এসআই'র বিরুদ্ধে অন্তঃসত্ত্বাকে নির্যাতনের অভিযোগ

মেহেরপুর, দেশের খবর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, মেহেরপুর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-02 21:14:59

মেহেরপুরে মেহেদী হাসান বাকের নামের অটো চালককে ধরতে গিয়ে তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর ওপর নির্যাতন, বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙচুরসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে সদর থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) লস্কর লাজুল ইসলাম জিয়ার বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। বুধবার (২৩ জানুয়ারি) বিকেলে মেহেদি হাসান বাকেরের স্ত্রী ওই এসআইয়ের বিরুদ্ধে মেহেরপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে বিষয়টি তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন।

জানা যায়, অন্য এক অটো চালকের সাথে দ্বন্দ্বের জেরে বাকেরের নামে সদর থানায় একটি অভিযোগ দিলে এসআই জিয়া সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে বাকেরের বাড়িতে যান।

জানা গেছে, এসআই জিয়ার এ কর্মকাণ্ডে বিষয়টি জেলা জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ভুক্তভোগীরা মামলার পর পুলিশ প্রশাসন থেকেই আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন পুলিশ সুপার। অভিযুক্ত এসআই জিয়াকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে মর্মে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তবে বিষয়টি পুলিশের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়নি।

মেহেরপুর পুলিশ সুপার এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তদন্ত কমিটিকে ৩ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি ওবাইদুর রহমান ও ডিআইও-ওয়ান ফারুক হোসেন।

মামলার বিবরণে বাকেরের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মারিয়া খাতুন বলেন, 'গত মঙ্গলবার দুপরে আমি বাড়িতে একা ছিলাম এবং দুপুরের রান্না করছিলাম। এমন সময় এসআই জিয়া আরও দুই জন পুলিশ কনস্টেবল নিয়ে বাড়ির দরজায় ডাকাডাকি শুরু করেন। বাড়িতে কেউ নাই বলাতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে টিনের দরজায় লাথি মারলে দরজা খুলে যায়। তখন তিনি ভেতরে প্রবেশ করেন। এ সময় গালিগালাজ করতে করতে ঘরের মধ্যে ঢুকে ঘরের আসবাবপত্র তছনছ করা শুরু করে।'

তিনি আরও বলেন, 'চেয়ার টেবিলসহ বিভিন্ন জিনিস ভাঙচুর করে এবং আলমারিতে থাকা নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে। পরে রান্না ঘরে মোটরসাইকেল দেখে চাবি চায়। চাবি দিতে না চাইলে তখন তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় এবং বিভিন্ন হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে চাবি দিলে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা মূল্যের অ্যাপাচি আরটিআর ব্রান্ডের মোটরসাইকেল টি নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান এবং বলেন টাকা নিয়ে গিয়ে মোটরসাইকেল ফেরত নিয়ে আসতে।'

মামলার এজহারে আরও জানান, ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে থাকা নগদ ৮৫ হাজার টাকা, ৯১ হাজার টাকা মূল্যে স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে গেছেন।

মেহেদী হাসান বাকের বলেন, 'সোহেল নামের এক অটো চালকের সাথে পূর্বের একটি বিরোধ থেকে সে থানায় আমার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করে। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে এসআই জিয়া আটক করতে আসেন।'

তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, 'আমার স্ত্রী কোন অপরাধ করেনি। আমার বাড়ি ঘর কোন অপরাধ করেনি। আমার বাবাও একজন পুলিশ কর্মচারী। পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে এ ধরনের ব্যবহার তিনি করতে পারেন না। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।'

বাকেরের প্রতিবেশী আনজিরা খাতুন জানান, তিনটি পুলিশ এসে বাড়ির ভেতরে সবকিছু ভাঙচুর করে মোটরসাইকেলটি নিয়ে চলে গেলো। যাওয়ার সময় আজে বাজে গালিগালাজ করেছে। বাকেরের পোয়াতি (অন্তঃসত্ত্বা) বউকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে।

এদিকে অভিযুক্ত এস আই লস্কর লাজুল ইসলাম জিয়া জানান, তার বিরুদ্ধে করা সকল অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তবে স্বীকার করে তিনি বলেন, 'বাড়িতে একটি অনটেষ্ট (লাইসেন্স বিহীন) মোটরসাইকেল ছিল সেটি নিয়ে এসেছি।'

মোটরসাইকেল কোন অপরাধে নিয়ে আসলেন এমন প্রশ্নে তিনি কোন জবাব দেননি।

মেহেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম (পিপিএম) তদন্তের বিষয়ে বলেন, 'পুলিশ সুপারের নির্দেশে আমরা ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছি। তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি কিছু বলতে চাই না।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর