আবারো ঝুঁকিতে তিস্তা ব্যারাজ

লালমনিরহাট, দেশের খবর

নিয়াজ আহমেদ সিপন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, লালমনিরহাট | 2023-08-28 15:04:00

দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ওপর দিয়ে আবারো চলাচল শুরু করেছে পাথর বোঝাই ভারী যানবাহন। এতে করে আবারো ফাটল ধরতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এর আগেও ফাটল দেখা দেওয়ায় ২০১৪ সালের ২৫ নভেম্বর থেকে ব্যারাজের ওপর দিয়ে সব ধরনের ভারী যান চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু বর্তমানে ওই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ব্যারাজের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার ও পুলিশ সদস্যরা মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে মালবোঝাই ট্রাক পারাপারের সুযোগ করে দিয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

শনিবার (৫জানুয়ারি) বিকেল ৪টার দিকে দেখা গেছে বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে আসা পাথর বোঝাই ট্রাক পারাপারের দৃশ্য।

যদিও দিনের বেলা ট্রাক চলাচল কম করলেও সন্ধ্যা নামলেই ভারী যানবহন চলাচল বেড়ে যায়। আর এমন অবৈধ সুযোগের বিনিময়ে ট্রাকপ্রতি মোটা অংকের করে টাকা নেন পুলিশ ও আনসার সদস্যরা।'

পাউবো সূত্র জানান, ১৯৭৯ সালের ১২ ডিসেম্বর লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানী এলাকায় তিস্তা নদীর ওপর প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা সেচ প্রকল্প হিসেবে 'তিস্তা ব্যারেজ' নির্মাণ করা হয়। ১৯৯১ সালে মূল ব্যারেজের নির্মাণ কাজ শেষ হলেও ক্যানেলসহ অন্যান্য কাজ শেষ হয় ১৯৯৮ সালের জুন মাসে। এ অবস্থায় ২০০১ সালে তৎকালীন সরকার ব্যারেজের উপর দিয়ে ২০ টনের নিচে সব যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করে। সেই থেকে প্রতিবছর সরকার রাজস্ব আয় করত কোটি টাকার উপরে।

এ সুযোগে কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা টাকার বিনিময়ে ৩০/৩৫ টনের বেশি ওজনের ভারী যানবাহন চলাচলের সুবিধা দেয়। ফলে দিনদিন ব্যারেজ কয়কটি স্থানে ফাটল দেখা যায়। যদিও ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ দপ্তরের কর্মকর্তাদের ভাষায় তিস্তা ব্যারাজ পিলারে স্থাপিত গার্ডারের ওপর বসানো ডেকে ধরা পড়া এসব ফাটলকে ‘হেয়ার লাইন ক্রাক’ বলা হয়েছিল। এ জন্যই সরকার ২০১৪ সালের ২৫ নভেম্বর ব্যারাজের উপর দিয়ে ভারী যান চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে টোল আদায় বন্ধ করে ব্যারাজের উভয় গেটে মূল রাস্তার ৭ ফিট ৮ ইঞ্চি ফাঁকা রেখে লোহার পাইপ বসিয়ে রাস্তা সংকীর্ণ করা হয়।

সরকারি এ নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজগে পুনরায় ভারী যানবাহন চলাচল শুরু করেছে। হালকা যানবাহনের স্থানে চলাচল করছে পাথর বোঝাই ছোট থেকে মাঝারী ট্রাক। এ সুযোগে বুড়িমারী স্থলবন্দরের পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য বোঝাই ট্রাক। ফলে কমে আসছে লালমনিরহাট রংপুর মহাসড়কের তিস্তা সড়ক সেতুর টোল আদায়। একই কারণে কমে আসছে তিস্তা ব্যারাজের আয়ুস্কাল।

তিস্তা ব্যারাজের স্থানীয় মাঝি আকবর হোসেন বার্তা২৪‘কে জানান, যেভাবে যানবহন চলাচল শুরু করেছে আবারো ব্যারাজ ফেটে যেতে পারে। তেমনি ব্যারাজের সংযোগ সড়ক ফ্লাড বাইপাস সড়কও বড় বড় গর্তে পরিণত হয়েছে।

তিস্তা ব্যারাজের নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকা আনসার ক্যাম্পের ইনচার্জ আবু সাঈদ জানান, উৎকোচ দিয়ে নয়, লোহার পাইপের মাঝ দিয়ে যাওয়ার মত ছোট ছোট ট্রাক চলাচল করে। তবে লোহার পাইপ কারা কিভাবে ভেঙেছে তা তিনি জানেন না বলে জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিস্তা ব্যারাজ দোয়ানি পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ পরিদর্শক(এসআই) আফওয়াজুল ইসলাম বার্তা২৪’কে জানান, ব্যারাজে উৎকোচ নেয়া কারো কোনো সুযোগ নেই। পাউবো'র অনুমোদন অনুযায়ী ছোট ছোট যানবাহনগুলো চলাচল করে। তবে পাথরের ট্রাক চলাচলের কোনো সুযোগ নেই বলেও দাবি করেন তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর