প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার পাশাপাশি নিরাপদ প্রসব কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে পল্লী অঞ্চলে অবস্থিত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো (সিসি)।
প্রয়োজনীয় পরামর্শ, চেকআপ করাসহ প্রতি মাসে মাসে সিসিতে গিয়ে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের (সিএইচসিপি) সহযোগিতা নিচ্ছেন গর্ভবতী মায়েরা। শুধু নিরাপদ প্রসব নয় ২৬ প্রকারের ওষুধ প্রদান করা হচ্ছে রোগীদের।
নীলফামারী জেলার ১৯২টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ১৬ টি তে নিরাপদ প্রসব কেন্দ্র হিসেবে পুরোদমে শুরু হয়েছে গর্ভবতী মায়েদের সন্তান প্রসব।
জলঢাকার বালাগ্রাম ইউনিয়নের পূর্ব বালাগ্রাম কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি খালেদা বেগম জানায়, স্বাস্থ্য বিভাগের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণের ফলে দক্ষতার সাথে মায়েদের সেবা কার্যক্রম দেয়া হয়। গর্ভবতী মায়েদের জন্য খোঁজ খবর রাখার জন্য মোবাইল ফোন নম্বর খাতায় লিখে রাখা হয়েছে। কোনো মাসে যদি না আসেন তাহলে ফোন করে খোঁজ খবর নেওয়া হয়।
ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা শারমিন আক্তার জানান, আমি প্রতি মাসে মাসে ক্লিনিকে গিয়ে আপার সাথে পরামর্শ করে আসি। চেকআপ করা, খাদ্যগ্রহণসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন আপা।
বালাগ্রাম ইউনিয়নের ছকিনিয়া মাদ্রাসা পাড়ার লাইজু বেগম বেগম জানান, গর্ভবতী হওয়ার পর থেকেই আমি ক্লিনিকে নিয়মিত আসা যাওয়ার মাধ্যমে সেবা গ্রহণ করি। সেখানেই আমার সন্তান প্রসব হয়। এখন আমি ও আমার সন্তান ভালো রয়েছে।
নীলফামারী সদর উপজেলার কচুকাটা ইউনিয়নের দুহুলী কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি স্বপ্না রানী রায় জানান, আমার ক্লিনিকে ২০১৪ সাল থেকে নিরাপদ প্রসব কেন্দ্র হিসেবে চালু হয়। প্রতি মাসেই ডেলিভারি হয়ে থাকে এখানে। প্রয়োজনীয় পরামর্শ এবং সচেতনতা সৃষ্টির ফলে গ্রামের কেউ আর বাড়িতে সন্তান প্রসব করান না। প্রসব বেদনা শুরু হলেই ক্লিনিকে নিয়ে আসেন গর্ভবতী মাকে।
সদর উপজেলার কচুকাটা এলাকার জাহানারা বেগম বলেন, 'আগোত বাড়িতে বাড়িতে ছাওয়াল প্রসব করা হইছোলো। এখন আর কাহো ঝুঁকি নেয় না। সমস্যা হলে ক্লিনিকে যায়। ওটে ভালোয় চিকিৎসা পাওয়া যায়, এমনকি ওষুধও দেন ডাক্তার আপা।'
সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, সিসি গুলোতে প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রদান, প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে সিএইচসিপিদের। পাশাপাশি সহযোগিতা করছে বেসরকারি সংস্থা ল্যাম্ব। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা বাড়িতে প্রসবের ঝুঁকির বিষয়ে মানুষজনকে মাঠ পর্যায়ে অবহিত করছেন। বাড়িতে প্রসব শূন্যের কোটায় নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে।
নীলফামারী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন বার্তা২৪কে বলেন, '১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামীলীগ সরকার কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করলে ও ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দেয়। এর ফলে গ্রামের মানুষদের চিকিৎসা সেবা হুমকির মুখে পড়ে। গ্রামের মানুষের সেবা নিশ্চিত কল্পে আবারও সিসিগুলো চালু করেন শেখ হাসিনার সরকার।'
তিনি আরও বলেন,'বাড়িতে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে প্রসব না করে কমিউনিটি ক্লিনিকে নিরাপদ প্রসব সেবাদান বঙ্গবন্ধু তনয়ার যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। ফলে শিশুমৃত্যুর হার কমে এসেছে।'