বাজেট ২০২০-২১ বিশ্লেষণ এবং প্রতিক্রিয়া: অধ্যাপক ড. মো. সেলিম উদ্দিন



অধ্যাপক ড. মো. সেলিম উদ্দিন
অধ্যাপক ড. মো. সেলিম উদ্দিন/ছবি: সংগৃহীত

অধ্যাপক ড. মো. সেলিম উদ্দিন/ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান, ড. মো. সেলিম উদ্দিন বলেন, বিশ্বব্যপী মহামারি কোভিড-১৯ এর প্রভাবে আমাদের অর্থনীতির প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে এক অস্বাভাবিক, অসাধারণ, অস্থির, অনিশ্চিত, বিপদজনক ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে ২০২০-২১ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটটি ঘোষিত হয়েছে। প্রস্তাবিত এই বাজেটটি করোনা দুর্যোগ মোকাবিলায় বিগত কয়েক মাসে গৃহীত বিভিন্ন নীতি, কৌশল এবং প্রণোদনাকে বিশেষ বিবেচনায় রেখে জীবন জীবিকাকে প্রাধান্য দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের অন্যতম উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে প্রণয়ন করা হয়েছে। ঘোষিত প্রস্তাবিত বাজেট ২০২০-২১ এর মৌলিক অঙ্গীকারগুলোর মধ্যে অন্যতম হল করোনা দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য বিভিন্ন নীতি কৌশলের সঠিক বাস্তবায়ন। যথা: প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত ১,০৩,১১৭ কোটি টাকার বিশাল প্রণোদনার দ্রুত বাস্তবায়ন, সরকারি ব্যয়েকর্ম সৃজনকে প্রধান্য, বিলাসী ব্যয় হ্রাস ও নিরুৎসাহিত করা, স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা প্রবর্তন করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুজ্জীবিত করা, সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি এবং বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা। উল্লেখিত বিষয় সমূহকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষৎ পথ পরিক্রমা’ শিরোনামের প্রস্তাবিত ২০২০-২১ বাজেটটি ১১ জুন জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন। এই সরকারের প্রতিটি বাজেটই রেকর্ড ভেঙেছে। এবার তৃতীয় মেয়াদের দ্বিতীয় বাজেট ও এর ব্যতিক্রম হয়নি। বাজেট ২০২০-২১ এ মোট ব্যয় প্রাক্কলন হয়েছে ৫,৬৮,০০০ কোটি টাকা। যেটি সংশোধিত ২০১৯-২০ থেকে ৬৬,৪২৩ কোটি টাকা বা ১৩.২৪ শতাংশ বেশি। উল্লেখ্য, ২০১৯-২০ এর পরিমাণ ছিল ৮০,৬৪৯ কোটি টাকা বা ১৮.২ শতাংশ বেশি। একইভাবে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩,৭৮,০০০ কোটি টাকা যেটি সংশোধিত ২০১৯-২০ অর্থসাল থেকে ২৯,৯৩১ বা ৮.৬০ শতাংশ বেশি। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের মোট রাজস্ব প্রাক্কলন পূর্ববর্তী সংশোধিত বাজেটটির তুলনায় ৬১,১৯৭ কোটি টাকা বা ১৯.৩২ শতাংশ বেশি। মোট ব্যয় এবং রাজস্বপ্রাক্কলনের সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণে বলা যায়, মোট ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি রাজস্ব প্রবৃদ্ধির তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে এবং মোট বাজেট ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১,৯০,০০০ কোটি টাকা, যেটি জিডিপির ৬.০০ শতাংশ ।

