দিন দিন জনসংখ্যা বাড়ছে, আর কমছে ফসলি জমি। আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতির কারণে স্বল্প জমিতে অধিক ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে।
এদিকে নড়াইল একটি কৃষি প্রধান জেলা। জেলার বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি অনেক জমিতে গমের উৎপাদন হতো। তবে দিন দিন গম চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে চাষিরা। ফলে কমছে গমের উৎপাদন।
জানা গেছে, নড়াইল জেলায় গমের আবাদ আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। গত চার বছরে জেলায় গমের আবাদ কমেছে শতকরা ৭৯ ভাগ। উৎপাদন খরচের তুলনায় গমের দাম অনেক কম থাকা, তুলনামূলক ভাবে গম থেকে ধানের দাম বেশি থাকা, ব্লাস্টসহ বিভিন্ন প্রকার রোগে আক্রমণ হওয়ায় গমের আবাদ দিন দিন কমে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষকরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ মৌসুমে ৬ হাজার ৩০২ হেক্টর জমিতে গম আবাদ হয়েছিল। ২০১৬-১৭ মৌসুমে জেলায় ৪ হাজার ১২৪ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়েছিল। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জেলায় ৪ হাজার ১২৪ হেক্টর জমিতে গম আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও মাত্র ১ হাজার ৩৭০ হেক্টরে তা চাষ হয়েছে। আর চলতি মৌসুমেও নড়াইলে গমের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে কৃষি বিভাগ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে (চলতি বছর) জেলার তিনটি উপজেলায় গম আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে। সেখানে আবাদ হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে ৬৭ শতাংশ। এই দিয়ে পর পর ২ বছর গম আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি কৃষি বিভাগ।
সদর উপজেলার মহিষখোলা এলাকার কৃষক রমজান হোসেন জানান, এক মণ গম উৎপাদন করতে ৬শ থেকে ৭শ টাকা খরচ হয়ে যায়। মৌসুমে বাজারে প্রতি মণ গম বিক্রি হয় মাত্র ৬শ থেকে সাড়ে ৬শ টাকা। সরকারি ভাবেও যথা সময়ে গম কেনা হয় না। এতে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দিন দিন গমের আবাদ থেকে সরে আসছে।
লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর গ্রামের কৃষক অমিত বিশ্বাস জানান, বাজারে গমের থেকে ধানের চাহিদা বেশি, গমের থেকে ধানের দামও বেশি। সেজন্য তার মতো অনেক কৃষক দিন দিন গমের আবাদ ছেড়ে দিয়ে অন্য ফসলের দিকে ঝুঁকছে।
কালিয়া উপজেলার বিষ্ণপুর গ্রামের কৃষক রমিছ উদ্দিন জানান, বর্তমানে বাজারে এক কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৪৮ টাকা, এক কেজি আটা বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২৫-২৬ টাকা। বাজারে আটার দাম কম থাকায় গমের আবাদ দিন দিন ছেড়ে দিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক চিন্ময় রায় জানান, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে গমের বীজ বপনের সঠিক সময়। চলতি মৌসুমে নভেম্বর মাসে জেলায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। যার কারণে সময় মতো চাষিরা তাদের জমিতে এ বছর গমের বীজ বপন করতে পারেনি। এছাড়া ব্লাস্ট রোগের কারণেও গমের আবাদ কমেছে। এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে চাষিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পাশাপাশি কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের গম আবাদে উৎসাহিত করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।