এক সময়ের খরস্রোতা নদী এখন কৃষকদের বোরো আবাদের জমিতে পরিণত হয়েছে। কোথাও কোথাও শুকিয়ে খালে রূপ ধারণ করেছে। নদীর বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে জেগে উঠেছে অসংখ্য ছোট-বড় চর। অপরদিকে ভূমি দস্যুদের কালো থাবায় ভূমিহীন সেজে নামে-বেনামে চর দখল করে করা হচ্ছে বোরো আবাদ।
প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পলি মাটি পড়ার দরুণ নদী ভরাট হয়ে জেগে উঠেছে ছোট-বড় অসংখ্য চর। নাব্যতা সংকটের কারণে নৌ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে অনেক আগেই। বলছিলাম নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত নবগঙ্গা নদীর কথা।
জানা গেছে, নড়াইল জেলার মধ্যে সমৃদ্ধ ও সম্ভাবনাময়ী জনপদ লোহাগড়ার উপর দিয়ে মধুমতি, নবগঙ্গা ও বানকানা নদী প্রবাহিত। এ ছাড়াও রয়েছে অসংখ্য খাল, বিল ও বাওড়। বানকানা নদীর কোন অস্তিত্বই আজ আর লোহাগড়ায় নেই। আর ৫০ বছর আগেই সমতল ভূমিতে পরিণত হয়ে পড়েছে এক সময়কার বানকানা নদী।
এদিকে নবগঙ্গা নদী হলো লোহাগড়া উপজেলার অন্যতম প্রধান নদী। নাব্যতা সংকটের কারণে আজ নবগঙ্গা নদীরও সেই জৌলুস আর নেই। নেই সেই আগ্রাসী রূপও। এককালের খরস্রোতা নবগঙ্গা নদী এখন শুকিয়ে খালে পরিণত হয়ে পড়েছে। নদীটি কুন্দশী এলাকা থেকে মহাজন এলাকা পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটারের অবস্থা এতটাই সঙ্গীন যে, অনেক এলাকায় নবগঙ্গা শুকিয়ে পায়ে চলা সরু পথে পরিণত হয়ে পড়েছে। কোনো কোনো স্থানে নদীতে বাঁধ দিয়ে মৎস্য শিকারীরা মাছও শিকার করছে।
শীত মৌসুমে শুরু হবার সাথে সাথে নবগঙ্গা নদীর নাব্যতা অস্বাভাবিক ভাবে কমে গেছে। নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারণে লোহাগড়া-নড়াইল ভায়া খুলনা রুটে নৌ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে অনেক আগেই। ফলে নৌ পথে পণ্য পরিবহনে চরম সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে ব্যবসা বাণিজ্যে নেমেছে ধস।
অনুসন্ধান করে জানা গেছে, নবগঙ্গা নদীর প্রায় ৩৫ কিঃ মিঃ এলাকা জুড়ে জেগে উঠেছে ছোট-বড় অসংখ্য চর। স্থানীয় ভূমি দস্যূরা নামে-বেনাম ভুয়া কাগজ পত্র তৈরি করে জেগে উঠা চর দখল করে ধানের চাষাবাদ করছে। লোহাগড়ায় চর দখলের ঘটনা প্রতি বছরই বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে মামলা-মোকদ্দমা। মৃত প্রায় নবগঙ্গার নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য বিগত ২০১১-১২ অর্থ বছরে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মল্লিকপুর থেকে মহাজন পর্যন্ত খনন কাজ করা হলেও তা কোন কাজে আসে নাই। প্রতি বর্ষা মৌসুমে পলি পড়তে পড়তে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে।
লোহাগড়া উপজেলার লক্ষীপাশা গ্রামের জিতেন বিশ্বাস বলেন, এক সময় এই নদীই ছিল আমাদের জীবিকার এক মাত্র অবলম্বন। এ নদী থেকে মাছ ধরে বাজারে বেঁচে সংসার চালাতাম। এসব এখন শুধুই স্মৃতি।
কুন্দশী গ্রামের মৎস্যজীবী গণেশ বিশ্বাস বার্তা২৪.কমকে বলেন, এই নবগঙ্গা নদী থেকে মৎস্য শিকার করে ছেলে মেয়ে নিয়ে সুখে শান্তিতেই ছিলাম। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় জীবন জীবিকার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এখন ভ্যান চালাই কখনও অন্যের জমিতে শ্রম বিক্রি করে সংসার চলাতে হয়।
নদী বাঁচাও আন্দোলনের নেতা সাংবাদিক শেখ সদর উদ্দীম শামীম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘নবগঙ্গার নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য নদী খনন জরুরি হয়ে পড়েছে।
লোহাগড়া পৌরসভা মেয়র আশরাফুল আলম নবগঙ্গার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আক্ষেপ করে বললেন, নদী শাসন আইন নবগঙ্গার জন্য কার্যকর হয় না। প্রকাশ্যে চলছে নবগঙ্গা নদী দখলের প্রতিযোগিতা।
লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুকুল কুমার মৈত্র বার্তা২৪.কমকে বলেন, নবগঙ্গা নদীর খননের প্রকল্প গ্রহণ করে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হলে খনন কার্যক্রম শুরু হবে। এসময় দখলদারদের উচ্ছেদও করা হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।