২০১৯-২০ সংশোধিত বাজেটে ঘাটতি দাঁড়াবে ১,৫৩,৫০৮ কোটি টাকা, যেটি জিডিপির ৫.৫ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেটে বহি: উৎস হতে ৮০,০১৭ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস হতে ১,০৯,৯৮৩ কোটি টাকা যার মধ্যে ব্যাংক ঋণ ৮৪,৯৮০ কোটি টাকা ঘাটতি অর্থায়নের প্রাক্কলন করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৯-২০ সংশোধিত বাজেট বহি:উৎস হতে ৫৬,১৬৩ কোটি এবং অভ্যন্তরীণ উৎস হতে ৯৭,৩৪৫ কোটি টাকা, যার মধ্যে ব্যাংক ঋণ ৮২,৪২১ কোটি টাকার অর্থায়ন পুন:প্রাক্কলন করা হয়েছে। অথচ ২০১৯-২০ এ ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণের প্রাক্কলন ছিল ৪৭,৩৬৪ কোটি টাকা। ঘাটতি অর্থায়ন বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, বহি: উৎস হতে অর্থায়ন টার্গেট অনুযায়ী না হওয়ায় এবং রাজস্ব আদায় ঘাটতির কারণে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে বাজেটের টার্গেট অতিরিক্ত ঋণ নিয়ে ঘাটতি অর্থায়নের ব্যবস্থা করতে হয়, তাই বাজেট২০২০-২১ এ ঘাটতি অর্থায়ন ১,৯০,০০০ কোটি টাকা একটি বিরাট চ্যালেঞ্জিং। কেননা অভ্যন্তরীণ উৎস বিশেষ করে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে বাজেট অতিরিক্ত ঋণ নিলে বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাপ্রাপ্তসহ তারল্য সংকট এবং মুদ্রাস্ফিতিতে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। সুতরাং রাজস্ব আহরণ এবং বৈদেশিক উৎস হতে প্রাক্কলিত অর্থ যথাসময়ে সংগৃহীত না হলে বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন হবে। এজন্য রাজস্ব আহরণে এবং ঘাটতি অর্থায়নে বিশেষ করে বৈদেশিক উৎস থেকে অর্থায়নে সাফল্য দেখাতে না পারলে প্রস্তাবিত বাজেট পুরোপুরি বাস্তবায়ন কঠিন হবে। তাই প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন কলা-কৌশলসহ প্রশাসনিক ব্যবস্থা অতীতের যে কোন সময় থেকে বেশি নিতে হবে। মোট বাজেট ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, সামাজিক অবকাঠামো খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ১,৫৫,৫৩৬ কোটি টাকা যা বরাদ্দের ২৭.৩৮ শতাংশ, ভৌত অবকাঠামো খাতে ১,৬৭,০১১ কোটি টাকা (মোট ব্যয়ের ২৯.৪০ শতাংশ), সাধারণ সেবা খাতে ১,৪০,২৬৫ কোটি টাকা (মোট ব্যয়ের ২৪.৬৯ শতাংশ), সুদ পরিশোধ ৬৩,৮০১ কোটি টাকা বা ১১.২৩ শতাংশ এবং সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্ব (PPP), আর্থিক সহায়তা, ভর্তুকি এবং বিনিয়োগসহ মোট ৩৬,৬১০ কোটি টাকা যা বরাদ্দের ৬.৪৫ শতাংশ এবং উক্ত বরাদ্দগুলো যথাক্রমে সংশোধিত বাজেট ২০১৯-২০ চলতি অর্থ বছরের যথাক্রমে ১,৩৯,৫০৮ কোটি টাকা (২৭.৮১ শতাংশ), ১,৫৯,৫৪৫ কোটি (৩১.৮১শতাংশ), ১,১০,৮১৩ কোটি (২২.০৯ শতাংশ), ৫৭,৬৬৪ কোটি (১১.৫০ শতাংশ) এবং ৩০,০৯৯ কোটি টাকা (৬.০০শতাংশ) পুন: প্রাক্কলন করা হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, সামাজিক অবকাঠামো এবং ভৌত অবকাঠামোতে বরাদ্দ বাড়লেও মোট বরাদ্দের শতাংশে হ্রাস পেয়েছে।

ড. সেলিম বলেন, বিগত তিন বছরে ২০১৬-১৭ থেকে ২০১৮-১৯ পর্যন্ত যথাক্রমে ৭.২৮,৭.৮৬ এবং ৮.১৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার আলোকে চলতি বছরে প্রবৃদ্ধি ৮.২ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বিশ্বব্যাপী করোনার প্রভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে আগ্রাসী আক্রান্তে ৫.২ শতাংশে সংশোধিত প্রাক্কলন করা হয়েছে। বাজেট ২০২০-২১ এ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮.২ শতাংশ। বাজার চাহিদাসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কোভিড-১৯ পূর্ববর্তী অবস্থায় পুনর্বাসন হলে হয়ত এই প্রবৃদ্ধি অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা আমাদের প্রবৃদ্ধির মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদা। মুদ্রাস্ফিতি ৫.৪ শতাংশে সীমাবদ্ধ রাখার আসার প্রত্যয় বাজেট প্রাক্কলন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতকে বিচার বিশ্লেষণপূর্বক অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে যেটি কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সমান হবে।

কেননা কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ১০,০০০ কোটি টাকার থোক বরাদ্দ এবং এই খাতে ২৯,২৪৭ কোটির টাকা বরাদ্দ যেটি ২০১৯-২০ এ ছিল ২৫,৭৩২ কোটি টাকা, তাছাড়া স্বাস্থ্য সেবায় আরো ১৩টি মন্ত্রণালয় যুক্ত আছে সেগুলোসহ বিবেচনায় নিলে মোট বরাদ্দ ৪১,০২৭ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। সামাজিক সুরক্ষা আরেকটি অগ্রাধিকার খাত যেটিতে আগামী অর্থ বছরে ৯৫,৫৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে যা বাজেটের ১৬.৮৩ শতাংশ এবং জিডিপির ৩.০১ শতাংশ। সংশোধিত বাজেট ২০১৯-২০ এযেটি ৮১,৮৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল।

বিশ্লেষণে বলা যায়, বরাদ্দের এই প্রবৃদ্ধি সামাজিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষার আওতা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পাবে। কৃষি এবং কৃষির উপখাতকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষে বাজেটে বিভিন্ন কার্যক্রমের প্রণোদনা, স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা, ভর্তুকি এবং নানা নীতি কৌশল প্রাধান্য পেয়েছে। এই খাতে মোট বরাদ্দ ২৯,৯৮৩ কোটি টাকা। যা সংশোধিত বাজেটে ২৭,০২৩ কোটি টাকা। বরাবরের মতোই সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত যেটি মোট ৮৫,৭৬০ কোটি টাকা যা মোট বরাদ্দের ১৫.১ শতাংশ এবং যেটি সংশোধিত ২০১৯-২০ এ প্রাক্কলন হয়েছে ৭৭,০৩৯ কোটি টাকা। যদিও বরাবরের মতোই উল্লেখযোগ্য বাজেট বরাদ্দ পাবলিক সার্ভিস খাতে হয়ে থাকে যেখানে সুদ পরিশোধ ৬৩,৭৭৬ কোটিসহ মোট বরাদ্দ ১,৮০,৭১৫ কোটি টাকা যেটি মোট বরাদ্দের প্রায় ৩২.০০ শতাংশ। এছাড়া পরিবহণ ও যোগাযোগ খাতে ৬৪,৫৮৭ কোটি টাকা যা বরাদ্দের ১১.৪ শতাংশ, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ণ মন্ত্রণালয়ে ৩৯,৫৭৩ কোটি (বরাদ্দের ৭.০০ শতাংশ), প্রতিরক্ষা খাতে ৩৪,৮৮২ কোটি টাকা (বরাদ্দের ৬.১ শতাংশ), সামাজিক সুরক্ষা ও কল্যাণ খাতে ৩২,১৬৬ কোটি টাকা (বরাদ্দের ৫.০ শতাংশ) ইত্যাদি খাতগুলো উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ পেয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেটের বিভিন্ন খাতগুলোর বরাদ্দ বিশ্লেষণ করলে বলা যায়, প্রস্তাবিত বাজেট জনকল্যাণমূলক বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা বিধানমূলক কর্মসূচি এবং কর সহনীয়করণসহ প্রবৃদ্ধি সঞ্চারি মেগা প্রকল্প সমূহ এবং স্থবির বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির নানা কলা কৌশল অগ্রাধিকার পেয়েছে। গতানুগতিক বড় আকারের বাজেট নিয়ে ড. সেলিম উল্লেখ করেন, বাংলাদেশর অপার উন্নয়ন সম্ভাবনা, জনগণের প্রত্যাশা, ভোগ ও চাহিদার ক্রমোন্নতি, বর্তমান অর্থনৈতিক স্থিতিশিলতা ও বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচকের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে বলা যায়, আকার রক্ষণশীল না হওয়াই ভাল। বড় আকারের বাজেটে অনেকে মনে করেন, অর্থের অপচয় ও অপব্যবহার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই আমি বলব অর্থ বরাদ্দে উদারতা থাকা ভাল এবং অনেক সময় সফলতা আসে তবে অর্থ ব্যবহারে যথেষ্ট সতর্ক থাকা এবং অর্থ অপব্যবহার বা অপচয় রোধকল্পে সচেতনতা সহ কঠোরতা অবলম্বন করলে এবং আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বিশেষ করে সেপ্টেম্বর ২০২০ যদি বিশ্ব মহামারি কোভিড-১৯ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসলে বিশাল এই বাজেট অধিকাংশই বাস্তবায়ন করা সম্ভব। বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কিত স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার সমষ্টিকে অর্থনীতির সূচকগুলো যথা: মুদ্রাস্ফিতি ৫.৪ শতাংশ রাখা, মধ্যমেয়াদি নীতি কৌশল কঠোরভাবে পরিপালনসহ কৃষি, শিল্প, ব্যবসা, রপ্তানিখাত, আবাসনখাত, প্রবাসী আয় ও সেবা খাতকে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে নেওয়ার অঙ্গীকার, দারিদ্র নিরসন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট এবং আয় বৈষম্য নিয়ন্ত্রণে স্ববিশেষ সূচক ও চলকগুলোকে বাজেট বাস্তবায়নে কঠোরভাবে পরিপালনসহ নজরদারিতে রাখতে হবে।

