এমআরপির নামে ওষুধের ফার্মেসিতে নৈরাজ্য

কুষ্টিয়া, দেশের খবর

এস এম জামাল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, কুষ্টিয়া, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 23:13:15

কুষ্টিয়ায় ওষুধের বাজার এখন সিন্ডিকেটের দখলে। জেলা ড্রাগিস্ট অ্যান্ড কেমিস্ট সমিতির কতিপয় শীর্ষ নেতাদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ বিরাজ করছে জনমনে। সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের (এমআরপি) নামে ওষুধের বাজারে নৈরাজ্যকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

ওষুধ বিক্রির প্রতিষ্ঠান ফার্মেসি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান প্রতিনিয়ত ভঙ্গ করছে লাইসেন্সের শর্ত। বিক্রি করছে বে-আইনি ওষুধ। কিছু ওষুধ নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণের বিধিবদ্ধ নিয়ম থাকলেও সে ব্যবস্থা নেই অনেক ফার্মেসিতে।

জানা গেছে, জেলা শহরের অলিগলি এবং বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের বেশিরভাগ ফার্মেসিরই কোনো লাইসেন্স নেই। ফলে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ফার্মেসিগুলোর অধিকাংশই বিক্রি করছে ভেজাল, মেয়াদোত্তীর্ণ, নকল, অনুমোদনহীন ওষুধ।

অথচ ওষুধ বিক্রি এক সময় ‘অভিজাত ব্যবসা’ হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও এখন তা নেই বললেই চলে। ভোক্তাদের প্রয়োজন আর চাহিদা বুঝে ফার্মেসি মালিকদের অনেকে প্রায় নিয়মিতই ওষুধের অযৌক্তিক দাম আদায় করছে।

বিশেষ করে মৌসুমি অসুখে ওষুধের চাহিদা থাকায় দাম নেয়া হয় বেশি। এছাড়া হৃদরোগ, ক্যানসার সহ জটিল শারীরিক সমস্যায় ব্যবহৃত বিদেশি উচ্চমূল্যের ওষুধের দাম নেয়া হচ্ছে ইচ্ছে মতো।

অ্যাজমার ইনহেলারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বেশি দাম রাখা হয়। এদিকে কোম্পানিগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে ওষুধ বিপণন এখন ‘মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ’ নির্ভর হয়ে পড়েছে।

মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভরা দোকানিকে বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ করে নিজেদের ওষুধ বাজারজাত করতে তৎপর থাকে। এমনকি বাকিতে ওষুধ দিয়ে পরে টাকা পরিশোধের সুযোগ দিচ্ছে তারা।

ওষুধ প্রশাসনে জনবল সংকটের কারণে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী দিনের পর দিন চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ, ভেজাল ও নাম সর্বস্ব ঔষধ কেনা-বেচা। অনেক ক্ষেত্রে ফুড সাপ্লিমেন্ট বিক্রি করেও জনসাধারণের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে দেদারছে।

কালাম নামের এক ক্রেতা বার্তা২৪.কমকে জানান, আগে আলসারের ওষুধ সেকলো অথবা লোসেকটিল ২০এমজি প্রতি পাতার (১০টি ক্যাপসুল) দাম ৫০ টাকা থাকলেও দোকানি দাম নিত ৪৫ টাকা। আর এখন ৫০ টাকাই নিচ্ছে।

কালামের মতো ওষুধ কিনতে আসা রাজিবুল সোহানুর রহমান বার্তা২৪.কমকে জানান, আগে ওষুধ কিনতে গেলে মোট মূল্যের উপর ১০ শতাংশ কম রাখত। কিন্তু এখন ওষুধ কিনতে গেলে এমআরপি হিসেবেই দাম নেয়া হচ্ছে।

শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এস এম কাদেরী শাকিল বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমি ওপেন হার্ট সার্জারির রোগী। প্রতি মাসে ২ হাজার ৬শ টাকার ওষুধ প্রয়োজন হয়। আগে ওষুধ কিনতে গেলে অন্তত ৩-৪শ টাকা কম রাখত দোকানিরা। কিন্তু এখন আর সেটা পাওয়া যায়না। এটা অমানবিক। ওষুধের দোকানিরা এমআরপি থেকে ৪০% পর্যন্ত কমিশন পেয়ে থাকে। তবুও ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়।’

মিরপুর বাজারের হাজী ফার্মেসির মালিক আলম মণ্ডল বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমরা আগের মতো চাইলেই দাম কম রাখতে পারি না। কারণ কোনো রকমে সমিতির নেতারা যদি জানতে পারে ওষুধের দাম কম নিয়েছি, তাহলে তারা আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

কুষ্টিয়া জেলা কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সভাপতি হাজী রফিকুল আলম টুকু বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। আমাদের আওতাভুক্ত কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন উপজেলার ওষুধের দোকানগুলোতে এমআরপি বাস্তবায়নের কাজ করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘একটা লুঙ্গির উপর রেট লেখা থাকে ৫শ টাকা। অথচ সেটি বিক্রি হচ্ছে ২শ টাকা। কিন্তু ওষুধের ব্যবসাটা সেরকম না। তাই এমআরপি বাস্তবায়নে আমরা বদ্ধপরিকর। আমরা সবাই (ওষুধের দোকানি) রুটি-রুজির জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি মাত্র।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর