নানা কারণে পটুয়াখালীতে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছের রস। শীত মৌসুমে পিঠাপুলির আয়োজনের প্রধান এই উপাদানটি এখন অনেকটাই বিলুপ্ত। আর খেজুরের রস নিয়মিত সংগ্রহ না করায় মরে যাচ্ছে গাছগুলো। এ জন্য খেজুর রস সংগ্রহ করার শ্রমিকের অভাব এবং রস চুরি হওয়ার কারণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলাকেই প্রধান কারণ বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত এক দশক আগেও গ্রাম বাংলার সড়কের পাশ জুড়ে ছিল সারিসারি খেজুর গাছ। অগ্রহায়ণের শুরু থেকে মাঘের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলতো রস সংগ্রহ। তবে এখন আর তেমনটি দেখা যায় না। কিছু কিছু খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করলেও অধিকাংশ গাছ থেকেই রস সংগ্রহ করা হয় না।
সংশ্লিষ্টরা বলছে, খেজুর রস সংগ্রহের জন্য দক্ষ শ্রমিকের যেমন অভাব রয়েছে, তেমনি গাছ থেকে রস সংগ্রহের আগেই তা চুরি হচ্ছে। এসব কারণে কিছু কিছু খেজুর গাছ কাটা হলেও তাতে মাটির হাঁড়ির পরিবর্তে ব্যবহৃত হয় পানি কিংবা তেলের পরিত্যক্ত বোতল।
তবে গ্রামীণ ঐতিহ্যে এখনো খেজুর রসের বিশেষ কদর রয়েছে। বিশেষ করে মেয়ে-জামাইদের আপ্যায়ন করতে বিভিন্ন পিঠাপুলি তৈরিতে রসের ব্যবহার করা হয়। আর তাইতো এক হাঁড়ি রসের জন্য গ্রামের পর গ্রাম হাঁটতে হয় গৃহস্থ বাড়ির লোকদের।
পটুয়াখালী সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মুহম্মদ মতিয়ূর রহমান জানান, খেজুর গাছ একটি গুচ্ছমূল উদ্ভিদ। এ কারণে এর মূল নিয়মিত পরিষ্কার না করলে গাছের মাথা শুকিয়ে মারা যেতে পারে। পাশাপাশি জ্বালানি হিসেবে এই গাছের চাহিদা থাকায় যে পরিমাণ গাছ কাটা হচ্ছে, সে পরিমাণ রোপণ করা হয় না। এসব কারণে খেজুর গাছ অনেকটাই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
মানুষের পাশপাশি পাখিদের কাছেও খেজুর রসের জনপ্রিয়তার কমতি নেই। তাইতো যেসব গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয় সেসব গাছের আশপাশে পাখিদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।