পৌষ সংক্রান্তিকে ঘিরে রয়েছে নানা আয়োজন। পৌষ সংক্রান্তি মানেই মায়ের হাতের তৈরি নানা রকমের পিঠা খাওয়া। দিনটিকে ঘিরে ঘরের গৃহবধূরা ব্যস্ত সময় পার করে। গভীর রাত পর্যন্ত জেগে তারা তৈরি করে নানা বাহারি পিঠা। আর মায়ের হাতের তৈরি সুস্বাদু পিঠা খেয়ে সন্তান যখন আত্মহারা হয়, মাও যেন তার শত ক্লান্তি ভুলে যান।
বছরের এমন দিন একবারের জন্য হলেও মায়ের কাছ ফিরে যাবার শৈশবকে মনে করিয়ে দেয়। বাঙালি ঐতিহ্য আর উৎসব পৌষ সংক্রান্তিতে পিঠা-পুলির আয়োজন আনন্দের মাত্রাকে বেগবান করে তোলে। তাই উৎসাহ আর উদ্দীপনায় মধ্য দিয়ে পৌষ-সংক্রান্তিকে বরণ করে নিতে নানা আয়োজনে ব্যস্ত রয়েছে গৃহবধূরা। ঘরে ঘরে চলছে নানা ধরনের ভিন্ন ভিন্ন নামের পিঠা তৈরির ধুম।
এ উৎসবটি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনদের মাঝেই বেশি পালন করতে দেখা যায়। তবে কোনো এক সময় আয়োজনটি ছিল সকল সম্প্রদায়ের লোকদের মধ্যে।
ইতিহাস অনুযায়ী জানা যায়, গ্রাম বাংলার কৃষকদের ঘরে যখন নতুন ধান গোলায় তোলা হতো, তখন সেই খুশিতে পিঠা-পুলি তৈরির ধুম পড়ে যেত। পৌষ-সংক্রান্তি উপলক্ষে হবিগঞ্জসহ এর আশপাশের জেলাগুলোতে গ্রাম্য মেলা, ঘুড়ির মেলা, মাছের মেলাসহ বিভিন্ন মেলার আয়োজন করা হয়।
বগলা বাজার এলাকার বাসিন্দা ছবি চৌধুরী বলেন, ‘প্রতি বছরই আমরা দিনটিকে ঘিরে ভাজা পুলি, মালপোয়া, পাটিসাপটাসহ হরেক রকমের নাড়ু, পিঠা তৈরি করে থাকি। ঘরের বধূরা একত্রিত হয়ে গভীর রাত পর্যন্ত এসব পিঠা তৈরি করি। আনন্দ আর উৎসাহ নিয়ে কাজ করি, তাই ক্লান্তি মনে হয় না।’
হিন্দু রীতি মতে মকর সংক্রান্তি বা উত্তরায়ণ সংক্রান্তি নামেও দিনটি পালিত হয়ে থাকে। হিন্দুরা এই দিনটিতে পিতৃপুরুষের অথবা বাস্তুদেবতাদের উদ্দেশে তিল কিংবা খেজুরের গুড় দিয়ে তিলুয়া এবং নতুন ধানের চাল থেকে তৈরি পিঠার অর্ঘ্য প্রদান করে থাকে। তাই অনেকের কাছে পৌষ সংক্রান্তির অপর নাম তিলুয়া সংক্রান্তি বা পিঠা সংক্রান্তি বলেও পরিচিত।
পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে বাড়ির উঠানে গৃহবধূরা আলপনা একে থাকে। শুধু তাই নয়, সকল ধর্মের মানুষ একে অন্যের বাড়িতে গিয়ে পিঠা-পুলির আয়োজনে মেতে উঠে।