নতুন বইয়ের সাথে নতুন পোশাক

কুষ্টিয়া, দেশের খবর

এস এম জামাল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 10:41:06

বছরের প্রথম দিন বই উৎসব শিক্ষার্থীদের কাছে ঈদের মতোই এক উৎসব। বই উৎসবকে কেন্দ্র করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়। নতুন বই হাতে পেয়ে উৎসবে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।

তবে বছরের প্রথম দিনে নতুন পোশাক পরে বই নিতে আসাটা ঈদের আনন্দের মতো হলেও অনেক শিক্ষার্থীর জন্যই সেটি অসম্ভব। গ্রামাঞ্চলে যেখানে দুবেলা ঠিকমতো পেটপুরে খেতেও পায় না, সেখানে নতুন পোশাক পরে নতুন বই নিতে আসাটা দু:সাহসিক স্বপ্নও বটে।

কিন্তু সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছেন কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল মারুফ।

বুধবার (২ জানুয়ারি) দুপুরে উপজেলার বাহিরচর ইউনিয়নের চরদামুকদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অন্তত ৫০ জন শিক্ষার্থীর মাঝে নতুন বইয়ের পাশাপাশি নতুন পোশাক তুলে দেন ইউএনও।

জানা যায়, বিদ্যালয়ের আশেপাশের এলাকাটি মূলত নিশিপাড়া (দাসপাড়া) ও হালদার (জেলে) পাড়া বলেই পরিচিত।

নিরক্ষর ও অবহেলিত পাড়ার ছেলেমেয়েদের নিয়ে পরিচালিত হয় বিদ্যালয়টি। যেখানে পরিবারে তাদের কোনো শিক্ষা নেই, নেই শিক্ষার গুরুত্ব বুঝার মানুষ। যার ফলে সেখানকার ছেলেমেয়েরা স্কুলে আসাটাকেই খুশি মনে করেন অভিভাবকরা।

ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল মারুফ বার্তা২৪কে বলেন, ‘গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে এই বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। পরিদর্শনে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দেখেছি তারা লেখাপড়াতেও ভালো। কিন্তু শত মলিন পোশাক আহত করেছিল আমাকে।’

‘সেই সময় আমি বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষককে অনুরোধ করেছিলাম, যাতে করে এসব শিক্ষার্থীদের সবাইকে নতুন পোশাক (স্কুল ড্রেস) দিতে পারি। তখন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জরিপ করে জানিয়েছিলেন, ৫০ জন ছাত্রছাত্রী কিছুতেই পোশাক তৈরি করতে পারবে না। তাই সেই ৫০ জনের জন্য নতুন পোশাক তৈরির ব্যবস্থা করেছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘কয়েকজনের সহযোগিতা নিয়ে আজকের এই সফল কাজটি করতে সক্ষম হয়েছি। পোশাক পেয়ে তাদের আনন্দ দেখে আমিও উচ্ছ্বসিত।’

পোশাক বিতরণের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে ইউএনও বলেন, ‘ছয় বছরের এক শিশু, স্কুলে আসা শুরু করেছেন। তার হাতে নতুন পোশাক দিয়ে বলা হলো, অন্য রুমে গিয়ে এখনই পরে আসো। সে উচ্ছ্বসিত হয়ে সেখানেই পুরাতনটি খুলে নতুনটি পরে আবেগে আপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেললো।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: আজির উদ্দিন বার্তা২৪কে বলেন, ‘নতুন পোশাক পেয়ে আনন্দে আত্মহারা। তাদের মধ্যে ঈদের আনন্দ বিরাজ করছিলো।’

বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম কচি বলেন, ‘এই প্রথম এই স্কুলে অভিভাবকরা এসেছেন। তারাও তাদের সন্তানদের আনন্দে সামিল হয়েছেন।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর