বই উৎসবের আমেজ কাটতে না কাটতেই নোয়াখালীর বাণিজ্যিক পয়েন্ট কোম্পানীগঞ্জে নিষিদ্ধ নোট ও গাইড বইয়ের প্রকাশ্য বাণিজ্য শুরু হয়েছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কিছু অসাধু শিক্ষক ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির কতিপয় নেতৃবৃন্দের চাপে শিক্ষার্থীরা অবৈধ নোট ও গাইড বই উচ্চমূল্যে কিনতে বাধ্য হচ্ছে। অর্থলোভী-অসাধু শিক্ষক ও লাইব্রেরির একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট আইন ও নিয়ম অগ্রাহ্য করে প্রকাশ্যেই বেআইনি ও নিষিদ্ধ গাইড ও নোট বই বাণিজ্য চালিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা আর ধ্বংস করছে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর সৃজনশীল বিকাশ। এসব বিষয় স্থানীয় প্রশাসন জানে না!
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বসুরহাট বাজার, বাংলা বাজার, চৌধুরীহাট, বামনী বাজারে নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের বাণিজ্য চলছে লাইব্রেরিগুলোতে। জানা গেছে, এ বাণিজ্যে গাইড কোম্পানীগুলো মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে দলে টেনেছে কিছু অসাধু শিক্ষক ও শিক্ষক নেতাকে।
বার্তা২৪.কমকে একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করেন, ‘কোম্পানীগঞ্জে ২য় শ্রেণিতে অনুপম, লেকচার, পপি গাইড বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। ৩য় শ্রেণিতে অনুপম ও লেকচার গাইড বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৬০ টাকায়। ৪র্থ শ্রেণিতে অনুপম ও পাঞ্জেরি গাইড বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকা হতে ৩৫০ টাকায়। ৫ম শ্রেণির লেকচার, অনুপম ও পাঞ্জেরি গাইড বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ থেকে ৫৫০ টাকায়। ৬ষ্ঠ শ্রেণির অনুপম, লেকচার, পপি ও পাঞ্জেরি, এ্যাডভান্স, অক্ষরপত্র গাইড বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ থেকে ৬২০ টাকায়। ৭ম শ্রেণি ও ৮ম শ্রেণির এ্যাডভান্স, লেকচার, অনুপম ও পাঞ্জেরি, পপি, অক্ষরপত্র গাইড বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকায়।’
নোট ও গাইড বই বাণিজ্যে শিক্ষকদের জড়িত থাকা প্রসঙ্গে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি সুলতান আহমদ চৌধুরী বাবুল বলেন, ‘সরকার রুট লেভেলে হস্তক্ষেপ করলে হবেনা। গাইড বইয়ের ছাপাখানা বন্ধ করে দিতে হবে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দের যোগসাজশে কোন প্রকার গাইড বই বাণিজ্য নেই।’
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন বিএসসি বলেন, ‘গাইড বই সরকার পুরোপুরি বন্ধ করলে শিক্ষার আরও মানোন্নয়ন হবে।’ তবে তিনি দাবি করেন, ‘নোট বই,গাইড বই বাণিজ্যে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ কোন প্রকার যোগসাজশ নেই এবং কোন প্রকার উৎকোচ গ্রহণ করেনা।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (মাধ্যমিক) শাহ কামাল পারভেজ বলেন, ‘গাইড বই বিক্রি সরকারি আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ। সঠিক তথ্য পেলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.ফয়সল আহমদ বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তবে গাইড বইয়ের রমরমা বাণিজ্য সম্পর্কে তিনি প্রতিবেদকের মাধ্যমে প্রথম অবগত হয়েছেন বলে জানান তিনি। স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারির অভাবের বিষয়ে স্থানীয় অভিভাবক মহলের অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে ‘তিনি সরাসরি অফিসে এসে কথা বলার কথা বলেন।’
কিন্তু অভিভাবকরা স্পষ্ট করে বলছেন যে, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের নজরধারী ও মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় অসাধু বই ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের নাকের ডগায় গাইড ও নোট বই বিক্রি করছে। অসাধু শিক্ষক নেতা ও লাইব্রেরি মালিকরা মিলে একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এই অবৈধ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল মেধা ধ্বংস হয়ে বিনামূল্যে বই বিতরণের সরকারি লক্ষ্য নস্যাৎ হচ্ছে।