প্রতিবার রবি মৌসুমে আলু চাষ করে বেশ লাভবান হলেও এবার আলু চাষ করে লোকসানে মুখে পড়েছেন লালমনিরহাটে তিস্তা চরাঞ্চলের কৃষকরা। এ কারণে দিনে দিনে আলু চাষিরা আলু চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। গত তিন বছর ধরে আলু চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াতে এ বছর বেশিরভাগ আলু চাষিরা আলু চাষ করেননি। তবে লোকসান পুষিয়ে নিতে অনেকেই আলু তুলেই ভুট্টা চাষ শুরু করেছেন।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লালমনিরহাটে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় আলুর বাম্পার ফলন হতো। তাই কৃষকরা আলু চাষে ব্যাপক আগ্রহী হয়ে ওঠে। কিন্তু গেলো ২/৩ বছর ধরে অসময়ে বৃষ্টিপাত এবং পোকার আক্রমণের কারণে আলুর ফলন কম হয়। আবার ক্ষেতে জ্বলা, কারেন্ট, দাউদসহ নানা রোগ দেখা দেয়। তাতে কীটনাশক দিয়েও কোনো কাজ হয় না। লোকসান হওয়ায় এবার অনেকেই আলু চাষ করেনি।
তিস্তা চরাঞ্চলের কৃষক দুলাল মিয়া প্রতি বছরে তিনি কমপক্ষে ২-৬ বিঘা জমিতে আলু চাষ করতেন। জমি থেকে আলু উত্তোলনের পর সেগুলো বিভিন্ন কোল্ড স্টোরেজে রাখতেন। কিন্তু গত বছর আলুর দাম না থাকায় কোল্ড স্টোরেজ থেকে তিনি আলু উত্তোলন করেননি। সব মিলিয়ে তার আলু চাষে ব্যাপক লোকসান হয়েছে। তাই এ বছর তিনি আলু চাষ না করে ভুট্টা চাষ করেছেন।
আলু চাষি শাহ আলম (৩৫) জানান, আলু তুলেই ওই জমিতে ভুট্টা চাষ করে আলুর ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। তিনি আরও জানান, আলু চাষে প্রচুর খরচ, আবার উৎপাদন অনুযায়ী আলুর দাম না থাকা, আলুতে নানা ধরনের রোগের কারণে কৃষকরা আলু চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে। তা ছাড়া আলু চাষের কীটনাশকের দাম বৃদ্ধি থাকায় বিপদে পড়তে হয়েছে।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর উপ-পরিচালক বিধু ভূষণ রায় জানান, গতবছরের তুলনায় এবার পাঁচশ হেক্টর জমিতে আলু চাষ কম হয়েছে। তাছাড়া আমরা কৃষদের আলুর লোকসান পোষানোর ভুট্টাসহ অন্য কিছু আবাদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'গতবারের কোল্ড স্টোরেজে রাখা আলুগুলো এখন আর খাওয়ার উপযোগী নেই। কারণ বাজারে নতুন আলু চলে এসেছে। সে কারণে এবার আলু চাষ না করে ভুট্টাসহ অন্যান্য আবাদে ঝুঁকে পড়েছেন। গত বছর জেলায় আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৪২০ হেক্টর জমি। আর আবাদ এবার হয়েছে ৫ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছে ৯৫ হাজার১শত ৩০ মেট্রিক টন। যে হিসাবে আলু চাষ হয়েছে তা সারাবছরেও শেষ হবে না।'