বাদ পড়া মুক্তিযোদ্ধা মজনু মিয়ার প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে

গাইবান্ধা, দেশের খবর

তোফায়েল হোসেন জাকির, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, গাইবান্ধা | 2023-08-23 20:00:39

দেশ স্বাধীন করতে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে অংশ নিলেও গেজেটধারী মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতির তালিকা থেকে বাদ পড়েন মজনু মিয়া। তিনি গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের জয়েনপুর গ্রামের মৃত খবির উদ্দিনের ছেলে। এ বিষয়ে গাইবান্ধা-৩ আসনের সংসদ সদস্য ডা. ইউনুস আলী সরকারের ডিও লেটারের প্রেক্ষিতে সাদুল্লাপুর ইউএনও কর্তৃক পুনঃতদন্ত প্রতিবেদন গত ১৭ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

জানা গেছে, মজনু মিয়ার বয়স এখন প্রায় ৬৪ বছর। বসতভিটা হারিয়ে বর্তমানে তিনি জয়েনপুরের একটি গুচ্ছগ্রামে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ৭১’এ মজনু মিয়া ছিলেন টগবগে যুবক। সেই সময় দেশটা ছিল উত্তাল, বাংলাকে নিজের রূপে রূপ দেওয়ার নেশায় কাঁপছিল পুরো দেশ। পাকিস্থানীদের শোষণ আর ব্যবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন এদেশের আপামর জনগণ। ঠিক তখনই মজনু মিয়া জীবনে মায় ত্যাগ করে দেশকে রক্ষার্থে ঝাঁপিয়ে পড়েন স্বাধীকার আদায়ের জন্য। তার অদম্য সাহস আর দেশপ্রেম তাকেও নিয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধে।

আরো জানা গেছে, যুদ্ধকালীন ১১নং সেক্টরে মজনু মিয়ার সহযোদ্ধা হিসেবে ছিলেন- আবেদ আলী, সুলতান গিয়াস ও আলতাফ হোসেন। এই মহাবীরের এমন অনেক সফল সাহসী অভিযান হয়েছিল যুদ্ধকালীন সময়ে। দেশ হয়েছিল স্বাধীন। জনগণ পেয়েছে স্বাধীনতার সুখ। এক্ষেত্রে তৎকালীন সময়ের অধিনায়ক মুহম্মদ আতাউল গনি ওসমানী স্বাক্ষরিত দেশ স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র পান মজনু মিয়া। সনদ নম্বর ১৬৫৮৮৫। কিন্তু মজনু মিয়া সনদ পেলেও পাননি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি।

মজনু মিয়া অভিযোগ করে বলেন, ‘গত ১১ বছর ধরে গুচ্ছগ্রামে মানবেতর জীবনযাপন করছি। দেশ স্বাধীনের ৪৮ বছরে কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা বা স্বীকৃতি পাইনি। ভারতের কাকড়ীপাড়া প্রশিক্ষণ শিবিরের আজিম মাহবুরের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে গাইবান্ধার কামারজানি, কঞ্চিবাড়ী ও দক্ষিণ দূর্গাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ক্যাপ্টেন হামিদ উল্লার নেতৃত্বে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। আমার অধিনায়ক ছিলেন আব্দুল হামিদ পালোয়ান। যুদ্ধের পর বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ গাইবান্ধা জেলা ইউনিটিরে সাবেক কমান্ডার নাজমুল আরেফিন তারেক, সাদুল্লাপুর উপজেলা ইউনিটের কমান্ডার মেছের উদ্দিন সরকার ও ইউপি চেয়ারম্যান শাহীন সরকার আমাকে সনদ দেন।’

জানা গেছে, গেজেটধারী মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেতে গত বছরে অনলাইনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আবেদন করেন তিনি। এরই প্রেক্ষিতে সাদুল্লাপুর উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটি কর্তৃক মজনু মিয়াকে বাতিল করে “গ” তালিকাভুক্ত করেন। ওই কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মজনু মিয়ার সংগ্রামী সনদপত্র থাকলেও ক্রমিক নম্বর নেই। এ কারণে তাকে তালিকা থেকে বাতিল করা হয়েছে। অথচ ওই সনদপত্রের অপর পৃষ্ঠায় ক্রমিক নম্বর ছিল। বাধ্য হয়ে মজনু মিয়া জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে আপিল করেন। কিন্তু তিনি এখনও ফল পাননি।

পরবর্তীতে গাইবান্ধা-৩ আসনের সাংসদ ডা. ইউনুস আলী সরকার সাদুল্লাপুর ইউএনও’র নিকট ডিও লেটার দেন। ইউএনও রহিমা খাতুন ওই ক্রমিক নম্বর যাচাইয়ের জন্য সাদুল্লাপুর উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে দায়িত্ব দেন। এর ফলে মজনু মিয়ার যুদ্ধকালীন যাবতীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ক্রমিক নং খুঁজে পান এবং তার নাম তালিকাভুক্ত করতে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠান।

এ সম্পর্কিত আরও খবর