিকমান বলেন, “বেশি বরফ ভেঙে গেলে পাতটা স্থিতিহীন হয়ে পড়বে, ভারসাম্য হারাবে। তার ফলে পেছনে হিমবাহের বরফ সোজা সাগরে গিয়ে পড়তে পারে। সাগরের পানির উচ্চতার জন্য একটি আইস শেল্ফ ভাঙলে ক্ষতি নেই, কেননা, বরফ জলে ভাসে। কাজেই বরফের পাত ভাঙলে সাগরের পানি বাড়বে না। কিন্তু মেরুপ্রদেশের ভিতর থেকে যে বরফ আসছে, তার ফলে সাগরের পানির উচ্চতা বাড়বে বৈকি।”

যে কুমেরু উপদ্বীপের ওপর এই বরফের পাতগুলো অবস্থিত, সেই এলাকাটি বিশেষভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বারা প্রভাবিত। কিন্তু আরো শীতল এলাকাগুলোতেও বরফ গলছে। এর মূল কারণ জলবায়ু পরিবর্তন বলে অনেক গবেষকের ধারণা। জলবায়ু পরিবর্তন দুভাবে মেরুপ্রদেশের বরফের ক্ষতি করছে। কুমেরুর পশ্চিমাঞ্চলে উষ্ণ জলের স্রোত তলা থেকে বরফ গলাচ্ছে। শেল্ফ আইসের বরফের পাতগুলোর উপরের বরফ গরম বাতাসে গলে জলের কুণ্ড তৈরি হচ্ছে।

পুড়ছে আমাজন


জলবায়ু পরিবর্তন এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের ফলে বিশব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাছে। অন্যদিকে মানুষ লোভের বশে একের পর এক বন জঙ্গল উজাড় করে যাচ্ছে। এই কয়দিন আগে বিশ্বের ফুসফুসখ্যাত আমাজনের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে হাজার হাজার গাছ। এবছরই আমাজনে ৭২,৮৪৩টি দাবানলের ঘটনা ঘটেছে, ২০১৩ সালের পর এরকম ভয়ানক পরিস্থিতি আমাজনে আর তৈরি হয়নি। এই আগুন লাগার ঘটনা স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৮৩ শতাংশ বেশি। আর গত এক শতাব্দী ধরে ধীরে ধীরে আমাজন রেইন ফরেস্টের ২০ শতাংশেরও বেশি ধ্বংস করে ফেলেছি আমরা। সোনার খনি খোঁজা, মাটি খনন ও বৃক্ষনিধনে এই রেইনফরেস্টের ২০% ব্যবহার করা হয়েছে। আর এভাবে চলতে থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে আমাজনের ২৭ শতাংশ ধ্বংস হয়ে যাবে।

সৌভাগ্যক্রমে সব বরফ একই রাতে হয়তো গলবে না। কিন্তু ধীরে ধীরে বরফ কিন্তু গলে যাচ্ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলেই আগামী পাঁচ হাজার বছরের মধ্যে পৃথিবী বরফহীন হয়ে যাবে। ডুবে যাবে পুরো পৃথিবী। আর তা ঘটবে আমাদেরই কারণে।

   

বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?



কবির য়াহমদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, বার্তা২৪.কম
বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?

বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?

  • Font increase
  • Font Decrease

‘পথের কেনারে পাতা দোলাইয়া করে সদা সঙ্কেত/ সবুজে হদুদে সোহাগ ঢুলায়ে আমার ধানের ক্ষেত/ ছড়ায় ছড়ায় জড়াজড়ি করি বাতাসে ঢলিয়া পড়ে/ ঝাঁকে আর ঝাঁকে টিয়ে পাখিগুলে শুয়েছে মাঠের পরে/ কৃষাণ কনের বিয়ে হবে, তার হলদি কোটার শাড়ী/ হলুদে ছোপায় হেমন্ত রোজ কটি রোদ রেখা নাড়ি/ কলমী লতার গহনা তাহার গড়ার প্রতীক্ষায়/ ভিনদেশী বর আসা যাওয়া করে প্রভাত সাঁঝের নায়।’ পল্লীকবি জসীম উদদীনের ‘ধান ক্ষেত’ কবিতার অপূর্ব চিত্রায়ন কৃষকের শ্রম-ঘাম আর প্রকৃতির তরফে। কাব্যে-পঙক্তির বিমূর্ত চিত্র মূর্ত হয়েছে বিস্তীর্ণ মাঠে। কিষান-কিষানির বুক ভরা আশার সার্থক রূপায়ন হতে চলেছে এ-মৌসুমে।

