গমের ব্লাস্ট প্রতিরোধ এখন চাষিদের হাতে

মেহেরপুর, দেশের খবর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, মেহেরপুর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 14:01:59

গমের ভয়াবহ ব্লাস্টের ফলে মেহেরপুরসহ দক্ষিণের ৮টি জেলায় গত তিন বছর ধরে গম আবাদের ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষকরা। ব্লাস্ট প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার পাশাপাশি ব্লাস্ট প্রতিরোধী বারি গম-৩৩ নামের একটি জাত উদ্ভাবন করেছেন কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। নতুন এই জাতের বীজ চাষিদের কাছে পৌঁছাতে সময় লাগবে আরও কয়েক বছর।

কিন্তু বিদ্যমান যে জাতগুলো রয়েছে এগুলোতে ব্লাস্ট প্রতিরোধ করা কঠিন কিছু নয়। চাষিদের একটু সচেতনতাই ব্লাস্ট প্রতিরোধ করবে বলে মতামত দিলেন গম গবেষণায় কর্মরত বিজ্ঞানীরা।

রোববার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর প্রশিক্ষণ কক্ষে গমের ব্লাস্ট রোগ ও তার দমন ব্যবস্থাপনা শীর্ষক প্রশিক্ষণে চাষিদের পরামর্শ প্রদান করেন বাংলাদেশ ভুট্টা ও গম গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা।

অনুষ্ঠানে প্রধান প্রশিক্ষক হিসেবে গমের বিদ্যমান জাত, ব্লাস্ট ও তার প্রতিকার এবং ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাত সম্পর্কে চাষিদের প্রশিক্ষণ প্রদান করেন বাংলাদেশ ভুট্টা ও গম গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পরিতোষ কুমার মালাকার।

তিনি বলেন, '২০১৬ সালে এই মেহেরপুর জেলায় প্রথম গমের ব্লাস্ট রোগ ধরা পড়ে। ২০১৮ সাল পর্যন্তও গমে ব্লাস্ট দেখা দেছে। তিনটি মৌসুমে আমরা এখান থেকে রোগাক্রান্ত গমের স্যাম্পল নিয়ে তা প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রতিকার ব্যবস্থা করেছি। এখন প্রতিকার ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা চাষিদের হাতে। গমের রোগমুক্ত ভালো বীজ সংরক্ষণ ও বপনের আগে বীজ শোধন করতে হবে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে (১৫ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর) বপন করতে হবে গম বীজ। শীষ বের হওয়ার সময় একবার এবং শীষ বের হওয়ার ১০/১২ দিন পরে আরেকবার নাটিভো অথবা এমিস্ট্রার টপ স্প্রে করলে ব্লাস্ট প্রতিরোধ করা সম্ভব।'

তিনি আরও বলেন, 'এ ছাড়াও বারি গম-৩০ হচ্ছে স্বল্পমাত্রার ব্লাস্ট প্রতিরোধী এবং বারি গম-৩৩ হচ্ছে উচ্চ মাত্রার ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাত। এই দুটি জাত ছাড়াও ব্লাস্ট প্রতিরোধী এবং উচ্চ ফলনশীল আরও কয়েকটি জাত উদ্ভাবন পর্যায়ে রয়েছে। গবেষক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মীসহ মাঠ পর্যায়ে আমরা কাজ করে ব্লাস্ট প্রতিরোধে সফলতা পেয়েছি। এখন যদি চাষিরা কয়েকটি বিষয় মেনে চলেন তাহলে ব্লাস্ট আতঙ্ক আর থাকবে না।'

এছাড়াও প্রজেক্টর প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে ব্লাস্ট ও গমের নতুন জাত নিয়ে কাজ করার বিভিন্ন চিত্র ও তথ্য উপাত্ত দিয়ে চাষিদের প্রয়োজনীয় ধারনা দেন গম বিজ্ঞানী পরিতোষ কুমার মালাকার। প্রশিক্ষণে এলাকার শতাধিক গম চাষি অংশগ্রহণ করেন।

প্রশিক্ষণ উদ্বোধন করেন মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক ড. আখতারুজ্জামান। বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা স্বপন কুমার খাঁ। বাংলাদেশ গম গবেষণা কেন্দ্র দিনাজপুর ও কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় এ প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়।

প্রসঙ্গত, ১৯৮৫ সালে ব্রাজিলেই প্রথমবারের মতো গমক্ষেত ব্লাস্ট ছত্রাকে আক্রান্ত হয়। পরবর্তীতে এটি ছড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র ও লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে। তবে ওই দেশগুলোয় প্রয়োজনীয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকায় ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পান কৃষকরা। ২০১৬ সালে মেহেরপুর জেলায় প্রথম গমের ব্লাস্ট ধরা পড়ে। গমের শীষের মাঝামাঝি থেকে শাদা হয়ে শুকিয়ে ফলন বিপর্যয় ঘটে।

খবর পেয়ে দেশীয় বিজ্ঞানী ও আন্তর্জাতিক ভুট্টা ও গম গবেষণা কেন্দ্রের (সিমিট) বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন। এর পরের দুই বছর গম আবাদে নিরুৎসাহিত করা হয় আক্রান্ত এলাকাগুলোতে। গত বছর থেকে ব্লাস্ট আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি অনেকাংশে কমেছে। চলতি মৌসুমে মেহেরপুর জেলায় ব্যাপকভাবে গমের আবাদ হয়েছে। ৭ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে গম আবাদ করা হয়েছে বলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, 'গমের ব্লাস্ট প্রতিরোধে চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। অনেক মাঠে গমের শীষ বের হচ্ছে। এখন প্রয়োজনীয় স্প্রে নিশ্চিত করতে মাঠে কাজ করছেন আমাদের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা।'

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর