জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ থেকে রোজিনা ইসলাম

  সালতামামি


দেবদুলাল মুন্না
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

শান্তিতে নোবেলজয়ী ফিলিপাইনের সাংবাদিক মারিয়া রেসা চলতি বছরের ১১ অক্টোবর বিবিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমাদের (সাংবাদিক) অনেক ক্ষেত্রে সাহায্য দরকার। এখন সাংবাদিক হওয়াটা অনেক বেশি কঠিন ও বিপজ্জনক।

মারিয়া ফিলিপাইনের সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট র‌্যাপলারের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। ২০১২ সালে আরও কয়েকজনের সঙ্গে র‌্যাপলার প্রতিষ্ঠা করেন মারিয়া। ফিলিপাইন পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযানে শত শত মানুষকে হত্যা করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশ করে জনপ্রিয়তা পায় র‌্যাপলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির অর্থ ফিলিপাইনে পাচার বিষয়ে বেশ কিছু প্রতিবেদন প্রকাশ করে র‌্যাপলার। বাংলাদেশের ওপর আল-জাজিরাও একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যেখানে সাবেক সেনাপ্রধানের প্রসঙ্গ উঠে এসেছিল।

এছাড়া ফ্রান্সের টিভি চ্যানেল ফ্রান্স টুয়েন্টিফোরেও বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের অনিয়ম নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। সব মিলিয়ে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে ২০২১ সালে আরও এক ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশের অবস্থান। এই সূচক তৈরি করেছে বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা ফ্রান্সভিত্তিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ)। তালিকায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় সবার শীর্ষে রয়েছে নরওয়ে এবং সবার নিচে অবস্থান করছে ইরিত্রিয়া।

আরএসএফের সেক্রেটারি ক্রিস্টোফ ডিলোয়ার এক বিবৃতিতে বলেছেন, গুজবের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকরী ভ্যাকসিন হলো সাংবাদিকতা। তবে দুর্ভাগ্যবশত, এই ভ্যাকসিনের উৎপাদন ও বিতরণ প্রায়ই অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, কারিগরি এমনকি মাঝে-মধ্যে সাংস্কৃতিক কারণেও ব্যাহত হয়।

আরএসএফের সূচক অনুযায়ী, এ বছর ইরিত্রিয়া, উত্তর কোরিয়া, তুর্কমেনিস্তান, চীন ও জিবুতিতে সাংবাদিকতা সবচেয়ে বেশি প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছে। উল্টোদিকে স্বাধীন সাংবাদিকতার চর্চা ভালো যে দেশগুলোতে হয়েছে সেগুলো হচ্ছে নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও সাংবাদিকতা নিরপেক্ষতা হারিয়েছে বলে দাবি করেছে ওয়ার্ল্ড জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন। এ সংস্থার মুখপাত্র স্ট্যানলি রড্রিকস বলেন, বাংলাদেশে যেমন রাজনৈতিক দলের পক্ষে কাজ করে অনেক গণমাধ্যম তেমনটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় থেকে দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্র বাকস্বাধীনতার কথা বললেও সাংবাদিকরা বিভিন্ন ফোরামে নগ্নভাবে পক্ষপাতিত্ব করে গেছেন এবং যাচ্ছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়েছিলেন উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। গোপন নথি ফাঁস করার অভিযোগে কি করুণ পরিণতি তাকে পেরুতে হচ্ছে তা এখন বোঝাই যাচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের উচ্চ আদালতে উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে ফেরত পাওয়ার আপিলে জয় পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাজ্যের আপিল বিভাগ যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর এ রায় দেন। এই রায়ের ফলে ব্রিটিশ কারাগার থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যার্পণ হওয়ার কাছাকাছি অর্থাৎ প্রায় শেষ ধাপে চলে এসেছেন অ্যাসাঞ্জ।

এই বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাজ্যের একটি নিম্ন আদালত অ্যাসাঞ্জকে প্রত্যার্পণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে। বলা হয়, অ্যাসাঞ্জের মানসিক স্বাস্থ্য মার্কিন বিচার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর অবস্থায় নেই। এ রায়ের পর যুক্তরাজ্যের উচ্চ আদালতে আপিল করে যুক্তরাষ্ট্র।

মার্কিন আইনজীবী জেমস লুইস বলেন, অ্যাসাঞ্জের গুরুতর অথবা স্থায়ী মানসিক অসুস্থতার কোনো ইতিহাস নেই। অ্যাসাঞ্জ এমন কোনো অসুস্থ রোগী নয় যে সে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে না।

অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক অ্যাসাঞ্জ ২০১০ সালে মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দফতর পেন্টাগন ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লাখ লাখ সামরিক ও কূটনৈতিক গোপন নথি ফাঁস করে বিশ্বজুড়ে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন।

কয়েক বছর ধরে লন্ডনে ইকুয়েডর দূতাবাসে বসবাস করছিলেন অ্যাসাঞ্জ। গত ১১ এপ্রিল দূতাবাস থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে ব্রিটিশ পুলিশ। জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের মতো এতো ভয়াবহ অবস্থা না হলেও কম দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে। তার বিরুদ্ধেও গত ১৭ মে অভিযোগ আনা হয় তথ্য চুরির। জিজ্ঞাসবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। ‘অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট’ মামলা হয়। পরে তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়। করোনা সংক্রান্ত বিশেষ গোপনীয় তথ্য রোজিনা জেনে ফেলেছিলেন । এ নিয়ে প্রথম আলোতে প্রতিবেদনও প্রকাশ পায়। এ জন্য চলতি বছরের নভেম্বরে সাহসী সাংবাদিকতার জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান রোজিনা ইসলাম। এ পুরস্কার দিয়েছে নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামভিত্তিক সংস্থা ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড।

মরক্কোর সাংবাদিক ওমর রাদি এক দশকের বেশি সময় থেকে মরক্কোয় অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করছেন। দেশটির অনিয়ম ও কেলেঙ্কারি ফাঁস করেছেন। দীর্ঘদিন হয়রানির পর তাকে ছয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তিনি এখন কারাগারে।

বেলারুশের ‘কারেন্ট টাইম’ টিভির সাংবাদিক রামান ভাসিউকোভিচ গত বছর দেশটির নির্বাচনে জালিয়াতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের খবর প্রচার করেছিলেন। পরে তাঁকে গ্রেফতার ও নির্যাতন করা হলে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন । কিন্তু তিনি দমে যাননি। তিনি দেশটিতে অবস্থান করে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো সরকারের দুর্নীতির খবর প্রকাশ করছেন।

ভারতের ২২ বছর বয়সী ভাট বুরহান একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। তিনি কাশ্মীরে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর দুর্দশা, ভারতের কৃষক আন্দোলন, কৃষকদের আত্মহত্যা, নয়াদিল্লিতে করোনার টিকা না পাওয়ার বিষয়গুলো তুলে ধরার কারণে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পুলিশ তাকে খুঁজছে। ফ্রান্সের প্যারিসভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) ২০২১ সালের চিত্র তুলে ধরে এসব তথ্য জানিয়েছে। আরএসএফ ২৫ বছর ধরে বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন, গ্রেফতার-হত্যার ঘটনা নিয়ে বার্ষিক প্রতিবেদন দিয়ে থাকে। এ সংস্থার মতে, চলতি বছর রেকর্ডসংখ্যক সাংবাদিক গ্রেফতার হলেও কমেছে সাংবাদিক মৃত্যুর হার।

এ বছর ৪৬ জন সাংবাদিক নির্যাতনে মারা গেছেন। মধ্যপ্রাচ্যের সিরিয়া, ইরাক ও ইয়েমেনের মতো দেশগুলোয় এ বছর তুলনামূলক স্থিতিশীলতা থাকায় সাংবাদিক সাংবাদিক নিহত হওয়ার ঘটনা কমেছে।

নির্যাতন ও গ্রেফতারের পেছনে বড় কারণ হিসেবে দেখছে করোনা মহামারিতে অনিয়মের খবর প্রকাশ করাকে। বিভিন্ন দেশে ৪৮৮ জন সাংবাদিক গ্রেফতার হয়েছেন। ২০২০ সালের তুলনায় এই সংখ্যা ২০ শতাংশ বেশি। আর চলতি বছরে বিভিন্ন দেশে হত্যার শিকার হয়েছেন ৪৬ সাংবাদিক।

সাংবাদিক গ্রেফতারে এগিয়ে থাকা তিনটি দেশ হচ্ছে, চীন, মিয়ানমার ও ভিয়েতনাম।

চীনে ১২৭ জন সাংবাদিক চলতি বছরে গ্রেফতার হয়েছেন। ৫৩ জন সাংবাদিককে গ্রেফতার করে তালিকায় দ্বিতীয় মিয়ানমার আর ২৩ জন সাংবাদিককে গ্রেফতার করে তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ভিয়েতনাম। এছাড়া বেলারুশে ৩২ ও সৌদি আরবে গ্রেফতার হয়েছেন ৩১ জন সাংবাদিক।

আরএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৪৬ সাংবাদিকের মধ্যে অধিকাংশকেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। শতকরা হিসেবে এই সংখ্যা ৬৫। এছাড়া চলতি বছরে অপহরণের শিকার হয়েছেন ৬৫ জন সাংবাদিক। এর মধ্যে ৬৪ জনই অপহৃত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের তিন দেশে। সিরিয়ায় অপহৃত হয়েছেন ৪৪ জন। ইরাকে ১১ ও ইয়েমেনে অপহৃত হয়েছেন ৯ জন। আর একজন সাংবাদিক অপহৃত হয়েছেন ফ্রান্সে।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে চীনে বেশি সাংবাদিক নির্যাতনের কারণ হিসেবে বলছে, চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সংবাদ সংগ্রহে ছুটে গিয়েছিলেন সাংবাদিক ঝ্যাং। করোনার সংক্রমণ প্রথম প্রকাশ্যে এনে সারা বিশ্বের নজর কেড়েছিলেন তিনি। কীভাবে সেখানে করোনায় আক্রান্ত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে সে ছবি তুলে ধরেছিলেন ঝ্যাং। আর সে কারণেই কারাগারে যেতে হয় তাকে। সেখানে অনশন ধর্মঘট করে এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন ৩৮ বছর বয়সী সাংবাদিক ঝ্যাং ঝান।

চীনা সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের ওপর নিপীড়ন ও নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরার পর সাংবাদিককে আটক করছে। এমনকি উইঘুর মুসলিমদের এলাকায় যেতেও অলিখিত নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে।

আরএসএফের প্রতিবেদনের সঙ্গে অমিল রয়েছে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) ২০২১ এর বার্ষিক প্রতিবেদনে। শুধু মারা যাওয়া সাংবাদিকের তালিকায় দু সংস্থার তথ্য দুরকম। সিপিজে বলছে, ২৪ জন সাংবাদিক মারা গিয়েছেন। আর চলতি বছরের ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ২৯৩ সাংবাদিককে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সিপিজের নির্বাহী পরিচালক জোয়েল সিমন এক বিবৃতিতে বলেন, এ নিয়ে ষষ্ঠবার বিশ্বজুড়ে রেকর্ডসংখ্যক সাংবাদিক কারাবন্দী করার তথ্য তালিকাভুক্ত করল সিপিজে। এসব তথ্য তাদের ওয়েবসাইটে পাওয়া গেছে।

জোয়েল সিমন বলেন, বেশির ভাগ দেশে সরকার তথ্য নিয়ন্ত্রণ করতে বদ্ধপরিকর ও এ কাজ করার জন্য তারা সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হচ্ছে।এ বছর প্রথমবারের মতো চীনের আধা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হংকংয়ে কারারুদ্ধ সাংবাদিকদের তালিকাভুক্ত করেছে সিপিজে।

গত ২৫ বছরের মধ্যে ২০২১ সালে সবচেয়ে বেশি সাংবাদিক গ্রেফতারের ঘটনা ঘটলেও মধ্যপ্রাচ্যে তুলনামূলক কম নির্যাতন হয়েছে। কারণ সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ড ও এর বিচার। যদিও এবছর বিচারে অভিযুক্তদের সাজার মেয়াদ কমিয়ে দেওয়ার ফলে নতুন বিতর্কের সূচনা হয়েছে। খাসোগি হত্যার জন্য সৌদি যুবরাজ সালমান সারাবিশ্বে সমালোচিত হোন। এসব তথ্য ওয়াল্ড জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের।

২০২১ সালের চিত্র তুলে ধরে আন্তর্জাতিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) জানায়, চলতি বছরে যে পরিমাণ নারী সাংবাদিককে আটক করা হয়, এ সংখ্যক নারী সাংবাদিককে অতীতে কখনো আটক করা হয়নি। চলতি বছর নারী সাংবাদিক আটক হয়েছেন ৬০ জন, যা ২০২০ সালের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ বেশি। ভারতীয় সাংবাদিক বারাখা দত্ত সিএনএনকে ২৪ ডিসেম্বর দেওয়া এ সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘নারী সাংবাদিকদের শুধু আটকই করা হয়নি। আটকের সময় বিভিন্ন দেশে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা যৌন হেনস্থাও করেছে।’

হেনস্থার শিকার নারী সাংবাদিকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন, বেলারুশের সান্দ্রে ইভাচিভ, মিয়ানমারে অস্ট্রেলিয়ান সাংবাদিক শ্যান পেত্রেই, চীনে ভারতীয় সাংবাদিক দেবযানী শেঠী।

চলতি বছর যেসব সাংবাদিক মারা গিয়েছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন- গুস্তাভো শানচেজ কাবেরা। গত জুনে মেক্সিকোতে গুস্তাভো শানচেজ কাবেরাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। হত্যার আগে তিনি পানি চেয়েছিলেন ও একবার তার মায়ের সাথে সেলফোনে কথা বলতে চেয়েছিলেন। সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি। আরেকজন হচ্ছেন দানিশ সিদ্দিকী। তিনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ফটো সাংবাদিক ছিলেন । গত জুলাইয়ে তিনি আফগানিস্তানে তালেবানের হামলায় নিহত হন। তাকে হত্যার আগে তালেবানিরা বলেছিল, মুসলমান হয়ে মুসলমানের বিপক্ষে কলম ধরা বিধর্মীর কাজ।

আমাদের দেশের মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রও (আসক) চলতি বছরের প্রথম নয় মাসের (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর ২০২১) প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত নয় মাসে ১৫৪ জন সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

আর্টিকেল-১৯ এর হিসেবে, চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা হয়েছে ২৫টি ৷ আসামি করা হয়েছে ৪৮ জনকে ৷ গ্রেফতার হয়েছেন ১১ জন ৷ এই সময়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মোট মামলা হয়েছে ১৮৮টি ৷ আসামি করা হয়েছে ৩৫৩ জনকে ৷ এ সংস্থাটি সংবাদমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতা নিয়ে কাজ করে।

আর্টিকেল-১৯ এর দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক ফারুক ফয়সাল ডয়েচে ভেলেকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি করাই হয়েছে ভয় দেখানোর জন্য৷ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলাগুলো হয়রানিমূলক ৷ তাই যারা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধ করে তাদের শাস্তির জন্য আলাদা আইনের দাবি করছি আমরা ৷

কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)-এর তথ্য বলছে, বাংলাদেশে ২০০০ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত ২৯ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ঘটনার কোনো বিচার হয়নি। এরমধ্যে সবচেয়ে আলোচিত সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড।

   

সম্মানসূচক ডি. লিট উপাধি পেল 'বিড়াল'!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে 'ম্যাক্স' নামের একটি বিড়ালকে সম্মানসূচক ‘ডক্টরেট অব লিটারেচার’ বা ডি. লিট উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। দেশটির ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের স্নাতক অনুষ্ঠানে বিড়ালটিকে এই সম্মানসূচক ডিগ্রি দেওয়া হয়। তবে সেই অনুষ্ঠানে বিড়ালকে আমন্ত্রণ জানানোর নিয়ম না থাকায় উপস্থিত ছিল না ম্যাক্স। 

বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষ বলছে, অনুষ্ঠানে বিড়ালটি উপস্থিত ছিল না। তাই বিড়ালের মালিক অ্যাশলে ডোর কাছে খুব শিঘ্রই এই ডিগ্রি পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।   

বন্ধুসুলভ এই বিড়ালটিকে তার ইঁদুর শিকারের দক্ষতা বা অতিরিক্ত ঘুমানোর জন্য নয় বরং তার সহচার্যের জন্যই স্বীকৃতি দিয়েছে।   বিড়ালটিকে এই ডিগ্রিতে ভূষিত করা হয়। ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ক্যাসেলটন ক্যাম্পাস।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সম্মানসূচক ডি. লিট উপাধি পেল 'বিড়াল'!

বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি ফেসবুক পোস্টের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ম্যাক্স দ্য ক্যাট, অনেক বছর ধরেই ক্যাসেলটন পরিবারের একজন আদুরে সদস্য। ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের প্রবেশদ্বারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া রাস্তায় পাশেই বসবাস করে এক পরিবার। বিড়ালটি সেই পরিবারেরই পোষা।

বিড়ালের মালিক অ্যাশলে ডো বলেন, ‘বিড়ালটি ঠিক করেছে সে ক্যাম্পাসে যাবে। এরপর থেকেই সে কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আড্ডা দিতে শুরু করে। আর শিক্ষার্থীরাও তাকে আদর করতে শুরু করে।’

বিড়ালটি প্রায় চার বছর ধরে ক্যাম্পাসে আসা যাওয়া করছে। বিড়ালটিকে পথের ধারে শুয়ে থাকতে দেখলেই সবাই তার সঙ্গে সেলফি নেয়।

এমনকি সাবেক ছাত্ররাও যখনই ক্যাম্পাসে আসেন তারা তখনই বিড়ালটির খোঁজ নিতে তার মালিক ডো-এর কাছে যান। ডো তাদের কাছে বিড়ালটির মা হিসেবেই বেশি পরিচিত।

  সালতামামি

;

৯৩ বছর বয়সে বৃদ্ধের অবিশ্বাস্য কর্মকাণ্ড



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

  • Font increase
  • Font Decrease

শৈশবে খেলা, কৈশরে পড়ালেখা, যৌবনে চাকরি, মধ্যবয়সে সংসার, বৃদ্ধবয়সে একটা মাথা গোজার ঠাঁই খুঁজে অবসরে সময় কাটিয়ে দেওয়া। কপাল খারাপ থাকলে বিছানাতেই শোয়া বা আধশোয়া থেকে মৃত্যুর দিন গোণা। সাধারণত এভাবেই মানুষের জীবন কেটে যায়। অনেকে আবার মধ্যবয়সের পরেই নানারকম রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অথবা শরীরকে বিভিন্ন রোগের আবাসস্থল বানিয়ে দুর্বল হয়েই বেঁচে থাকেন। তবে খড়ের গাদায় সূচের মতো দু-একজন থাকে যারা একেবারেই ব্যতিক্রম। তেমনভাবেই আলোচনায় এসেছেন ৯৩ বছরের এক বৃদ্ধ।  তার ব্যতিক্রমী জীবনযাপনের ধারাই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে যুসমাজে।     

যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা জন স্টারব্রুক। তিনি একজন ওয়াটার পোলো খেলোয়াড়। এটি মূলত পানির মধ্যে বাস্কেটবলের মতো একধরনের খেলা। এইখেলার সাথে কুস্তি খেলারও কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে। জনের বর্তমান বয়স ৯৩ বছর। এই বয়সেও যথেষ্ট সুস্থ এবং সবল তিনি। সমবয়েসীদের যেখানে সোজা হয়ে দাঁড়াতেও ২ জনের সহায়তা লাগে, সেখানে এখনো ম্যারাথনে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি বেশ দক্ষ সাঁতারুও বটে! ৮০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাঁতার কাটা অব্যাহত রেখেছেন তিনি।

