পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে তা অর্জনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কর ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের অভাবে প্রত্যাশিত লক্ষমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয় না। বিগত ১১ অর্থ বছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড টার্গেটকৃত কর আহরণ করতে পারিনি। রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হলে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিসহ সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতা এবারের বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি।
শনিবার (৩ জুন) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার প্রেক্ষাপটে ‘মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণ’ বিষয়ক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রতিযোগিতায় সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সরকারের টাকার ভয়ানক অভাব। বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে অর্থসংকট মোকাবিলার চেষ্টা করলে মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে। গত ১৫ বছরে ১ শতাংশ বিনিয়োগ বাড়েনি অথচ আগামী অর্থবছরে ৪ শতাংশ বিনিয়োগ বৃদ্ধির টার্গেট নেওয়া হয়েছে যা বাস্তব সম্মত নয়। সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন বাড়ানো হলেও জনসেবার মান বাড়েনি বরং দুর্নীতি রেড়েছে।
তিনি বলেন, প্রশাসন নিজেরা নিজেদেরই সেবা দেয়। দেশে জনসেবার বদলে জনশাসন চলছে। ব্যাপক দুর্নীতির কারণে টাকা পাচার বাড়ছে। টাকা পাচার রোধে রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, এবারের বাজেটে বেকারত্ব দূরীকরণ, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, নব্য দরিদ্রদের জন্য সামাজিক সুরক্ষার, অনানুষ্ঠানিক খাতে শ্রমিকদের জীবিকা নিরাপত্তা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, রেমিট্যান্স আহরণে প্রণোদনার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার বিষয়েও সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকারের কোন প্রতিফলন দেখা যায়নি এবারের বাজেটে বক্তৃতায়।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে রফতানিমুখী বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের জন্য সুনির্দিষ্ট কোন দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। একদিকে স্মার্ট নাগরিক ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কথা বলা হচ্ছে। অন্যদিকে বাজেটে অন্যতম অপরিহার্য শিক্ষা উপকরণ কলমের উপর করারোপ করা হয়েছে। যা আমাদের হতাশ করেছে। আমরা একদিকে পরিবেশবান্ধব যানবাহন ব্যবহারের গুরুত্ব দিচ্ছি। অন্যদিকে বাইসাইকেলের খুচরা যন্ত্রাংশের আমদানির উপর করারোপ করে স্মার্ট ক্লাইমেটকে নিরুৎসাহিত করছি।
‘মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের ভূমিকা গৌণ’ শীর্ষক ছায়া সংসদে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ার বিতার্কিকদের পরাজিত করে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ঢাকা চ্যাম্পিয়ন হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক মাঈনুল আলম, শারমীন রিনভী ও মুনিমা সুলতানা প্রমুখ। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
চট্টগ্রামে মাল্টিপারপাস বে-টার্মিনাল, আবুধাবি পোর্টস দিচ্ছে ১০০ কোটি ডলার
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
অর্থনীতি
চট্টগ্রাম বন্দরের বহুল প্রতীক্ষিত বে-টার্মিনাল প্রকল্পের অধীন মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণে ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে আবুধাবি পোর্টস গ্রুপ (এডি পোর্টস)। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল এবং আবুধাবি পোর্টস গ্রুপের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার সাইফ আল মাজরুই স্মারকে সই করেন। এসময় নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও এডি পোর্টসের বাংলাদেশ এজেন্ট সাইফ পাওয়ারটেকের প্রতিনিধিরা উপস্থিতি ছিলেন।
সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি পোর্টস গ্রুপ বে-টার্মিনাল প্রকল্পের অধীনে মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণে বিনিয়োগ করবে। তারা অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি যন্ত্রপাতিও সরবরাহ করবে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে চট্টগ্রাম শহরের দক্ষিণ পাশে বঙ্গোপসাগরের তীরে ‘বে- টার্মিনাল’ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ‘বে-টার্মিনাল’ নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়ার পর সেখানে ফিজিবিলিটি স্টাডির জন্য ২০১৭ সালে কনসালটেন্ট নিয়োগ করা হয়। কনসালটেন্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফিজিবিলিটি স্টাডি ও মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হয়। গত বছরের ১৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্ত মাস্টারপ্ল্যানের মোড়ক উন্মোচন করেন।
সমীক্ষা অনুযায়ী, মাস্টারপ্ল্যানে এক হাজার ২২৫ মিটার দীর্ঘ দুটি কন্টেইনার টার্মিনাল এবং এক হাজার ৫০০ মিটার দীর্ঘ একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনালসহ মোট তিনটি টার্মিনাল রয়েছে। তিনটি টার্মিনালের দৈর্ঘ্য চার দশমিক ৯৫ কিলোমিটার। মাস্টারপ্ল্যানে মোট ১১টি জেটি রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
চ্যানেলে যথোপযুক্ত নাব্যতা থাকায় সেখানে ১২ মিটার ড্রাফটের এবং ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে। আবহাওয়া এবং সাগরের বড় বড় ঢেউ থেকে রক্ষা করতে একটি ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রেক ওয়াটার বা ঢেউনিরোধক বাঁধ নির্মাণ করা হবে। বে-টার্মিনাল থেকে বহির্নোঙরের দূরত্ব এক কিলোমিটার।
মাল্টিপারপাস টার্মিনালটি চট্টগ্রাম বন্দর ও আবুধাবি পোর্টস গ্রুপ যৌথভাবে নির্মাণ করবে। এক হাজার ২২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণে সিঙ্গাপুরের পিএসএ এবং অপরটি নির্মাণে দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ড অর্থায়ন করার সম্ভাবনা রয়েছে। ছয় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ব্রেক ওয়াটার ও অ্যাক্সেস চ্যানেল ড্রেজিং করবে বিশ্বব্যাংক।
বে-টার্মিনাল প্রকল্পের জন্য ৬৬ দশমিক ৮৫ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি ইতোমধ্যে অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে এবং ৫০০ দশমিক ৬৯ একর সরকারি খাস জমি অনুমোদন পেয়েছে। ব্রেক ওয়াটার নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। বছরে ৫০ লাখ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ২০২৬ সালে অপারেশনে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
স্মারক সই অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশি বন্দর পরিচালনাকারীরা বিনিয়োগ করছেন। আমি সম্ভাবনা ও স্বপ্ন দেখি, এক সময় আসবে, যখন চট্টগ্রাম বন্দর পৃথিবীর অন্য কোনো দেশেও এর কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তফা কামাল, চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল, বাংলাদেশে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লা আলী আব্দুল্লা কাসিফ আল মৌদি, আবুধাবী পোর্টস গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল অফিসের রিজিওনাল চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার আহমেদ আল মুতায়া।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুর পথ ধরে মেরিটাইম সেক্টরে আমাদের যে যাত্রা, তা পুনর্জীবিত ও উজ্জীবিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সময়ে সমুদ্র ও পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত তৈরি হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর গত ১৫ বছরে আন্তর্জাতিক বন্দরের সক্ষমতা অর্জন করেছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, মোংলা বন্দরের আপগ্রেডেশন হচ্ছে। মোংলা বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের মতো সক্ষমতা অর্জন করবে। পায়রা বন্দরে নির্মাণাধীন জেটিতে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভিড়েছে। এটি নতুন অনুভূতি। আগে মাদার ভেসেলে পণ্য পরিবহনের জন্য আমাদের কলম্বো ও সিঙ্গাপুর বন্দরের ওপর নির্ভরশীল হতে হতো। বর্তমানে মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মিত হচ্ছে। এতে করে নির্ভরশীলতা কমে যাবে। মাতারবাড়ি বন্দর আঞ্চলিক হাবে পরিণত হবে।