এখানে উল্লেখ্য, কোনো ধরনের তাৎপর্যপূর্ণ নতুন করারোপন ছাড়াই এই বিশাল বৃহৎ এবং উচ্চ বিলাসী বাজেট যদি প্রত্যেক মাসে আনুপাতিক হারে সততা ও আন্তরিকতার সাথে সঠিক অর্থে ও মানসম্মতভাবে বাস্তবায়িত হলে সামগ্রিক চাহিদা বৃদ্ধি, অবকাঠামো ঘাটতি হ্রাস এবং দারিদ্রবান্ধব, অন্তর্ভূক্তিমূলক ও বিভিন্ন সামাজিকনিরাপত্তা বিধান মূলক ব্যয় ইত্যাদির মাধ্যমে প্রস্তাবিত বাজেট সার্বিক জনকল্যাণে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে। মোদ্দাকথা, প্রস্তাবিত বাজেটের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করবে সারা বছরের আর্থিক কর্মকাণ্ডগুলো মাসিক কিংবা ত্রৈমাসিকের ভিত্তিতে আনুপাতিক হারে গুণগত ও পরিমাণগত বৈশিষ্টের আলোকে মানসম্মত বাজেট বাস্তবায়নের ওপর। কেননা বিগত বছর সমূহে বাজেট অবাবস্তবায়নের হার প্রায় ১০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২১ শতাংশে পৌঁছেছে।

প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নে সামস্টিক অর্থনীতির দুর্বলতা, অসংগতি, প্রতিবন্ধকতা ও চ্যালেঞ্জ সমূহের প্রতি আলোকপাত করতে গিয়ে ড. সেলিম বলেন, উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য বর্তমান বিনেয়োগ যথেষ্ট নয়। সক্ষমতার অভাবে এডিপি বাস্তবায়ন পুরোপুরি না হওয়ায় সরকারি বিনিয়োগ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছেনা। আবার বছর বছর সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধিই যথেষ্ট নয়, এর গুণগতমান বৃদ্ধি এবং অর্থবছরের শেষ তিন মাসে বা শেষ প্রান্তিক অত্যাধিক ব্যয় প্রবণতার কারণে সরকারি অর্থের অপচয়, কাজে নিম্নমান ও গুণগতমান হ্রাস, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে অসামঞ্জস্য দেখা দেয়। অন্যদিকে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ গত কয়েকবছর ধরে ২১-২২-২৩ শতাংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধির জন্য এই হার জিডিপির ২৬-২৭ শতাংশে উন্নীত করা দরকার। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বিশেষ করে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ আগামী অর্থ বছরে ঋণ সুবিধা, বিনিময় হার, তারল্য সংকট, খেলাপি ঋণ সংকট, মুদ্রাস্ফিতির হার, বর্হিখাতের অসামঞ্জস্যতা, বিনিয়োগকারীর আস্থা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সংকটসহ প্রধানতম বিশ্ব মহামারি কোভিড-১৯ এর ধংসাত্মক আক্রমণ ও প্রভাব ইত্যাদি কারণে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নে অন্যান্য চ্যালেঞ্জ সমূহের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার রাজস্ব আহরণ অন্যতম, অবকাঠামোগত ঘাটতি, সরকারি ব্যয়ের অগ্রাধিকার ঠিক করা, ঘাটতি বাজেটের অর্থায়ন ব্যবস্থাপনা বিশেষ করে বৈদেশিক উৎস থেকে অর্থ প্রাপ্তির অনিশ্চয়তা, ব্যক্তি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রতিবন্ধকতা সমুহ, রফতানি বৈচিত্রকরণ, রফতানির প্রবৃদ্ধির তুলনায় আমদানি প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিক বৃদ্ধি, কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সঞ্চয় বিনিয়োগ তারতম্য ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। উপরোক্ত চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষিতে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো ব্যয়াধিক্য (Cost Overrun) এবং বাস্তবায়ন সময়োত্তীর্ণ (Time overrun) সঠিক ঝুঁকি নির্ণয়, মাসিক ভিত্তিতে প্রকল্প রেজাল্ট ভিত্তিতে মূল্যায়নের ব্যবস্থা থাকা দরকার। ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে বৈদেশিক সূত্র থেকে ঝামেলামুক্ত ঋণ প্রবাহ নিশ্চিত, ৯ শতাংশ সুদের হার, বিনিময় হার, মুদ্রাস্ফিতির হার, আস্থার উন্নতি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবহণ ও যোগাযোগ ইত্যাদি চলমান কার্যক্রমগুলোর সুষ্ঠু সমাপ্তসহ ইত্যাদি বিষয়ের উপর জোর নজরদারি, তদারকি এবং স্থিতিশিলতা অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে। এছাড়া বাজেটকে সঠিক বাস্তবায়নে সক্ষমতা, প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নের স্বচ্ছ রোডম্যপ, রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা, প্রকল্প বাস্তবায়নে গুণগত পরিবর্তন ইত্যাদি বিবেচনায় নিলে বাজেট বাস্তবায়নের অনেক চ্যালেঞ্জ বা প্রতিবন্ধকতা দূর হবে।

দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট, ব্যবসা ব্যয়-হ্রাস, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি এবং দারিদ্র বিমোচনের লক্ষে এই বাজেটে সামাজিক ও ভৌত অবকাঠামো খাতে উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে ব্যয়ের গুণগতমান, বাস্তবায়ন সময়, মোট প্রকল্প ব্যয়, ইত্যাদির ওপর অধিক গুরুত্বরোপ করে সঠিক ব্যয়ে সঠিক সময়ে এবং সঠিক গুণে ও মানে প্রকল্প কার্য সমাপ্তের জন্য সঠিক মানদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে। চলমান বৃহৎ প্রকল্প গুলোর বাস্তবায়নের হার সময় সময় প্রেস ব্রিফিংএর মাধ্যমে জনসম্মুক্ষে প্রচারের ব্যবস্থা থাকা উচিত। যেমন: বাংলাদেশ দৈনিক কতটুকু বা কত কিলোমিটার রাস্তা সম এককে (equivalent unit) তৈরি হচ্ছে, দৈনিক কত কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে (সম এককে) ইত্যাদি প্রকাশ করার জন্য সুপারিশ করছি। সামাজিক ও ভৌত অবকাঠামোর কারণে সুফলগুলো সুস্পষ্ট করা উচিত বলে মনে করি।

প্রস্তাবিত বাজেটে বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য রাজস্ব প্রণোদনার বিষয়ে উল্লেখ করতে গিয়ে ড. সেলিম বলেন, নিম্ন আয়ের ব্যক্তিবর্গ, কুটির শিল্প, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প ও ব্যবসায়ীদেরকে কোভিড-১৯ এর ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য আয়করের অ-করযোগ্য সীমা বৃদ্ধি, প্রথম ১,০০,০০০ টাকায় ৫ শতাংশ আয়কর, সর্বোচ্চ কর হার ৩০ শতাংশের বদলে ২৫ শতাংশ, অতালিকাভুক্ত কর হার হ্রাস, কৃষি ও কৃষি উপখাতে নিয়োজিত কৃষি যন্ত্রাপাতিতে শুল্ক হ্রাস, ভ্যাট রেয়াত, কাস্টমের হয়রানি রোধে বিভিন্ন কর্ম কৌশল, রফতানি মুখী দেশীয় এবং আমদানি পরিপূরক শিল্প ও ব্যবসায়কে সুরক্ষায় বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনার প্রবর্তন, শুল্ক হ্রাস, কর হার হ্রাস, রাজস্ব প্রণোদনা সহ বিভিন্ন নীতি কৌশলের সহায়তা বাজেটে পরিস্ফুটিত হয়েছে। মোটামুটি বড় ধরনের নতুন কোন কর আরোপ ছাড়াই এই বাজেট প্রণীত হয়েছে। রাজস্বের উৎসের জন্য অনেকটা ঢালাও ভাবে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে অর্থমন্ত্রী অনেকটাই কালো বাজারীর অর্থের উৎসের উপর নির্ভরশীল হতে চেয়েছে। অতীত অভিজ্ঞতা এ ব্যপারে সুখকর নয় তবে আগামী অর্থবছরের অভিজ্ঞতাটা ভিন্ন হয় কিনা দেখার বিষয়। সকল পক্ষকে মোটামুটি স্বস্তি দিয়ে এই বাজেট বাস্তবায়নের যে পরিকল্পনা রচিত হয়েছে সেটি সঠিক অর্থে দক্ষতা ও আন্তরিকতার সাথে এবং সময়মত বাস্তবায়নের সকল কর্মকৌশল গ্রহণ ব্যতীত সফলতা দুরূহ হবে।