প্রায় শতাব্দি ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধের এমন কারিশমা দেখে চোখ ছানাবড়া হবার উপক্রম। জন মূলত একজন সাঁতারু। পেশাগতভাবে না হলেও অনেক ছোটবেলা থেকেই তিনি সাঁতার কাটেন তিনি। দেশের সম্মানজনক অনেপ্রতিযোগীতায় একাধিক বার চ্যাম্পিয়নের খেতাবও জেতেন। চাকরি করেছেন ‘ব্রিটিশ আর্মি মেডিক্যাল কর্পস’-। সেখানেও সাঁতারের দক্ষতার কারণে তার বেশ সুনাম ছিল।   

ম্যারাথনে দৌড়াচ্ছেন ৯৩ বছরের জন

তবে সাঁতারের পাশাপাশি এখন ম্যারাথেনেও অংশগ্রহণ করেছেন জন। ৫২ টির বেশি ম্যারাথনের দৌড় শেষ করেছেন তিনি। জানালেন এই বয়সেও তার এমন চ্যালেঞ্জিং সব কাজের অভিজ্ঞতা। সুস্থতা ধরে রাখার রহস্যও ফাঁস করলেন সকলের কাছে। ব্রিটিশ নাগরিক জন বন্ধুদের কাছে ‘দ্য লিজেন্ডনামেই পরিচিত। একই নামে তাকে আখ্যায়িত করছে ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো

জন স্টারব্রুক জানান, তিনি এখনো সপ্তাহের ৬ দিনই জিমে যাতায়াত করেন। বিশেষ কোনো খাদ্যাভাস নেই তার। খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি রাখতে পছন্দ করেন- এই যা। তাছাড়া প্রতিদিন সকালে পোরিজ খান তিনি। তবে তিনি কখনো ধূমপান করেননি। অ্যালকোহলও খুব সীমিত পরিমাণে সেবন করতেন। মূলত এই বয়সেও এটা সবল থাকার পেছনে বংশ পরম্পরায় পাওয়া নিজের জীন আসল কারণ- বিশ্বাস করেন জন।

কারণ যাই হোক, প্রানবন্ত এই বৃদ্ধ বিশ্ববাসীকে অবাক করেছে। তার মতোই দৃঢ় মানসিকতা ধরে রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন যুবক-যুবতীরা।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

  সালতামামি

;

প্রশ্ন আর উত্তর যেন পরস্পরের সাংঘর্ষিক!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রশ্ন থাকে এক আর তার উত্তর হয় ভিন্ন। এমন উত্তরপত্রের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়ই দেখা যায়। এবার এমনই এক উত্তরপত্রের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে ভাইরাল হয়েছে। যা দেখে রীতিমতো সবাই অবাক! তবে এই ঘটনার জন্ম দেওয়া দেশটি বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের একটি হিন্দি পরীক্ষায় ঘটেছে এমন কাহিনী।

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রকাশিত ভিডিওতে পরীক্ষার্থীর এমন উত্তর দেখে শিক্ষককেও হাসতে দেখা যায়। 

ভিডিওটি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করা হয়েছে @n2154j অ্যাকাউন্টের একটি আইডি থেকে।

ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি প্রশ্ন ছিল এমন, সংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ (যৌগিক ব্যঞ্জনবর্ণ) কী? এই প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষার্থীটি একটি খাদ্য রূপক দিয়ে উত্তর দিল: "মাটার পনির এবং সব মিশ্র সবজি একত্রিত একটি খাবার।"

আরেকটি প্রশ্ন ছিল "অতীত কাল কাকে বলে?" এর উত্তরে ওই পরীক্ষার্থি লিখেছে, "যখন অতীত আমাদের অতীতের আকারে আসে, তখন তাকে অতীত কাল বলা হয়।"

ভিডিও অনুযায়ী আরও একটি প্রশ্ন ছিল "বহুবচন কাকে বলে?" এর উত্তরে সে লিখেছে "যে পুত্রবধূ তার শ্বশুরবাড়ির কথা শোনে তাকে বহুবচন বলে।"

শিক্ষার্থীটির এমন উত্তর শুনে হাসিতে ফেটে পড়েন শিক্ষক। এমন উত্তরগুলোকে শিক্ষক ভুল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যদিও এমন উত্তরের জন্য তাকে পুরোপুরি হতাশ করা হয়নি। তাকে ১০ মার্কের মধ্যে ৫ নম্বর দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষক পরে তার উত্তরপত্রে লিখে দিয়েছিলেন, এই ৫ মার্ক তোমার মস্তিষ্কের জন্য, ছেলে।

ভিডিওটি দেখে সবাইকে হাসির ইমোজি দিতে দেখা যায়। সম্পূর্ণ নম্বর না পাওয়ায় অনেকেই যুক্তি দিয়ে লিখেছেন, ছাত্রটি তার কৌতুক প্রতিভার জন্য পূর্ণ নম্বর পাওয়ার যোগ্য।

তবে এমন ঘটনা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন, ছাত্র এবং শিক্ষকের হাতের লেখা সন্দেহজনকভাবে একই রকম।

অন্য এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, "প্রশ্ন এবং উত্তর একই হাতের লেখা"। 

  সালতামামি

;

ফেনী শহরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া



মোস্তাফিজ মুরাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

'কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে-আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে' জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই মনোমুগ্ধকর গানে ফুটে উঠেছে কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য। কৃষ্ণচূড়া যেন প্রকৃতিকে দান করেছে লাল আভার অপরূপ সৌন্দর্যের মহিমা। সাথে গ্রীষ্মের উত্তাপে শহরে সৌরভ ছড়াচ্ছে নানা জাতের ফুল। তীব্র তাপদাহের পর কালবৈশাখী, এরপর মাঝারি বৃষ্টির মধ্যে ফুলের আগমন। এতে রঙের উল্লাসে মেতে উঠেছে ফেনী শহরবাসী।

ফেনী শহরের কোর্ট বিল্ডিং, এলজিইডি, পুলিশ লাইন, নবীন চন্দ্র সেন কালচারাল সেন্টার, ফেনী সরকারি কলেজ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ফুটে আছে কৃষ্ণচূড়া। এটি একদিকে প্রকৃতিকে যেমন সাজিয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যে, অন্যদিকে এর সৌন্দর্য মুগ্ধ করছে তরুণ-তরুণী, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষসহ ফুলপ্রিয় পথচারীদের। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে, সরকারি দফতরসহ স্কুল-কলেজে কৃষ্ণচূড়া গাছের লাল ও উজ্জ্বল সবুজ পাতার সংমিশ্রণ দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে চারপাশ।


কৃষ্ণচূড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ফুলের ঘ্রাণে মুখরিত হয়ে আছে পুরো শহর। শহরের মূল সড়কের ডিভাইডারে পৌরসভার উদ্যোগে লাগানো হাসনাহেনা, রজনিগন্ধা, গন্ধরাজসহ নানা জাতের ফুল গাছে ফুল ফুটেছে। এটি একদিকে বাড়িয়েছে সৌন্দর্য অন্যদিকে হেঁটে কিংবা রিকশায় চলাচল করলে পাওয়া যায় এসব ফুলের সুঘ্রাণ।

ফেনী শহরের কৃষ্ণচূড়ার অপরূপ সৌন্দর্য দেখে ফুলপ্রিয় পথিকরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুল প্রকৃতিকে অনন্য সাজে সাজিয়েছে। এই ফুলের সৌন্দর্যের কারণে পথচারীরা একবার হলেও এই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এর গাছের উপর নজর দিবে। পাশাপাশি তীব্র গরমে অন্যান্য ফুলের সুঘ্রাণে চারপাশ মুখরিত হওয়াতে ক্লান্তিতা কিছুটা হলেও কমছে।


তারা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুলের এই নান্দনিক দৃশ্য দেখতে এর গাছ রোপণ করা জরুরি। রাস্তা প্রশস্তকরণ, ঘর-বাড়ি নির্মাণসহ নানা প্রয়োজনে গাছ কেটে ফেলা হয়। অন্যান্য গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া রোপণ করলে একদিকে যেমন সৌন্দর্য বাড়াবে অন্যদিকে পরিবেশ বান্ধব হবে।

সাজিদ হাসান নামের এক পথচারী বলেন, কৃষ্ণচূড়া একদিকে যেমন প্রকৃতিতে অপরুপ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে, আরেকদিকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং কমাবে। সারাদেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে, আমার মতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে এই গাছটিও যুক্ত করা উচিত। তীব্র গরমের পর বৃষ্টি হলো, এরপর শহরে নানা রঙের ফুলের দেখা মিলছে, ফুলের ঘ্রাণে চলাচল করতেই ভালো লাগছে।

ফারজানা ইয়াসমিন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ফুলের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। অন্যান্য ফুলের পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ফুল আমার অনেক ভালো লাগে। আমাদের কলেজে বকুল তলা আছে, ক্যান্টিনের পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে। সুযোগ পেলেই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করি।

অনিক মোহন নামে একজন বলেন, রিকশায় করে যখন বাসায় ফিরি, শহরের রাস্তার মাঝে ভিডাইভারে লাগানো নানা জাতের ফুলের ঘ্রাণ মনকে আনন্দিত করে। রাতের বেলা শহর যখন নিস্তব্ধ হয়ে যায়, তখন এ ফুলের সৌন্দর্য কয়েকশ’ গুণ বেড়ে যায়।

সড়কের পাশে কৃষ্ণচূড়া লাগানো হলে সৌন্দর্য বাড়বে বলে মনে করেন পথচারী মিনহাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাস্তা প্রশস্তকরণের জন্য যে গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে, ওই গাছগুলোর জায়গা কৃষ্ণচূড়ার গাছ লাগালে রাস্তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে।

একই কথা বলেন শহরের ব্যবসায়ী নাদিম আহমেদ। তিনি বলেন, সৌন্দর্য ও পরিবেশের কথা বিবেচনা করে এই গাছ রোপণ করা উচিত আমাদের। তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে অন্যন্যা গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপণ করার উদ্যোগ নিতে হবে। যেগুলো শহরে আছে তাতেই সৌন্দর্য বেড়ে গিয়েছে কয়েকগুণ, আরও যদি লাগানো যায় ফুলে ফুলে ভরে উঠবে আমাদের শহর।

কৃষ্ণচূড়া মাদাগাস্কারের শুষ্ক পত্রঝরা বৃক্ষের জঙ্গলে পাওয়া যায়। যদিও জঙ্গলে এটি বিলুপ্ত প্রায়, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি জন্মানো সম্ভব হয়েছে। সৌন্দর্যবর্ধন গুণ ছাড়াও, এই গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত। কৃষ্ণচূড়া উদ্ভিদ উচ্চতায় কম (সর্বোচ্চ ১২ মিটার) হলেও শাখা-পল্লবে এটি বেশি অঞ্চল ব্যাপী ছড়ায়।

শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে গেলেও, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ থাকে। কৃষ্ণচূড়া ফুলের রং উজ্জ্বল লাল। পত্র ঝরা বৃক্ষ, শীতে গাছের সব পাতা ঝরে যায়। বাংলাদেশে বসন্ত কালে এ ফুল ফোটে। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত। পাপড়িগুলো প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মত লম্বা হতে পারে। কৃষ্ণচূড়া জটিল পত্র বিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৪০ টি উপপত্র বিশিষ্ট। কৃষ্ণচূড়ার জন্মানোর জন্য উষ্ণ বা প্রায়-উষ্ণ আবহাওয়ার দরকার। এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা সহ্য করতে পারে।

জানা যায়, অপরূপ সৌন্দর্য ছড়ানোর পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর পাতা, মূলের বাকল ও ফুল ভেষজ গুণাগুণ সম্পূর্ণ, যা জ্বর ও খুশকি নিরাময়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। ভেষজটি হেমিপ্লেজিয়া, আর্থরাইটিস এবং কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। কৃষ্ণচূড়া গাছের শিকড়, বাকল এবং ফুল সবই পরজীবী সংক্রমণ নিরাময়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।

  সালতামামি

;