দক্ষিণের সড়কে বেড়েছে মৃত্যুর মিছিল, চালকদের বিষয়ে কঠোর হওয়ার দাবি



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা ২৪.কম

ছবি: বার্তা ২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সড়কে মৃত্যুর মিছিল যেনো থামছেই না বরং পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক-মহাসড়কে বেড়েছে গাড়ির সংখ্যা। সরু রাস্তা ও চালকদের অদক্ষতার কারণে নিয়মিত বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা।

ঈদের দু'দিন আগে থেকে শুরু হয়ে এ পর্যন্ত বরিশালের ঝালকাঠির গাবখান ব্রীজের টোলঘরের দুর্ঘটনাসহ সারাদেশে শতাধিক প্রাণ ঝরে গেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সংস্থার প্রধান মোজাম্মেল হক।

তিনি বলেন, ইতিপূর্বে ঈদের আগের দিন থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৮৫ জনের মৃত্যু রেকর্ড হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা আরো বেড়েছে বলে জানান তিনি।

যাত্রীদের অভিযোগ বেপরোয়া গাড়ি চালকদের শাস্তির আওতায় আনা হয়না বলেই এতো দুর্ঘটনা বাড়ছে বাংলাদেশে।

গতকাল বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠির গাবখান সেতুর টোল প্লাজায় সিমেন্টবাহী একটি ট্রাকের চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে সেটি কয়েকটি গাড়িকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তার পাশে চলে যায়। এ সময় ট্রাকটির নিচে চাপা পড়া প্রাইভেটকারে শিশুসহ ৭ আরোহীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ট্রাকের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন ইজিবাইকের আরও ৪ যাত্রী।

বুধবার দুপুর দেড়টায় ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনায় আরো ১৫ জনকে মারাত্মক আহত অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয়। আহতদের মধ্য থেকে আরো ৩ জনের মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় মোট ১৪ জনের মৃত্যুর খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ঝালকাঠির পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আফরুজুল হক।

ঘটনা তদন্তে ৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বুধবার দুপুর দেড়টায় গাবখান সেতুর টোল প্লাজায় টোল দিতে অপেক্ষায় ছিলো ৩টি ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা, একটি প্রাইভেটকার ও একটি পিকআপ। হঠাৎ করে একটি বালুবাহী ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রথমে চালিত অটোরিকশা পরে প্রাইভেটকার ও ট্রাককে আঘাত করে।

নিহতদের বেশিরভাগই ঝালকাঠি জেলার। তাদের মধ্যে প্রাইভেকার চালক ইব্রাহিম, স্ত্রী তাহমিনাসহ ৭ জনের নাম পরিচয় পাওয়া গেছে। বাকিদের পরিচয় জানার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

বরিশাল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক মো. বেলাল উদ্দিন বলেন, জনতার ভিড়ে উদ্ধার কাজে কিছুটা সমস্যা হলেও আমরা আহতদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠাতে পেরেছি। প্রাইভেটকার একদম দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে। ভেতরে কেউ আটকা পড়েনি তা নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানান তিনি।

এর আগে গত বছর ২২ জুলাই ঝালকাঠি সদর উপজেলার ছত্রকান্দা এলাকায় ইউপি ভবনের সামনে যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুকুরে পড়ে ১৩ জন নিহত হয়। ওই দুর্ঘটনায় আরও ১৫ জন আহত হয়।

এর আগে গত শুক্রবার দুপুরে বরিশালের বানারীপাড়ায় ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাসের চাপায় নাছির উদ্দিন নামে এক মোটরসাইকেল চালক (৪০) নিহত হয়েছেন।

গৌরনদীতে ৯ এপ্রিল ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাসচাপায় মোটরসাইকেলের দুই আরোহী নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- উজিরপুর উপজেলার পূর্ব নারায়ণপুর গ্রামের হাবুল সরদারের ছেলে উজ্জল সরদার (৩২) ও বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরাদী গ্রামের মো. জালাল মিয়ার ছেলে মো. দ্বীন ইসলাম (২২)। ঝালকাঠির রাজাপুর ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামে মালবাহী নসিমন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে জাহাঙ্গীর (৫০) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হন ৩ জন।

কলাপাড়া-পটুয়াখালী সড়কের টিয়াখালীর বিশকানিতে সিএনজি অটোরিকশা উলটে দুই ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। ভান্ডারিয়া-কাঁঠালিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কে সোমবার বাস চাপায় এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। নিহত আবু তালুকদার উপজেলার দক্ষিণ কৈখালী গ্রামের ইসমাইল তালুকদারের ছেলে।

সর্বশেষ,বরিশাল- পটুয়াখালি মহাসড়কের বাকেরগঞ্জের রুহিতারপার নামক স্থানে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাককে পেছন থেকে চলন্ত মোটরসাইকেল ট্রাককে ধাক্কা দিলে দুজন নিহত হয়। বুধবার (১৭ এপ্রিল) দিবাগত রাত ৯ টার দিকে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।

দুর্ঘটনার পর মুমূর্ষু অবস্থায় দুই জনকে বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জরুরী বিভাগে চিকিৎসক মাহামুদুল হাসান দুজনকেই মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতরা হলেন, বরিশাল সদর উপজেলার আলহাজ্ব জয়নাল আবেদীনের পুত্র মনিরুজ্জামান কোম্পানি লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী মনিরুজ্জামান (৬২) অপরজন হলেন বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরামদ্দি ইউনিয়নের মৃত মজনু বাড়ি সিকদারে পুত্র ও আহসান ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকার বদরুল আহসান সিকদার (৬০) পেশায় দুজনই ঠিকাদার।

পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে ছুটে আসা গাড়ির চাপ যেমন বেড়েছে তেমনি পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দক্ষিণাঞ্চলের সড়কে মৃত্যুর পরিসংখ্যান। নগর চিন্তাবিদরা জানান, ফোরলেন যথেষ্ট নয়, সড়ক নিরাপদ রাখতে হলে গাড়ি চালকদের প্রশিক্ষণ ও তাদের দক্ষতা যাচাই পক্রিয়া কঠিন করতে হবে।

   

নিঃসঙ্গ নারীদের টার্গেট, আমেরিকায় নেওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে প্রতারণা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
গ্রেফতার রিয়াজুল ইসলাম

গ্রেফতার রিয়াজুল ইসলাম

  • Font increase
  • Font Decrease

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভুয়া জৌলুসপূর্ণ প্রোফাইল তৈরি করে নিঃসঙ্গ নারীদের টার্গেট করে প্রথমে প্রেমের ফাঁদ, পরে বিয়ের প্রলোভন ও সপরিবারে আমেরিকায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগে রিয়াজুল ইসলাম নামের এক রোমান্স স্ক্যামারকে গ্রেফতার করেছে সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ।

সিটিটিসি সূত্রে জানানো হয়, একজন সিঙ্গেল মাদার রিয়াজুলের প্রতারণা ও ব্লাকমেইলের স্বীকার হয়ে ৭০ হাজার টাকা হারিয়ে গত ২৫ এপ্রিল মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেন। সেই মামলার ছায়া তদন্ত করে প্রযুক্তিগত অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ থেকে রিয়াজুলকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারের সময় রিয়াজুলের কাছ থেকে একটি স্মার্টফোন এবং ক্যাশ আউটের কাজে ব্যবহৃত একটি বাটন ফোন, ৪টি নগদ ও বিকাশ অ্যাকাউন্ট সম্বলিত সিম জব্দ করা হয়। জব্দ করা স্মার্টফোনে ৫০ এরও বেশি ভুক্তভোগীর তথ্য পাওয়া গেছে।

বুধবার (১ মে) ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেসন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন জানান, গ্রেফতার রিয়াজুল ইসলাম নিলয় চৌধুরী নিল নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট তৈরি করে সিঙ্গাপুরের একটি প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং ম্যানেজার পরিচয়ে প্রতারণা করতেন।