ড. সেলিম বলেন যে, বিশ্ব মহামারি কোভিড-১৯ বিগত কয়েক মাসে বিধ্বস্ত ও বিপর্যস্ত বিশ্বকে একটি শিক্ষা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, অদূর ভবিষৎতে বা নিকট ভবিষ্যতে বহু জানা, অসস্পষ্ট, স্পষ্ট এবং অজানা চ্যালেঞ্জ এবং বিপদ যে কোন সময় দেখা দিতে পারে যেটি অর্থনীতি পুনর্গঠন ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে যা অবশ্যই বৈচিত্রময় ঝুঁকিপূর্ণ ও অনিশ্চিত ঘটনাবলীর সাথে দ্রুত তাল মিলিয়ে পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জনের ব্যবস্থা রেখেই অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সঙ্গে সমস্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পূর্ব প্রস্তুতি থাকতে হবে।

অধ্যাপক ড. মো. সেলিম উদ্দিন, এফসিএ, এফসিএমএ
অধ্যাপক, হিসাব বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং 
চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন ও নির্বাহী কমিটি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। 

   

ভাঙ্গায় ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ গেল বাবা-ছেলেসহ ৩ জনের



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলেসহ ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।

শনিবার (১১ মে) দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার হামিরদি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- কাশেম শিকদার (৪০), তার ছেলে মোরসালিন (৮) ও তার আপন ভাই নাজমুল শিকদার (৩৭)। তারা গোপালগঞ্জের মোকসুদপুর উপজেলার কোয়ালদিয়া গ্রামের বাসিন্দা।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভাঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল্লাহেল বাকী।

;

আউটসোর্সিং নিয়োগ বাতিলসহ ১০ দফা দাবি ৪র্থ শ্রেণি কর্মচারীদের



স্টাফ করেস্পন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

আউটসোর্সিং নিয়োগ প্রথা বাতিলসহ ১০ দফা দাবি জানিয়ে রাজধানীতে সংবাদ সম্মেলন করেছে, বাংলাদেশ চতুর্থ শ্রেণি সরকারি কর্মচারী সমিতি।

এ সময় তারা ৯ম পে-স্কেল প্রদান, বেতন বৈষম্য দূরীকরণে শতকরা ১.৫ হারে বেতন স্কেল প্রদান, সর্বনিম্ন বেতন স্কেল ২৫ হাজার ২শ টাকাসহ শতকরা ৪০ ভাগ মহার্ঘভাতা প্রদানের দাবি জানান।

শনিবার (১১ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বিভিন্ন দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সংগঠনটি। এতে সংগঠনের বিভিন্ন নেতা বক্তব্য রাখেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে দাবি তুলে ধরেন সংগঠনের সভাপতি মো. আজিম। তিনি বলেন, ৯ম জাতীয় বেতন কমিশন গঠন করে শতকরা ১.৫ হারে বেতন স্কেল সর্বনিম্ন ২৫ হাজার ২শ টাকাসহ ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা অনুযায়ী ১০ ধাপে বেতন স্কেল নির্ধারণ করতে হবে। এছাড়া দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে বর্তমান বাজার দরের সঙ্গতি রেখে শতকরা ৪০ ভাগ মহার্ঘভাতা প্রদান করতে হবে।

লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি মো. আজিম বলেন, আউটসোর্সিং প্রথা বাতিল করে, রাজস্বখাতে জনবল নিয়োগ করতে হবে। আউটসোর্সিং ও প্রকল্প/ডে-লেবার/শিক্ষাখাত/গণপূর্ত অধিদপ্তরসহ সব দপ্তরের মাস্টার রোলে নিয়োগ করা জনবল রাজস্বখাতে স্থানান্তর করতে হবে।

এ সময় বিভিন্ন দাবি উপস্থাপন করে তিনি আরো বলেন, বাড়ি ভাড়া শতকরা ৮০ ভাগ, চিকিৎসা ভাতা ৩ হাজার টাকা, শিক্ষাভাতা ২ হাজার টাকা, যাতায়াত ভাতা এক হাজার পাঁচশ টাকা, টিফিন ভাতা ১ হাজার টাকা এবং ধোলাই ভাতা ১ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে হবে। পুলিশ বাহিনীর মতো রেশন প্রদান করতে হবে ও নার্সদের মতো পোশাকের টাকা বেতনের সঙ্গে প্রদান করতে হবে।

এছাড়া তিনি আরো যে সব দাবি উপস্থাপন করেন, সেগুলি হচ্ছে- সচিবালয়ের মতো পদবি পরিবর্তন করে ও শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন সব কর্মচারীদের শতকরা ৫০ ভাগ পদোন্নতি প্রদান করতে হবে। নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেলওয়ের মতো শতকরা ৪০ ভাগ পোষ্য কোটা সংরক্ষণ রাখতে হবে।

আগের মতো শতভাগ পেনশন উত্তোলনের সুবিধাসহ পেনশন গ্র্যাচুয়িটির হার ১ (এক) টাকায় ৫শ টাকা নির্ধারণ করতে হবে। সরকারি কর্মচারীদের সুদমুক্ত গৃহঋণ প্রদান করতে হবে। সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঝুঁকিপূর্ণ কাজের ক্ষেত্রে ঝুঁকিভাতা প্রদান করতে হবে এবং পার্বত্য জেলাগুলিতে পাহাড়িভাতা আগের মতো বহাল রাখতে হবে।

সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ চতুর্থ শ্রেণি সরকারি কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোক্তার হোসেন, মো. নিজামুদ্দিন পাটোয়ারী, আব্দুল মান্নান, সেলিম ভূঁইয়া, মনির আহমেদ, এম এ হান্নানসহ আরো অনেকে।

;

বন্য হাতির পায়ে পিষ্ট ৩৪ বাংলাদেশির মৃত্যু, ক্ষতিপূরণ দাবি



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ভারতীয় হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে ৩৪ সীমান্তবর্তী মানুষের মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ দাবিতে মানববন্ধন করেছে শেরপুর জেলা উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদ।

শনিবার (১১ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, হাতি যখন ফসল এবং ঘরবাড়ি নষ্ট করে তখন মানুষ হাতিকে মেরে ফেলে, আর এর জন্য বনবিভাগ এবং স্থানীয় থানা পুলিশ জনগণকে মামলা দিয়ে হয়রানি করে। আমরা এ থেকে মুক্তি চাই।

সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরর্দী পাহাড়ি এলাকায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন ভারত বাংলাদেশ দীর্ঘ পাহাড় ঘেষা সীমান্তবাসী। নালিতাবাড়ী উপজেলার মধুটিলা ইকোপার্কের বাতকুচি পাহাড়ে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে অবস্থান করছে ৫০-৬০টি হাতির একটি দল। দিনে জঙ্গলে গা-ঢাকা দিয়ে থাকলেও, রাত নামতেই খাবারের খোঁজে তারা হানা দিচ্ছে ফসলের ক্ষেতে। রাতভর তাণ্ডব চালিয়ে ভোরের আলো ফুটতেই হাতির পাল ঢুকে পড়ে জঙ্গলে। সামনে কাউকে পেলেই আক্রমণ করে।

তিনি আরও বলেন, সর্বশেষ গত ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাতে নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বাতকুচি গ্রামে ফসল রক্ষা করতে গিয়ে হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারান কৃষক উমর আলী। দুই মাসের ব্যবধানে হাতির আক্রমণে এ নিয়ে দু’জন প্রাণ হারালেন।

স্থানীয়রা জানান, এক সপ্তাহ ধরে এক দল ভারতীয় বুনো হাতি সীমান্তবর্তী বাতকুচি গ্রামের পাহাড়ি ঢালে বোরো ক্ষেতে নেমে খেয়ে ও পা দিয়ে মাড়িয়ে ফসল নষ্ট করছে। বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল রাতেও এক দল হাতি বাতকুচি গ্রামে ধানক্ষেতে আসে। এ সময় উমরআলীসহ গ্রামবাসী তাদের ফসল বাঁচানোর জন্য মশাল জ্বালিয়ে চিৎকার করে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এক পর্যায়ে হাতির পাল একটু পিছু হটলে নিজ বাড়ির দিকে যেতে থাকেন উমরআলী। পথিমধ্যে কয়েকটি হাতি তাকে ঘিরে ফেলে পা দিয়ে পিষে ও শুঁড়ে পেঁচিয়ে হত্যা করে।

মহিউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, নালিতাবাড়ী থানার ওসি ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সরকারিভাবে নিহত কৃষকের পরিবারকে সরকারিভাবে ৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। কিন্তু ভারতের সরকার বা আসাম রাজ্য সরকার এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি এমনকি নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহায়তা প্রদান করেনি।

এর আগে, ২৯ মার্চ একই উপজেলার নাকুগাঁও এলাকায় ফসল রক্ষা করতে গিয়ে হাতির ধাওয়া খেয়ে জেনারেটরের খোলা জিআই তারে জড়িয়ে উসমান আলী নামে একজন মারা যান।

তিনি বলেন, আমরা স্থানীয় জনগণের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, সন্ধ্যা নামলেই হাতিগুলো সড়কে ও লোকালয়ে চলে আসছে। হাতির পাল ফসলের ক্ষেতে এসে তাণ্ডব চালায়। এ সময় বাড়িঘর, গাছপালা ভাঙচুর করে। হাতির বিচরণ বেড়ে যাওয়ায় পাহাড় বেষ্টিত জনগোষ্ঠীর ছেলেমেয়ে নিয়ে আতঙ্কে আছেন। হাতির ভয়ে আমাদের নির্ঘুম রাত কাটছে। শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী এলাকার মানুষকে হাতির উপদ্রব থেকে বাঁচাতে ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে স্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

এসময় মানববন্ধনে বক্তারা ৬ টি দাবি তুলে ধরেন। এগুলো হলো-

নিহত প্রত্যেক পরিবারকে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সহযোগিতা ও পুনর্বাসন করতে হবে।

হাতিদের খাওয়া-দাওয়া ও চলাফেরা স্বাভাবিক রাখতে নির্দিষ্ট হাতি অভয়ারণ্য কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। প্রয়োজনে ভারত বাংলাদেশ সরকার যৌথভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারে।

ফসল ক্ষয়ক্ষতির শিকার কৃষকদের সাহায্য সহযোগিতা ও পুনর্বাসন করতে হবে।

শেরপুর জেলাকে পর্যটন জেলা হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।

মানুষ ও হাতির মৃত্যু রোধ নিশ্চিত করতে হবে।

বনে আগুন জ্বালিয়ে বনভূমি ধ্বংসকারী দের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। অবৈধভাবে বালু, চিনামাটি উত্তোলন এবং গাছপালা নিধন করা বন্ধ করতে হবে।

সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী মহিউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন সংহতি প্রকাশ করেন। বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের যুগ্ম সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান শাশ্বত মনির, হাফিজুল করিম, মোঃ সুমন আহমেদ, সালাউদ্দিন নেট ভাসানীর স্বপন সাহা, ডাক্তার আমিনুল প্রমুখ।

;

বাগেরহাটে বজ্রপাতে ২ নির্মাণ শ্রমিক নিহত, আহত ৬



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বাগেরহাট
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাগেরহাটের শরণখোলায় বজ্রপাতে দুই নির্মাণ শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ছয় জন। নিহতরা হলেন- মিলন (৩৫) এবং মোস্তফা (৪৫)। নিহতদের বাড়ি মোরলগঞ্জ উপজেলায়।

শনিবার (১১ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলার বান্ধাঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শরণখোলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক প্রিয় গোপাল রায়।

শরণখোলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এএসএম কামরুজ্জামান জানান, বান্দাঘাট এলাকায় কার্গো থেকে বালু উঠাচ্ছিলেন শ্রমিকরা। বৃষ্টি শুরু হলে তারা পাশের একটি টিনের চালার নিচে আশ্রয় নেন। এ সময় পর পর দুটি বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই মিলন এবং মোস্তফা মারা যান।

আহতদের উদ্ধার করে শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

;