কতটা উপকারী প্রিয় পানীয় কফি?
আপনার, আমার মতো অনেকেরই দিনের শুরুটা হয় গরম কফির কাপে চুমুক দিয়ে।
কফির মাদকতাপূর্ণ চনমনে ঘ্রাণে নিমেষেই উবে যায় ঘুমভাব। এমনকি কাজের ব্যস্ততার মাঝে একটু এনার্জি চাইলে, কফির কাপেই খুঁজতে হয় আশ্রয়।
বিশ্বব্যাপী সমাদৃত এই পানীয়ের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাই আজকের ফিচারে তুলে ধরা হলো পছন্দের পানীয় কফির চমৎকার কয়েকটি স্বাস্থ্য উপকারিতা।
বৃদ্ধি করে এনার্জি লেভেল
হুট করে ক্লান্তি দেখা দিলে, শরীরে অবসন্নতা ভিড় জমালে এক কাপ কফি হতে পারে সবচেয়ে ভালো সমাধান। কফি পানে খুব দ্রুত শারীরিক ক্লান্তি ও অবসন্নতা দূর হয়। কফিতে থাকা উদ্দীপক উপাদান ক্যাফেইন, সাইকোঅ্যাকটিভ (Psychoactive) উপাদান হিসেবে কাজ করে। কফি পানের পর রক্তের সঙ্গে ক্যাফেইন মিশ্রিত হয়ে সরাসরি মস্তিষ্কে পৌঁছে যায়। ক্যাফেইন মস্তিষ্কে দমনমূলক নিউরোট্রান্সমিটার অ্যাডেনোসিনকে বাধাপ্রাপ্ত করে। ফলে ডোপামিন নিঃসরণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এতে করে খুব সহজেই উদ্দীপ্ত অনুভূতি কাজ করে।
কফি থেকে পাওয়া যাবে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ
কফির মতো এমন ফ্যান্সি পানীয় থেকেও যে স্বাস্থ্য উপকারিতা ও প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ পাওয়া সম্ভব, সেটা হয়তো অনেকেরই অজানা। জেনে রাখুন, প্রতি কাপ কফি থেকে পাওয়া যাবে রিবোফ্লাভিন (ভিটামিন বি২), প্যাথোথেনিক অ্যাসিড (ভিটামিন বি৫), ম্যাংগানিজ, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও নায়াসিন (ভিটামিন বি৩)।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের উৎকৃষ্ট উৎস
কফি থেকে শুধু প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ নয়, পাওয়া যাবে সবচেয়ে উপকারী ও প্রয়োজনীয় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমূহ। কফি বিনসে প্রাকৃতিকভাবে উপস্থিত থাকা এই সকল অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সুস্থ থাকার অন্যতম প্রধান সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
কমলালেবু কিংবা আঙ্গুরের রসের চাইতেই কফিতে বেশি মাত্রায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। এমনকি বেশ কিছু ফল ও সবজির চাইতে কফিতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের মাত্রা থাকে বেশি। কফিতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ইনফ্ল্যামেশন ও কিছু ক্ষেত্রে হৃদরোগের জটিলতা কমাতে কাজ করে।
কমায় টাইপ-২ ডায়বেটিসের সম্ভবনা
বর্তমান বিশ্বের অসংখ্য শারীরিক সমস্যার মাঝে টাইপ-২ ডায়বেটিস অন্যতম। রক্তে ইনস্যুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে না থাকা ও চিনির মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে টাইপ-২ ডায়বেটিসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তবে কফি পানের ফলে খুব দারুনভাবেই টাইপ-২ ডায়বেটিস দেখা দেওয়ার সম্ভবনা হ্রাস পায়। গবেষনালব্ধ ফলাফল জানায়, নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে কফি পানের ফলে ২৩-৫০ শতাংশ পর্যন্ত টাইপ-২ ডায়বেটিস দেখা দেওয়ার সম্ভবনা কমে যায়।
আলঝেইমার ও ডিমেনশিয়া দেখা দেওয়ার সম্ভবনা কমায়
আলঝেইমারের সমস্যাটি সবচেয়ে প্রচলিত নিউরোডিজেনের্যাটিভ ডিজিজ ও ডিমেনশিয়া দেখা দেওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। স্মৃতিশক্তিজনিত এই সমস্যাটি সাধারণত ৬৫ বছরের পর দেখা দেয় এবং এখনও পর্যন্ত এই রোগের কোন প্রতিকার আবিষ্কৃত হয়নি।
তবে রোগটি প্রতিরোধে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্যভাসে অভ্যস্ত হতে হবে, নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে এবং পরিমিত মাত্রায় কফি পান করতে হবে। বেশ কিছু গবেষণার ফল থেকে জানা যায়, কফি পানে আলঝেইমার দেখা দেওয়ার সম্ভবনা ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।
মানসিক অবসাদ কমাতে সাহায্য করে
অনেকেই মানসিক অবসাদ (Depression) এর বিষয়ে সচেতন নয়। অথচ মানসিক এই সমস্যাটি স্বাভাবিক জীবনযাত্রার উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে দেয়। ডিপ্রেশন দেখা দেওয়ার শুরু থেকেই যদি এই বিষয়ে সচেতন না হওয়া যায়, তবে তা ধীরে ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনে রূপ নেয়। ২০১১ সালের হার্ভার্ড এর একটি গবেষণার প্রকাশিত ফল থেকে জানা যায়, যে নারী প্রতিদিন ৪ কাপ পরিমাণ কফি পান করে, তার ডিপ্রেশন দেখা দেওয়ার সম্ভবনা কম যায় ২০ শতাংশ।
লিভারকে সুস্থ রাখতে কাজ করে
শরীরের হাজারো গুরুত্বপূর্ণ ফাংশনের জন্য নির্ভর করতে হয় লিভারের উপরে। যে কারণে বেশ কিছু প্রচলিত রোগ সর্বপ্রথম লিভারেই আক্রান্ত হয়। যেমন- হেপাটাইটিস, ফ্যাটি লিভার ডিজিজ ও অন্যান্য। এই সকল সমস্যা থেকেই পরবর্তীতে লিভার সিরোসিসের সমস্যাটি তৈরি হয়। তবে জেনে আশ্বস্ত হবেন, প্রতিদিন চার কাপ পরিমাণ কফি পান লিভার সিরোসিস দেখা দেওয়ার সম্ভবনা কমে যায় প্রায় ৮০ শতাংশ!
আরও পড়ুন: কোল্ড কফি ও হট কফি: কোনটা বেশি উপকারী?