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল পরিচালনার জন্য সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনালের সঙ্গে চুক্তি সই হয়েছে। খুব শিগগিরই এর কার্যক্রম শুরু হবে। বে-টার্মিনাল নির্মিত হলে ২৪ ঘণ্টা জাহাজ আসা-যাওয়া করবে। জোয়ার-ভাটার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। চট্টগ্রাম বন্দর অন্য ধরনের উচ্চতায় চলে যাবে। বে-টার্মিনালের সঙ্গে সড়ক, রেলওয়ে কানেক্টিভিটি থাকবে। পণ্য পরিবহন সহজলভ্য হবে। বে-টার্মিনাল বাংলাদেশের সমুদ্র পরিবহনের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। অল্প সময়ের মধ্যেই মাল্টিপারপাস টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শুরু করতে চাই।
জানা যায়, টার্মিনালটি নির্মিত হলে চট্টগ্রাম বন্দর বছরে ১০ লাখ টিইইউ (টোয়েন্টি-ফুট ইকুইভ্যালেন্ট ইউনিট) কন্টেইনার এবং ৭০ লাখ মেট্রিক টন কার্গো হ্যান্ডলিং করতে পারবে। এতে দেশের আমদানি ও রপ্তানি দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবহন খরচ এবং সময় কমে আসবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, আন্তর্জাতিক কন্টেইনার টার্মিনাল পরিচালনায় এডি পোর্ট গ্রুপ একটি দক্ষ প্রতিষ্ঠান। এডি পোর্ট গ্রুপের ৫টি সমন্বিত বিজনেস ক্লাস্টার ডিজিটাল, ইকোনমিক সিটিস এন্ড ফ্রি জোন, লজিস্টিকস, মেরিটাইম এবং পোর্ট রয়েছে। আবুধাবি অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিভাগের তত্ত্বাবধানে আবুধাবি পোর্ট গ্রুপ মাকতা গেটওয়ে এডভান্সড ট্রেড এন্ড লজিস্টিক প্লাটফরম তৈরি এবং পরিচালনা করেছে। যা আবুধাবি জুড়ে বাণিজ্য ও লজিস্টিক নৌ, স্থল ও আকাশ পথে পরিষেবা গুলোকে একীভূত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমসহ বে-টার্মিনাল প্রজেক্টে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে যৌথভাবে এডি পোর্ট গ্রুপ বিনিয়োগ করবে । এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে তথা বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য বিদেশী বিনিয়োগ আসবে এবং দেশীয় অর্থের সাশ্রয় হবে। এতে দেশের অর্থনীতি উপকৃত হবে। এডি পোর্ট গ্রুপের সাথে অংশীদারিত্বে কাজ করার ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সম্ভব হবে এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে মর্মে আশা করা যায় ।
উল্লেখ্য, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে ১০ মিটার গভীরতা ও ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের বড় জাহাজ প্রবেশ করতে পারে না। বে টার্মিনালে ভিড়তে পারবে ১২ মিটার গভীরতা ও ২৮০ মিটার পর্যন্ত দৈর্ঘ্যের জাহাজ।
‘রাজনীতিবিদরা অর্থনীতিবিদদের হুকুমের আজ্ঞাবহ দেখতে পছন্দ করেন’
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
অর্থনীতি
রাজনীতি ও অর্থনীতির মধ্যে অসম রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।
তিনি বলেছেন, রাজনীতিবিদরা অর্থনীতিবিদদের গৃহভৃত্য না হলেও হুকুমের আজ্ঞাবহ হিসেবে দেখতে পছন্দ করেন।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত “বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় আগামীর করণীয়” শীর্ষক একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি বৃহস্পতিবার এসব কথা বলেন।
বিআইডিএস সম্মেলন কক্ষে ড. ফরাসউদ্দিনের লেখা বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান।
অনুষ্ঠানে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, অর্থনৈতিক বিবেচনায় নেয়া প্রকল্পের লাভ ক্ষতির সঙ্গে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের লাভ ক্ষতির বড় একটা পার্থক্য থাকে। সেটি সব দেশেই আছে, আর এটাকেই রাজনৈতিক অর্থনীতি বলা হয়ে থাকে।
‘নীতিমালার যে ধরনের বিশ্লেষণ দরকার এবং বাস্তবায়ন করার সক্ষমতা দরকার, সেটা সরকারের অনেক সময় থাকে না। এর সঙ্গে প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার সংস্কারের বিষয়ও রয়েছে’। তিনি বলেন, এ কারণেই রাজনীতির সঙ্গে অর্থনীতির বড় ধরনের বিচ্যুতি দেখা যায়।
অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেয়া পরামর্শের সঙ্গে রাজনৈতিক সরকারের পদক্ষেপ না মেলার কারণেও বড় ধরনের বিচ্যুতি হচ্ছে, বলে মনে করেন তিনি।
এ অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, কিছু প্রভাবশালীদের রাতারাতি অন্যায়ভাবে অর্থ বৈভব অর্জনের সুযোগ করে দেওয়া। এই ধরনের রাজনৈতিক কৌশল অপরিহার্য ছিল না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি আরও বলেন, নিজ পরিশ্রমে ছোট থেকে বড় হয়েছেন এমন সত্যিকারের শিল্প উদ্যোক্তারা এসব কারণে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই বৈষম্যের কারণে ব্যবসায় পরিবেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে।
অনুষ্ঠানে ফরাসউদ্দিন বলেন, অর্থনীতিবিদেরা গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে জ্ঞানের কথা বলে থাকেন। আমন্ত্রণ জানিয়ে তাঁদের কথা রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের শোনা উচিত।
‘আমি বড় অর্থনীতিবিদ নই। তবু মনে করি, প্রচলিত পথে দারিদ্র্য বিমোচনের পরিবর্তে শিল্পায়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার,’ তিনি বলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের পদটিকে সাংবিধানিক পদে উন্নীত করার দিয়ে ফরাসউদ্দিন বলেন, “নিদেনপক্ষে গভর্নর পদে ছয় বছরের জন্য নিয়োগ দেয়া উচিত।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং এর গভর্নরের অটোনমির বিষয়ে কারো দ্বিমত করার সুযোগ নেই বলে অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন ড. মশিউর রহমান।
ডঃ বিনায়ক সেন বলেন, রাজনীতি ও অর্থনীতি এক সঙ্গে চলতে পারে না। রাজনীতির ওপর ধনীদের প্রভাব কমাতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এটা কীভাবে করা যায় বিশ্বব্যাপী চিন্তা করা হচ্ছে।
ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের অভাব রয়েছে মন্তব্য করে ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যাংক খেলার যায়গা নয়। এখানে মানুষের আমানত থাকে। মানুষের আমানত নিয়ে খেলার সুযোগ নেই।
ষাটের দশকে আমাদের স্থাপত্যবিদরা পথ দেখিয়ে গেছেন কিন্তু আমরা মাঝখানে পথ হারিয়ে ফেললাম। সঠিক পথ ফেলে ভবনের অ্যাকটিভ ডিজাইন বুমেরাং হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এমপি।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) সন্ধ্যায় আগারগাঁও আইএবি সেন্টারে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) মাস্টার কন্ট্রোল সেন্টারের ডিজাইন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা যদি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববদ্যালয়ের দিকে তাকায়, দেখেন তখন তারা চিন্তা করেছিলেন। অনেক দেশেই তখন বিষয়গুলো চিন্তায় করেনি। আমরা সেখান থেকে অ্যাকটিভ ডিজাইনে গেলাম, এগুলো কস্ট ইফেক্টিভ হচ্ছে না। যারা ভালো কাজ করতে চায় তাদের টিকে থাকা কঠিন।
তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ে বেশ দক্ষ লোকজন থাকেন তাদের বক্সের মধ্যে থেকে কাজ করতে হয়। তারা চেঞ্জ চাচ্ছে এটাই বড় বিষয়। আমরা তরুণদের নিয়ে একটি টিম করছি, আমাদের ভবনগুলো যেন ভবিষ্যৎ চিন্তা ও ব্যবহারকারী বান্ধব হয়। আমরা স্থাপত্যবিদদের দিয়ে তিতাসের ভবন করছি, ডেসকোর ভবন করছি। ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে। প্রতিযোগিতা হলো নতুনদের ধ্যানধারণা পেলাম, তাদেরও একটা আইডিয়া হলো বড় পরিসরে কাজ করার।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, প্রতিযোগিতায় ৮২টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়। সেখান থেকে ধাপে ধাপে চূড়ান্ত করা হয়েছে ব্যাপক উৎসাহ ছিল। আমরা পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কথা বলছি। আমরা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কিন্তু আমরা দায়ী না। অনেকে প্রশ্ন করেন আমরা কি করছি, কেন এখনও কয়লা ব্যবহার করছি। আমরা ক্লিন এনার্জির দিকে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগ গত ১৪ বছর ধরে এডিপি বাস্তবায়নে এক নম্বর থাকে, প্রথম বিদ্যুৎ বিভাগকে স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, নেসকোর মাস্টার কন্ট্রোল সেন্টারের ডিজাইন প্রতিযোগিতার বিষয়টি ব্যতিক্রম উদ্যোগ। আমি মনে করি এর মাধ্যমে আইএবির সঙ্গে নতুন ডোর উন্মোচিত হবে। আমরা মনে করি হতাশ হতে হবে না। ভবনকে যদি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী করতে পারি, তাহলে বিশাল অগ্রগতি হবে।
তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, আমি তখন অর্থমন্ত্রণালয়ে তখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভবন করা হবে। আমরা বলেছিলাম যত টাকা লাগুক খরচ করতে রাজি আছি। ভবন গ্রিন হতে হবে, অনেক টাকা ব্যয় করেছি, তবে নান্দনিকও হয়নি, জ্বালানি সাশ্রয়ীও হয়নি।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা এনার্জি সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত করতে কাজ করছি। নেসকোর মাস্টার কন্ট্রোল সেন্টারে সেই ধারাবাহিকতা অংশ।
নেসকো বোর্ডের চেয়ারম্যান ও বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মাসুম আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল আধুনিকতম ভবনের সঙ্গে বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত করা। আমাদের ক্ষুদ্র উদ্যোগ এক সময় আন্দোলনে রূপান্তর হবে বলে আশা করি।
আইএবির প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. খন্দকার সাব্বির আহমেদ এতে সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, এক সময়ের নাজুক বিদ্যুৎ বিভাগ এখন স্থাপত্য বিভাগের প্রধান পৃষ্টপোষক হয়ে উঠেছে। ডিজাইন প্রসঙ্গে বলেন, এখানে প্যাসিভ ডিজাইন করা হয়েছে, কনভেনশনাল জ্বালানির চেয়ে প্রাকৃতিক উৎসের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন নেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকিউল ইসলাম। তিনি বলেন, নেসকো সব ধরনের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে গ্রাহকদের মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করা।
নেসকো রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের শহরাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে রয়েছে।
ওয়ালটনের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব পণ্য উন্মোচন
নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
অর্থনীতি
আসছে ঈদুল আজহা বা কোরবানি ঈদ। এ উপলক্ষে ক্রেতাদের জন্য বিশেষ চমক হিসেবে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও ফিচারের ব্যাপক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী নতুন মডেলের পণ্য উন্মোচন করেছে দেশের ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট ওয়ালটন।
নতুন মডেলের পণ্যের মধ্যে রয়েছে ইনভার্টার প্রযুক্তির মাল্টি-কালার ডিজাইনের সাইড বাই সাইড রেফ্রিজারেটর, ইউরোপিয়ান ডিজাইনের কম্বি মডেলের রেফ্রিজারেটর, ভার্টিকাল ফ্রিজার, চকোলেট কুলারসহ মোট ৭টি মডেলের ফ্রিজ।
এছাড়াও আছে সোলার হাইব্রিড প্রযুক্তির স্প্লিট টাইপ এসি, ৪ ও ৫ টনের সিলিং এবং ক্যাসেট টাইপ লাইট কমার্শিয়াল এসি, ৬৫ ইঞ্চির ওএলইডি টিভি, ওয়াশিং মেশিন ও বিএলডিসি প্রযুক্তির ফ্যান।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) সকালে রাজধানীর বসুন্ধরায় ওয়ালটন করপোরেট অফিসের কনফারেন্স হলে আয়োজিত এক জমকালো অনুষ্ঠানে নতুন মডেলের প্রোডাক্টস উন্মোচন করেন ওয়ালটন প্লাজার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রায়হান। অনুষ্ঠানে সারা দেশে একযোগে চলমান ডিজিটাল ক্যাম্পেইন সিজন-২০ এর ‘ননস্টপ মিলিয়নিয়ার’ অফারের বর্ণাঢ্য র্যালি উদ্বোধন করা হয়।
নতুন মডেলের পণ্য উন্মোচন অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটন হাই-টেকের অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর মেজর জেনারেল (অব.) ইবনে ফজল শায়েখুজ্জামান, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. ইউসুফ আলী, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর দিদারুল আলম খান (চিফ মার্কেটিং অফিসার), মফিজুর রহমান, ফিরোজ আলম, মো. তানভীর রহমান, তাহসিনুল হক, সোহেল রানা, মোস্তফা কামাল, মোহাম্মদ শাহজাদা সেলিম প্রমুখ।
এছাড়া ভার্চুয়াল মাধ্যমে সারা দেশ থেকে ওয়ালটন প্লাজা ম্যানেজার ও পরিবেশকগণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চলনা করেন জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ও ওয়ালটনের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আমিন খান।