তিনি বলেন, ফেসবুক প্রোফাইলটিকে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য রিয়াজুল নিয়মিত অন্য একজন সিঙ্গাপুর প্রবাসীর ফেসবুক প্রোফাইল থেকে ছবি ও ভিডিও পোস্ট করতেন। প্রতারক রিয়াজুল ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ এবং পেজে নিঃসঙ্গ নারীদের টার্গেট করে মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করে প্রথমে প্রেমের ফাঁদ, পরে বিয়ের প্রলোভন ও সপরিবারে সিঙ্গাপুরের নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখাতেন। সে অডিও-ভিডিও কলে অনলাইন প্রণয়ের এক পর্যায়ে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে অন্তরঙ্গ ছবি ও ভিডিও নিয়ে পরবর্তীতে সেগুলো ভাইরাল করে দেবে বলে ব্ল্যাকমেইল করে ভুয়া এনআইডি নিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা বিকাশ নম্বরে অর্থ গ্রহণ করতো।

গ্রেফতার রিয়াজুল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।

;

শ্রমিকদের বিনোদন আবদ্ধ স্মার্টফোনে



মো. কামরুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, সাভার (ঢাকা)
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

জাহাঙ্গীর-আনোয়ারা দম্পতি। দুজনেরই গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে। প্রায় ১০ বছর আগে দুই সন্তানকে গ্রামের বাড়িতে রেখে পেটের দায়ে আসেন শিল্পাঞ্চল সাভারে। এখন দুজনেই আশুলিয়ার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। ছোট একটি ঘর ভাড়া নিয়ে চলছে তাদের সংসার। দুজন মিলে যা আয় করেন তার অর্ধেক চলে যায় নিজেদের থাকা-খাওয়ার খরচে। আর বাকিটা দিয়ে সন্তানদের পড়াশোনা ও তাদের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ। দুই একদিনের ছুটি পেলেও খরচের ভয়ে সন্তানদের দেখতে যাওয়ার সাহস করে উঠতে পারেন না। আর সাধারণ ছুটিতে বিনোদন বলতে হাতে থাকা স্মার্টফোন।

জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, জিনিসপত্রের যে দাম, যা কামাই করি খুব হিসেব করে খরচ করতে হয়। প্রায় প্রতিদিনই বাড়িতে থাকা ছেলে-মেয়ের সাথে ভিডিও কলে কথা বলি। দিনের কাজ শেষে ঘুমানোর আগে এই আমাদের বিনোদন। অফিস দেরি করে ছুটি দিলে অনেক সময় তাও হয় না। ছেলেমেয়েরা ঘুমিয়ে যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে আবার দৌড়। এভাবেই চলছে জীবন। ঈদ গেল বেশ কিছু বাড়তি খরচও হয়েছে। আবার টাকা জমাচ্ছি সামনের ঈদের জন্য।

জাহাঙ্গীরের স্ত্রী আনোয়ারা বলেন, সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা ডিউটি। রাতে এসে রান্না-বান্না করতেই তো সময় চলে যায়। ছুটির দিনে কাপড়-চোপড় ধোয়া, বাজার সদাই। এর বাইরে অন্য কিছু তো ভাবতেও পারি না। মাঝে মাঝে আগে ছুটি হলে একটু টিভি দেখি আর নাহলে প্রতিবেশীদের সাথে গল্প-গুজব। এভাবেই কেটে গেল এতগুলো বছর।

সাভার-আশুলিয়ায় জাহাঙ্গীর-আনোয়ারা দম্পতির মত এমন হাজারও শ্রমিক দম্পতির অবস্থা একই রকম। শিল্পাঞ্চল সাভার-আশুলিয়ায় প্রায় ১০ লাখ শ্রমিকের বসবাস, যার বেশিরভাগই পোশাক শ্রমিক। অর্থ উপার্জনের আশায় যারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাড়ি জমিয়েছেন। সাভারের ক্রমবর্ধমান শিল্পব্যবস্থা তাদের রুটি-রুজির ব্যবস্থা করে দিলেও বঞ্চিত করেছে বিনোদন থেকে। কর্মসংস্থান হলেও মানসিক বিকাশ বা অবকাশের যেখানে নেই কোন সুযোগ। লাখ লাখ শ্রমিকের কাছে এখন বিনোদন বলতে বোঝায় হাতে থাকা স্মার্টফোন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে ঘিরে শ্রমিকদের দৈনন্দিন জটিলতা, আর এক ঘেয়েমি জীবনকে অবসাদ গ্রাস করতে পারে শ্রমিকদের বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাক শিল্প শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি লায়ন মো. ইমাম হোসেন বলেন, শ্রমিকদের তো ঘুরতে যাওয়ার জায়গাও নেই। ছুটি পেলে যে বাড়িতে যাবে সেখানেও খরচের ঝক্কি। একটা শ্রমিক বাড়িতে যাওয়ার আগে বেশ কিছুদিন সময় নিয়ে টাকা জমায় তারপরে বাড়িতে যায়। আবার বাড়ি থেকে ঘুরে এসে ধারদেনা করে চলতে হয়। এছাড়া অফিস ছুটির পর বা ছুটির দিনে তাদের তো আর করার কিছু নেই। অল্প বয়সী যারা তারা হয়ত সাভারের স্মৃতিসৌধসহ এদিক সেদিকে যায়। কিন্তু সেটাও খুবই অল্প অংশ। এর বাইরে শ্রমিকদের বিনোদনের কথা তো কেউ ভাবে না। শ্রমিকদের মানসিক চাপ যে দিন দিন বাড়ছে তা তো দেখার কেউ নেই।

ইউনাইটেড ফেডারেশন অব গার্মেন্টস ওয়ার্কার্সের সাভার-আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি ইমন শিকদার বলেন, শ্রমিকরা ঘুরতে যাবে টাকা পাবে কোথায়? যা বেতন তা দিয়ে পরিবার নিয়ে টিকে থাকাই তো কষ্ট। আর কম খরচে বিনোদনের তেমন কোন ব্যবস্থা নেই সাভারে। ফ্যান্টাসি কিংডম বা নন্দন পার্কের মত বিনোদন কেন্দ্র সাভারে আছে, কিন্তু সেখানে যেতে যে খরচ একজন সাধারণ শ্রমিকের পক্ষে তা বহন করা সম্ভব না। যাদের হাতে স্মার্টফোন আছে, অবসর সময়ে তারা সেটা নিয়েই পরে থাকে।

গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্যলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সরোয়ার হোসেন বলেন, অবৈধ ছাঁটাই বন্ধ, শ্রমিকদের জন্য পেনশন স্কিম চালু, গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য রেশনিং সুবিধা চালুসহ আমাদের বেশ কিছু দাবি নিয়ে আমরা সারা বছর কাজ করি। এত বছরেও শ্রমিকরা এসকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এর বাইরে বাড়তি কিছু তো আমরা ভাবতেই পারি না। তবে শ্রমিকরা যাতে মানসিকভাবে সুস্থ থাকে, তাদের যেন মানসিক উন্নয়ন হয় এই কাজ তো কেউ করছে না। আমরা মাঝে মাঝে বিভিন্ন দিবসে কিছু কিছু আয়োজন করি। মাঝে মাঝে তাদের ট্রেনিং সেশনের আয়োজন করি। কিন্তু তাতে অংশ নেওয়ারও সুযোগ পায় না সব শ্রমিকরা।

;

‘শ্রমিকদের পাওনা বঞ্চিত করলে খ্যাতিসম্পন্ন হলেও ছাড় নয়’



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

  • Font increase
  • Font Decrease

শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করলে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তি হলেও তাকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (৩০ এপ্রিল) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মহান মে দিবস উপলক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

মালিকদের বিলাসিতা না দেখিয়ে শ্রমিকদের স্বার্থ দেখার আহ্বান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, কেউ শ্রমিকদের বঞ্চিত করলে, সে যেই হোক না কেন, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন হলেও তাকে আমরা ছাড়ি না, ছাড়ব না। শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করতে হবে, তাদের দেখতে হবে।

আওয়ামী লীগ যতবারই ক্ষমতায় এসেছে শ্রমিকের মজুরি বাড়িয়েছে উল্লেখ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য। সরকার চায় দক্ষ জনশক্তি গড়ে উঠুক। শ্রমিকদের কল্যাণ দেখা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব।

তিনি বলেন, শিল্প কারখানা যাতে বন্ধ না হয় তার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি আমরা। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশের মতো আমাদের দেশের নারীরা সমমজুরি পায়। আমাদের সময় নারী শ্রমিকদের সংখ্যা ৪৩.১ ভাগে বৃদ্ধি পেয়েছে। মেয়েরা সব জায়গায় কাজ করতে পারে। আমরা সেই সুযোগ তৈরি করে দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, কোভিড মহামারির সময় মালিকদের প্রণোদনা দেওয়ার পাশাপাশি শ্রমিকদের মোবাইল ফোনে সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আন্দোলনের নামে বাসে ট্রাকে-আগুন দিয়ে শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষ হত্যা করেছে বিএনপি। প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক-মালিককে আমরা সহায়তা দিয়েছি। শ্রমিকদের কল্যাণ দেখা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব বলে মনে করি। মানুষের কল্যাণ করাই আমাদের প্রচেষ্টা।

;

'নুন আনতে পান্তা ফুরায়' নারী শ্রমিক অঞ্জনা রাণীদের

  ‘শ্রমিকের জয়গান কান পেতে শোন ঐ’



আমিনুল ইসলাম জুয়েল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

''নুন আনতে পান্তা ফুরায়' কিসের হামার (আমাদের) শ্রমিক দিবস। একদিন মাইনষের (মানুষের) জমিত কাজ না করলে নাখায়া (খেয়ে) থাকা নাগে (লাগে)। উঠবেলা-ডুববেলা (সকাল-সন্ধ্যা) কাজ করি যা পাই তা দিয়া সংসার চলে না। সমাজে নারীর শ্রমের কোন দাম নাই। তা না হলে পুরুষ মাইনষের সাথে সমান তালে কাজ করি তাদের চেয়ে অর্ধেক মজুরি পাই।'

বুধবার (১ মে) সকালে কথাগুলো বলছিলেন রংপুরের পীরগাছা উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের নিজ পাড়া গ্রামের একটি ধান ক্ষেতে কাজ করা নারী শ্রমিক অঞ্জনা রাণী্। ওই গ্রামের বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ্ব অঞ্জনা রাণী স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে বসবাস করেন।

অঞ্জনা রাণী জানান, অসুস্থ স্বামী কাজ করতে অক্ষম। তাই স্বামীর চিকিৎসার খরচসহ সন্তানদের ভরণ পোষণের দায়িত্ব তার উপর। কাজ করলে খাবার জোটে না হলে অনাহারে -অর্ধাহারে থাকতে হয়। পুরুষের মতো হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেও সংসার চলে না। একজন পুরুষ যে মজুরি পায় তার অর্ধেক মজুরি দেয়া হয় নারী শ্রমিকদের। ফলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা।

শুধু অঞ্জনা রাণী নন, তার সঙ্গে কাজ করা অন্য নারী শ্রমিকদেরও একই কথা। কোন দিন তারা শোনেনি বা জানেন না মে দিবস কি। দিবসের তাৎপর্যই বা কি। তারা শুধু জানে 'মানুষের কাজ করে মজুরি পাওয়া যায় না করলে নাই।

মজুরি বৈষম্যের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে নারী শ্রমিকরা বলেন, আমরা চরে কৃষিকাজ করে থাকি। চরে ধান, গম, ভুট্টা ও আলুসহ নানা ফসল উৎপাদন হয়। এসব ফসলি জমিতে চারা রোপন থেকে উত্তোলন পর্যন্ত সবকাজ নারীরা করেন। এসব ফসলি জমিতে পুরুষ কাজ করলে যে পরিমাণ মজুরি পায় নারী শ্রমিকরা কাজ করলে তার অর্ধেক মজুরি পান। এটা এক ধরনের রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।


রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলা তিস্তা নদী বেষ্টিত। শুষ্ক মৌসমে কয়েক হাজার হেক্টর জমি চর জাগে। এসব জমিতে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন হয়। চরের জমিতে চাষাবাদের জন্য পর্যাপ্ত শ্রমিকের প্রয়োজন পড়ে। এসময় নারী শ্রমিকের চাহিদা চোখে পড়ার মত। স্বল্প মজুরিতে নারী শ্রমিক পাওয়ায় জমির মালিকেরা নারী শ্রমিকদের কাজে ডাকেন বেশি। ফলে প্রতি বছর তিন থেকে চার হাজার নারী শ্রমিককে চরের জমিতে কাজ করতে দেখা যায়।

নারী শ্রমিক আনোয়ারা বেগম বলেন, 'আমার স্বাস্থ্য ও শক্তি ভাল ছিলো। নিজ এলাকা বাদে পাশের এলাকা থেকে কাজের ডাক আসতো। দীর্ঘ ৫-৬ বছর ধরে শ্রমিকের কাজ করি।' সংসারে অসুস্থ্য স্বামীসহ ৩ সন্তানের ভরণ পোষণের দায়িত্ব এখন তার উপর। তাই একদিন কর্ম না করলে অর্ধাহারে অনাহারে থাকতে হয়। ফলে কর্ম এখন আনোয়ারা বেগমের নিত্য দিনের সঙ্গী। অন্য ১০ জন পুরুষের মত পরিশ্রম করেও মজুরি বৈষম্যের শিকার হতে হয় । সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত পুরুষের সাথে কাজ করে মজুরী পাই অর্ধেক।

তিনি বলেন, 'বর্তমানে প্রতিটা পুরুষের সাথে সমান তালে তাল মিলিয়ে কাজ করতে হয়। তা না হলে মালিক পক্ষ কাজে নিতে চায় না। মাটি কাটার কাজ করি, পুরুষ যে তালে কাজ করে আমাদেরকেও কাজ করতে হয় সেই তালে। কিন্তু মজুরি দেয়া হয় পুরুষের অর্ধেকেও একটু বেশি। এ সমাজে নারীদের কাজের কোন মূল্য নাই। এখন পুরুষ শ্রমিকদের ৬শ' টাকা মজুরি। কিন্তু আমরা পাই ৩শ' থেকে ৩৫০ টাকা। নিরুপায় হয়ে কাজে আসি। বাড়ির পুরুষ যে কাজ করতে অক্ষম। কাজ না করলে স্বামী, সন্তানদের নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। তাই মালিক যা দেয় তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়।'

 দলে কাজ করা নারী শ্রমিক জাহানারা বেগম বলেন, 'আমার স্বামী শ্রমিকের কাজ করত। অসুস্থতার কারণে দুই মাস ধরে বাড়িতে বসে আছে। অভাবের সংসার। স্বামী ও দুই মেয়ে এক ছেলে সন্তান নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটে। তাই শ্রমিকের কাজ করছি। কিন্তু যে মজুরি পাই তা দিয়ে সংসার চলে না। জিনিস পত্রের দাম বেশি। যে মজুরি পাই শুধু ভাতটুকু খেতে পারি। তাও আবার বুনো শাকসবজি দিয়ে খেতে হয়। সন্তানদের পাতে মাছ, মাংস দিতে পারি না।'

আরেক নারী শ্রমিক রেখা বেগম বলেন, 'হামার (আমাদের) কথা কেউ শোনে না। দিবস দিয়ে কি হইবে। কাজ হামাক (আমাদের) করি খাওয়া নাগবে। যামার দিবস তামরায় (তারাই) পালন করুক। এতো কাম (কাজ) করি কিন্তু টেকা (টাকা) পাই কম। এই অদৌত (রোদে) কাজ করলে মনে হয় জীবনটা বাইর (বের) হয়ে যায়। স্বামী, ছইল-পইলের (ছেলে-মেয়ের) মুখের দিকি দেখি কামত আসি। সারাদিন কাম করি যে টেকা পাই তা দিয়া সংসার চলে না।'

;