কিশোরগঞ্জের রাজনীতিতে জননেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুজনিত শূন্যতা প্রতিনিয়ত টের পাওয়া যাচ্ছে। গোপালগঞ্জের পর আওয়ামী লীগের এই দ্বিতীয় দুর্গ কে সামলাবেন, এমন প্রশ্ন আলোচিত হচ্ছে সর্বত্র। কিশোরগঞ্জ-১ আসনে উপ-নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হতেই সৃষ্টি হয়েছে চাঞ্চল্য। জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা অ্যাডভোকেট শাহ আজিজুল হক দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।
জাতীয় নেতা, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুলের ছেলে জননেতা সৈয়দ আশরাফ ছিলেন সমন্বয় ও বিকেন্দ্রীকরণের পক্ষের এক উদার নেতা। জেলা সদর ও হোসেনপুরের রাজনীতি তিনি দেখতেন। দক্ষিণের ভৈরব-কুলিয়ারচরের রাজনীতি স্বাধীনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেন সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান পাপন, যিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের ছেলে।
এদিকে পূর্বাঞ্চলের বিশাল হাওরের ইটনা-মিটামইন-অষ্ট্রগ্রামের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন রাষ্ট্রপতির ছেলে সংসদ সদস্য প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মেদ তৌফিক।
মূলত তিন রাষ্ট্রপতির তিন সন্তান কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতির দেখাশোনা করতেন। সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুতে জেলা সদর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় নেতৃত্ব শূন্যতা না এলেও কে হবেন তার উত্তরসূরি, তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা।
বিশেষত পাপন ঢাকামুখী এবং কিশোরগঞ্জ সদরের ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন না কখনোই। তৌফিক ভাটির এমপি হলেও কিশোরগঞ্জ শহরে শক্তিশালী ভিত্তি ও অবস্থান রয়েছে তার। তাকেই সবাই মনে করছেন কিশোরগঞ্জে সৈয়দ আশরাফের শূন্যতা পূর্ণ করার যোগ্য নেতা। তবে এজন্য কিশোরগঞ্জ-১ আসনে একজন যোগ্য সংসদ সদস্য খুঁজে বের করা দলের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের আরও কিছু নেতা কিশোরগঞ্জ-হোসেনপুরের রাজনীতিতে ক্রমেই এগিয়ে আসছেন। এর মধ্যে হোসেনপুরের কৃষিবিদ মশিয়ুর রহমান হুমায়ূন সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-১ আসনে সৈয়দ আশরাফের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিকল্প প্রার্থী ছিলেন। তবে অপেক্ষাকৃত ছোট ও কম জনসংখ্যার হোসেনপুর থেকে বৃহত্তর কিশোরগঞ্জের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করা তার পক্ষে কতটুকু সম্ভব হবে, এ নিয়ে সংশয় রয়েছে অনেকের মধ্যেই।
কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে সদরের নেতাদের মধ্যে সিনিয়র কাউকেও ভাবা হচ্ছে বিকল্প হিসেবে। কমিউনিস্ট পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে আসা অ্যাডভোকেট শাহ আজিজুল হক এখন দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। দলের একাধিক পদে তিনি ছিলেন। একাধারে চার বার হয়েছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি। পিপি হিসেবেও কাজ করছেন এক যুগ ধরে।
কমিউনিস্ট পার্টি থেকে কিশোরগঞ্জ-১ আসনে সংসদ নির্বাচনও করেছিলেন শাহ আজিজ। কিন্তু সৈয়দ আশরাফের পক্ষে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে তিনি নৌকার পক্ষে কাজ করেন। তারপর বহু বছর তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংগঠনিক বিকাশে নিয়োজিত রয়েছেন। সংসদীয় আসনের গুরুত্বপূর্ণ উত্তরাঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। শুধু নির্বাচন নয়, সার্বক্ষণিক রাজনীতিতেই মগ্ন আছেন এই প্রবীণ নেতা।
মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) কিশোরগঞ্জ-১ আসনের উপ-নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হলে জেলা আওয়ামী লীগের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র বার্তা২৪.কমকে জানায়, ‘কিশোরগঞ্জ-১ আসনের উপ-নির্বাচনে অ্যাডভোকেট শাহ আজিজুল হককে প্রার্থী করতে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রবল চাপ রয়েছে। স্থানীয় একজন প্রার্থী ছাড়া জেলা সদরের রাজনীতি সামলানো সম্ভব নয়। অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে নেতা-কর্মীরা কিশোরগঞ্জের ভূমিপুত্র শাহ আজিজকে ‘কিশোরগঞ্জ-১’ আসনের মাঝি হিসেবে দেখতে চান।’
যোগাযোগ করা হলে অ্যাডভোকেট শাহ আজিজুল হক বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘একটি মহৎ আদর্শকে সামনে রেখে আজীবন রাজনীতি করেছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও জননেত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্ব আমার অনুপ্রেরণার উৎস। আন্দোলন, সংগ্রাম, রাজনীতি, নির্বাচন তথা সর্ব অবস্থায় আমি মাঠে ছিলাম, আছি এবং থাকব।’