অবাধে উজাড় হচ্ছে টেংরাগিরি বনের সুন্দরী গাছ

বরগুনা, দেশের খবর

ইমরান হোসেন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 14:22:32

সমুদ্র উপকূলের বনগুলোতে বনদস্যুদের একমাত্র লক্ষ্য সুন্দরী গাছ সংগ্রহ করা। বরগুনার টেংরাগিরি সংরক্ষিত বন থেকেও তাই তারা অবাধে সুন্দরী গাছ কাটছেন। কেউই বাঁধা দিচ্ছেন না।

জানা গেছে, মূল্য বেশি ও চাহিদা থাকায় বনদস্যুরা শুধু সুন্দরী গাছই কাটছে। এক্ষেত্রে বড় বা ছোট গাছ বিবেচনা করা হচ্ছে না। তবে বনদস্যুরা বলছে, বন বিভাগের অনুমতি নিয়েই তারা গাছ কাটছেন। আর সচেতন নাগরিকরা বলছেন, শিগগিরই বন উজাড় বন্ধ না হলে সবাইকে চরম মূল্য দিতে হবে।

বরগুনার তালতলী উপজেলার টেংরাগিরি সংরক্ষিত বনের গভীরে সুন্দরী গাছ কাটা হচ্ছে- এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বনের প্রবেশ পথে তাদের বাঁধা দেন একজন বনরক্ষী। কিন্তু কয়েকজন সাংবাদিক কৌশলে বনের ভেতর প্রবেশ করতে পারেন। বনের ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা যায়- প্রক্যাশ্যেই সুন্দরী গাছ কেটে ট্রলার বোঝাই করেছেন ৬ জন। তবে বনের যত গভীরে যাওয়া যায় গাছ কাটার নির্মমতাও তত বোঝা সম্ভব হবে। বনের ভেতর গেওয়া, পশুর, কেওড়াসহ বিভিন্ন গাছ অক্ষত অবস্থায় থাকলেও নেই সুন্দরি গাছ। আছে শুধু সদ্য কাটা গাছের গুড়ি।

কথা বলতে চাইলে বনদস্যু মো. কিবরিয়া (৪০), মো. সগির (৪৪), নাযির সোহেল (২৮), হালিম দফাদার (৫৬) জানান, তারা বন বিভাগকে ম্যানেজ করে প্রকাশ্যেই গাছ কাটছেন।

তবে বন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বনরক্ষীরা জানান, তারা শুধু পাহারার দায়িত্বে। সুতরাং কে বা কারা বনের ভেতর গাছ কাটছে এটা তাদের জানা নেই। তারা শুধু কুয়াকাটা থেকে আসা পর্যটকদের টিকিট কাটার দায়িত্ব পালন করছেন।

এসময় তাদের নাম জানতে চাইলে তারা নাম বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে কথা বলতে তালতলী বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি।

এদিকে, বন বিভাগের এমন কার্যক্রমে হতাশা প্রকাশ করেছেন বরগুনার সচেতন মহল। তাদের দাবি, বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ব্যবস্থা না নিলে শিগগিরই বন বিলীন হয়ে যাবে।

বরগুনা সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি আব্দুর রব ফকির বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা সুন্দরী গাছ বিক্রির সাথে সরাসরি জড়িত। আর তাদের সহযোগিতা করছে বনরক্ষীরা। তারা যুগের পর যুগ এমনটা করে আসছে। দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করেও কোনো প্রতিকার মেলেনি।’

এ বিষয়ে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হাফিজ বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘অল্প টাকার বিনিমেয়ে বন বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পরিবেশ ও দেশের বড় ক্ষতি করছে। অন্যান্য গাছের তুলনায় সুন্দরি গাছের দাম বেশি হওয়ায় দস্যুরা শুধু সুন্দরি গাছ কাটছে। অচিরেই কাটা বন্ধ না হলে হুমকির মুখে পড়বে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল।’

বরগুনা জেলা প্রশাসক কবির মাহমুদ বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘আমি কিছুদিন হলো কাজে যোগ দিয়েছি। তবে বিষয়টি জেনে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর