মৌলভীবাজারের বড়লেখায় নালিখাই নামে এক পানপুঞ্জির ৩ আদিবাসী খাসিয়ার বসতঘরে রাতের আঁধারে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
জানা যায়, শনিবার (২০ জানুয়ারি) রাত দেড়টায় দুর্বৃত্তরা উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউপির নালিখাই পানপুঞ্জিতে বসবাসরত অচিন পাত্র, এজু চিছাম ও ইনেত মুরংয়ের বসত ঘর পুড়িয়ে দেয় এবং ৪ শতাধিক পান গাছ কেটে ফেলে। এতে অন্তত আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ভুক্তভোগী খাসিয়াদের অভিযোগ ছোটলেখা চা বাগান কর্তৃপক্ষ তাদের উচ্ছেদ করতেই বসতঘর পুড়িয়ে দেয়। শনিবার রাত দেড়টার দিকে অগ্নিকাণ্ড ও পানগাছ কাটার ঘটনা ঘটেছে। রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ছোটলেখা চা বাগান কর্তৃপক্ষ নিজেদের স্বার্থে টলবিলামিন নামে এক আদিবাসী খাসিয়াকে বাগানের প্রায় ৮০ একর ভূমিতে বসিয়ে দেয়। টলবিলামিন খাসিয়া ২৮ খাসিয়া পরিবার নিয়ে নালিখাই পানপুঞ্জি নাম দিয়ে এ ভূমিতে প্রায় ১০ বছর ধরে বসবাস করছেন। সেখানে তারা পান, লেবু, সুপারীসহ বিভিন্ন ফল-ফলাদি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে। খাসিয়ারা যখনই উন্নত বাসস্থান ও যাতায়াতের উদ্যোগ নেয় তখনই বাগান কর্তৃপক্ষ তাদের উচ্ছেদের চেষ্টা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে।
খাসিয়া মন্ত্রী (হেডম্যান) টলবিলামিন বার্তা ২৪ ডটকম’কে জানান, রাস্তা নিয়ে চা বাগানের সাথে তাদের সমস্যা চলছে। নিজের বসতঘর পাকা করতে তিনি ইট নেয়ার সময় বাগান কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বাঁধা দেয়।
গত ১৩ জানুয়ারি ছোটলেখা বাগানের ম্যানেজারের লোকজন গেটের সামনে ইট আটকে রাখে। রাস্তায় চলাচলে বাধা-নিষেধ করে। ইট পরিবহণকারী শ্রমিকদের মারধর করে উল্টো থানায় আমার লোকের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। বাগান ম্যানেজারের নানা হুমকি-ধমকির কারণে গত ১ সপ্তাহ ধরে পুঞ্জির লোকজন ঘর থেকে বের হতে পারছে না।
এরই মাঝে শনিবার রাত দেড়টার দিকে পুঞ্জির বাসিন্দা আমার পান জুমের শ্রমিক অচিন পাত্র, এজু চিছাম ও ইনেত মুরংয়ের বসত ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। এতে অন্তত আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। কেটে ফেলেছে জুমের ৪-৫ শতাধিক পান গাছ।
ছোটলেখা চা বাগান ম্যানেজার মোকাররম হোসেন বার্তা ২৪ ডটকম’কে জানান, নালিখাই পানপুঞ্জির খাসিয়াদের সাথে কিছুদিন ধরে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে ঠিকই, তবে তাদের বসতঘর পুড়ানো ও হুমকি-ধমকি দেয়ার সাহস বাগানের কারোই নেই, এটা অসম্ভব। সরকারী জমিতে দালান কোটা তৈরির অনুমতিতে বাগান কর্তৃপক্ষ দিতে পারে না। তাই ইট নিতে বাঁধা দেই। ঘর পুড়ানো, পান গাছ কাটা ও হুমকি-ধমকির অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। এটা তাদেরই ষড়যন্ত্র।
থানার ওসি (তদন্ত) মো. জসীম উদ্দিন রোববার সন্ধ্যায় জানান, 'আগুন লাগার খবর পেয়ে রাতেই তিনি পুলিশ নিয়ে পুঞ্জিতে যান। টিনশেডের তিনটি ঘর পুড়েছে। আগুন লাগার কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এব্যাপারে এখনও কেউ থানায় মামলা করেনি।'