ইনসেটের ছবিটি এখন হতদরিদ্র মা, বাবা আর ভাই বোন ও আত্মীয় স্বজনের কাছে শুধু স্মৃতি। স্মৃতিময় এ ছবির ছেলেটি ভাই-বোনদের মধ্যে সবার ছোট। এ জন্য সে ছিল সবারই আদরের। মা বাবা ভাই বোনের ভালবাসা কখনও কমতি ছিলো না। তবে অভাবের তাড়নায় ওই ছেলেটি গিয়েছিল ঢাকায়। চাকরি নিয়েছিল সাভারের একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে। পরিবারের সবারই ভরসা ছিল ছোট এ ভাইটির প্রতি।
মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) বিকালে ঢাকার সাভারে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন বৈষম্য নিয়ে চলে আন্দোলন। এ সময় ঢাকা আরিচা মহাসড়কে সাভারের ওলাইল এলাকায় ঘটে পুলিশের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ। ওই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় গার্মেন্টস শ্রমিক সুমন মিয়া (২২)। সুমনের বাড়ি শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার কলাকান্দা গ্রামের আমির আলী ও ফিরোজা বেগমের ছেলে। সুমনের মৃত্যুর খবর পেয়ে বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। সুমনের লাশ ঢাকা থেকে বাড়িতে এনে দাফনের প্রস্তুতি চলছে বলে তার পরিবার সূত্র জানায়।
সুমনের পরিবার জানায়, তার বাবা আমির আলী ঢাকায় একটি বিস্কুট ফ্যাক্টরিতে শ্রমিকের কাজ করে। তার মা ফিরোজা বেগম গৃহিনী। তারা ২ ভাই, ৩ বোন। এর মধ্যে সুমন সবার ছোট। প্রায় ২ বছর যাবত ঢাকার সাভারের আনলীমা অ্যাপারেলস পোশাক কারখানার ফিনিশিং সেকশনে কাজ করতো সে। বিয়ে করেছে বরিশালের তানিয়া নামে এক মেয়েকে। তার স্ত্রী তানিয়াও চাকরি করতো একই গার্মেন্টসে।
সুমনের মা ফিরোজা বেগম বলেন, ‘সুমন মাসে মাসে ট্যাহা পাঠাতো। ওই ট্যাহা দিয়ে আমগোর সংসার চলতো। ২ দিন আগেও ফোন করে বলেছে, মা আমি তোমার আর বড় আপার জন্যে কাপড় নিয়ে আসবো। তোমরা আমার লাইগা দোয়া করো। ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করো। অহন সুমন আর আমারে মা কইয়া ডাকবো না। এ ব্যথা ক্যামনে সইমো? ক্যামনে চলবে সংসার?’- এ কথা বলেই আহাজারিতে ভেঙে পড়েন হতভাগ্য মা ফিরোজা বেগম। পাশে কান্নায় ভেঙে পড়ছে তার বড় বোন আর ভাগনিরা। পরিবারে সবার প্রিয় এ ছেলেটির মৃত্যুতে হতদরিদ্র পরিবারটি এখন দিশেহারা।