কিরগিজস্থানে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। এরপর কাজের নামে সেসব মানুষকে পাচার করে দিতো চক্রটি। এমনই মানবপাচার চক্রের সাথে জড়িত ট্রাভেল এজেন্সির মালিকসহ চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি।
মঙ্গলবার (০৭ মে ) সিআইডির মুখপাত্র পুলিশ সুপার আজাদ রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, ইব্রাহীম মল্লিক নাহিদ (৩৫), শারমিন হোসেন লাবনী (৩৬) ও আরিফুর রহমান সাদী (২৪)।
এ সময় আসামিদের কাছ থেকে ১টি ল্যাপটপ, ১টি আইফোনসহ ৫টি স্মার্ট ফোন এবং ১টি বাটন ফোন জব্দ করা হয়।
আজাদ রহমান বলেন, একটু ভালো জীবনযাপনের আশায়, পরিবারের সদস্যদের সুখে রাখতে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় বাংলাদেশ থেকে জীবিকার সন্ধানে পৃথিবীর উন্নত দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন এদেশের বহু মানুষ। একটা সুন্দর জীবনের জন্য বিদেশে পাড়ি জমানো এ সকল মানুষের অনেকেই মানব পাচারকারী দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে হয়েছে এখন সর্বসান্ত ও নিঃস্ব। মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমনে সিআইডি প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
এরই ধারাবাহিকতায় সিআইডির একটি চৌকস টিম সোমবার (০৬ মে) মানব পাচারকারী চক্রের সাথে জড়িত 'জান্নাত ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল' নামের প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ইব্রাহীম মল্লিক নাহিদসহ চক্রের ৩ সদস্যকে রাজধানীর পল্টন থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, রিকশা চালক মোহাম্মদ সোনা মিয়া ইউটিউবে "জান্নাত ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল" নামক প্রতিষ্ঠানের প্রচারিত বিজ্ঞাপনে দেখতে পান, ৫ লাখ টাকায় কার ওয়াশের ওয়ার্কিং ভিসায় কিরগিজস্তানে লোক নেওয়া হবে। যেখানে বেতন হবে ৬০ হতে ৬৫ হাজার টাকা এবং খাওয়া নিজের, থাকা কোম্পানির। প্রচারিত বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে তিনি "জান্নাত ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল" এর নয়াপল্টন ঢাকাস্থ অফিসে যোগাযোগ করেন এবং কিরগিজস্তানে যাওয়ার জন্য গরু, রিকশা, ঘর বিক্রি করে উক্ত টাকা প্রদান করেন। তার সাথে ফরিদপুরের মো. আকাশ শেখ (২১) ও মো. আকতার সরদার (২৩) ও কিরগিজস্তানে যাওয়ার জন্য টাকা প্রদান করে। পরবর্তীতে ওই প্রতিষ্ঠান হতে তাদেরকে কিরগিজস্থানের ভিসা ও বিমান টিকিট প্রদান করা হয়। তারা ভিসার কপি ও বিমান টিকিট নিয়ে গত ৭ এপ্রিল কিরগিজাস্থানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে হয়রত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে ইমিগ্রেশন পুলিশ অনলাইনে তাদের ভিসার তথ্য না পেলে তাদের যাত্রা স্থগিত করে।
পরে তারা "জান্নাত ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল" এর সাথে যোগাযোগ করে সদুত্তর না পেয়ে পল্টন থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা রুজু করে। সিআইডি মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করার পর আসামি "জান্নাত ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল" ট্রাভেল এজেন্সির মালিক ইব্রাহীম মল্লিক নাহিদ এবং চক্রের অন্য ২ সদস্যদের গ্রেফতার করে।
তিনি বলেন, মামলা তদন্তকালে জানা যায় আসামিরা ইতঃপূর্বে যাদের অভিবাসী কর্মী হিসেবে কিরগিজস্তান প্রেরণ করেছে তাদের অধিকাংশই সেখানে মানব পাচারের শিকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
মামলাটির তদন্ত অব্যাহত আছে এবং তাদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং মামলা রুজু প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি।