আয়শা হত্যা: ধরা ছোঁয়ার বাইরে অভিযুক্তরা

বরগুনা, দেশের খবর

ইমরান হোসেন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বরগুনা, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 22:21:57

চার মাসেও গ্রেফতার হয়নি বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কাউনিয়া এলাকার মাদরাসা ও এতিমখানা পরিচালক আয়শা বেগম হত্যা মামলার অভিযুক্ত আসামিরা। তাদের বিরদ্ধে পুলিশের নেই গ্রেফতার তৎপরতা। অপরদিকে মায়ের হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে মামলা করে প্রভাবশালীদের হুমকিতে বাড়ি ছাড়া নিহত আয়শার একমাত্র ছেলে বেল্লাল।

নিহতের স্বজন ও মামলার স্বাক্ষীদের দাবি, আয়শা বেগমকে প্রকাশ্যে হত্যা করলেও আওয়ামী লীগ নেতাদের দাপটে দিশেহারা তারা। এদিকে আয়শাকে হত্যার পর মুখ থুবড়ে পড়েছে তার দ্বারা পরিচালিত পশ্চিম কাউনিয়া হাচানিয়া ফোরকানিয়া হাফেজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানা।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৬ অক্টোবর বড় ভাই আব্দুল মালেকের জমিতে ঘর তুলতে যান তার ছোট ভাই মোতালেব, বুড়ামজুমদার ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সানু প্যাদা, বুড়ামজুমদার ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা পণ্ডিত শাহ-আলম প্যাদা ও তার সমর্থকরা। এ সময় দুই ভাইয়ের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে দুই ভাইয়ের ঝগড়া থামাতে গেলে আব্দুল মালেকের স্ত্রী আয়শা বেগমের ঘাড়ে ও মাথায় কুড়ালের কোপ দিয়ে পালিয়ে যান মোতালেব।

এ ঘটনার পর বেতাগী থানায় আটজনকে আসামি করে মামলা করেন নিহত আয়শার ছেলে বেল্লাল। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

বেল্লালের অভিযোগ করে বলেন, ‘মামলার অভিযুক্তরা প্রকাশ্যে ঘুরছে। মামলা করার পর থেকেই মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আমাকে হুমকি দিতে থাকেন আওয়ামী লীগ নেতা সানু প্যাদা ও শাহ আলম প্যাদা। তবে পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করছে না। তাই নিরাপত্তা হীনতার কারণে আমি আজ ঘর ছাড়া।’

শুধু বেল্লাল নয় মামলার সাক্ষী ও প্রত্যক্ষদর্শী সনিয়া, নাহিদসহ এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আয়শা হত্যা মামলার অভিযুক্তরা প্রকাশ্যেই হুমকি দিচ্ছে বেল্লালকে। আর মামলার সাক্ষীদেরও হুমকি দিচ্ছেন যাতে তারা কেউ সাক্ষী দিতে না যায়। মামলায় সাক্ষী দিলে তাদেরকেও প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন অভিযুক্তরা।

তাদের দাবি, সানু প্যাদা ও শাহ আলম ইউনিয়ন বিএনপির নেতা ছিলেন, তবে তারা বছর খানেক আগে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে এলাকায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে চলছেন।

তবে বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন জানান, মামলার বাদীকে হুমকি দেয়ার ব্যাপারে কিছুই জানেন না তারা। তবে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।

এদিকে আয়শা বেগমকে হত্যার পর বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মাদরাসা ও এতিমখানার কার্যক্রম। ১৪৮ জন শিক্ষার্থী ও এতিমদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মাদরাসার অন্যান্য শিক্ষকরা। এতিমদের মুখে দু মুঠো খাবার তুলে দিতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।

মাদ্রাসার শিক্ষক হারুন-অর-রশিদ জানান, পরিচালক আয়শা বেগম নিজ অর্থায়নে মাদরাসা ও এতিমখানা পরিচালনা করতেন। তবে তাকে হত্যার পর এখন এতিমদের লেখা-পড়া তো দূরের কথা তাদের মুখে দু-বেলা খাবার তুলে দিতেও কষ্ট হয়ে যায় তাদের।

তাই তিনি সরকারি সহায়তা কামনা করছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর