হরেক মাল বিক্রেতা আবদুল লতিফ। ৬০ বছর বয়সেও একমুঠো খাবার জোগাতে নিয়মিত যুদ্ধ করে যাচ্ছেন। শরীরে তার বয়সের ছাপ পড়লেও থেমে নেই পথচলা। তিনি ব্যবসার উদ্দেশে হেঁটে বেড়াচ্ছেন গ্রামের পর গ্রাম।
সোমবার (২১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় লতিফ মিয়ার দেখা মিলে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররমনী মোহন গ্রামে। সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে কাঁধে প্লাস্টিকের আসবাবপত্র, খেলনা ও বিভিন্ন প্রসাধনী ভরা ঝুড়ি নিয়ে ফিরছেন। ওই সময় কথা হয় তার সঙ্গে।
হরেক মাল বিক্রি করতে গিয়ে নিজের জেলা কুষ্টিয়া থেকে অনেক দূরের গ্রামগুলো এখন তার চিরচেনা। নাম অজানা অনেক গ্রামই পায়ে হেঁটে অতিক্রম করেছেন। ব্যবসার খাতিরে প্রতিদিনই নানা রকম মানুষের সঙ্গে কথা হয় তার। ভাষা বাংলা হলেও আগে আঞ্চলিক শব্দ ব্যবহার করে কথা বলতেন। তবে এখন তিনি শুদ্ধ বাংলা ভাষায় কথা বলার চেষ্টা করেন। যেন তার কথা বুঝতে ক্রেতাদের কষ্ট না হয়।
জানা গেছে, জীবনের শুরুতে আবদুল লতিফ বাপ-দাদার ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। তাদের তাঁত ব্যবসা ছিল। নানা প্রতিকূলতায় এক সময় ব্যবসাটি ধরে রাখতে পারেননি তারা। প্রায় ১০ বছর আগে ব্যবসাটি হারিয়ে তিনি দুই বছর ঢাকার একটি কারখানায় সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করেছেন।
সেখান থেকে ফিরে প্রায় ৮ বছর ধরে প্লাস্টিকের আসবাবপত্র, খেলনা ও হরেক রকম প্রসাধনী বিক্রি করে আসছেন তিনি। একটি কাঠের দণ্ডের দুই মাথায় দুটি ঝুড়ি ঝুলিয়ে কাঁধে নিয়ে গ্রামের পর গ্রাম হেঁটে হেঁটে চলছে তার ব্যবসা।
আবদুল লতিফ কুষ্টিয়া জেলার কোয়ারখালী থানা এলাকার মৃত শাহাব উদ্দিনের ছেলে। তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। মেয়েটি এবার এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্রী। আর ছেলেরা দিনমজুর।
একজন সরদারের অধীনে তারা অনেকজন এ ব্যবসাটি করেন। ওই সরদারের নেতৃত্বেই দেশের বিভিন্ন জেলায় তারা ব্যবসার উদ্দেশে গমন করেন। যখন যে এলাকায় ব্যবসা করতে যান সেখানকার একটি স্কুলঘর খুঁজে নেন রাত কাটানোর জন্য। স্কুলের বারান্দাতেই দলবদ্ধ হয়ে তারা রাতটুকু কাটিয়ে দেন।
কথা বলে জানা গেছে, ব্যবসার জন্য আবদুল লতিফের মূলধন হচ্ছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। প্রতিদিন প্রায় ১৫শ থেকে দুই হাজার টাকা বিক্রি হয়। এ বয়সে অনেক কষ্ট হলেও সংসারের তাগিদে তাকে ব্যবসাটি করতে হচ্ছে। তার ঝুড়িগুলোতে থাকা আসবাবপত্রের সর্বোচ্চ মূল্য ৫০ টাকা ও সর্বনিম্ন হচ্ছে চুলে লাগানো ৫ টাকার ক্লিপ।
জানতে চাইলে আবদুল লতিফ বলেন, ‘আমরা একজন সরদারের অধীনে ব্যবসাটি করে আসছি। তাকে আমরা নেতা মানি। তিনি যখন যেখানে বলেন সেখানেই যেতে হয় আমাদের। ঢাকা থেকে আমাদের জন্য মালামালগুলো তিনিই কিনে আনেন।’
বাইরের জেলায় গিয়ে ব্যবসা করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের এলাকায় এসব ব্যবসা ভালো হয় না। এদিকে ব্যবসাটি ভালো হয়। ভালো দামও পাওয়া যায়।’
সংসার ছেড়ে এতো দূরে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুল লতিফ বলেন, ‘বউ, ছেলে-মেয়ের জন্য খারাপ লাগে। তবুও করার কিছু নেই। সংসারের খরচ চালাতে হলে উপার্জন করতে হবে। আর সংসারের খরচের জন্য প্রতিমাসে বাড়িতে টাকা পাঠাই। এছাড়া দুইমাসে একবার বাড়িতে গিয়ে ৪-৫ দিন থেকে আসি।’