এখন ভরা বৈশাখ। এ-সময়টা বোরো ধানের। বোরো ধান দেশের খাদ্যচাহিদার অন্তত ৫৫ শতাংশ মিটিয়ে থাকে। দেশের হাওরভুক্ত ৭টি জেলা সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওরে এই বোরোর চাষ বেশি হয়ে থাকে। এই ধান অতিবৃষ্টি, বন্যা ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে দেশের খাদ্যচাহিদায় ঘাটতি পড়ে না। তাই এই ধান চাষ থেকে শুরু করে ঘরে ফসল তোলা পর্যন্ত অনুকূল আবহাওয়া, বিশেষ করে রোদের উপস্থিতি অতি জরুরি। বর্তমানে সে পরিস্থিতি চলছে।

সিলেট অঞ্চলের মানুষ বলে এই অঞ্চলের মানুষের চাওয়া-পাওয়া, হতাশা-উচ্চাশার সঙ্গে আমি পরিচিত। তাদেরকে উদাহরণ হিসেবে টানছি। তাদের সঙ্গে থেকে জেনেছি, বোরো মৌসুমে নির্বিঘ্নে ঘরে ফসল তোলা কতটা জরুরি। গবাদি পশুর খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে জরুরি খড় সংরক্ষণও। তীব্র রোদ এখানে সমস্যার নয়, এটা বরং আনন্দের। কারণ এই রোদ গা পোড়ালেও বুক ভরা আশার সার্থক বাস্তবায়নের পথ দেখায়। দেশের যে খাদ্যচাহিদা, যে খাদ্যনিরাপত্তা সেটা এই বোরো ধানের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাই চাষ থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্যায়ে দরকার হয় প্রকৃতির সহায়তা। এবার এখন পর্যন্ত সে সহায়তা আছে, যদিও এ মাসের শুরুর দিকে একবার ঝড়বৃষ্টিসহ শঙ্কার কালমেঘ হাতছানি দিয়েছিল। সেটা আপাতত দূরে সরেছে।

কিষান-কিষানির দরকার এখন তীব্র রোদ। তারা এটা পাচ্ছে। দেশে তীব্র তাপদাহ। এখানেও এর ব্যতিক্রম নয়। তবু তারা এই রোদের প্রার্থনায় রয়েছে। বৃষ্টি এখন তাদের কাছে দুর্যোগ-সম। কারণ এই বৃষ্টি এবং অতি-বৃষ্টিসৃষ্ট বন্যা তাদের স্বপ্নসাধ গুঁড়িয়ে ভাসিয়ে নিতে পারে সব। ২০১৭ সালের দুঃসহ স্মৃতি এখনও বিস্মৃত হয়নি সুনামগঞ্জের কৃষকেরা। সে বছর সুনামগঞ্জের ছোট-বড় ১৩৭ হাওরের ফসল বন্যায় এবার ভেসে গিয়েছিল। গতবার কৃষক নির্বিঘ্নে ফসল ঘরে তুলেছেন। এরআগের বছর অন্তত ২০টি হাওরের ফসলহানি হয়েছিল বন্যায়।

প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল ক্ষেতের ফসল, দেশের খাদ্যনিরাপত্তা। এখানে প্রচণ্ড তাপদাহ তাই প্রভাব ফেলে সামান্যই। রোদে পুড়ে, প্রয়োজনে ছাতা মাথায় দিয়ে কিষান-কিষানিরা স্বপ্ন তোলেন ঘরে। তারা বৃষ্টির জন্যে প্রার্থনা না করে বরং রোদ আরও কিছুদিন অব্যাহত রাখার প্রার্থনায় বসেন। কৃষকেরা পরিমিত বৃষ্টি চায় চৈত্র মাসে, বৈশাখে চায় খাঁ খাঁ রোদ্দুর, কারণ এই রোদে সোনালী ধান ঘরে ওঠে। লোককথার প্রচলিত, ধান তোলার মৌসুমে ঝড়বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য হাওরবাসীরা তন্ত্রসাধক বা ‘হিরাল’ ও ‘হিরালি’-দের আমন্ত্রণ জানাতেন। তারা এসে মন্ত্রপাঠ করে ঝড়বৃষ্টি থামানোর জন্য চেষ্টা করতেন। লোকায়ত বিশ্বাস থেকে আগেকার মানুষজন এমন আচার পালন করতেন। এসবে সত্যি কাজ হতো কিনা সেটা বিতর্ক এবং ব্যক্তি-বিশ্বাসসাপেক্ষ, তবে এই হিরাল-হিরালিদের আমন্ত্রণ বলে বৈশাখে একদম বৃষ্টি চায় না হাওরের কৃষক।

হাওরপারের মানুষেরা যখন রোদ অব্যাহত থাকার প্রার্থনায়, তখন দেশজুড়ে তীব্র তাপদাহে পুড়তে থাকা মানুষেরা আছেন বৃষ্টিপ্রার্থনায়। দেশের জায়গায়-জায়গায় বৃষ্টি প্রার্থনায় ইস্তিস্কার নামাজ পড়া হচ্ছে, গণমাধ্যমে সচিত্র সংবাদ আসছে এর। কোথাও প্রবল বিশ্বাসে কেউ কেউ ‘ব্যাঙের বিয়ে’ দিচ্ছেন, এটাও বৃষ্টি প্রার্থনায়। সামাজিক মাধ্যমে গরমের তীব্রতার আঁচ মিলছে, বৃষ্টি নাকি ধান—কোনটা জরুরি এই প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ। কেবল তাই নয়, বাংলাদেশের প্রচণ্ড তাপদাহ নিয়ে বিশ্বমিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে দেশের মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে প্রতিবেদন করেছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি, এএফপি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া। গণমাধ্যমগুলো বলছে, প্রচণ্ড গরমের কারণে টানা দ্বিতীয় বছর বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের ঘোষণাও এসেছে। বৃষ্টি-প্রার্থনায় নামাজের আয়োজনের কথাও এসেছে বিশ্বমিডিয়ায়।

একদিকে প্রচণ্ড তাপদাহ, অন্যদিকে খাদ্যনিরাপত্তার প্রধান উপকরণ ধান ঘরে তোলার অনিশ্চয়তা—তবু অনেকের কাছে সাময়িক স্বস্তিই যেন মুখ্য। অথচ আর দিন দশেক বেরো আবাদ-এলাকায় বৃষ্টি না নামলে ধানগুলো ঘরে ওঠত কৃষকের। নিশ্চিত হতো খাদ্যনিরাপত্তার।

প্রকৃতির ওপর আমাদের হাত নেই, নিয়ন্ত্রণ নেই; তবু মনে করি আমাদের আকাঙ্ক্ষার প্রকাশে কৃষকদের গুরুত্ব থাকা উচিত। আমাদের চাওয়ায় হয়তো প্রকৃতির রীতি বদলাবে না, তুমুল রোদ্দুরের দেশে হঠাৎ বৃষ্টি নামবে না, তবে ধান ঘরে তোলার আগ পর্যন্ত রোদ্দুর কামনায় কৃষক স্বস্তি পাবে; ভাবতে পারবে এই দেশ আছে তাদের সঙ্গে।

কৃষকের জয় হোক। অন্তত বোরো-এলাকায় প্রকৃতি কৃষকের সঙ্গে থাকুক।

;

৫০ বছর আগে মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি আজও শ্রেষ্ঠ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সালটা ১৯৬৮। বিশ্বব্যাপী মানুষ মেতে উঠেছিল বড়দিনের আনন্দে। তখনো জানতো না, বড়দিন উপলক্ষে তারা একটি বিশেষ উপহার পেতে চলেছে। পৃথিবী থেকে আমরা হরহামেশাই চাঁদ দেখি। অমাবস্যা-পূর্ণিমা, এমনকি পক্ষের মাঝামাঝি সময়ের বদৌলতে নানা দৃষ্টিকোণে নানা আকারের চাঁদ দেখতে পাই। তবে চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন? এরকমটা হয়তো অনেকেই ভাবেন।

