আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র এক দিন। ইতমধ্যে নির্বাচনে প্রতিন্দ্বন্দ্বী সকল প্রার্থী তাদের প্রচার প্রচারণা শেষ করেছেন।
ঝালকাঠির দুটি আসনে ১০ জন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। বড় দুই দল ( আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ) প্রার্থীরা নির্বাচনী ময়দানে সক্রিয় । তবে জাতীয় পার্টি প্রার্থী এমএ কুদ্দুস খান আওয়ামী লীগের প্রার্থী শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুকে ইতমধ্যে সমর্থন দিয়েছেন। অন্য কোন দলের প্রার্থীদের মাঠে কোন ততপরতা ছিলনা।
ঝালকাঠি-২ (সদর-নলছিটি) আসনে আওয়ামী লীগের শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বিএনপির জীবা আমিনা খান, জাতীয় পার্টির এমএ কুদ্দুস খান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টির জাহাঙ্গীর হোসেন খান রয়েছেন।
এছাড়া ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঠালিয়া) আসনে রয়েছেন আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বজলুল হক হারুন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীরউত্তম, জাতীয় পার্টির এমএ কুদ্দুস খান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রবীর কুমার মিত্র, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী ।
এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা মাঠে থাকলেও অন্য দলের প্রার্থীদের তেমন কোন প্রচার প্রচারণা ছিল না। তাই এখানকার ভোটাররা মনে করছেন নির্বাচনে মূল লড়াই হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যে। ঝালকাঠির দুটি আসনেই টানা ১০ বছর ক্ষমতাসীন দলের দখলে রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঝালকাঠি-২ আসনে স্বাধীনতার পরে ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে প্রথম সংসদ সদস্য হন আমির হোসেন আমু। পরে ১৯৭৯ সালে ঝালকাঠি-২ আসনে তিনি বিএনপির প্রার্থী আবদুর রবের কাছে হারেন। এরপর তিনটি সংসদ নির্বাচনে (’৮৬, ৯১,৯৬, ২০০১ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ও বিএনপির প্রার্থীরা এখান থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০০৮ সালে তিনি বিএনপির প্রার্থী ইলেন ভুট্টোকে পরাজিত করে আর ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আমির হোসেন আমু।
তাই হারানো আসন পুন:উদ্ধারে মরিয়া বিএনপির প্রার্থী জীবা আমিনা খান । অপর দিকে আসন ধরে রাখতে চায় শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। আওয়ামী লীগের হেবি ওয়েট প্রার্থীর বিপরীতে বিএনপির নবাগত প্রার্থী কতটা সুবিধা করতে পারে সেটা দেখর বিষয়।
ঝালকাঠি-২ আসনের বিএনপির প্রার্থী জীবা আমিনা খান বলেন,‘ আমরা যদি ঠিক ভাবে প্রচার প্রচারণা চালাতে পারি আর ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার সঠিক ভাবে প্রয়োগ করে পারে তাহলে জয় আমাদের সুনিশ্চিত।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেছেন,‘ গত ১০ বছর আমরা ঝালকাঠি-নলছিটি যে পরিমানের উন্নয়ন করেছি তাতে ভোট চাইতে হবে না। ভোটাররা এমনেতেই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে জয় যুক্ত করবে।
অন্যদিকে ঝালকাঠি-১ আসনে ১৯৭৯ সালে ব্যারিস্টার শাহাজাহান ওমর বীরউত্তম প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ’৯১, ও ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি নির্বাচিত হন। দায়িত্ব পালন করেন ভূমি প্রতিমন্ত্রী এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর। ১৯৯৬ সালে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু লাঙ্গল প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওয়ান-ইলেভেনের সময় একটি দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় ২০০৮ সালের নির্বাচনে ব্যারিস্টার শাহাজাহান ওমর বীরউত্তম বিএনপি থেকে প্রার্থী হতে পারেননি। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত বজলুল হক হারুন জয়ী হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে (বিএনপি অংশ নেয়নি) তিনি জাতীয় পার্টির প্রার্থী নাসির উদ্দিনকে পরাজিত করেন।
তাই এখানেও হারান আসন পুন: উদ্ধার করতে চায় বিএনপি। অন্য দিকে হ্যাটট্রিক জয়ের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী।
বিশ্লেষকদের ধারণা ঝালকাঠি-২ আসনের তুলনায় ঝালকাঠি-১ আসনে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই হবে। তার কারন অনুসন্ধানে ভোটারদের সাথে আলাপ করে জানাগেছে, এখানকার দুই উপজেলার ১২ ইউনিয়নের সড়কগুলোর অবস্থা অত্যন্ত বেহাল। গত ১০ বছর এর বেশির ভাগ সড়কে তেমন কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এমনকি গুরুত্বপূর্ণ রাজাপুর-কাঁঠালিয়া সড়কটিরও বেহালা দসা। ভাঙা এ সড়কে গত দুই বছর ধরে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর ফলে যাত্রী ভোগান্তি চরমে। তাছাড়া আমুয়া সেতুসহ এই দুই উপজেলার কমপক্ষে পাঁচটি জনগুরুত্বপূর্ণ সেতু দীর্ঘ দিন ধরে ভেঙে পরেছে। যার ফলে এখানকার যাত্রীরা ভোগান্তি নিয়ে নৌকায় পারাপার হচ্ছে। ২০০৬ সাল পর্যন্ত এই দুই উপজেলার গ্রামীণ সড়ক ব্যবস্থার যে পরিমানের উন্নয়ন হয়েছে। বিগত ১০ বছরে সেরক উন্নয়ন হয়নি বলে দাবি এখানকার ভোটারদের।
এখানে বিএনপির হেবিওয়েট প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইচ চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীরউত্তম এর বিপরিতে লড়বেন আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুন।
ব্যারিস্টার শাহাজাহান ওমর বীরউত্তম বলেন,‘ গত ১০ বছরে রাজাপুর-কাঁঠালিয়ায় দৃশ্যমান কোন উন্নয়য়ন হয়নি। তার আগে আমি এমপি থাকা কালিন সময় এখানে যে উন্নয়ন করেছি তা এখানকার ভোটারদের মনে আছে। সুষ্ঠ নির্বাচন হয়ে আমি বিজয়ী হব।
বজললু হক হারুন বলেন,‘ বিগত দিনের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে ও শান্তিতে বসবাস করার লক্ষে এখানকার ভোটাররা আমাকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন।
ঝালকাঠি জেলার মোট আয়তন ৭৫৮.০৬ বর্গ কিলোমিটার। জেলার মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৬৬ হাজার ৮৫৭ জন। পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৩৫ হাজার ৯২ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৩১ হাজার ৭৩৫ জন।
রাজাপুর ও কাঠালিয়া উপজেলা নিয়ে সংসদীয় ১২৫ নং ঝালকাঠি-১ আসন। আসনটিতে ১২টি ইউনিয়নে ৯০ টি ভোট কেন্দ্রে রয়েছে। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৫৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৮৯ হাজার ২৬৯ জন এবং নারী ভোটার ৮৮ হাজার ৯৮৬ জন।
ঝালকাঠি জেলা সদর ও নলছিটি উপজেলা নিয়ে ঝালকাঠি-২ আসনে ২০ টি ইউনিয়ন। ১৪৭টি ভোট কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৮৮ হাজার ৬০২ জন। তারমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৪৫ হাজার ৮২৩ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৪২ হাজার ৭৭৯ জন।
ঝালকাঠি জেলার রিটার্নি কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক বলেন,‘ ভোট গ্রহনের সকল প্রস্তুতি ইতমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা সকল কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। নির্বাচনী সামগ্রীসহ ব্যালট পেপার আমাদের কাছে পৌঁছে গেছে। মোতায়েন করা হয়েছে বিপুল সংখ্যক নিরাপত্তাকর্মী।