ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের আশুগঞ্জে স্থগিত হওয়া তিনটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া ভোট দিতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে ভোটাররা। তাই ভোট দিতে না পেরে অনেকেই ফেরত গিয়েছেন বলে জানা গেছে। বিষয়টি স্বীকার করে যাত্রাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তনিমা আফ্রাদ বলেছেন কিছুক্ষণ সময় এই নির্দেশনা থাকলেও পরে আবার স্বাভাবিক নিয়মেই ভোট গ্রহণ চলছে। অন্যদিকে এই কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সামসুজ্জামান জানান এটাই নিয়ম।
সরেজমিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের যাত্রাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে জানা যায়, অনিয়ম ও সংঘর্ষের কারণে স্থগিত হয় আশুগঞ্জের বাহাদুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, যাত্রাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সোহাগপুর দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই তিনটি কেন্দ্রে পুন:ভোটগ্রহণ শুরু হয় বুধবার সকাল ৮টা থেকে। ভোটগ্রহণের শুরু থেকেই যাত্রাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। কিন্তু সেখানে বেঁধে দেওয়া হয় নতুন নিয়ম। জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া কউকেই ভোট দিতে দেওয়া হচ্ছে না। ভোটাররা বিষয়টি নিয়ে কথা বললেও তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র আনার জন্য। অনেকেই জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে ফেলার কারণে ও নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে ভোট দিতে পারেননি। আবার অনেকেই বাড়িতে গিয়ে আবারো জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে এসে ভোট দিতে পেরেছেন।
এই কেন্দ্রের ১ নং বুথে ভোট দিতে আসা খুরশিদ আলম জানান, আমার ভোটার নং ১৬১ বলার পরেও ভোটের লাইন থেকে আমাকে বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে আসার জন্য। আমি বাড়িতে গিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র আনার পর আমার ভোট দিতে পেরেছি।
আরেক ভোটার রতন মিয়া জানান, আমিও ভোট দিতে এসে আবারো বাড়িতে ফেরত গিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে এসেছি ভোট দেয়ার জন্য।
যাত্রাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ১ নং বুধের পোলিং অফিসার কবির হোসেন সরকার ও মিজানুর রহমান জানান, নিবাহী ম্যাজিস্ট্রেট তনিমা আফ্রাদ ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সামসুজ্জামান আমাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে ভোট দেয়ার জন্য।
এসব বিষয়ে কথা হয় এই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মঈনুল ইসলাম ভূইয়া জানান, আমরা এমনভাবে কাউকে ফেরত যেতে বলেনি। তবে ছবির সাথে মিল রেখে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারছেন সকলেই।
এই কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তনিমা আফ্রাদ বিষয়টি স্বীকার করে জানান, কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা সকাল থেকেই ভোটারদের জাতীয় পরিচয়পত্রসহ ভোট দিতে বলি কিছুক্ষণ পরে আবারো ভোটারদের স্বাভাবিক নিয়মে ভোট দিতে দেয়া হয়েছে।
যাত্রাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সামসুজ্জামান জানান, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ সকলেই ভোট দিবে এটাই নিয়ম। আর এর বাইরে কিছু বলা যাবে না।
প্রসঙ্গত, আশুগঞ্জ উপজেলার বাহারদুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, যাত্রাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সোহাগপুর দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে (৩০ ডিসেম্বর) মারামারি ও কেন্দ্র বন্ধ থাকার কারণে (১ জানুয়ারি) নির্বাচন কমিশন থেকে কেন্দ্রগুলোতে পুন:ভোটের জন্য (৯ জানুয়ারি) সময় বেঁধে দেয়া হয়। সেই অনুযায়ী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা রিটার্নি অফিসারের কার্য্যালয় থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সেই অনুযায়ী (৯ জানুয়ারি) বুধবার সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত একটানা চলবে ভোট গ্রহণ। এই তিন কেন্দ্রে ২০টি বুথে ভোট গ্রহণ হবে। উপজেলার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৩জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, ২০ জন সহাকারি প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও ৪০জন পোলিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। তিনটি কেন্দ্রে মোট ভোটার ১০ হাজার ৫৭৪ ভোট।