প্রশাসনের উদাসীনতায় বরগুনায় সক্রিয় জেএমবি

বরগুনা, দেশের খবর

ইমরান হোসেন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বরগুনা, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 12:15:50

বরগুনায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)। একের পর এক জঙ্গিরা গ্রেফতার হয়ে জামিনে ছাড়া পেয়ে ফের জড়িয়ে পড়ছে জঙ্গি কার্যক্রমে। প্রশাসনের উদাসীনতার কারণে জঙ্গিদের অভয়ারণ্য বরগুনায় একের পর এক যুবকরা ভয়ংকর সব অস্ত্র ও বোমাসহ ফের গ্রেফতার হচ্ছে র‌্যাবের হাতে। সচেতন মহল বলছে স্থানীয় প্রশাসনের নাজুক অবস্থার কারণে বিপথগামী হয়ে উগ্রবাদী পথের দিকে যাচ্ছে তরুণরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে প্রথমবারের মত বরগুনা সদরের আরাবিয়া এমদাদুল উলুম হাফিজিয়া কওমি মাদরাসা থেকে ৩ জন তালেবান প্রশিক্ষককে গ্রেফতার করে পুলিশ। যেখানে ৫০ জন ছাত্র নিয়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণ চলছিল। এরপর ২০০৪ সালে সদরের শিয়ালীয়া মাদরাসায় জঙ্গি প্রশিক্ষণের সময় ৩৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২০১৩ সালের ১২ই আগস্ট বরগুনায় তৃতীয়বারের মত খেজুরতলা থেকে বৈঠকরত অবস্থায় আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসীম রহমানীসহ ৩১ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আটক হওয়া এই ৩১ জনের মধ্যে মুফতি জসীম উদ্দিন রহমানী ছাড়া বাকি সবাই জামিনে চলে বের হয়ে আসে এক বছরের মধ্যে।

জামিনে থাকা জঙ্গিদের মধ্যে গত বছরের ৩১ আগস্ট বরিশাল কোতোয়ালি থানার দড়গা বাড়ি এলাকা থেকে মনসাতলী গ্রামের ইব্রাহীম খলিলের ছেলে আব্দুল্লাহ আল-মিরাজকে ওরফে সাইফ বিভিন্ন অত্যাধুনিক অস্ত্র, বোমা ও বোমা তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামসহ গ্রেফতার করে র‌্যাব। র‌্যাবের দাবি আটক মিরাজ জসিম উদ্দিন রহমানীর সাথে গ্রেফতার হয়ে জামিনে বের হয়ে ফের নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সামরিক শাখার সক্রিয় সদস্য হিসেবে কাজ শুরু করে। অবশ্য মিরাজের পরিবারের দাবি মিরাজ প্রায় এক মাস ধরে সে নিখোঁজ ছিল।

এদিকে ওই বছরের ১২ জুলাই রাত ২টার দিকে সদরের ঢলুয়া এলাকার আতিকুল ইসলাম শাওন ওরফে বাবু নামে এক যুবকের বাসায় বিভিন্ন রকমের অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ে ১৫/২০ জন লোক যায়। তারা শাওন ওরফে বাবুর মা’কে বলে আসে আলিয়া মাদরাসা বড় হুজুর শাওনকে নিতে পাঠিয়েছে। তবে এর পর থেকেই নিখোঁজ হয়ে যায় শাওন। পরে গত ৩০ সেপ্টেম্বর বরিশালের কোতোয়ালি থানার জিয়া উদ্দিন সড়ক থেকে অস্ত্র ও জিহাদি বইসহ শাওনকে আটক করে র‌্যাব। একই দিনে বরগুনা সদরে অভিযান চালিয়ে হাসান ও আবু সালেহ নামে দুই যুবককে অস্ত্র ও জিহাদি বইসহ গ্রেফতার করে র‌্যাব। সর্বশেষ গত ১৭ অক্টোবর জেএমবির সামরিক শাখার সদস্য হাসান মোল্লাসহ জেএমবির বেশ কয়েকজন সামরিক শাখার ও সংগঠনের জন্য চাঁদা তোলার সময় গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। র‌্যাবের দাবি তারা সবাই আনসার উল্লাহ বাংলা টিমের হয়ে কাজ শুরু করলেও বাংলা টিমের প্রধান জেলে থাকায় তারা জেএমবির সাথে কাজ শুরু করে।

এদিকে যুবকদের এভাবে নিখোঁজ হওয়া ও উগ্রবাদী সংগঠনে জড়িয়ে পড়ায় আগামী প্রজন্ম নিয়ে শঙ্কিত সচেতন মহল। তাদের দাবি স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতার কারণে জঙ্গিরা জামিনে বের হয়ে ফের জরিয়ে পরছে একই কাজে।

এ বিষয়ে টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সাবেক সভাপতি মনির হোসেন কামাল বার্তা২৪কে বলেন, 'বাংলাদেশে সর্ব প্রথম তালেবান প্রশিক্ষক গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে একাধিকবার বিপুল পরিমাণ জঙ্গি গ্রেফতার হয়েছে। এ ছাড়াও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসীম রহমানীর বাড়ি বরগুনায় হওয়ায় এখানে তার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। তার সাথে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরাও এখন জামিনে। আর তারাই ফের নতুন সদস্য নিয়ে তাদের সামরিক শাখার সদস্য বাড়াতে কাজ করছে।'

'সেক্টর কমান্ডার ১৯৭১' এর বরগুনা শাখার কমান্ডার আনোয়ার হোসেন মনোয়ার এ বিষয়ে বলেন, 'বরগুনা জঙ্গিদের জন্য একটি অভয়ারণ্য। প্রশাসনের উদাসীনতার কারণে জেএমবি এখন বরগুনায় সক্রিয়। র‌্যাব-৮ এর অভিযান তার বড় প্রমাণ। একবার যারা গ্রেফতার হয় তারা জামিনে বের হয়ে ফের আবার এই পেশায় জড়িয়ে পড়ছে। তাই এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য আদালত থেকে এদের জামিনের ব্যাপারে আরও গভীরভাবে ভেবে জামিন দেয়া উচিৎ। আর তার পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা খুব জরুরি। কারণ তাদের দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনের উপর নির্ভর করে আদালতের রায়।'

তবে বরগুনা জজ কোর্টের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মোঃ আখতারুজ্জামান বাহাদুর বলেন, 'পুলিশি তদন্তে ফাঁক থাকার কারণে বার বার জামিন পাচ্ছে জঙ্গিরা। তাই পুলিশি তদন্তে ফাঁক না থাকলে জঙ্গিদের জামিন কঠিন হয়ে পড়বে।'

তবে এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, 'পুলিশি তদন্তে কোন ফাঁক নেই। তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন জঙ্গি দমনে। জামিনে মুক্তি হওয়া জঙ্গিদের নজরদারিতে রাখছেন তারা।'

র‌্যাবের একটি সূত্রের দেয়া তথ্য মতে, বরগুনার নাজমুল ওরফে উকিল ওরফে রেশান, তরিকুল ওরফে সাকিব ওরফে নাজমুল সাকিব, আলামিন ওরফে হাসান ওরফে আলমগীর, আল আমিন ওরফে রাজীব ওরফে আজিজুলসহ বেশ কয়েকজন জেএমবির প্রশিক্ষক বরগুনায় সামরিক প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর