হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও ‘ভাড়ানি খাল’ অবৈধ দখলে!

বরগুনা, দেশের খবর

  ইমরান হোসেন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট,বরগুনা | 2023-08-11 08:22:40

দক্ষিণ বাংলার যোগাযোগ ও পণ্য পরিবহনে একদা গুরুত্বপূর্ণ নৌ-পথ ‘ভাড়ানি খাল’ এখন ভোগান্তির অন্য নাম। দখল, দূষণ, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব এবং প্রশাসনের উদাসীনতায় নিশ্চিহ্নের পথে বরগুনার ঐতিহ্যবাহী জল-যোগাযোগ রুটটি। ‘ভাড়ানি খাল’ দখল ও দূষণ মুক্ত করতে আন্দোলন হয়েছে একাধিকবার। কিন্তু সামাজিক আন্দোলনের সঙ্গে প্রশাসনের সহযোগিতা না থাকায় কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

বার বার ‘ভাড়ানি খাল’ দখল ও দূষণ মুক্ত করে নৌ-পথটিকে বাঁচাতে জোরালো জনদাবি উঠেছে। এমন কি, গত ৭ জানুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জালিল সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ খালটির অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ৩০ দিনের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। তারপরেও উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হয়নি। হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও বরগুনার ‘ভাড়ানি খাল’ অবৈধ দখলদারদের কবলে! 

বরগুনার সব কটি উপজেলা ও পার্শবর্তী পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলাসহ কয়েকটি জেলা থেকে বিভিন্ন পণ্য নিয়ে বরগুনার খাকদোন নদী থেকে নানা ধরনের নৌযান খুব সহজে পায়রা নদীতে বের হয় বলে এই খালটির নাম ‘ভাড়ানি খাল’। নদীবহুল বৃহত্তর বরিশালের যোগাযোগের অন্যতম সংযোগ সূত্র এই খালটি প্রকৃতির এক অমূল্য সম্পদ। মানুষ ও পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে আর্শীবাদ স্বরূপ খালটির এখন চলছে চরম দুর্দিন।

নৌযান চালকদের সাথে কথা বললে জানা যায়, খালটি দখল ও ময়লা আবর্জনায় ভরে যাওয়ায় বর্তমানে পণ্য ভর্তি নৌযান আটকে থাকছে প্রতিদিন। এরপর ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষায় থাকতে হয় জোয়ারের। আগে মাত্র ২ থেকে ৩ ঘন্টার পথ এখন অতিক্রম করতে হয় এক থেকে দেড় দিনে। জলপথকে মুক্ত রাখার বদলে নানা অসাধুচক্র তা দখল করছে। এতে সৃষ্টি হচ্ছে জলযোগাযোগের নানা সমস্যা ও বিড়ম্বনা।

নৌযান চালকরা আরও জানান, বাঁশ-খুটি আর সিমেন্টের পাইল বশিয়ে খালটির মাঝ পর্যন্ত দখলে নেয়ায় একদিকে কমছে খালটির প্রস্থ, অন্যদিকে বাঁধা প্রাপ্ত হচ্ছে খালটির পানি প্রবাহ। ফলে খালটিতে পলি ও ময়লা জমে ভরাট হচ্ছে দিন দিন। আর পৌর শহরের বর্জ্য নির্দিষ্ট ডাস্টবিন বা ভাগারে নয় ফেলা হচ্ছে এই খালে। খালটি যেন উন্মুক্ত ময়লার পাহাড়। এতেও ভরাটের সাথে সাথে দুষিত হচ্ছে খালটির পানি।

নৌযান চালক সোহাগ মোল্লা, নাসির গাজী, ইসাহাক হাওলাদারসহ একাধিক চালক অভিযোগ করে বলেন, রাস্তার পাশের দোকানীরা খাল ভরাট করে থাকছেন পরিবার নিয়ে। তাই এক সময়ের গুরুত্বপূর্ণ খালটি এখন সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে। দিনে দিনে খাবলে খাওয়া হচ্ছে খালটিকে। আর বাড়ছে চলাচলের ভোগান্তি।

নৌযান চালক ইকবাল মাঝি বলেন, পার্শ্ববর্তী সবকটি জেলায় যোগাযোগের সহজ মাধ্যম এ খালটি। তবে দখলদারদের কবলে পড়ে খালটি এখন বিলুপ্ত প্রায়। বেশিরভাগ সময় নৌযান আটকে যাচ্ছে পণ্য নিয়ে।

নদী ও খাল দখল ও দূষণ রোধে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসা নদী পরিব্রাজক কমিটির সভাপতি সোহেল হাফিজ বলেন, প্রশাসনের উদাসীনতার কারণে দখল মুক্ত হচ্ছে না খালটি। তাই নদী পথে চলাচলের এ খালটি দিয়ে এখন পণ্য আসা-যাওয়া কমে গেছে অনেক। ফলে অতিরিক্ত চাপ পড়ছে সড়ক পথে। সড়ক পথে দূর্ঘটনাও বাড়ছে দিন দিন।

ভাড়ানি খালের ব্যাপারে সামাজিক আন্দোলনের নেতা মুশফিক আরিফ বলেন, কিছু প্রভাবশালী খালটি দখল করে প্রথমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও পরে তার পিছনে বসতবাড়ি বানিয়ে বসবাস করছে। দু’পাশের এসব অবৈধ দখলদাররা খালের অস্তিত্ব বিপন্ন করছে।

এ বিষয়ে বরগুনা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি হাসান ঝন্টু বলেন, ভাড়ানি খাল দখল মুক্ত করতে আন্দোলন করেছেন তারা। তবে অজানা কোন কারণে দখল ও দূষণ বন্ধ হচ্ছে না। শহরের মধ্য দিয়ে এ খালটি রক্ষা করতে না পারলে সৌন্দর্য হারাবে বরগুনা।

তবে বরগুনা জেলা প্রশাসক কবির মাহমুদের দাবি, ‘এ খালটি শুধু দখল মুক্তই নয়, করা হবে সৌন্দর্য্যবর্ধনও। তবে দখলদারদের সরে যাওয়ার জন্য বলেছেন তিনি। যদি তারা সরে না যায় তবে দ্রুত উচ্ছেদ অভিযানে নামবে প্রশাসন।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর