১৪ খুঁটির ওপর ছোট ছোট ৪টি বাঁশ পাতানো প্রায় ৬০ ফুট লম্বা সাঁকোটি বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। চলাচলে যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। রয়েছে জীবনের ঝুঁকিও।
এদিকে, এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। এতে ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এই সাঁকোটি লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগরের চর মার্টিন ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বলিরপুল বাজার সংলগ্ন বাত্তিরখালের ওপর দেখা যায়। প্রায় ৪৭ বছর ধরে এই এলাকার মানুষ বাঁশ ও সুপারি গাছ কেটে সাঁকো নির্মাণ করে খাল পারাপার হচ্ছেন। এর নাম দেওয়া হয় কাজীর দরজার সাঁকো। তবে এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ স্থানীয়দের প্রাণের দাবি।
জানা গেছে, এই সাঁকোটি দিয়ে মতিরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও তোরাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়সহ প্রায় ৭টি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষার্থী চলাফেরা করে। ঝুঁকি নিয়েই প্রতিনিয়ত তাদের বিদ্যালয়ে যেতে হয়। বেশ কয়েকবার পানিতে পড়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীর বইখাতা ভিজে যায়। খালের উত্তর পাশে মসজিদ হওয়ায় নামাজ পড়তে যাওয়া-আসায় বয়স্কদের বিপাকে পড়তে হয়। দিনের বেলা তারা সাঁকো পার হলেও রাতে সাহস করেন না।
এই সাঁকোটি উপজেলার হাজিরহাট, তালতলি, নাছিরগন্জ, চৌধুরীবাজার, চরলরেন্স, মতিরহাট, মুন্সিরহাট ও তোরাবগন্জসহ জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা। উপজেলা ও জেলা শহরে যাতায়াতের অন্য কোন মাধ্যম না থাকায় এই এলাকার মানুষের এটিই একমাত্র ভরসা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই স্থানে প্রায় ৬০ ফুট লম্বা ব্রিজ নির্মাণ করা দরকার। কিন্তু বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৪০ ফুটের। বরাদ্দ অনুযায়ী কাজের পরিধি বেশি। ৪০ ফুট ব্রিজ করলে খালে জোয়ার-ভাটার স্রোতে দু'পাশের মাটি সরে যাবে। এতে ব্রিজ নির্মাণ করলেও পরবর্তীতে তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।
স্থানীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, স্বাধীনতার পর থেকে বাঁশ-সুপারি গাছ দিয়ে সাঁকো নির্মাণ করে তারা খাল পারাপার হচ্ছেন। ওই একটি সাঁকো দিয়ে আশপাশের কয়েক হাজার গ্রামবাসীকে চলাচল করতে হয়। এটি এখন খুবই বিপজ্জনক। খালে পানির স্রোতের দাপটে মাঝে মাঝে সাঁকোর খুঁটিগুলো সরে যায়। কয়েকবার ভেঙেও গেছে। এরপরেও বাঁশ-কাঠ-সুপারি গাছ কেটে এনে সাঁকোটি চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে শিশু, বৃদ্ধসহ নানা বয়সী নারী-পুরুষকে। এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রাণের দাবী।
জেলার এ অঞ্চলের মানুষ কৃষি নির্ভরশীল। এখানে সয়াবিন, বাদাম ও শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ধরণের কৃষি ফসল উৎপাদন হয়। সাঁকোটি ব্যবহার করে তাদের পক্ষে সেসব ফসল সঠিক সময়ে বাজারে উঠানো সম্ভব হয় না। প্রায়ই উৎপাদিত ফসল নিয়ে কৃষকদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। পরে কম দামে ফসল বিক্রি করতে হয়।
এছাড়া যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে শাক-সবজিসহ বিভিন্ন কৃষি পণ্য কিনতে উপজেলা ও জেলা শহর থেকে আসা আড়তদারদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এই জন্য ফসলের ভালো দাম পাননা কৃষকরা।
জানতে চাইলে ৬০ বছর বয়সী আলী হোসেন বলেন, সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে আমার খুব কষ্ট হয়। প্রায়ই মনে হয় পড়ে যাচ্ছি। কয়েকবার পড়েও গেছি। ভয়ে মাঝে মাঝে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে পারি না। রাতের বেলা যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ হলে সবার জন্য ভালো হতো।
কৃষক কামরুজ্জামান বলেন, সাঁকো থেকে পড়ে আমার ছেলের হাত ভেঙে গেছে। এতে আমার প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। একটি ব্রিজ নির্মাণের ফলে চলাফেরাসহ স্থানীয় কৃষকদের জন্য উপকার হতো। কৃষকরাও তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পেতো।
তিনি আরও বলেন, শুনেছি, এখানে ব্রিজ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে কি কারণে এখনো কাজ শুরু হচ্ছে না, তা জানি না। বর্ষা আসলে সাঁকোটিতে চলাচল বিপজ্জনক হয়ে পড়ে। এজন্য দ্রুত ব্রিজের কাজ শুরু হলে স্থানীয়ের মাঝে স্বস্তি আসবে।
চরমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউছুপ আলী বলেন, বাত্তির খালের ওপর একটি ব্রিজ নির্মাণ খুবই জরুরি। শুনেছি ইতোমধ্যে একটি ব্রিজের বরাদ্দও দেওয়া হয়েছে। তবে কাজ শুরু হচ্ছে না কেন, তা জানি না।
কমলনগর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) বরাত দিয়ে অফিস সহায়ক আবদুল বারেক জানান, ওই স্থানে ৪০ ফুটের একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। এতে প্রায় ৩২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু হঠাৎ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজে অপরাগতা প্রকাশ করে দরখাস্ত দেন। এই জন্য কাজটি শুরু করা হয়নি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।