ঢাকা-বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব মহাসড়ক ধুলায় একাকার!

টাঙ্গাইল, দেশের খবর

অভিজিৎ ঘোষ,ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, টাঙ্গাইল, বার্তা২৪ | 2023-08-25 16:49:15

ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের চারলেনের কাজ এখন পর্যন্ত শেষ না হওয়ায় চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন মহাসড়কে চলাচলকারী চালক ও যাত্রীরা। চারলেনের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো মহাসড়কে ধুলার নিয়ন্ত্রণে কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না। ফলে ধুলায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থেকে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় ধুলোয় একাকার।

সরেজমিনে মহাসড়কে গিয়ে দেখা গেছে, গাজীপুরের কালিয়াকৈর, টাঙ্গাইলের গোড়াই, মির্জাপুর বাসস্ট্যান্ড, ধল্লা, পাকুল্লা, নাটিয়াপাড়া, করোটিয়া বাইপাস, বাসাইল বাইপাস, তারুটিয়া, ঘারিন্দা, টাঙ্গাইল রাবনা বাইপাস, পুংলি ও এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকার ধুলায় ধুসর হয়ে থাকে দিনরাত। মহাসড়কে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরাও ধুলার কারণে তাদের দায়িত্বপালন করতে হিমশিম খাচ্ছেন।

এদিকে, মহাসড়কে কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ইটের সলিং ধুলা সৃষ্টির প্রধান কারণ। দীর্ঘদিন যাবৎ মহাসড়কের এই অবস্থার জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের গাফিলতিকেই দায়ী করছেন ভুক্তভোগীরা। প্রতিদিন ধুলায় বাড়ছে রোগ-বালাই।

জানা গেছে, দক্ষিণবঙ্গ, উত্তরবঙ্গ, ময়মনসিংহ, জামালপুর ও শেরপুর জেলাসহ দেশের প্রায় ২৮টি জেলার যানবাহন চলাচল করে এই মহাসড়ক দিয়ে। যমুনা নদীর উপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১৪-১৫ হাজার যানবাহন চলাচল করে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)। এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডের অদূরে রয়েছে এলেঙ্গা সরকারি শামসুল হক কলেজ, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এলেঙ্গা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বালক উচ্চ বিদ্যালয়, হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি, বৃহত্তর বাজার, ব্যাংক, বীমা অফিস, হাসপাতাল ও শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানসহ অনেক কল-কারখানা। ফলে এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড দিয়ে প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ নিয়মিত যাতায়াত করেন।

ধুলার কারণে বাসস্ট্যান্ডে দুইপাশের দোকানগুলো ধুলায় সাদা হয়ে যায়। বাসের জন্য অপেক্ষমাণ দাঁড়ানো যাত্রীরা মুখে কাপড় দিয়ে ধুলা থেকে বাঁচার চেষ্টা করেন। এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডের হোটেল ও দোকানগুলোর খাবারের উপর ধুলার আস্তর লেগে থাকে।

ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেতে এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে উঠতে হয়। বাসস্ট্যান্ডে ৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকলে সেই পোশাক পড়ে থাকা দায়। ধুলার কারণে দোকানে ক্রেতা কম ও কেনাবেচা কম হয় বলে ব্যবসায়ী জানান।

মহাসড়কে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর এসএম শহীদুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, অসহনীয় ধুলার কারণে মহাসড়কে পুলিশদের ডিউটি করা খুব কষ্টকর ও ভয়াবহ হয়ে পড়েছে। পুলিশ সদস্যরা ছাড়াও মহাসড়কে চলাচলকারীরা শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুজাউদ্দিন তালুকদার জানান, ধুলা মানব দেহে নিয়মিত প্রবেশ করলে শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসে ইনফেকশন এবং এ্যাজমার রোগীদের মতো ভুক্ত হবে মানুষকে। এছাড়া নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ, ঘ্রাণশক্তিও কমে যাবে। তবে ধুলায় শিশু ও বৃদ্ধদের মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে বেশি।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ টাঙ্গাইলের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিমুল এহসান জানান, মহাসড়কের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তিনশ মিটার সড়কে ইটের সলিং রয়েছে। এটি সাউথ এশিয়ান সাব-রিজিউনাল ইকোনমিক করপোরেশন (সাসেক-২) কর্তৃপক্ষের পাকাকরণের কথা থাকলেও তারা সেটি বাস্তবায়ন করেনি। একদিকে ইটের সলিং অন্যদিকে মহাসড়কে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপের কারণে এই ধুলার সৃষ্টি হয়। 

বুয়েটের এক্সিডেন্ট এন্ড রিসার্স ইন্সটিটিউটের সহকারী অধ্যাপক এবং সড়ক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ বার্তা২৪.কমকে বলেন, চারলেনের কাজের সাথে জড়িত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জনসাধারণের ক্ষতির দায়-দায়িত্ব বহন করবে। কনট্রাকটর বা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই সড়কে পানি দিয়ে ধুলো মুক্ত রাখবে। সরকারের সাথেই সেই শর্ত ও চুক্তিনামা করেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কের কাজ পায়। তার কনস্ট্রাকশনের কাজের জন্য জনজীবনের কোন যদি দূর্ভোগ আসে সেটা সমাধানের দায়িত্বটা তার। এবং সেটার দেখভালের দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের যে সেটা করছে কিনা। এছাড়া সড়কের সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্বও কনস্ট্রাকশন কোম্পানির।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর