এরশাদের ‘আমার জীবনের অবশিষ্ট অধ্যায়’

  • সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

‘আমার কর্ম আমার জীবন’ বইয়ের প্রচ্ছদে এরশাদ/ছবি: সংগৃহীত

‘আমার কর্ম আমার জীবন’ বইয়ের প্রচ্ছদে এরশাদ/ছবি: সংগৃহীত

কারমাইকেল কলেজের আটশ’ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় অন্যরা যখন সাতশ’ মিটার শেষ করেছিলেন। একই সময়ে তিনি শেষ করেছিলেন আটশ’ মিটার, দর্শকদের মধ্যে যারা অমনোযোগী ছিলেন, তারা কেউ কেউ আসলে কয়শ’ মিটার হলো তা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলেন।

বলছিলাম সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কলেজ জীবনের কথা। কারমাইকেল কলেজের এক পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে খোদ এরশাদই তার বক্তৃতায় বিষয়টি সামনে এনেছিলেন।

বিজ্ঞাপন

অর্থাৎ তার গতির ধারের কাছেও কেউ থাকতে পারতেন না। শিক্ষা জীবন এমনকি পেশাগত জীবনেও তার সাফল্য আকাশ ছোঁয়া। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করে ধাপে ধাপে শীর্ষপদে পৌঁছে যান। রাষ্ট্রের শীর্ষপদেও আসীন হন, ছিলেন টানা নয় বছর। এরপর ক্ষমতাচ্যূত হয়ে জেলে থেকে পাঁচটি আসনে বিজয়ী হয়ে রেকর্ড করেন। এখনও পর‌্যন্ত কোনো নির্বাচনে পরাজিত হননি তিনি। যা বাংলাদেশ তথা বিশ্বেও বিরল।

নব্বই পেরিয়ে বয়সের ভারে অনেকটাই ন্যুব্জ হয়ে পড়েছেন। গত ডিসেম্বর মাস থেকে হাসপাতাল-বাসার মধ্যে আবদ্ধ তার জীবন। কয়েক মাস হলো হাটাচলা করতে পারেন না। এখন নাকি ঠিক মতো হাতও চলে না। অনেক সময় অন্যের সহায়তায় খাবার খেতে হচ্ছে। ক্ষুধামন্দা নাকি বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি নিজেও এখন পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

জীবনের সায়াহ্নে এসে শেষ করে যেতে চান তার জীবন আলেখ্য। অবশ্য প্রথম খণ্ড ২০১৬ সালে প্রকাশিত হয়েছে। ‘আমার কর্ম আমার জীবন’ গ্রন্থে স্থান পেয়েছে তার বেড়ে ওঠা, স্কুল জীবন, সেনাবাহিনীতে প্রবেশ, রাষ্ট্রপতি হওয়া, ক্ষমতা হস্তান্তরের পর জেলে যাওয়া এবং জেল থেকে মুক্তি পর‌্যন্ত। ৮৬৪ পৃষ্ঠার বইটিতে অনেক অজানা তথ্য তুলে ধরেছেন।

প্রথম বইয়ে প্রেয়সীর নাম প্রকাশ না করলেও অকপটে স্বীকার করেছেন তার প্রথম প্রেম পত্রের অনুভূতি। সেই চিঠির ভেতরে থাকা গোলাপের পাপড়ির ঘ্রাণ। চিঠির সেই প্রেয়সীর প্রতি আকর্ষণের কারণে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু সাড়া না মেলায় বেশিদূর এগুতে পারেননি। অকপটে তুলে ধরেছেন তার সেসব অনুভূতির কথা।

আবার জীবনে প্রথম অন্যের টাই পরে চাকরির ইন্টারভিউ দেওয়া, চাকরিতে যোগদান, রওশনের বাবার সঙ্গে টেনিস খেলা থেকে কীভাবে পরিণয়, সবই তুলে এনেছেন তার প্রথম বইয়ে।

এবার হাত দিয়েছেন জীবনের অবশিষ্ট দিনগুলোর কাহিনী বই আকারে তুলে আনতে। বইয়ের নাম দেওয়া হয়েছে, ‘আমার জীবনের অবশিষ্ট অধ্যায়’। এতে স্থান পেয়েছে জেল থেকে বের হওয়ার পর তার রাজনীতি, বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট। থাকছে নানা রকম ঘটনা প্রবাহ ও জাতীয় পার্টির ভাঙা-গড়ার আখ্যান।

হুসেইন মহুম্মদ এরশাদের প্রেস ও পলিটিক্যাল সেক্রেটারি সুনীল শুভরায় বইটির অনুলিখন করেছেন। এরশাদের দীর্ঘ সময়ের এ সহযোগী বার্তা২৪.কমকে বলেন, বইটির কম্পোজ শেষ, এখন শেষ পর্যায়ের কাজ দেখা হচ্ছে। ঈদের আগেই প্রকাশ করার চেষ্টা চলছে। আগের বইটিও আকাশ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়। এবারও কাজটি করছে আকাশ প্রকাশনী।

কি কি স্থান পাচ্ছে বইটিতে, এমন প্রশ্নের জবাবে সুনীল শুভরায় বলেন, জেল থেকে মুক্তির পর ২০১৮ সালের নির্বাচন পর‌্যন্ত। অনেক অজানা সত্য জানতে পারবে পাঠক। তবে এরপরও কিছু সেন্সর থেকেই যায়। কারণ সব কথা বলা সম্ভব হয় না।

পৃষ্ঠা সংখ্যা আগের বইটির মতোই হতে পারে। আগের বইটিতে অনেক ছবি ব্যবহৃত হলেও এবার ছবি থাকছে না বলে জানান সুনীল শুভরায়।

অপর একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। কীভাবে জাতীয় পার্টিকে ভাঙা হয়েছে। তার দলের সদস্যের মন্ত্রিসভায় থাকা না থাকার বিষয়। এরশাদ কি চেয়েছিলেন আর কি হয়েছে। অনেকখানি খোলাসা করার চেষ্টা হয়েছে।

বইটির প্রচ্ছদে এরশাদের কোট টাই পরা পোর্টেট ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। আর পেছনের প্রচ্ছদে থাকছে গোধুলীলগ্নে চিন্তামগ্ন এরশাদের সাদাকালো ছবি।