নাসার মহাকাশচারীরা অ্যাপোলো ৪ এ করে তখন চাঁদের চারপাশে টহল দিচ্ছে। সেখান থেকে তারা চাঁদের বাসকারীদের দৃষ্টিতে পৃথিবী কেমন হবে তার এক নমুনা জোগাড় করেন। ক্রিসমাসের কিছুদিন আগে ক্রুরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় ব্যারেন লুনার হরিজোন থেকে একটি ছবি তোলে। সেখানে সুদূর মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একটি সুন্দর দৃশ্য ধারণ করা হয়। চমৎকার সেই রঙিন ছবিটি সবকিছু পরিবর্তন করতে চলেছিল।

ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন নভোচারী বিল অ্যান্ডার্স এবং জিম লাভেল। ছবিটি ধারণ করার পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে যাওয়ার পরও এটিকে প্রকৃতির সবচেয়ে আইকনিক ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটিই মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম রঙিন এবং উচ্চ রেজুলেশনের ছবি।

১৯৭০ সালে পরিবেশ সচেতনতা এবং এই ব্যাপারে সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পৃথিবী দিবস প্রচারিত হওয়ার কারণে ছবিটিকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাইকেল প্রিচার্ড ছবিটিকে নিখুঁত দাবি করেন। তিনি বলেন, এই ছবিটি পৃথিবীর এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল, যা আগে কোনো ছবি করতে পারেনি। প্রকাণ্ড মহাবিশ্বে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা ক্ষুদ্র গ্রহ, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ছবিটি।

১৯৬০ সালের পরই পৃথিবী নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে। ষাটের দশকের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মানুষ অনুধাবন করে পৃথিবীকে আজীবন একইভাবে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রহের প্রতি আমাদের আরও অনুরাগী হতে হবে। সেই উদ্দেশে ১৯৬৯, ‘৭০ ও ‘৭১ সালে ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ এবং ‘গ্রিনপিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ছবিটি প্রকাশের ১৮ মাস পর ২০ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক পৃথিবী রক্ষার আন্দোলনে রাস্তায় নামে।

পৃথিবী রক্ষা করার জন্য মানুষদের উৎসাহিত করার বেলায় ছবিটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এখনো অবদি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর পাঠানো ছবিগুলোর মধ্যে ১৯৬৮ সালে বড়দিনের আগে তোলা সেই ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়।

;

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

;

অস্ট্রেলিয়ায় নিখোঁজ কুকুর ফিরলো যুক্তরাজ্যের মালিকের কাছে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয় যুক্তরাজ্যের এক দম্পতির পালিত কুকুর। যুক্তরাজ্যে আসার ১৭ দিন পর মিলো নামের কুকুরটিকে ফিরে পেয়েছেন জেসন হোয়াটনাল নিক রোল্যান্ডস দম্পতি।

হোয়াটনাল এবং তার সঙ্গী নিক সম্প্রতি তাদের কুকুর মিলোকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পরিদর্শনে যান। তারা যখন সোয়ানসিতে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তখন মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তার হ্যান্ডলার থেকে কুকুরটি পালিয়ে যায়।

সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটিকে অবশেষে মেলবোর্নের শহরতলিতে ১৭ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।


হোয়াটনাল স্কাই নিউজকে বলেন, ‘মিলোকে ফিরে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক ছিল আমার জন্য। যখন আমি আমার প্রিয় মিলোর (কুকুর) সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কান্না দেখে অন্যরাও কেঁদেছিল। এটি সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্য প্রান্তে থেকে মিলোর কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম না মিলো কোথায় আছে। এটি বেশ হতাশাজনক ছিল আমাদের জন্য, কিছুটা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাকে ফিরে পাবো ভাবিনি।

মিলোকে পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, তখন স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সাহায্য আসে, তারা মিলোর সন্ধান দেয়। মিলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

;